|| একটি ভয়াবহ ঝড়ের রাতের গল্প ( শেষ পর্ব) ||
নমস্কার বন্ধুরা
গত পর্বে যেখানে শেষ করেছিলাম-
কিন্তু মা দেখলাম বলল যে না এখন বাইরে বেরোনোর দরকার নেই আমরা ভালো আছি। ঝড় যদি একটু কমে তারপর তুমি বাড়ি এসো। তার আগে বাড়ি একদমই আসবে না। আমাদের বাড়ির সামনে একটা নারকেল গাছ এবং একটা কুল গাছ ছিল হঠাৎ করেই কুল গাছের একটা ডাল ভেঙে প্রচন্ড গতিতে আমাদের ব্যালকনিতে এসে পড়ল।। এইসব দেখতে দেখতে আসলে আমরা মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম।
এরপর থেকে-
এরমধ্যে দেখি বাবা আবার আরেকবার ফোন দিয়ে বলল যে রাস্তার পাশে একটা বড় গাছের উপর বাজ পড়েছে। তাই সেখানে আর বেশি সময় থাকা যাবে না। মোটামুটি ঝড়ের তীব্রতা একটু থামলেই বাবা বাড়ি চলে আসবে। এ কথা শুনে তো আমরা আরো ভয় পেয়ে গেছিলাম। মোটামুটি এভাবে কুড়ি বা ২৫ মিনিট চলার পর দেখলাম যে ঝড়ের তীব্রতা কিছুটা কমলো। হঠাৎ করেই বাড়ির দরজায় কে যেন জোরে জোরে নক দিচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো বাবা এসেছে জন্য দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দেখি যে আমাদের পাশের বাড়ির এক কাকিমা। যিনি বাড়িতে একা থাকে। উনি ভয়েতে বাড়িতে থাকতে পারছে না। তাই এই ঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের বাড়ি চলে এসেছে। যাইহোক উনাকে ঘরে ঢুকানোর পর দেখলাম উনিও ভয়েতে প্রচন্ড পরিমাণে কাঁপছে। এর মধ্যে দেখলাম আবার কে যেন আমাদের দরজায় নক দিচ্ছে। এমনিতেই ঝড়ের কারণে দরজা-জানলা সব ভেঙে যাওয়ার মত অবস্থা। যাই হোক আবারো তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে গিয়ে দেখলাম যে বাবা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। এবং তার সারা শরীর ভেজা বৃষ্টির জলে।
তাড়াতাড়ি বাবাকে একটা গামছা এগিয়ে দিলাম। এরপর বাবা গা মুছে বলল যে ওই দিকের অবস্থা আরো খারাপ। রাস্তার উপর বড় বড় গাছ সব ভেঙে পড়েছে। গাড়ি-ঘোড়া চলাফেরা করতে পারছে না। এদিকে প্রচন্ড জোরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর এখানে সেখানে বাজ পড়ছে। রাস্তাঘাটে একটা লোকও নেই। শুধু রাস্তার পাশের বাড়িগুলো থেকে জোরে জোরে চিৎকার আসছে। যাইহোক এইভাবে যে কত সময় ঝড় চলেছিল আমার ঠিক মনে নেই। তবে মোটামুটি কিছু সময় পর দেখলাম ঝড়ের তীব্রতা আস্তে আস্তে কমছে। এমনিতে তো ঘরে কোন প্রকার কারেন্ট নেই তারপর আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। সামান্য দুই একটা মোমবাতি ছিল তাও প্রায় শেষের পথে। তবে আমাদের ভাগ্য ভাল ছিল, যে মহিলাটা আমাদের বাড়ি এসেছিল উনি সাথে করে দুই একটা মোমবাতি নিয়ে এসেছিল।
এরপর বাবা দেখলাম টুকটাক খাওয়া-দাওয়া করল এবং সবাইকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো। যেহেতু আমার জীবনে দেখা এটি সবথেকে বড় ঝড় ছিল এজন্য আমি ভয় একটু বেশি পেয়েছিলাম। আর ওই সময় আমি খুব বেশি একটা বুঝতাম না এতটা ছোট ছিলাম। মোটামুটি রাত তিনটা সাড়ে তিনটা নাগাদ ঝড়ের তীব্রতা অনেকটাই কমে যায়। এরপর আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পেরেছিলাম। তবে পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আমি যেটা দেখলাম সেটা আমি মোটেই দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমি যে এলাকাতে থাকি এটা কি সেই এলাকা...? আসলে গাছপালা, ঘরবাড়ি সব ভেঙে এমন অবস্থা হয়েছিল যে জায়গাটা একেবারেই অচেনা মনে হচ্ছিল আমার কাছে ওই সময়টাতে। সমস্ত রাস্তা ঘাটে গাছ ভেঙে ভেঙে পড়ে আছে যানবাহন চলাচলের একদমই কোন সুযোগ নেই। যদিও কর্পোরেশনের লোকগুলো তখন কাজ শুরু করে দিয়েছে। তবে কারেন্টের কাজে তখনও হাত দেওয়া হয়নি।
ওই সময়টাতে আসলে মানুষের দুরবস্থা দেখে আমরা অনেকটাই কষ্ট পেয়েছিলাম। সব থেকে বেশি কষ্ট হয়েছিল খেটে খাওয়া মানুষগুলোর। সামান্য টাকা-পয়সা জমিয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা ছোট ছোট বাড়ি ঘর তৈরি করেছিল সেগুলো সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেছিল। তাদের কান্নাকাটি গুলো দেখে সত্যিই মন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল সেই সময়টাতে। এরই মাঝে শুনতে পারলাম যে আমাদের এক কাকু যিনি আমাদের পাড়াতেই থাকে উনি নাকি মারা গেছে। রাস্তা দিয়ে আসার সময় নাকি বড় একটা গাছ ওনার গায়ের উপর ভেঙে পড়েছিল এবং জায়গায় উনি মারা গেছে। হয়তো হসপিটালে নিয়ে গেলে বাঁচানো যেত। কিন্তু ওই সময়টাতে আশেপাশে কেউ ছিল না। ঝড় শেষ হওয়ার দুইদিন পর জানতে পারলাম যে আমাদের এই জায়গায় বাজ পড়ে কমপক্ষে ১৩ থেকে ১৫ জন মতো মারা গেছে। সত্যি কথা বলতে ঐ দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখন প্রচন্ড পরিমাণে কষ্ট লাগে।
পোস্ট বিবরণ | গল্প |
---|
https://twitter.com/GhoshPuja2002/status/1791154701523878363?t=8g1NmdZhyBKPgR2_FfDPhg&s=19
আমি শুধু চিন্তা করছি, ওই ঝড়ের রাতে আপনাদের পাশের বাড়ির কাকিমা আসলো কি করে! যাইহোক উনি যদি মোমবাতি না নিয়ে আসতো সাথে করে, তাহলে তো আপনারা বিপদে পড়ে যেতেন দিদি। তবে ভয়াবহ ঝড়ে যে এতগুলো প্রাণ চলে গেল, যেটা শুনে সত্যিই কষ্ট লাগছে। যাইহোক, আপনাদের যে কোন সমস্যা হয়নি, এটাই অনেক। বেশ ভয় লাগছিল প্রথম থেকেই যখন এই ঝড়ের রাতের গল্পটা শোনা শুরু করেছিলাম।