||জলের অপচয় এবং সেটা রোধে কিছুটা সচেতনতা||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

নমস্কার বন্ধুরা


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।

আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি, সেটা হল জল অপচয় রোধ এবং এই অপচয়ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আমরা সকলেই জানি যে যত দিন যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠ থেকে জলের লেয়ার তত নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এতে করে সুদূর ভবিষ্যতে আমরা হয়তো প্রচুর পরিমাণে জলের সংকটে ভুগতে পারি। আমাদের ভূপৃষ্ঠের চারভাগের তিন ভাগ প্রায় জল এবং মাত্র এক ভাগ স্থল রয়েছে। তবে এই তিন ভাগ জলের মধ্যে কত শতাংশ আমরা পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করতে পারি সেটা কি আপনারা জানেন...? পৃথিবীর মোট জলের মাত্র তিন শতাংশ পানের যোগ্য। ১.৬ শতাংশ জল বরফ ও হিমবাহের আকারে রয়েছে। ০.৩৬ শতাংশ জল মাটির নিচে রয়েছে। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখেন যে ভূপৃষ্ঠে এত পরিমাণ জল থাকা সত্ত্বেও আমাদের পানীয় জলের যথেষ্ট কমতি রয়েছে। তবে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আসলে কতটা ভাবি বা জল অপচয় করার আগে একবারও কি চিন্তা করি যে সুদূর ভবিষ্যতে আমাদের পরিস্থিতি কি হতে চলেছে।

faucet-1684902_1280.jpg
সোর্স

আপনারা জানলে অবাক হবেন যে ইতিমধ্যে চেন্নাই, মহারাষ্ট, রাজস্থান, গুজরাট ও কেরালা সহ বিভিন্ন রাজ্যে অস্বাভাবিক জলসংকটে নাজেহাল বিপুল সংখ্যক মানুষ৷ গত বছর গরমের সময় আমি গিয়েছিলাম রাজস্থান আমার এক দিদি বাড়ি ঘুরতে। তবে সেখানকার মানুষের জলের ব্যবহার এবং আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জলের ব্যবহারের ভেতর বিস্তার তফাৎ দেখতে পেলাম। আমরা এখানে যে পরিমাণ জলের অপচয় করি সেই পরিমাণ জল তারা ব্যবহার পর্যন্ত করতে পারে না। আমরা তাও তো যেকোন জায়গায় নলকূপ খনন করলে, সেখান থেকে জল বেরিয়ে আসে। কিন্তু রাজস্থান এ কিন্তু এরকম নয়। সব জায়গায় জল পাওয়া যায় না আর ওখানকার মানুষ প্রতিদিন স্নান করার মতো পর্যন্ত জল পায় না। আর আমরা সেখানে প্রতিদিন কি পরিমান জল অপচয় করি। শুধু আমি পশ্চিমবঙ্গের কথা বাদ দিলাম, আচ্ছা আমি ভারতবর্ষের কথাও বাদ দিলাম। আপনারা পুরো পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশের কথা চিন্তা করে দেখেন কিছু কিছু দেশ তো জলের সংকটে এত পরিমাণে ভুগছে যে তাদের কাছে এক ফোটা জল অনেকটা অমৃতের মত। আমিতো কলকাতা শহরেই বেরোলে দেখতে পাই যে জায়গায় জায়গায় জলের কল খোলা রয়েছে এবং অঝোর ধারায় জল পড়ে যাচ্ছে বন্ধ করার মতো কেউ নেই।

hands-4903050_1280.jpg
সোর্স

বিশেষ করে সরকার থেকে আমাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে টাইম কল করে দেওয়ার জন্য এই অপচয় টা আরো বেশি পরিমাণে হচ্ছে। আমি জানিনা বাংলাদেশে এরকম কোন ব্যবস্থা আছে কিনা তবে আমাদের পশ্চিমবঙ্গে বা পুরো ভারতবর্ষে এমন ব্যবস্থা করা আছে যে দিনের নির্দিষ্ট টাইমে জল আসে অর্থাৎ দিনে তিনবার জল আসে আমাদের ঘরে সরকার থেকে। এবং এই জল আমরা প্রয়োজনমতো ধরে রাখি এটা তো ঠিক তবে অতিরিক্ত যে জল আমাদের অবহেলায় বেরিয়ে যায় সেই বিষয়ে আমরা একবারও সচেতন হই না। আমরা এটা চিন্তা করি যে সরকারি জল নষ্ট হচ্ছে তাতে আমাদের কি। আমাদের তো আর কারেন্ট বিল পুড়ছে না। তবে এর ফলাফল যে কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে সুদূর ভবিষ্যতে সেটা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। বেশ কিছু বছর আগে মাটির নিচের জল সরবরাহ করা হতো আমাদের পুরো ভারতবর্ষে। তবে বর্তমানে গঙ্গার জল পরিশুদ্ধ করে তার সাথে মাটির নিচের জল মিক্সড করে তারপর সেই জল সাপ্লাই করা হয় জায়গায় জায়গায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে জলের লেয়ার প্রতিনিয়ত কতটা নিচে নেমে যাচ্ছে এবং আমরা বিকল্প পদ্ধতি বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছি।

strawberry-3317983_1280.jpg
সোর্স

তবে এই সমস্যার সমাধান যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। এই সমস্যা থেকে আমরা অতি দ্রুত পরিত্রাণ পেতে পারি। তার জন্য আমাদের কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের এটা চিন্তা করলে হবে না যে অন্যেরা কি করে কি করছে। আমি যতটুকু পারবো ততটুকু সচেতন হব আর কি। আমাদের সকলের উচিত প্রয়োজনীয় পরিমাণ গাছ লাগানো এতে করে জলের স্তর কিছুটা হলেও স্থায়ী থাকবে। তারপরেও আমরা যে টাইম কলের জল ব্যবহার করি সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করে পুনরায় আবার সেই কল বন্ধ করে দেওয়া। যাতে করে আমাদের অপ্রয়োজনীয় জলটুকু আবার সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে। এতে করে কি হবে সুদূর ভবিষ্যতে আমরা যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছি তা থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাব। আপনারা আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন তারা কতটা অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছে শুধুমাত্র জলের সংকটের জন্য। তাছাড়া এমন কিছু দেশ রয়েছে যারা তো কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি তৈরি করছে এবং সমুদ্রের জল পানীয় জলে রূপান্তরিত করছে। সেই দিক থেকে আমরা কতটা ভাগ্যবান যে আমাদের অতটাও বিকল্প ব্যবস্থা করতে হচ্ছে না। সুতরাং আমরা সকলে মিলে সচেতন হলে, সেটা আমাদের প্রত্যেকেরই মঙ্গল হবে।

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।

Sort:  
 last year 

আপু কোথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝেনা ঠিক তেমনি । আমাদের যে কোন কাজের পরিকল্পনা সচেতনতা থাকা দরকার। আমরা যেভাবে পানি অপচয় করে থাকি এটা আমাদের এক সময় দুর্ভোগ ডেকে আনবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন ভালো লাগলো।

 last year 

হ্যাঁ ভাই ঠিক বলেছেন, আসলে আমাদের কাছে জিনিসটা এখন অফুরন্ত ভাবে আছে তাই আমরা সেটার গুরুত্ব দিচ্ছি না। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন জলের অপচয় এবং সেটা রোধে কিছুটা সচেতনতা।বর্তমান সময়ে আপনি একটি শিক্ষনীয় পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপু। আসলে সচেতন মানুষ হিসেবে অপচয় রোধ করা আমাদের প্রয়োজন। আসলে আমি নিজে চোখে এগুলা দেখছি যেহেতু ম্যাচে থাকি ছেলে পেলে যদি গোসল করতে যাই ঝরনার পানি ছেড়ে দিয়ে সব সময় দাঁড়িয়ে থাকে। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি পোষ্ট শেয়ার করার জন্য।

 last year 

আপনাদের মেসের ছেলেরা তো তাহলে বেশ ভালোই জলের অপচয় ঘটায় দেখছি। আসলে শুধু তারা না অনেক অসচেতন মানুষই এরকম প্রতিনিয়ত করে থাকে। এগুলোর ফলে আমরা নিজেরাই একদিন বিপদের সম্মুখীন হব, এটা তারা বুঝতে পারছে না।

 last year 

বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আজ আপনি আমাদের মাঝে পোস্ট শেয়ার করলেন। আসলে আমাদের প্রত্যেকটি মানুষকেই পানির অপচয় রোধে এগিয়ে আসা উচিত । তানা হলে অদূর ভবিষতে আমাদের কে অনেক দূর্ভোগের শিকার হতে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

হ্যাঁ আপু এখন থেকে সচেতন না হলে আমাদের সকলকেই একদিন দুর্ভোগের শিকার হতে হবে। তাই সকলে যদি সচেতন হয়ে যায় তাহলে এই দিন হয়তো আর দেখতে হবে না ভবিষ্যতে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

দিনে দিনে জলের লেয়ার সত্যি অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। জানিনা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কতটা কষ্ট করবে। তবে আমারও মনে হয় আমাদের এখন থেকে সচেতন হওয়া উচিত এবং জলের অপচয় রোধ করা উচিত। আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। দারুন লিখেছেন আপনি।

 last year 

হ্যাঁ আপু আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে এখনই আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। আমার লেখা আপনার পড়ে ভাল লেগেছে জেনে, অনেক খুশি হলাম আপু ।ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

আমাদের বাংলাদেশে অবশ্য শহরাঞ্চলে জল অপচয় অনেকটাই কম হয় কারণ সেখানে সিডিউল অনুসারে জলের সাপ্লাই দেওয়া হয় আর শহর অঞ্চলে দেখেছি অনেকটাই জলের হিসাব করে খরচ করা হয় তবে গ্রামাঞ্চলে বিষয়টা ভিন্ন।

 last year 

তাহলে তো ভালোই, আপনাদের বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে জলের অপচয় অনেকটাই কম হয় দেখছি।

 last year 

পানির অপব্যবহার একটা সময়ে নিজেদেরকেই বিপদে পড়তে হবে।আমরা মানুষজন সময় থাকতে সময়ের সৎ ব্যবহার করি না। যার কারণে একটা সময় নিজেদেরই ক্ষতি হয়। তাই আমি মনে করে পানি ব্যবহারে আরো বেশি সচেতন হওয়া দরকার।

 last year 

একদম ভাই, আমাদের সকলকে আরো সচেতন হতে হবে জলের ব্যবহার এর দিকে । তাহলেই আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন, অনেকটাই শান্তিতে কাটবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 57190.65
ETH 2409.68
USDT 1.00
SBD 2.28