আমার বাংলা ব্লগ " প্রতিযোগিতা - ২৫।। মজাদার স্বাদের টক, ঝাল,মিষ্টি বাঁশের আচারের রেসিপি

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

"আসসালামু আলাইকুম"

আমি @rahimakhatun
from Bangladesh
১০ কার্তিক ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।

২৬ অক্টোবর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ ।


এখন ষড়ঋতুর হেমন্তকাল।

মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী সদস্যগনকে আমার সালাম এবং আদাব। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।সবাইকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ। আজকে আমি আপনাদের জন্য প্রতিদিনের মত নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আমি আজ "আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণের জন্য আচারের রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি । প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমাদের সকলের প্রিয় @rme দাদাকে সুন্দর একটি বাংলা প্ল্যাটফর্ম আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।তারপর আমাদের প্রিয় এডমিন এবং মডারেটরদের কে এমন একটা সুন্দর ভিন্ন আঙ্গিকের প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।

বাঁশের আচারের কিছু ফটোগ্রাফি

made by @rahimakhatun
Device- Galaxy A13

বাঁশের আচারের রেসিপির ছবি

ভূমিকাঃ

আমি আজ "আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা ২৫ অংশগ্রহণের জন্য আমার বানানো বাঁশের আচারের রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি। বাঁশ শব্দটির সাথে পরিচিত নয় ,এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। বাঁশ শব্দটি প্রায় প্রতিদিন নানাভাবে ব্যাঙ্গ করে ব্যবহার করা হয়। যাই হোক ,আচারের রেসিপি কনটেস্ট শুনতেই আমার মনে মনে ভাবনা হলো আমি একটি ইউনিক রেসিপি শেয়ার করবো। তারপর আর কি যেই ভাবা সেই কাজ ,তারপর নেমে পড়লাম বাঁশের কোড়ালি / কোড়লির সন্ধানে। আসলে বাঁশের কোড়ালি /কোড়লি সাধারণত বর্ষাকালে হয় ,তার চেয়ে বড় কথা শহরে বাঁশঝাড় নেই বললেই চলে।তারপর ও অনেক কষ্ট করে মেনেজ করেছি ,পুরো একদিন লেগেছে বাঁশঝাড় খুঁজে পেতে ,তবে মেনেজ করে রেসিপি তৈরি করে পোস্ট করতে পারছি তাই ভালো লাগছে।

বাঁশের উপকারিতা

বাঁশের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে
Bambuseae
।বাঁশের নরম অংশকে বাঁশ কোড়লি /কোড়ালি বলা হয়। চীনে বাঁশের কোড়ালি /কোড়লি প্রচুর পরিমানে খাওয়া হয়। আমাদের দেশে তেমন খাওয়া হয় না ,তবে পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন উপজাতিরা বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকে। চীনের অধিবাসীরা বাঁশের কোড়লিকে স্বাস্থ্যকর খাবারের রাজা বলে অভিহিত করেছে।

বাঁশের কোড়ল/কোড়ালি

বাঁশের অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন :
  • উচ্চ রক্ত চাপ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • অধিক পরিমানে ফাইবার থাকায় এটি ওজন নিয়ন্তন করতে সাহায্য করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
  • নানা রোগ নিরাময়ে বাঁশের ভূমিকা অপরিসীম।
  • প্রয়োজনীয় উপকরণ

    প্রয়োজনীয় উপকরনের ছবিগুলা দেওয়া হলো


    উপকরন
    পরিমান
    বাঁশের কোড়ল /কোড়ালি ১ টি
    বিলম্বি ৫/৬ টি
    শুকনা মরিচ পরিমান মত
    রসুন ৫/৬ টি
    সরিষার তেল হাফ কাপ
    চিনি অথবা গুড় হাফ কাপ
    লবন স্বাদ অনুযায়ী
    পাঁচফোড়ন হাফ চা চামচ
    সরিষা সামান্য
    মসলা প্রয়োজন মত
    সিরকা /ভিনেগার ৪ টেবিল চামচ
    তেঁতুল দেড় টেবিল চামচ
    প্রস্তুত প্রনালীঃ


    ১ম ধাপ


    প্রথমে বাঁশের কোড়ল এর খোসা গুলোকে খুব সাবধানে ছাড়িয়ে নিয়েছি।খুব সাবধানে এই কাজটা করতে হবে কারণ খোসার ভিতরে ভিতরে খুব ছোট ছোট কাটা থাকে ,যা হাতে লাগলে হাত অনেক চুলকায়। যাই হোক তারপর আমি ছোট ছোট করে কেটে নিয়েছি। কেটে ভালো করে ধুয়ে সিদ্ধ করার জন্য চুলায় একটি হাড়িতে পানি সহ বসিয়ে দিলাম।


    ২য় ধাপ
    বেশ সময় লাগিয়ে সিদ্ধ করে ,পানি ঝরিয়ে একটু রোদে শুকাতে দিব।
    ৩য় ধাপ
    এই ফাঁকে আমি মৌরি ,সরিষা ,পাঁচফোড়ন ও শুকনো মরিচ ভালো করে টেলে নিবো।
    ৪র্থ ধাপ
    অল্প আঁচে টেলে ভালো করে গুঁড়ো করে নিবো।
    ৫ম ধাপ
    একটি হাড়িতে সরিষার তেল গরম করে নিবো।
    ৬ষ্ঠ ধাপ
    তারপর পাঁচফোড়ন এবং তেজপাড়া দিয়ে সামান্য ভেজে নিবো।
    ৭ম ধাপ
    রসুনের খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে দিয়ে দিবো।
    ৮ম ধাপ
    তারপর কেটে রাখা বাঁশগুলো দিয়ে দিবো।
    ৯ম ধাপ
    তারপর উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিবো।
    ১০ম ধাপ
    তারপর বিলম্বি ও শুকনো মরিচ দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে উঠিয়ে নিবো।
    ১১ তম ধাপ
    তারপর আমি সারারাত রেখে দিয়েছি ,পরের দিন সকালে একটু গরম করে তেতুলের মাড় দিয়ে দিয়েছি। তারপর ভালো করে কষিয়ে নিবো ।
    ১২ তম ধাপ
    তারপর গুড় (মিঠাই ) দিয়ে দিবো। চিনি দিলেও হবে ,তবে গুড় দিলে কালারটা বেশ সুন্দর হয়।
    ১৩ তম ধাপ
    তারপর গুঁড়ো করা মসলা টা দিয়ে দিবো।
    ১৪ তম ধাপ
    তারপর সাদা সিরকা /ভিনেগার দিয়ে দিবো।

    তারপর কিছুক্ষন জ্বাল দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিবো। হয়ে গেলো আমার বিলম্বি ,রসুন ও তেঁতুল দিয়ে বাঁশের আচার। সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেও জানতাম না খেতে কেমন ,কখনো খাওয়া হয়নি। কেমন হবে কেমন হবে করে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ করে বানিয়েছি ,কারণ কাঁচা বাঁশ টা খেতে একটু তিতকুটে লাগে । বানানোর পর দেখলাম কোন তিতকুটে ভাব আর নেই ,খেতেও বেশ টেস্টি হয়েছে।

    আজকের টিপসঃ

    আচার বোয়মে রাখার আগে সামান্য লবন বোয়মে ছিটিয়ে তারপর আচার রাখার পর আবার লবন দিলে অনেক দিন আচার ভালো থাকে ,অর্থাৎ সাদা সাদা ফাঙ্গাস মুক্ত থাকে। তাছাড়া ভিনেগার দিলে আচার অনেকদিন ভালো থাকে। আর অবশ্যই কাঁচের বোয়মে সংরক্ষণ করতে হবে।

    আজ এই অব্দি ,আবার আসবো অন্য কোনো দিন ,অন্য কোন ব্লগ নিয়ে ,সেই অব্দি ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায়।

    ধন্যবাদ সবাইকে

    ডিভাইস Galaxy A13
    লোকেশন ঢাকা
    ফটোগ্রাফি আচারের রেসিপি

    Banner.png

    ডিসকর্ড লিংক:
    https://discord.gg/VtARrTn6ht


    20211003_112202.gif


    JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

    banner-abb4.png

    Follow @amarbanglablog for last updates


    Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

    250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

    Sort:  

    আমি তো জানি বাঙলি বাঁশ দিতে অভ্যস্ত। এখন তো দেখছি বাঙালি বাঁশ দিয়ে আচারও বানিয়ে খায়। আপনি সত্যিই ভিন্নধর্মী তথা ইউনিক একটা আচারের রেসিপি তৈরি করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। জানিনা খেতে কেমন হয়েছে,তবে দেখে সত্যিই মন ভরে গেলো।

    বিশেষ করে আপনি বাঁশের আচারের রেসিপির পাশাপাশি বাঁশের যে উপকারিতার কথা গুলো বলেছেন যে গুলোর কোনটাই আমার জানা ছিলো না। তবে তার মধ্যে -

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

    এটা সেরা ছিল। কারণ এখন তো ঘরে ঘরে কোষ্ঠকাঠিন্য। 🤣🤣

     2 years ago 

    বাঙালি বাঁশ দেওয়া বাঁশ খাওয়া দুইটাই পারে।🤣সব সময়ই তো বাঁশ দিয়েই খেলেন, এখন না হয় আচারই খান।যাই হোক বাঁশের আসলেই অনেক উপকারিতা আছে।ধন্যবাদ

     2 years ago 

    অবশেষে বাঁশের আচার শেয়ার করলেন দেখে সত্যিই ভালো লাগলো। আসলে বাঁশ দিয়ে যে কখনো আচার তৈরি করা যায় তা আজকে প্রথম দেখলাম। সত্যি আপু এই আচার একেবারে ইউনিক হয়েছে।

     2 years ago 

    আপু সত্যি বলতে কি আমি নিজেও প্রথম খেয়েছি,অনেক ভয়ে ভয়ে ছিলাম কি না কি হয়🤣।আসলে বাঁশ যখন কাটছিলাম তখন মুখে খেয়ে দেখেছিলাম একটু তিতা তিতা,তবে ভাপ দেওয়ার পর আর তিতা লাগেনি।ধন্যবাদ আপু

     2 years ago 

    বাঁশ দিয়ে ইউনিক একটি আচারের রেসিপি তৈরি করেছেন।বাঁশ কোড়ালি দিয়ে যে কখনো আচার তৈরি করা যায় তা আমার জানা ছিল না।সত্যি বলেছেন আপু শহরে বাঁশঝাড় নেই বললেই চলে।তারপর ও অনেক কষ্ট করে মেনেজ করেছি ,ইউনিক একটি আচার তৈরি করেছেন।যেনে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

     2 years ago 

    আপু জানা ছিলো না বিদায় তো এখন জানিয়ে দিলাম।এখন খালি মানুষকে বাঁশ দিয়ে যাবেন,মানে আরকি বাঁশের আচার দিয়ে যাবেন 🤣🤣।হা হা।ধন্যবাদ

     2 years ago 

    আমি একবার ও খায় নাই। বাঁশ কোড়ল আচার সম্পূর্ণ ইউনিক একটা রেসিপি। যে বাঁশ গুলো তিতা, ঐ বাঁশ গুলো আগে বেশি করে সিদ্ধ করে নিলে আর তিতা থাকে না।আপনি তো ঐভাবে সিদ্ধ করে নিলেন দেখলাম। খেতে নিশ্চয়ই আর তিতা লাগবে না।মজাই হবে মনে হচ্ছে। প্রতিযোগিতা জন্য অনেক শুভকামনা রইল আপু।

     2 years ago 

    হ্যা, আপু সময় নিয়ে সিদ্ধ করাতে তিতা ভাব একেবারে চলে গিয়েছে। আর হ্যা খেতে বেশ ভালোই হয়েছে। ধন্যবাদ আপু

     2 years ago 

    হাহাহা দিদি আপনি আক্ষরিক অর্থেই সবাইকে বাশ খাইয়ে ছাড়লেন।আমার দেখে সব থেকে ইউনিক রেসিপি ছিলো এটি। বাশের কোড়ল খাওয়ার কথা জানতাম আর খেয়েছিও।কিন্তু সেটা দিয়ে যে আচার তৈরি সম্ভব তা জানতাম না।আশা করি আপনি পুরষ্কারের লিস্টে থাকবেন।অনেক আউট অফ বক্স থিংকিং ছিল।শুভ কামনা রইল আপু।

     2 years ago 

    মাঝে মাঝে বাঁশ খাইয়িয়ে ও পুরষ্কার পাওয়া যায়🤣🤣।এবার যেহেতু জেনে গেলেন বেশি বেশি করে বানিয়ে আমাদের সবাইকে খাওয়াবেন।

     2 years ago 

    বাঁশ দিয়েছে আচার রেসিপি তৈরি করা যায়। সত্যিই এটা আমার অবাক করেছে। আমি এই রেসিপি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এত ইউনিক ইউনিক রেসিপি দেখতে পেলাম সত্যিই আমার খুবই ভালো লেগেছে। এই প্রতিযোগিতার আয়োজন না করলে দেখতে পেতাম না। বাঁশ দিয়ে তৈরি করার আচার রেসিপি পরিবেশন আমার খুবই ভালো লেগেছে। দেখে শিখে নিলাম, হয়তো কোনদিন তৈরি করে দেবো কতটা মজা হয়।

     2 years ago 

    আসলেই অনেক অনেক নতুন নতুন আচারের রেসিপি দেখলাম যা আগে কখনই জানতাম না যে এগুলারও আচার হয়।যাই হোক আপনাদের ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ

     2 years ago 

    বাঁশ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকে অনেক কথা বলে ফেলেছে দেখলাম , তাই আমি আর ঐ পথে গেলাম না 😉। তবে এটুকু বুঝলাম আপনি পুরস্কার না নিয়ে ছাড়বেন না দেখছি।
    আমি রেসিপির নাম শুনে মোটামুটি সকালেই চমকে গেছিলাম। এখন মাথা ঠান্ডা করে দেখছি। সব থেকে অবাক হলাম আপনি বাঁশ ঝাড় খুঁজে বের করে তারপর সেখান থেকে সংগ্রহ করে পুরো আয়োজন টা করেছেন। দারুন লাগলো পুরো ব্যাপারটা। তবে স্বাদের বেলায় মুখে না দিয়ে তো বলা মুশকিল 😅। তাই ওটা নিয়ে আর নাই বাহ্ বললাম ।
    আর বাঁশের যে উপকারী গুণ আছে আগে তো জানতামই না একদম। এখন দেখছি সবাইকে বাঁশ উপহার হিসেবে দেওয়া যেতেই পারে 😅।

     2 years ago 

    আর বলিয়েন না এই বাঁশ নিয়ে কথা শুনতে শুনতে আমি শেষ 🤣।রেসিপি দেওয়ার আগেই জানতাম এমন একটা রেসিপি দিলাম যা নিয়ে অনেক কথা শুনতে হবে।কি আর করার শুনতেই থাকি, আর দেখতেই থাকি।যাই হোক স্বাদটা কিন্তু বেশ ভালোই। ধন্যবাদ আপনাকে