"দিশেহারা পরিবার"......



আসসালামু আলাইকুম,


সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন। আজকে হাজির হয়ে গেলাম আমার আর একটা নতুন পোষ্ট নিয়ে। আজকে আমার নিজের বাস্তব জীবনের একটা গল্প আপনাদের সাথে তুলে ধরার চেষ্টটা করব। যদিও কথাগুলো আমি শেয়ার করতে চেয়েছিলাম না। কিন্তু আজকে হঠাৎই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে এলাম। চলুন শুরু করি আমার আজকের লেখনি---



"দিশেহারা পরিবার"


swans-6421355_640.webp

ছবি এখান থেকে নেওয়া হয়েছে।


সারাটা জীবন যারা কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন। যাদের মুখে থাকে না কোনো হাসি, থাকে শুধু বেদনা ভরা অশ্রু। আমার পরিবারের এক মাত্র উপার্জনের মাধ্যম হলেন আমার বাবা। সে যদি একদিন বাজার থেকে কাজ না করেন তাহলে আর আমাদের পরিবারের কারুর পেটে ভাত জোটে না। এভাবে অভাব, কষ্টের মাঝে আমাদের দিনগুলো পার হতে লাগে। আমি নিজেও এখনও লেখাপড়া করি তাই পরিবারের পাশে তেমন একটা দাড়াতে পারি না। আমার বাবা ভ্যান চালিয়ে আমার লেখাপড়া সহ পরিবারের খরচ বহন করে থাকেন। কিন্তু করোনার কারণে শহরে লকডাউন দেওয়ার কারণে আব্বুও আর বাজারে যেতে পারে না, আমাদের পরিবারে এখন যেন আমাদের খেয়ে বেচেঁ থাকাটা কষ্টের হয়ে গেছে। এরই মাঝে আবার চলে আসে ঈদ-উল আযহা।


আব্বু ঈদের তিন দিন আগে একমাত্র উপার্জনের বাহন ভ্যানটা নিয়ে বাজারে যান। যানি না সৃষ্টিকর্তা আমাদের কপালে কি রেখেছেন। দুপুরে যখন বিছানার উপর বসে ছিলাম হঠাৎই আব্বু ফোন দিয়ে বলে উঠল, তার ভ্যানটা চুরি হয়ে গেছে। কথা শুনেয় যেন আকাশ থেকে বাচ পড়ার মতো থমকে গেলাম। মুখের ভাষাটা যেন কোথায় হারিয়ে গেল। কিছু ক্ষণ পর আব্বুকে জিগালাম, হারালো কিভাবে বললো, পাশে একটা বাসার সিরির নিচে রেখে কাজ করতে ছিলেন। এরই মাঝে কখন যেন ভ্যানের তালাটা ভেঙে ভ্যানটা চুরি হয়ে গেছে। কথাটা শেষ করে একটা জামা গায়ে দিয়ে নদীর ঘাটে গেলাম। যদি চোরটা নদী পার করে ভ্যানটা নিয়ে আসে সেটা দেখার জন্য। কিন্তু যা চলে যাওয়ার সেটা চলে গেছে। তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। আমি আমার বড় ভাইকে আব্বুর ভ্যান চুরি হওয়ার কথাটা জানালাম।সেও খুজতে লাগল। সারাটা দিন খুজেও ভ্যানের কোনো হুদিশ মিললো না। সন্ধার পূর্বে আমার আব্বু ভার করা মুখটা নিয়ে বাসায় আসলেন। বাসায় এসেই বিছানার উপর শুয়ে পরলেন।


আমি আর কিছু শুনতে গেলাম না। কারণ এমনিতেই মনটা ভালো না। তারপর শুনতে গেলে হয়ত আরও কষ্ট পাবে। আর মাত্র দুইটা দিন পরই ছিল ঈদের খুশি। কিন্তু আমাদের পরিবার থেকে সেই খুশিটা হারিয়ে গেল। যেই জিনিসটা দিয়ে উপার্জন করে আমাদেরকে খুশির জিনিস কিনে দিবেন। সেটায় আজ হারিয়ে গেল। এই দুনিয়ায় টাকা না থাকলে কোনো সুখই পাওয়া যায় না। রাতে খাবার খাওয়ার সময় সেদিন সব জিগালাম। কেমন করে রাখলে ভ্যানটা যে চুরি হয়ে গেল, আব্বু শুধু একটা কথা বললেন আমি কিভাবে জানবো ওখান থেকে চুরি হয়ে যাবে। আমার মা তো শোনার পর থেকে সেই যে কান্না শুরু করছিল কয়েক ঘন্টা ধরে কাদল। কাদার সময় বলছি, এখন আমাদের সংসার চলবে কি করে।ঘটনা ঘটার পর থেকে আমার বাবা যেন নিথর হয়ে গেছে। বেশি একটা কথা বলে না। সব সময় রুমেই বিছানায় শুয়ে থাকে। বাজারে যাবে কি নিয়ে আর উপার্জনই বা করবে কি দিয়ে। আমার বাবা ভ্যান চালানো ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। কারণ কয়েক বছর আগে একটা দূর ঘটনায় আর কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। সেখান থেকে সে বেশি ভারি কাজ বা বসে থাকা কাজ করতে পারে না।


অনেক কষ্ট করে লোন নিয়ে আমরা আমার বাবাকে ভ্যানটা কিনে দিয়েছিলাম। সেটা দিয়ে বেশ ভালোই আমাদের সংসারটা চলে যেত। এরই মাঝে আমাকে কষ্ট করে পড়ালেখা করান। বাসায় বসে বসেই আব্বু ঈদের আগের দুইটা দিন পার করলেন। খাবার খেতে বললেও যেন খায় না। আমি আব্বুকে অনেক শান্তনা দিলাম। বললাম দেখো, যা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আর চিন্তা করে লাভ নাই। আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই কোনো না কোনো ব্যবস্তা করে দিবেন। ঈদে আমাকে কিছু কিনে না দিতে পেরে সে আরও কষ্ট বেশি পেয়েছেন। কোনো রকম ঈদটা আমরা পার করলাম। এরপর ঈদের ২ দিন পর আব্বু বাজারে গেল। যদি কোনো কাজ করতে পারে। কিন্তু কি করবে, সে যে অন্য কাজ করতে পারে না। আমাদের পরিবারের এমন কিছুও নাই যেটা বিক্রি করে আবার আব্বুকে নতুন ভ্যান কিনে দিবো। সব দিক থেকে যেন আমরা অতল সাগরে ডুবে গেছি।কি করব, কোথাশ যাব কিছুই বুঝতে পারছি না।


এরই মাঝে আবার দিয়ে দিল কয়েকদিনের লকডাউন। আর কোনো কাজ খোজা হলো না। আব্বু এখন বাসায় রয়েছেন। কোনো রকম ধার দেনা করে আমাদের পরিবারটা চলছে। জানি না কবে আব্বুকে আবার নতুন একটা ভ্যান কিনে দিতে পারব। কবে সে আবার উপার্জন করতে পারবে। সে না উপার্জন করলে আমাদের পরিবারে চুলায় হাড়ি ওঠে না। অনেক চেষ্টটা করছেন আব্বু যদি কোনো ভাবে একটা ভ্যান কেনা যায়। কিন্তু লকডাউনের কারনে সেটাও হয়ে ওঠছে না। কথাগুলো যদিও আমি শেয়ার করতে চাইছিলাম না।হঠাৎই আজকে কথাটা বেশি মনে পড়ছি যার কারণ শেয়ার করলাম।একজন গরিবের শেস সম্বল টুকু হারিয়ে যাওয়ার যে কতটা কষ্ট সেটা আমি আপনাদেরকে বোঝাতে পারব না।আমি মনে করি হয়ত কোনো এক সময় আমাদের পরিবারটা এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবে।


কথাগুলো একান্তই আমার নিজের ব্যাক্তিগত। আশা করি আপনারা আমার লেখাপড়ে অবশ্যই আমার পরিবার সম্পর্কে জানতে পারলেন। শুধু যে এমন সমস্যা আমাদের জীবনে আসছে।তা কিন্তু নয়, আপনাদের সবার জীবনেই আসতে পারে এমন সমস্যা। আমাদের সবারই উচিত সকল বিপদে ধৈর্য ধারণ করা। আপনারা সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করে চলবেন। সবাই ভালো থাকবেন-সুস্থ থাকবেন। আমার লেখার মাঝে কোনো ভুল হলে অবশ্যই আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।


সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আমার পোষ্টটা পড়ার জন্য।



Cc:
@rme
@rex-sumon
@hafizullah



RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt2kFULPYJ54Xb4fwnoWiqhnsVGNxUzm11EdnGCa7fkkDE1L3RcvRuixigDGPZV8mEE3dfWRPrqDE6fkyJYE.png



Sort:  
 3 years ago 

দুঃখজনক। যাইহোক দুনিয়াটা অন্য ভাবে চলছে ভাই । শুভেচ্ছা রইল।

ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 60270.61
ETH 2411.66
USDT 1.00
SBD 2.43