আমার লেখা প্রথম গল্প: নিরব ভালোবাসা।
গল্প: নিরব ভালোবাসা
আসসালামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যদের জানাই শুভ সন্ধ্যা। আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদের জন্য আমার লেখা প্রথম গল্প নিয়ে হাজির হলাম। আশা করি আপনাদের গল্পটি ভাল লাগবে। তো চলুন শুরু করা যাক।
খুব সকাল সকাল জাহিদের আজ ঘুম ভেঙ্গে গেছে। মেসের সবাই যার যার কাজে বের হয়ে গেছে। সকাল ১০টায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে। সামনেই ৪র্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
প্রতিদিনের মতো তৈরী হয়ে মেস থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে বাসের জন্য দাড়ালো। বাস আসার অপেক্ষায় দাড়িয়ে থেকে দেখতে পেল মধ্য বয়সী এক লোকের সাথে ১৯-২০ বছর বয়সের এক কলেজ ছাত্রী এসে বাসস্ট্যান্ডে দাড়ালো।
জাহিদ তাদের দিকে এক দুবার আড়চোখে তাকিয়ে মনে মনে ভাবল লোকটি মনে হয় মেয়েটির বাবা। জাহিদ লক্ষ্য করল মেয়েটি জাহিদের দিকে কয়েকবার আড়চোখে তাকিয়েছে। এবার জাহিদ মেয়েটির দিকে ভালোভাবে একবার তাকিয়ে দেখল, কি মিষ্টি তার চেহারা। কি মায়াবি তার চোখ। জাহিদের মন অশান্ত হয়ে গেল, মনে হচ্ছে ঐ মায়াবি চোখ জোড়া যেন তাকে ডাকছে। জাহিদ আবার মেয়েটির দিকে তাকাতে গেলে মেয়েটিও তার দিকে তাকায়। দুজন দুজনের চোখাচোখি হতেই দুজনই লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নেয়। জাহিদ লজ্জায় আর তাকাতে চায় না কিন্তু তার অশান্ত মন তাকে বারবার মেয়েটির দিকে তাকানোর তাগিদ দিচ্ছে।
এর মাঝে বাস চলে আসল মেয়েটি লোকটির সাথে বাসে উঠে চলে গেল। মেয়েটি চলে যাওয়াতে জাহিদের বুকের ভিতর কেমন যেন কষ্ট হলো। এরই মাঝে জাহিদের বাস চলে আসাতে জাহিদও বাসে করে গন্তব্যে চলে গেল।
সারাদিনের ধকল শেষে জাহিদ সন্ধ্যায় মেসে ফিরে আসলো। মেসের সকলের সাথে প্রতিদিনই গল্প-গুজব ও একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে সে পড়তে বসে। কিন্তু আজ কেনো জানি কোনকিছুতেই কোনভাবেই তার মন বসাতে পারছিল না। তাই সে শোয়ার জন্য বিছানায় চলে আসলো আর মনে মনে ভাবলো এমন তো তার কখনো হয় না, হয়তো সারাদিনের ধকলের জন্য এমন হচ্ছে।
সে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তার ঘুম আসছে না। যতবারই ঘুমানোর চেষ্টা করছে ততবারই সকালের দেখা মেয়েটির মিষ্টি মুখখানা আর মায়াবি চোখ দুটো তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সে মনে মনে ভাবছে ইস আবার যদি মেয়েটির সাথে দেখা হতো। যদি আবার ঐ মায়াবি চোখজাড়া দেখতে পেত। আরো অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়ল টের পেল না।
পরেরদিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মেস থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাড়ালো। বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল মেয়েটি আছে কিনা। তার মন খারাপ হয়ে গেল মেয়েটি নেই দেখে। বাসের জন্য অপেক্ষা করছে সে হঠাৎ দেখতে পেল মেয়েটি বাসস্ট্যান্ডের দিকে আসছে। আজকে আর তার সাথে গতকালকের লোকটি নেই। জাহিদের মনে কেমন যেন ভালো লাগা শুরু হয়ে গেল।
মেয়েটি বাসস্ট্যান্ডে এসে দাড়িয়ে জাহিদের দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল। জাহিদ একনজর মেয়েটির দিকে তাকাতেই তার মনের ভিতর ঝড় উঠে গেল। জাহিদের মনে হচ্ছে মেয়েটি তার অনেক আপন। জাহিদ বারবার তাকাচ্ছে, মেয়েটিও তার দিকে তাকাচ্ছে।
এর মাঝে জাহিদের গাড়ি চলে আসলো তাকে এখন যেতে হবে মনের মাঝে হাহাকার শুরু হয়ে গেল। তার যেতে মন চাচ্ছিল না কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস থাকার কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় যেতে হবে তাই সে সেখান থেকে চলে গেল।
সারাদিন ক্লাস এবং অন্যান্য কাজ শেষ করে সে সন্ধ্যায় মেসে ফিরে আসলো। মেসের সবাইর সাথে গল্প গুজব, পড়ালেখা ও খাওয়া দাওয়া শেষ করে সে শোয়ার জন্য বিছানায় আসলো। আজকেও তার গত রাতের মতো হতে লাগলো। মেয়েটিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে সে ঘুমিয়ে গেল টেরই পেল না।
এভাবে পরপর কয়েকদিন চলতে লাগলো। সে বাসস্ট্যান্ডে প্রতিদিন যায় আসে একজন একজনের দিকে তাকায় মনের মাঝে ভালো লাগা হয় এভাবেই তাদের প্রতিদিন দেখা হতে লাগলো। মাঝে মাঝে মেয়েটি জাহিদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে আবার মাঝে মাঝে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। জাহিদ টের পেল মেয়েটির প্রতি তার এক রকম ভালোলাগা তৈরি হল, মনে মনে সে মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলল।
হঠাৎ কি জানি কি হলো, মেয়েটি কয়েকদিন যাবত বাসস্ট্যান্ডে আর আসছে না জাহিদের মনে মনে ভয় হতে লাগলো, সে মেয়েটিকে হারিয়ে ফেলল না তো? জাহিদ মেয়েটিকে দেখতে না পেয়ে মনে মনে অনেক কষ্ট পেতে থাকে। আসলে জাহিদ মনে মনে মেয়েটিকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।
এভাবে কয়েকদিন চলতে থাকে জাহিদ মেয়েটিকে দেখতে পায় না, মেয়েটিও বাসস্ট্যান্ডে আসে না জাহিদের মনের কষ্ট বাড়তে থাকে। এমনি একদিন জাহিদের এক বন্ধু তাকে প্রস্তাব করল তার সাথে এক আত্মীয়ের বিয়েতে দাওয়াতে যেতে। জাহিদ রাজি হয়ে গেল মেসে থেকে অনেকদিন সে ভালো মন্দ খেতে পারে না দাওয়াতে গিয়ে ভালো-মন্দ খাবে। যেই বলা সেই কাজ দুজন সেই দাওয়াত খেতে আসল। দুজন মিলে কিছু ছবি তুলল, তারপর তারা খেতে বসে বেশ জমিয়ে খেল।
খাওয়া শেষে হাত ধোয়ার জন্য উঠে যেতেই জাহিদ বাসস্ট্যান্ডে আসা মেয়েটির সাথের লোকটিকে এখানে দেখল। মনে মনে জাহিদ খুশি হয়ে গেল লোকটির সাথে মেয়েটিও হয়তো এই অনুষ্ঠানে এসেছে সে চারদিকে মেয়েটিকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু দেখতে পায় না।
এর মাঝে জাহিদের বন্ধু জাহিদকে বলল চল খাওয়াতো শেষ বর আর কনে কে দেখে আসি। দুজন মিলে স্টেজের সামনে গিয়ে বর কনে কে দেখার জন্য দাঁড়ালো।
জাহিদ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না এ কি দেখছে সে। কনে তো আর কেউ নয় তার ভালোবাসা ভালোলাগার বাসস্ট্যান্ডের ঐ মেয়েটি। তার মনের ভিতর যেন বিশাল এক ঝড় বইছে। সে আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না তার দু'চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। তার এই অবস্থা দেখে তার বন্ধু তাকে বলল হঠাৎ কি হলো তোর এভাবে কাঁদছিস কেন। সে তার বন্ধুকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললো চল আমার শরীর খারাপ লাগছে এখান থেকে বাসায় চলে যাই। তারা সেখান থেকে চলে গেল।
পুরো রাস্তায় জাহিদের মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে আর দুচোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে, সে তার নিরব ভালোবাসার মানুষটিকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলল। আর তার বন্ধু না বুঝেই শুধু তাকে জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন সব ঠিক হয়ে যাবে এই বলে সান্ত্বনা দিচ্ছে। জাহিদ কোনদিনই জানতে পারবে না যে স্ট্যাজের ওখান থেকে চলে আসার সময় মেয়েটিও তার চলে যাবার রাস্তার দিকে তাকিয়ে চোখ মুছেছে।
এভাবেই দুটি মনের নিরব ভালবাসার সমাপ্তি ঘটল।
তো বন্ধুরা, গল্পটি কেমন লাগলো। আশা করি ভালো লেগেছে। তবে আমার বাংলা ব্লগে আমি একদম নতুন বিধায় ভুল ত্রুটি হয়েছে আশাকরি সবাই তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ইনশাআল্লাহ সামনে আরো ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো।
আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম। সবাই ভালো থাকবেন।
বেশিরভাগ ভালোবাসা নীরবই থেকে যায় ভাই।
জি ভাই ঠিক বলেছেন আপনি বেশিরভাগ ভালোবাসা নিরবই থেকে যায়। ধন্যবাদ আপনাকে।
গল্পটি দারুন ছিল। এই গল্পের সাথে অনেকের জীবন কাহিনী মিলে যেতে পারে। যাক আমি আপনার পোস্টের বানানের দিকে খেয়াল করছিলাম, খুব ভালো লাগলো কারন ভুল চোখে পরলো না। নতুন অবস্থায় বেশ ভালো পোস্ট করেছেন ভাই।
এগিয়ে যান দোয়া রইল।।
ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। দোয়া করবেন যেন আপনাদের অনুপ্রেরণায় আরো ভালো ভালো পোস্ট করতে পারি।
জাহিদ বাসস্ট্যান্ডের মেয়েটিকে দেখে প্রেমে পড়েছে। মনে হচ্ছে যেনো প্রথম মেয়েটি জাহিদের চোখের ঘুম কেরে নিয়েছে। পরে যখন নিচের দিকে পড়লাম জাহিদ তার বন্ধুর সাথে দাওয়াত খেতে গিয়ে বিয়ে বাড়িতে বাসস্ট্যান্ডের মেয়েটিকে দেখে তার বিয়ে। ভীষণ খারাপ লাগলো। সত্যিই জাহিদের ভীষণ কষ্ট হয়েছিলো গল্পটি পড়ে বুঝতে পারলাম। চমৎকার একটি গল্প শেয়ার করেছেন। আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগলো। আশাকরি আরো চমৎকার চমৎকার আপনার কাছে থেকে গল্পের পোস্ট পাবো ইনশাআল্লাহ। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকুন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। আপনাদের অনুপ্রেরণা আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
কষ্ট লাগলো জাহিদ যাকে পছন্দ করল সেই হলো এই কনে। কিন্তু কিছুই করার ছিল না তখন আর। আসলে আমাদের সমাজে এমন হাজারো ভালোবাসা নীরব সমাপ্তি ঘটে। আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর এই গল্পটির জন্য।
জি আপু আসলেই আমাদের সমাজে এমন অনেক ভালোবাসা আছে যার সমাপ্তি নিরবেই ঘটে। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আপু।
আসলেই ভাই কোন কোন ভালোবাসা এরকমই হয়। প্রথম দেখাতে যাকে নিজের মনের মধ্যে কিছু একটা অনুভূতি করতে পারবেন তার জন্য অনেক কষ্ট হয়। ঠিক যেমন জাহিদের হয়েছিল। আর যখন সেই প্রিয় মানুষটার বিয়ে হয়ে যায় তখন নিজের অজান্তে অনেক কান্না চলে আসে।
আর আপনার সেই গল্পটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া
ভাইয়া আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।