বাবার সাথে ট্রেন ভ্রমণের স্মৃতিময় গল্প//পর্ব-১

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago

আসসালামু আলাইকুম/🌺

হ্যা লো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।


সন্তানের জন্য প্রত্যেকটা বাবা একজন সুপারহিরো হয়ে থাকে। আর এই সুপারহিরো সব সময় তার সন্তানকে কিভাবে আগলে রাখা যায়, সেই চিন্তা করে। আসলে বাবা ছাড়া একটি সন্তান কতটা অসহায়, সেটা সেই সন্তানই বুঝতে পারে যার বাবা নেই। আসলে আমাদের জীবন শুরু থেকে শেষ অব্দি পর্যন্ত একজন বাবা সব সময় তার সন্তানের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে। বাবা সব সময় তার সন্তানের সুখের কথা ভাবে এবং কিভাবে তার সন্তানকে আনন্দ হাসিখুশিতে রাখা যায়, এটাই যেন তার ব্যস্তময় সারা দিনের চাওয়া থাকে। কিভাবে তার সন্তানের মুখে হাসি ফোঁটাবে এটা নিয়ে তার চিন্তা। পরিবারের সকল দায়িত্ব যেন বাবার কাঁধে। বাবা পরিবারটিকে সুন্দর ভাবে গোছানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে।আর বাবার সাথে আমাদের ছোটবেলা হাজারো গল্প রয়েছে। এই গল্পগুলো যেন স্মৃতির পাতায় জমা রয়েছে। সেই দিনের কথা মনে করতে পেরে যেন খুবই ভালো লাগে। বাবার অসীম ভালোবাসায় এবং তার সাথে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো সত্যি চোখের সামনে আজ ভাসে। তাই সেই দিনের গল্প নিয়ে আজকে আপনাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করতে এসেছি। সেই গল্পটি হল বাবার সাথে আমি ট্রেনে করে যশোর গিয়েছিলাম, সেই গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে আসলাম। আশা করছি আমার আজকের গল্পটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।


father-and-son-2258681_1280.jpg

source

আমি তখন ক্লাস ফাইভে পরীক্ষা দিয়েছি এবং সিক্সে উঠবো ডিসেম্বর মাস ছুটি ছিল। যার কারণে এই ডিসেম্বর মাসে আমি যশোর আমার খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। কারণ আমার খালা যশোরে থাকে, যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাশে আমার খালার বাসা ছিল। যার কারণে আমি যশোর যাব,তাই বাবার সাথে আমি যশোরে যাব, আর বাবার ট্রেনের টিকিট কাটল আসলে তখন আমি ছোট ছিলাম যার কারণে বাবা একা আমাকে কোথাও যেতে দিতো না,তাই বাবাই সাথে আমাকে যশোরে নিয়ে যাবে।তাই যে দিন যাবো সেদিন খুব সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই যেন এই ট্রেনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।আমাদের বাড়ি থেকে হেঁটে হেঁটে যেতে গতো ১৫ মিনিট আর একটা নদীর পাড় হতে হতো।


তখন ছিল শীতকাল আর এই শীতের মধ্যে কুয়াশার মধ্যে দিয়ে বাবার সাথে আমি বাড়ি থেকে বের হলাম। বের হওয়ার সময় মা আমাকে অনেক কিছু দিলেও খালার জন্য নিয়ে যেতে। সেগুলো বাবা তার হাতে নিয়ে নিলো এবং বাবা এক হাতে দিয়ে আমার হাত ধরে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলাম, আসলে কুয়াশার মধ্যে দিয়ে ফসলের জমির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন কুয়াশাগুলো যেন আমার প্যান্টের সাথে লেগে যাচ্ছিল। তারপরে পার আমাদের গ্রামের ছোট্ট একটি নদী পার হতে হবে। এই নদী পারের জন্য বাঁশের সেতু ছিলো। এর উপর দিয়ে পার হতে হয়। আর এই বাঁশের সেতু ভাঙ্গা ছিলো।তাই পার হতে আমি ভয় পাচ্ছিলাম। তখন বাবা আমাকে কোলে করে এই বাঁশের সেতু পার করে দিয়েছিলো।


father-79456_1280.jpg

source

বাবার কোলে যখন নদীটা পার হয়ে এবারে আসলাম। তখন বাবার হাত ধরে আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম। হেঁটে যাওয়ার পথে বাবাকে বললাম বাবা ছোটবেলা তুমি আমাকে কলে করে এই নদীর কত বার পার করেছো।নদী পার হয়ে বাবার সাথে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আর বাবা সাথে গল্প করতেছিলাম।বাবা বললো যে এই নদী তোমাকে অনেকবার আমি কোলে করে নিয়ে পার করেছি। কখনো কাঁদে করে নিয়ে পার করেছি। তখন বাবার সাথে সেই ছোটবেলার গল্প গুলো শুনতেছিলাম। আসলে এই নদী পার হয়ে হাঁটে যেতে হয়। আর বাবার সাথে অনেকবার আমি হাঁটে এসেছি। তারপরে আমরা সিএনজি ধরে রেলস্টেশনে এসে পৌঁছালাম। স্টেশনে এসে দেখি এখনো ট্রেন আসেনি। তাই আমি আর বাবা স্টেশনে বসে ছিলাম।তখন বাবা এই ইস্টিশন সম্পর্কে অনেক কিছু আমাকে বলল। আসলে বাবা বলেছে এই ইস্টিশন ছিলই না। আমরা এখানে আগে খেলাধুলা করতাম। এটা মাঠ ছিল। আর এখন এটা ইস্টিশন হয়েছে। আসলে স্টেশনটা কিভাবে হলো কোন সরকারের আমলে হল। এইগুলা আমি বাবার কাছ থেকে শুনতে ছিলাম, সেই মুহূর্তগুলো ভালই লাগতেছিল। বাবা পুরনো ইতিহাসগুলো বলতে ছিল আর আমি সেগুলো শুনতে ছিলাম বাবার কোলে মাথা রেখে।


সেই মুহূর্তগুলো খুবই আনন্দের ছিল, কারণ বাবার কাছ থেকে আমি বাবার ছোটবেলার গল্পগুলো শুনতে ছিলাম। আসলে এই গল্পগুলো শুনতে খুবই ভালো লাগে। বাবা তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিল। আর দাদা বাবাকে খুবই ভালোবাসতো। এই গল্পগুলো শুনতে ছিলাম। আসলে আমি দাদাকে দেখিনি, আমার জন্মের অনেক আগেই দাদা মারা গিয়েছে। যার কারণে দাদা কথা বা দাদা কেমন ছিলো এই কথা গুলো শুনতে খুবি আগ্রহী ছিলাম।আসলে দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যার কারণে বাবার কাছ থেকে দাদার গল্প শুনতে বেশি ভালো লাগতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা কতটুকু ছিল এবং দাদা কিভাবে যুদ্ধ করেছে, কিভাবে দাদা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, সেই গল্পগুলো শুনতেছিলাম খুবই ভালো লাগতেছিল আমার। এই গল্পগুলো শুনে এভাবেই যেন অনেক সময় পার হয়ে যাচ্ছিলো।এভাবে প্রায় এক ঘন্টার বেশি গল্প করতে করতে সময় পার হয়ে গেল। তারপরে আমাদের ট্রেন চলে আসলো। আর ট্রেন দেখ বাবা আমাকে বললো ট্রেন এসেছে চলো এখন উঠতে হবে এবং আমি তাড়াতাড়ি করে বাবার সাথে ট্রেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম এবং আমাদের যে বগিতে সিট রয়েছে। সেই বগির দিকে বাবা এগিয়ে যেতে লাগলো। আমি বাবার হাত ধরে বাবার সাথে সাথে সেই ট্রেনে উঠলাম। আসলে এখানে বেশি দেরি করে না মাত্র ৫ মিনিট থাকে। তাই তাড়াতাড়ি করে উঠতে হয়। আমরা অন্য একটা বগিতে উঠে পড়লাম। তারপরে আস্তে আস্তে আমাদের বগিতে আসলাম। তারপর সিট নাম্বার দেখে আমরা সিটে বসে পরলাম। আর এই ট্রেন যাত্রা তখন শুরু হলো।

বাবার সাথে এই প্রথম আমি যশোরে ট্রেনে করে যাচ্ছি। সেই মুহূর্তটা অনেক আনন্দের সাথে উপভোগ করছি। আর বাবার সাথে সেই পুরনো দিনের গল্পগুলো করতে করতে যাচ্ছিলাম। তাই খুবি ভালো লাগতে ছিলো, তো বন্ধুরা এভাবে আমাদের যাত্রা শুরু হল। আর গল্পের বাকি অংশটুকু আপনাদের সাথে আগামী পর্বে শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ। আশা করছি সে পর্বের জন্য আপনারা সবাই অপেক্ষা করবেন।🙏🤲🙏

আমার পরিচয়

IMG_20211018_182622.jpg

আমার নাম মোঃ রায়হান রেজা।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি পেশায় একজন সহকারী মেডিকেল অফিসার ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে🌹💖🌹।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉 বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 57400.65
ETH 3108.60
USDT 1.00
SBD 2.42