" সবাই কেনো আমাকে একই প্রশ্ন করে?" ||10% beneficiaries @shy-fox. ||



আসসালামু আলাইকুম,


সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলে খুব ভালো আছেন। চলে আসলাম আপনাদের সাথে আমার জীবনের একটা বাস্তব তবে বলতে পারেন, আমার ভেঙে পড়ার কারণ, এমন একটা গল্প শেয়ার করার জন্য। আশা করি আমার আজকের গল্পটা আপনাদের সবার কাছে ভালো লাগবে। জীবনে কিছু কিছু সময় এমন কিছু ঘটে যায়, যার ফলে পরবর্তী সকল সময় সেটা কষ্ট দিয়ে যায়। আমার পোষ্টের ১০% রিওয়াড @shy-fox কে।চলুন কথা না বাড়িয়ে আমার আজকের গল্পটা শুরু করি-



IMG_20210826_150101_263.jpg

আমি নিজে
Device: Itel vision 1.
w3w



মানুষ বলে থাকে, জীবনে যখন একটা ক্ষতি হয়ে যায়, সেই ক্ষতিটার খেসারত,পূরোটা জীবনে টেনে নিয়ে যাওয়া লাগে। তবে এই ভুলটা বা খারাপটা যদি শিক্ষা জীবনে হয় তাহলে সেটার কথা আরও বেশি। সেটা নিয়ে সবাই শুধু সমলোচনা করবে। এরকমই ঠিক একটা ঘটনা আমার জীবনে ঘটে গেল কয়েক দিন আগে। পড়াশুনায় যে আমি খুব পার্দশী তা বলতেছি না। তবে চেষ্টটা করি সব সময় ভালো করে পড়াশুনাটা করার। আমি এখন ডিপ্লোমাতে তৃতীয় পর্বে পড়াশুনা করি ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্ট নিয়ে। কিছু দিন আগেই করোনার মধ্যে স্বাস্থ্য বিধিটা মেনে আমাদের দ্বিতীয় পর্বের সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষাটা হলো। অনেক ভালো করেই পরিক্ষাটা দিয়েছিলাম। নিজের উপর বিশ্বাস ছিল যে আমার ফোর পাব। ফোর মানে (A+). এটা ডিপ্লোমাতে ৪ এ প্লাস হয়।


পরিক্ষা শেষে কিছু দিনের জন্য আমি ম্যাচ থেকে বাসায় এসেছিলাম। হঠাৎই একদিন দুপুরের পর বিছানাই শুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে, একটু নেট চালাচ্ছিলাম। আমাদের ক্লাসের ম্যাসেন্জার গ্রুপে দেখি আমাদের দ্বিতীয় পর্বের সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। বুকের ভেতরটা ধরফর করছিল, যানি না কি রেজাল্ট হয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস ছিল আমি ভালো করতে পারব। কিন্তু গ্রুপে ঢুকেই রেজাল্ট শীটটা দেখতেই, জীবনের আশাগুলো, ভেঙে যাওয়া কাচের মতো টুকরা টুকরা হয়ে গেল। প্রথম পর্বে আশানুরুপ ভালো রেজাল্ট করে এ প্লাস পাইছিলাম। আশাই ছিলাম এবারও হবে। কিন্তু হঠাৎ সুনামির মতো একটা ঝড় যেন আশাগুলোকে বালি চাপা দিয়ে গেল। কোথা থেকে কি যে হয়ে গেল। এবারের রেজাল্টটা ৩.৯৬ চলে আসল। একটা বিষয়ে খারাপ হলো কি করে কিছুটা সময়ের মধ্যে বুঝতে পারলাম না।


IMG_20210826_145936_109.jpg

Device: Itel vision 1.
w3w


রেজাল্টটা দেখার পর ভাবলাম, এতো ভালো পরিক্ষা দিয়েও মনের মতো রেজাল্ট হলো না। সেদিনের পর থেকে দুইটা দিন মনটা খুবই খারাপ ছিল। পরে ভাবলাম হয়ত, আমি সেরকম করে পরিক্ষাটা দিতে পারি নাই। তাই এমনটা হলো। দুই দিন ফেসবুকে ঢুকতে পারতাম না। সবাই খালি বলতো বন্ধু তোমার রেজাল্ট কি হয়ছে। আর যখন বলতাম, তখন বলতো তোমার এটা আশা করার ছিল না। তোমাকে ফোর পাওয়ার দরকার ছিল। কারণ মোটামুটি ক্লাসের মধ্যে কিছুটা হলেও ভালো ছাত্রদের দলের শেষ নামটা আমারও ছিল। তাই সকল ছাত্র ছাত্রীরা ভাবতেন হয়ত আমার রেজাল্টটা ভালো হবে। কিন্তু কিছুটা খারাপ হওয়াতেই তারা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।


বাসায় রেজাল্ট দেওয়ার কথা বলেছিলাম না। তবে দুই দিন পরে রাতে এক সময় আমার আব্বুর কাছে গিয়ে বললাম, আব্বু আমাদের দ্বিতীয় পর্বের রেজাল্ট দিছে। বললে কি হয়ছে রেজাল্ট বলো-


আমি: এবারের রেজাল্ট খারাপ হয়ছে। প্লাস আসে নাই।
আব্বু: কেনো হলো না। পরিক্ষা বলে অনেক ভালো দিয়েছিলে?
আমি: যানি না, একটা বিষয়ে খারাপ হওয়ায় ৩.৯৬ হয়ে গেছে।
আব্বু: এমন পড়াশুনা করার দরকার কি?যার কারণে রেজাল্ট খারাপ হয়। এতো কষ্ট করে ম্যাচে খরচ চালিয়ে পড়ানোর পরও রেজাল্ট খারাপ।
আমি: আর হবে না এমন, এখন থেকে ভালো করেই পড়াশুনা করবনে।
আব্বু: তা তো বোঝায় যাচ্ছে কি হবে।



এরপর আব্বুদের রুম থেকে আমার রুমে চলে আসলাম। কিছুটা সময়ের জন্য নিজেকে খুবই অসহায় লাগছিল। তারপরে ভাবলাম, সবাই তো আমার ভালোই চাই। যার জন্য এতো কিছু বলে বুঝাচ্ছে। তবে আমাদের সমাজ বর্তমান সময়ের পড়াশুনাকে প্লাস নামক শব্দের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। এখন কে কতটা শিক্ষা পেলো সেটা কেউ জানতে চাই না, সবাই খালি বলে জিপিএ কত পাইছে। যদি জিপিএ খারাপ হয় তাহলে, বলবে ও তুমি এমন ছাত্র। জিপিএ এর পূর্ণরূপ -"গ্রেট পয়েন্ট এ্যাভারেজ"।



যাই হোক দ্বিতীয় পর্বটা যেভাবেই হোক চলে গেল। সবার সাথে রেজাল্ট নিয়ে কথা বলতে আমারও ভালো লাগত না। ভাবলাম, এবার রেজাল্ট এর চিন্তা বাদ দিয়ে, আবার নতুন করে ভালোভাবে পড়াশুনা শুরু করি। এজন্যই মোটামুটি ভাবে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এরপরই শুরু হলো তৃতীয় পর্বের অনলাইন ক্লাস। মন দিয়েই শুরু করেছিলাম, দ্বিতীয় পর্বের কথাটা মন থেকে বাদ দিয়ে। এরপর ম্যাচেও চলে গেলাম, পড়াশুনাটাকে ভালোভাবে আগের মতো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরপর সেখানে গিয়ে আমার দরকার হয় একজন ভালো শিক্ষকের যার কাছে, আমি ফিজিক্স পড়তে পারব। এরপর আমি আমার কলেজের একজন শিক্ষককে পাই। যার কাছে আমি দ্বিতীয় পর্বে প্রাইভেট পড়তাম। এরপর একদিন রাতে স্যারকে ফোন দিলাম-



আমি: স্যার, আসসালামু আলাইকুম।আমি রাসেল বলছিলাম, চিন্তে পারছেন!
স্যার: হ্যাঁ, রাসেল চিন্তে পারছি। বলো কেমন আছো?
আমি: এইতো স্যার,আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, আপনে কেমন আছেন?
স্যার: ভালো আছি, তোমার দ্বিতীয় পর্বের রেজাল্ট কি?
আমি: স্যার, এবারের রেজাল্ট ভালো হয় নাই, মানে ফোর পাই নাই!
স্যার: কেনো,তোমার তোর ফোর পাওয়ার কথা এমন টা হলো কেনো, কোন বিষয়ে খারাপ হয়ছে?
আমি: জানি না স্যার, কোনটায় হয়ছে। ৩.৯৬ হয়ছে রেজাল্ট।
স্যার: তোমার সাথে এমনটা হওয়া উচিত নয় নাই।



এরপরই আমি স্যারকে আমার পড়তে যাওয়ার কথা সহ অনেক কথা বলি। স্যার আমাকে পরে বলেন, দেখো যা হওয়ার হয়ে গেছে, এবার আরও মন দিয়ে পড়াশুনা করো। তবে মনে রাখবা এতে তোমার কোনো দোষ নাই, হয়ত স্যাররা খাতা দেখার সময় কিছুটা ভুল হয়ছে,। তবে অনেক সময় ভালো ছাত্রদেরও এমনটা হয়ে যায়। মন খারাপ না করে ভালো করে পড়াশুনা করো। আমি এরপর পড়ার সময়টা স্যারের কাছ থেকে জেনে নিয়ে কথা বলাটা শেষ করলাম।


IMG_20210826_145952_954.jpg


Device: Itel vision 1.
w3w


কেবলই রেজাল্টের কথা, ভুলে পড়াশুনা করতেছিলাম, আবার স্যার কথাটা মনে করিয়ে দিলেন। তবে আমি মনে করি, মানুষের সমস্যা হতেই পারে, তাই বলে যে তাকে ভেঙে পরতে হবে তা কিন্তু নয়। তাকে সেই কষ্টটাকে চাপিয়ে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সফলতাটা আসবে। এবং আমিও তাই করার চেষ্টটা করছি। তবে আমার সমাজ পড়াশুনাকে এমন একটা পর্যায় নিয়ে গেছে, যেখানে যোগ্যতা নয় বরং রেজাল্ট দেখা হয়। যেখানে একজন ছাত্র না পড়াশুনা করে অন্যের লেখা দেখে পড়েও ভালো রেজাল্ট করতে পারে। তাই বলে তাকে সেই বিষয়ে যোগ্য মনে করা যায় নাই। আমাদের এই চিন্তা চেতনাগুলো পাল্টাতে হবে। তাহলেই সমাজটা আরও এগিয়ে যাবে।


যাই হোক এখন সব ভুলে তৃতীয় সেমিস্টারের পড়াশুনটা শুরু করেছি। আশা করি সামনে আর এমন হবে না। যার কারণে সবার প্রশ্নটা আমার কাছেই হবে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। যাতে আমি আমার সাফল্যের পৌঁছতে পারি। আশা করি আমার আজকের গল্পটা আপনাদের সবার কাছে ভালো লেগেছে। সবাই আমাদের সমাজের মানুষের চাওয়াগুলো ছাত্রদের কাছে কি হয়, সেটা বুঝতে পারছেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। সব সময় নিজের যোগ্যতাকে প্রকাশ করবেন, কখনওই রেজাল্ট দেখে কাউকে মূল্যায়ন করবেন না।


সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আমার আজকের গল্পটা পড়ার জন্য, এবং গল্পটা পড়ে আপনাদের মতামতটা জানানোর জন্য। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ভালোবাসা।



logo.gif

Sort:  
 3 years ago 

ভাইরে আমারই অনেক কষ্ট হয়েছিল জিপিএ ৪.০০ না পাওয়াই। যেখানে আমার থেকে পিছিয়ে থাকা ছাএরা আমার থেকে ভালো ফলাফল করছিল। তোমার কথা আর কী বলব। তোমার এইরকম খারাপ ফলাফল কেউই মেনে নিতে পারেনি। ওই চিন্তা বাদ দিয়েছি। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন শুধু পরবর্তীতে যেন ভালো করতে পারি সেইটা চিন্তা করাই ভালো।

হুম। সেটাই করার চেষ্টটা করছি। তোমাকে ধন্যবাদ।

 3 years ago 

🙂🙂

 3 years ago 

ভাই একটা কথা আছে পাছে লোকে কিছু বলে। কিন্তু এই কথা গুলো উপেক্ষা করে জীবনে কিছু করতে হবে।

হুম ভাই, সত্য কথা বলেছেন।

 3 years ago 

অনেক অনেক দোয়া ও শুভকামনা থাকলো আগামীতে পড়াশোনা ভালো করে আরো ভালো রেজাল্ট করবেন। ভালো রেজাল্ট মানে কিন্তু ভালো মানুষ বা প্রতিষ্ঠিত মানুষ নয়, আমি প্রত্যাশা করবো ভালো মানুষ হবেন, সফল মানুষ হবেন ধন্যবাদ

ধন্যবাদ আপু এতো সুন্দর একটা অনুপেরণা মূলক মতামত দেওয়ার জন্য।

 3 years ago 

ভাই তুমি তো যথেষ্ট ভালো রিচাল্ট করেছো।আমি দ্বিতীয় পর্বে ৩.৪৪ পেয়েছিলাম। আশানুরূপ রিচাল্ট পাওয়া হলো না।আর তৃতীয় পর্বেও একই অবস্থা।এখন চতুর্থ পর্বের রিচাল্টের অপেক্ষায় রইলাম।তোমার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাই।আসলে পরীক্ষার রিচাল্ট দিয়ে কাউকে পরিমাপ করা ঠিক না।কম রিচাল্টের অনেকেই আছে যাদের মেধা অনেক ভালো।তবে পরের পর্বে আশা করি ভালো রিচাল্ট আসবে ইনশাআল্লাহ। শুভ কামনা রইল।

ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago (edited)

আপনি এমনিতেই ভালো রেজাল্ট করেছেন, তবে ভবিষ্যতে এর থেকে ভালো করবেন বলে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি ভাইয়া।দুঃখ করার কারণ নেই ভালোভাবে পড়াশুনা করলে রেজাল্ট ভালো হবে।ধন্যবাদ ভাইয়া।অনেক অনেক শুভকামনা ভাইয়া।

ধন্যবাদ বোন, সুন্দর মতামতটা দ্বারা আমাকে উৎসাহিত করার জন্য।

 3 years ago (edited)

রাসেল আপনার লেখনীর নিপুণতার প্রশংসা করতেই হবে। আপনার কন্টেন্ট হাই কোয়ালিটি একদম। আপনি নিজের জীবনের একটা অভিজ্ঞতা আপনার একাডেমিক পরীক্ষার রেজাল্ট এর অনুভূতি সাথে মা বাবার সাথে কথপোকথন এর যে বিষয় তুলে ধরেছেন সত্যিই অনবদ্য। অনেক অনুপ্রেরণা পেলাম কন্টেন্ট পড়ে।এমনিতেই খুবই ভালো রেজাল্ট করেছেন। যে আশা করেছিলেন সেটা থেকে সামান্য একটু পিছিয়ে। চিন্তার কিছু নেই অদম্য বেগে এগিয়ে চলুন। অনেক শুভ কামনা রইলো

ধন্যবাদ ভাইয়া।এতো সুন্দর মতামতের জন্য।

 3 years ago 

রেজাল্ট কখনো তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না। আপনি যথেষ্ট ভালো করেছেন এই সামান্য একটু নিয়ে এতটা মন খারাপের কিছু নেই। ইনশাআল্লাহ সব সময় চেষ্টা করবেন ভালো কিছু করার এবং রেজাল্ট খারাপ হলে হতাশ না হয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো।

ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

মাঝে মাঝে এমন হয় এতে এত মন খারাপ করলে চলবে না ভাই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।আর আপনার রেজাল্ট তো খারাপ হয়নি হয়তো যা চেয়েছেন তা পাননি। মনকে শক্ত রেখে এগিয়ে যান।আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

ধন্যবাদ বোন।

 3 years ago 

আপনার গল্প পড়ে ভালো লাগলো। আসলে সমাজ এমন একটা জিনিস একজন ভালো কে ভালো হিসেবে থাকতে দেয়না। আবার খারাপ কেও খারাপ হতে দেয় না। আপনার জীবনের ঘটে যাওয়া গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো 🥀 এবারে রেজাল্ট ভালো হবে! ভালোবাসা রইলো 🥀

ধন্যবাদ।

যে যাই বলুক পরীক্ষা শীটের ওই নাম্বার গুলো সবসময় আপনার মেধার পরিচয় বহন করে না। মন শক্ত করে আপনার লক্ষ্যে এগিয়ে যান। যখন সফল হবেন তখন সবার মনোভাব পরিবর্তন হয়ে যাবে।

সঠিক বলেছেন ভাই।ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 68588.91
ETH 2458.42
USDT 1.00
SBD 2.35