|| ভ্রমণ বিষয়ক পোস্ট- ঘাটশিলা ভ্রমণ ||

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

নমস্কার বন্ধুরা


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।

আপনারা তো সকলেই জানেন যে ঘুরাঘুরি করতে আমি কতটা পছন্দ করি। তবে সেরকম সুযোগ খুব বেশি একটা আমার জীবনে হয়ে ওঠে না। তবে গত বছর দিনটার কথা এখনো মনে আছে। হঠাৎ করে আমার দাদা বাড়ি এসে একদিন সবাইকে বলল যে চলো দুদিনের জন্য কলকাতার বাইরে কোথাও ঘুরে আসা যাক। এ কথা শুনে আমি তো প্রচন্ড খুশি। তবে বাবা দেখলাম কোনমতেই যেতে রাজি হচ্ছিল না, যেহেতু প্রচন্ড কাজের চাপ ছিল। অন্যদিকে মা ও যেতে চাইছে না যেহেতু বাবা বাড়িতে একা থাকবে তাই রান্না করে দেবে কে। তবে বাবা দেখলাম মাকে বলল যে তোমার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আমি একদিন না হয় নিজেই রান্না করে খেয়ে নেব। তোমরা বরঞ্চ ঘুরে আসো দুইদিন। এতে করে তোমাদের মন ভালো হবে আর অন্যদিকে তোমাদের একটু ঘোরাঘুরি হয়ে যাবে। আমি আসলে জানতাম না যে দাদা আগে থেকেই ঘাটশিলা যাওয়ার প্লান করে রেখেছিল। যাইহোক যে কথা সেই কাজ, তার দুদিন পর আমরা বনগাঁ থেকে প্রথম ট্রেন ধরে শিয়ালদা তারপর সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে হাওড়া স্টেশন। এরপর সেখান থেকে এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে চলে গেলাম ঘাটশিলা।

InShot_20240320_175848679.jpg

প্রথমেই বলে রাখি এটা হল একটা পাহাড়ি অঞ্চল এবং এই অঞ্চলে প্রখ্যাত লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার একমাত্র পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈত্রিক ভিটা। আমরা সেসব জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে গিয়েছিলাম তবে সবার আগে যেটা দরকার ছিল আমাদের টুকটাক খাওয়া-দাওয়া করা। এ জন্য প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা জার্নি করার পর স্টেশনে এসে আমরা কিছু খাবার দাবার খেয়ে নিলাম। তারপর নিজেদের থাকার জন্য একটা হোটেলের ব্যবস্থা করলাম। এখানে থাকার জায়গার কোন সমস্যা নেই এবং খরচও খুব বেশি একটা বেশি নয়। মোটামুটি হাজার টাকার ভিতরে ভালো থাকার জায়গা হয়ে যায়। যাইহোক থাকার জায়গা যখন কনফার্ম হয়ে গেল তখন আমরা একটা গাড়ি ভাড়া করলাম যাতে করে এই পাহাড়ি অঞ্চল আমরা পুরোপুরি ঘুরে দেখতে পারি। তবে আমরা যে গাড়ি ভাড়া করেছিলাম উনি বলল যে একদিনে পুরো জায়গা ঘুরে দেখা যাবে না। যে কোন একটা সাইড ঘুরে দেখতে হবে এবং সেটা দেখতে দেখতেই মোটামুটি দুপুর হয়ে যাবে।

20230223_092108.jpg

20230223_145242.jpg

এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে কমপক্ষে দুইদিন থাকবো। প্রথমদিকে তো আমরা পাহাড়ি অঞ্চল গুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কারণ এখানকার পাহাড়ি অঞ্চলে আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে এবং তাদের জীবনযাত্রা আমাদের মত এতটা সহজ নয়। আমরা প্রথমে একটা পাহাড়ের উপরে চলে গেলাম গাড়িতে করে তারপর সেখানে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রা দেখে অনেকটাই কষ্ট লাগলো। এই মানুষগুলোকে খাওয়ার জলের জন্য পাহাড়ের উপরে উঠতে হয় এবং তারপর সেখান থেকে জল এনে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। তাছাড়া এসব অঞ্চলে পাহাড়ি বাড়িঘর গুলো আমাদের মত নয়। কিছুটা অন্যরকম ভাবে তারা বাড়িঘর তৈরি করে। তবে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি এসব অঞ্চলে কিন্তু রাতের বেলা ডাকাতি হয়। তাছাড়া মাঝেমধ্যে নাকি এসব জায়গায় বন্য জীবজন্তুরা হামলা করে। আমরা তো প্রথম দিকে খুব ভয় পাচ্ছিলাম কিন্তু পরে বলল যে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, দিনের বেলা কোন সমস্যা হয় না।

20230223_153200.jpg

20230224_090908.jpg

যাইহোক এর পরের দিন ছিল আমাদের মন্দিরে ঘোরাঘুরির পালা সুতরাং এখানে যত প্রকার মন্দির ছিল সব ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম গাড়ি ভাড়া করে। এরপর সেখান থেকে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈত্রিক বাড়ি দেখতে গিয়েছিলাম। আমি আর দাদা তো ভালোই মজা করছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় দিন এসে দেখলাম মায়ের শরীর কিছুটা খারাপ হয়ে গেছে এত ঘুরাঘুরি করার পর। তাই আর বেশি সময় সেখানে না থেকে হোটেল থেকে চেক আউট করে আমাদের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। যথাসময়ের প্রায় ঘন্টা খানেক পর ট্রেন স্টেশনে এসে পৌঁছালো। তারপর আমার সেখান থেকে ট্রেন ধরে হাওড়া স্টেশন এবং তার পর আবার গাড়ি ধরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমরা প্রচুর ঘোরাঘুরি করেছিলাম এবং প্রচুর ফটো তুলেছিলাম। আশা করি আস্তে আস্তে আপনাদের সাথে সেগুলোও শেয়ার করব।

20230224_091334.jpg

20230223_172928.jpg

20230224_150059.jpg

20230224_151759.jpg

20230224_155933.jpg


পোস্ট বিবরণভ্রমণ
ডিভাইসrealme 8i
ফটোগ্রাফার@pujaghosh

আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।





🪔আমার পরিচয়🪔

InShot_20240217_224020693.jpg

আমি পূজা ঘোষ(রাজশ্রী)। বনগাঁতে বসবাস করি। আমি বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, বিজ্ঞান বিভাগে ।পাশাপাশি কম্পিউটার এবং স্পোকেন ইংলিশের কোর্স করেছি। বর্তমানে আমি ফার্মাসিতে অধ্যায়নরত । ভবিষ্যতে এইগুলো নিয়ে ভালো কিছু করার আশায় এগোচ্ছি। কবিতা আবৃত্তি করতে আমি খুবই ভালোবাসি। ছোটো বয়েস থেকেই কবিতা আবৃত্তি শিখছি। এছাড়া ছবি আঁকতে,ঘুরতে যেতে,নতুন নতুন খাবার খেতে,গান শুনতে,ফোটোগ্রাফি করতে আর মানুষের সাথে মিশতে ভালোবাসি।

🎯 সমাপ্ত🎯

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 5 months ago 

পরিবার নিয়ে ঘোরাঘুরির দারুন একটি অনুভূতি শেয়ার করেছেন আপু। ঘাটশীলা ঘোরার মধ্যে থেকে বেশ সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি ও আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।তবে আপনার দাদু যে আগে থেকেই ঘাট শীলা যাওয়ার প্ল্যান করে রেখেছেন শুনে একটু অবাকই লাগলো।আরো অবাক লাগলো ঘাট শিলায় ডাকাতির কথা শুনে।হয়তো আপনার মা হটাৎ একটু অসুস্থ হওয়ার জন্যে ভালোভাবে ঘুরতে পারেন নি।তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হয়েছে।তবে যাইহোক আপনার ঘাট শীলা ঘোরার আরো সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আমরা আগামী পোস্ট এ দেখতে পর্ব এই আশায় বেক্ত করলাম আপু।

 5 months ago 

বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ‍্যায় আমার সবচাইতে পছন্দের একজন লেখক। তার পেএিক ভিটা ওখানে জেনে বেশ ভালো লাগল। আমাদের থেকে পাহাড়ি আদিবাসী মানুষের জীবন যাপন বেশ কঠিন হয়ে থাকে কথাটা ঠিক। প্রথমদিন পাহাড় এবং আদিবাসী গ্রাম এবং পরেরদিন মন্দিরগুলো ঘুরে দেখা বেশ চমৎকার ছিল আপনাদের ঘাটশিলা ভ্রমণ টা। বেশ উপভোগ করেছেন। অনেক সুন্দর ছিল আপনাদের জার্নিটা। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

ঘাটশিলা ভ্রমণ এর খুবই সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি৷ এই জায়গার নাম আমি আগে কখনো শুনিনি৷ আপনার কাছ থেকে প্রথম এই জায়গাটি সম্পর্কে জানতে পারলাম৷ এখানে আপনি খুব সুন্দর কিছু সময় অতিবাহিত করেছেন এবং খুব সুন্দর ফটোগ্রাফি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনি আমাদেরকে সবকিছুই দেখিয়েছেন৷ অসংখ্য ধন্যবাদ এই সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য৷

 5 months ago 

ঘাটশিলা জায়গাটি বেশ সুন্দর। তবে পরিবারের সবাই একসাথে ঘুরতে গেলে মজাই আলাদা। আপনার দাদার কারণে এত সুন্দর জায়গাতে সত্যি সবাই ঘুরতে গেলেন। আর পাহাড়ি অঞ্চলে এমনিতে দেখতে বেশ ভালো লাগে। যদিও আপু এসব জায়গাগুলোতে খরচ একটু বেশি হয়। তবে ঘুরতে গেলে ভালো অভিজ্ঞতা এবং মনও ভালো থাকে। যাই হোক আপনারা ঘাটশিলা ঘুরতে গেলেন এবং খুব সুন্দর অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

 5 months ago 

ঘাটশিলা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমারও আছে দিদি। এই জায়গাটার রয়েছে দুই দিক। এক দিকে মন্দির এবং অপর দিকে রয়েছে পাহাড়। তাই ঘোরাঘুরি করতে গেলে আসলেই দুই দিনের মতো সময় লাগে। তারপরে আবার আপনি যে আদিবাসী গ্রামের মানুষের কথা বললেন, তারা অনেক বেশি অসহায়। আমি নিজে গিয়ে দেখে সেটা উপলব্ধি করেছিলাম। তাদের জল আনতে যে কি পরিমান কষ্ট হয়, সেটা আমি নিজে চোখে দেখেছিলাম। ভালো লাগলো দিদি আপনার ভ্রমণ বিষয়ক এই পোস্ট টি পড়ে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.031
BTC 60795.60
ETH 2627.31
USDT 1.00
SBD 2.58