মিউজিক নিয়ে গল্প : শিল্পীদের সম্মানী এবং লুকায়িত আর্তনাদ|| ১০% পেআউট @shy-fox এর জন্য
শুভেচ্ছা সবাইকে 🌺
আশা করছি @amarbanglablog এর সকল মেম্বাররা ভালই আছেন। আমিও আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদে ভালো আছি। সবাইকে আমার সালাম, আদাব এবং নমস্কার জানিয়ে আজকের পোস্টটি লেখা শুরু করছি।আজকে আমি যে ব্লগ লিখব সেটি বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এবং মিউজিশিয়ানদের ক্যারিয়ার নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
মিউজিক ও আমাদের দেশের অবস্থান:
আমাদের দেশে মিউজিক নামের এই শিল্প টার সাথে অনেক মতাদর্শের মিল অমিল রয়েছে। আমাদের দেশ যেহেতু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, সেহেতু ধর্মীয় দিক থেকে চিন্তা করতে গেলে একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাগ থেকেই এই শিল্প টার ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখা যায়। যাইহোক তারপরও কিছু মানুষ এই শিল্পের চর্চা করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। অনেকেই এই শিল্প টার ব্যাপারে পরিবার থেকে ভালো সাপোর্ট পায় আবার অনেকে পায় না। অনেকে পরিবারের বাইরে গিয়েও এই শিল্পের চর্চা করে থাকে। আর সেটা তখনই হয় যখন এটা নেশা, পেশা এবং একেবারে ভালবাসায় পরিনত হয়। আর এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল আমাদের দেশের বিখ্যাত শিল্পী গুরু জেমস । যিনি কিনা মিউজিকের জন্য তার পরিবার ছেড়ে বোর্ডিংয়ে থেকেছেন এবং মিউজিকের চর্চা করেছেন। তো চেষ্টা আমাদেরকে অনেক ভালো জায়গায় নিয়ে যায় সেটা আমরা জানি। কিন্তু চারপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা এক সময় আপনার চেষ্টাকে দমিয়ে দেয়। আর সেই পারিপার্শ্বিক অবস্থাটাই এখন আমাদের দেশে খুবই বাজে অবস্থায় চলে গিয়েছে। আগের চেয়েও বর্তমানে খুবই কম লোকজন পাওয়া যায় যারা কিনা ভালো ভালো মিউজিক কে প্রমোট করে। ভালো কথা সমৃদ্ধ লিরিক্সের মিউজিক এখন আর চলে না। বর্তমানে যা ভাইরাল তাই হিট।
মিউজিক ক্যারিয়ার ও আমাদের দেশ:
বড্ড তেঁতো হলেও এটাই সত্য যে আমাদের দেশে বর্তমানে মিউজিকের কোন ক্যারিয়ার নেই বললেই চলে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ ক্যাসেট বা সিডি কিনে গান শুনতো।শিল্পীদের জন্য সবচেয়ে সুখকর দিনগুলো তখনই ছিল । তখনকার দিনে শিল্পীদের ইনকাম করা টাকার স্বচ্ছতা ছিল। কিন্তু বর্তমানে অনলাইন প্লাটফর্ম এ ভালো শিল্পীদের মূল্যায়ন খুবই কম। আর কপিরাইট ইস্যু না থাকার কারণে শিল্পীদের ইনকামও শূন্যের কোঠায়। আর বর্তমানে ভালো শিল্পীদের ইউটিউবের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যাও কম। কারণ তাদেরকে গান ভাইরাল হয় না। অপরাধী টাইপ গানের ট্রেন্ডিং এর কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বর্তমানে অনেক ভালো ভালো গান। তাই বর্তমানে আমাদের দেশে বেশিরভাগ যাদের ফ্যামিলি কন্ডিশন ভালো তারাই নিজেদের ইনভেস্টমেন্টে মিউজিক ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারছে।
শিল্পীদের সম্মানী এবং আর্তনাদ:
একজন ডাক্তার যেমন ফ্রিতে সেবা দেয় না, একজন দোকানদার যেমন বিনে পয়সায় খাবার দেয় না,ঠিক তেমনি শিল্পীদের থেকেও বিনে পয়সায় কখনো গান শুনতে চাইবেন না(ব্যাপারটা যদি প্রফেশনালি হয়)। আর সবার কাছে একটি অনুরোধ থাকবে সবসময় গান কিনে শোনার জন্য চেষ্টা করবেন। কারণ একজন শিল্পী যদি শিল্পচর্চা না করত, সে যদি অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত হতো তাহলে হয়তো সে অনেক ভালো ইনকাম করতে পারত। কিন্তু সব জেনেশুনে যে এই প্রফেশনে যে থাকতে চায় তার মানে আপনাকে বুঝতে হবে সে অনেক ডেডিকেটেড। বর্তমানে শিল্পীরা তাদের সম্মানী তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী পাচ্ছে না। করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিল্পীরাই। কারণ কোনো প্রোগ্রাম নেই, স্টেজ শো নেই। আর এই মহামারীর দিনে লকডাউন চলাকালীন সময়ে অনেক শিল্পীর ঘরেই হয়তো চুলা জলে নি।আর এটাই তাদের বর্তমানে লুকায়িত আর্তনাদ। তারা না পারছে কিছু বলতে না পারছে কিছু করতে। একজন ছোটখাটো শিল্পী হিসেবে আমার এই ব্যপারগুলো খুবই খারাপ লাগে। আর এইসব ব্যাপারে চিন্তা করেই আমি কখনো মিউজিকে প্রফেশনালি নেই নি।আর নেওয়ার চিন্তাও করিনি।
গানের নাম: মাওলা আমার সব নিয়া নে
মুল শিল্পী: বারী সিদ্দিকী
খমকঃ সৌরভ হোসাইন
ব্যাঞ্জোঃ @rajib833
ভোকালঃ শরিফুল ইসলাম
কাহনঃ তোফায়েল
গিটারঃ শাহাদাত এবং রাজন
উকুলেলেঃ মামুন
আমার করা শেষ স্টেজ প্রোগ্রাম এটাই ছিল। এই প্রোগ্রামটা দারুণ হয়েছিল ঢাকার ৩০০ ফিটে।একটা ভালো সম্মানীয় পেয়েছিলাম। এখন আর স্টেজ প্রোগ্রাম হয় না,বাজানোর জন্য ডাক ও পাইনা। মাঝে মাঝে স্টেজ শো অনেক মিস করি।পৃথিবী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাক , শিল্পীরাও তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পাক।বর্তমানে আমাদের দেশের শিল্পীদের সবচেয়ে বড় ইনকামের জায়গা হচ্ছে স্টেজ শো।
আমার পোস্টটি ধৈর্য্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 💝
অভিনন্দনে,
@rajib833
একটি সত্যি কথা তুলে ধরেছেন ভাই। মানুষ এখনো ফ্রী গান খুঁজে। তারা বলে শিল্পীদের আবার টাকা লাগবে কেন। এজন্য তারা শিল্পী কে যথেষ্ট সম্মানি দেয় না। এবং এটা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। এই দেশে শিল্পীদের বেঁচে থাকা কঠিন।
আপনি একদম সত্য টাই উপলব্ধি করেছেন।শিল্প জিনিস টা সবাই খালি ফ্রিতেই চায়। এটা খুবই দুঃখ জনক
জ্বী ভাই🙂
টাকার বিনিময় রাতারাতি যেখানে সংগীত শিল্পী হওয়া যাচ্ছে সেখানে মিউজিক নিয়ে ক্যারিয়ার গড়া দুঃস্বপ্নের মত। টেলিভিশনে আজকাল তথাকথিত সংগীতশিল্পী দেখলে খুব কষ্ট হয়, যারা কিনা গানের গ বোঝেনা তাদেরকে আমরা শিল্পী বলে পুরো শিল্পী জাতির অপমান করছি। মেধা আর প্রতিভার মূল্যায়ন আমরা সঠিক ভাবে করতে পারছিনা আর সেজন্যই অনেকের প্রতিভা সুপ্ত অবস্থাতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটুক। শিল্পী তার শৈল্পিক ঘরে ফিরে আসুক, এমনটাই প্রত্যাশা রইল।
অনেক সুন্দর বলেছেন দাদা।মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ 💝
শিল্পীদের নিয়ে অসাধারণ লিখেছেন। ধন্যবাদ আমার অনেক ভালো লাগলো শুভকামনা♥
ধন্যবাদ আপু পড়ার জন্য এবং মুল্যবান মন্তব্যের জন্য
ক্যাসেট দিয়ে গান শুনার যুগটাকে বড্ড মিস করি ভাই।শিল্পীর কদর তো তখনই ছিল মনে হয়।এখন এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চায়না।শখের বসে গান করে এমনটাই বলে।আমাদের দেশের শিল্পীদের অবস্থা করুণ।আমি শুনেছি অনেক শিল্পী টাকার অভাবে চিকিংসা করতে পারেনি।এরকম অনেক উদাহরণ আছে।আপনার কথাগুলোর সাথে আমি একমত। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ভাই।
আমাদের বন্ধু দেশ ভারতেও মিউজিক করে অনেক ভালো ক্যারিয়ার করা সম্ভব যেটা কিনা আমাদের দেশে কখনোই সম্ভব না। দেখে থাকবেন আমাদের দেশে শুধুমাত্র মিউজিক করে কেউ ওরকম ভালো পর্যায়ে যেতে পেরেছে তার কোনো নজির নেই । ধন্যবাদ আপনাকে আমার লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য
শিল্পী বেঁচে আছে বলেই মানুষ বেঁচে আছে বললেও ভুল হবে না। কোন দিক বললাম। যেমন শিল্পীর মধ্যে যেমন গান। গানের মধ্যে হাসি কান্না রাগ অভিমান লুকিয়ে থাকে। এমনকি সমাজ সংস্কৃতি বিপ্লব সবকিছু লুকিয়ে থাকে। শিল্পী বেঁচে থাকুক ।আপনারা এই সত্ত্বাতাও বাঁচিয়া রাখেন। খুব ভালো বাস্তবমুখী লেখনী। পড়ে অনেক কিছু জানলাম।
ধন্যবাদ দাদা আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। প্রত্যেকটা শিল্পী তার শিল্পের মাধ্যমে মানুষের মনে আজীবন বেঁচে থাকে। একটা ভালো শিল্পী তার জীবদ্দশায় তেমন মূল্যায়ন পাইনা। কিন্তু মৃত্যুর পর সবাই উঠেপড়ে লাগে তার মূল্যায়ন দিতে। যেটা খুবই দুঃখজনক
দারুণ ছিল মিউজিক ভিডিও।সত্যি,এটি খুবই দুঃখজনক, যে শিল্পীরা তাদের প্রতিভা দ্বারা মানুষকে আনন্দ দেয় ঠিকই কিন্তু মূল্যায়ন খুব কম পায়।কিন্তু আমাদের দেশে এটি ব্যতিক্রম।ধন্যবাদ দাদা।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদিভাই এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।