|| গল্প লিখন : শতরূপা ( পর্ব - ০২ / শেষ পর্ব ) ||

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

নমস্কার বন্ধুরা


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।

আজ আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি, "শতরূপা"গল্পটির দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ শেষ পর্বটি নিয়ে। গত সপ্তাহে আমি আপনাদের মাঝে এই গল্পটির প্রথম পর্বটি শেয়ার করেছিলাম। আশা করি সেটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছিল আর আজকের শেষ পর্বটিও আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।


watercolor-1020509_1280.webp

সোর্স


এইভাবে দেখতে দেখতে শতরূপা আর কিংশুক এর কলেজ লাইফ শেষ হয়ে গেল। এরপর কিংশুক আর শতরূপা দুজনেই একই সাথে মাস্টার ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে গেল আর পাশাপাশি চাকরির জন্যও খাটতে থাকলো। দু'বছর পর যখন মাস্টার ডিগ্রী শেষ হয়ে গেল তখন কিছুদিনের মধ্যে কিংশুক একটা ভালো মানের চাকরি বাঁধিয়ে ফেলল। কিন্তু শতরূপা তখনো, চাকরি পায়নি তবে চাকরির জন্য পড়াশোনা করছিল। চাকরি পাওয়ার পর, কিংশুক ঠিক করে নিল এবার বাড়িতে তাদের দুজনের কথাটা জানাবে। শতরূপাও এই বিষয়ে আপত্তি জানালো না।

শতরূপার অনুমতি নিয়ে কিংশুক তার বাড়িতে তাদের দুজনের সম্পর্কের কথাটা জানিয়ে দিল। কিংশুক এর বাড়ি থেকে খুব খুশির সঙ্গে দুজনের সম্পর্কটা মেনে নিল। এরপর তারা শতরুপাদের বাড়িতে বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠালো। শতরূপার মা বাবা প্রথমে রাজি না থাকলেও, অনেক ভাবে তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করানো হলো। এক মাস পর একটি শুভ দিন দেখে শতরূপা আর কিংশুকের শুভ বিবাহের তারিখ ঠিক করা হলো। শেষ পর্যন্ত শতরূপা আর কিংশুক এর বাড়ির লোকেরা তাদের বিয়েতে রাজি হয়ে গেল দেখে তাদের খুশির অন্ত নেই।


couple-5963678_1280.webp

সোর্স


দেখতে দেখতে সেই শুভদিন চলে এলো। খুব ধুমধাম এর সঙ্গে শতরূপা আর কিংশুক এর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হল। মিষ্টি মেয়ে শতরূপা বাপের বাড়িতে ছোটবেলা থেকেই খুব আদর যত্নে বড় হয়েছে। এদিকে ভালোবেসে কিংশুক কে বিয়ে করেছে। কিন্তু তার এই বিবাহই হলো তার জীবনের কাল। বিয়ের পরদিন থেকেই শুরু হয়ে গেল তার শশুর শাশুড়ির অত্যাচার। তার স্বামী অবশ্য খুব বেশি খারাপ তা বলবো না। কিন্তু সে মাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে মা এর কথা কখনো অবিশ্বাস করে না। আর সেটাই হলো তার জীবনের ভুল।

কিংশুক তো সারাদিন বাড়িতে থাকে না ,অফিসের কাজে বাইরে বেরোই। তাই সে তার সদ্য বিবাহিত বউয়ের প্রতি তার মা বাবার আচরণ সে আর দেখতে পাই না। বৌভাতের পরদিন থেকেই বাড়ির প্রায় সব কাজই শতরূপাকে করতে হয়। কিন্তু তাতে তার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তা সত্বেও, তাকে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়। মা এর সাথে সাথে প্রথমদিকে কিংশুক , শতরূপাকেও ভালোবাসত। সেটা দেখেই তার মা এর মনে মনে হিংসে হতো। আর সেখান থেকেই রাগের শুরু। আর সেই রাগের শিকার হতো শতরূপা।


silhouette-3105485_1280.webp

সোর্স


প্রতিনিয়ত কাজের থেকে ক্লান্ত হয়ে ফেরার পর, যখন কিংশুক এর মা তার ছেলের কাছে কান্নাকাটি করে বউয়ের নামে নানা রকমের কথা শোনাতো। তখন প্রতিনিয়ত এই কাহিনী দেখে বিরক্ত হয়ে মা কে খুশি করার জন্য, কিংশুক বাধ্য হয়েই শতরূপার উপরে ভীষণ করত। ধীরে ধীরে কিংশুক এর মনে শতরূপার জন্য ভালোবাসার বদলে ঘৃণা আর রাগের জন্ম নিল। প্রতিনিয়ত রাগারাগি করতে করতে তার এখন অভ্যেস হয়ে গেছে এটা। তাই সবকিছুতেই মা-বাবার সাথে সাথে সেও এখন খারাপ ব্যবহার করে শতরূপার সাথে।

কিন্তু একদিন রাগারাগি করতে করতে সেটা একটা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেদিন সে শতরূপার গায়ে হাত তুলতে শুরু করেছিল। সেই সাথে কিংশুকের মা বাবা ও তাকে সহযোগিতা করছিল ,তার এই অন্যায় আচরণে। এইভাবে প্রচন্ড পরিমাণে রাগারাগি করতে করতে, সে শতরূপাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল। মাটিতে পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই কিংশুক নিজের মধ্যে ফিরে এসেছে, সে দেখল এক মুহূর্তে সাদা পাথরের মেঝে লাল বর্ণ ধারণ করল। তখন কিন্তু বুঝতে পারলো যে কত বড় অন্যায় করে ফেলেছে। কিন্তু তার মা বাবা তখনও তাকে বলছে সে যা করেছে ঠিক করেছে।

কিন্তু মা-বাবার কথা না শুনে সে সেই মুহূর্তে কাঁদতে কাঁদতে শতরূপাকে নিয়ে হসপিটালে চলে গেল। সেই সাথে কিংশুক তার শ্বশুর-শাশুড়িকে এই খবর পাঠিয়ে দিল। খবর পেয়ে তারা তো কাঁদতে কাঁদতে সেখানে গিয়ে হাজির হলো। তাদের সেই ছোট্ট আদরের মেয়েটার আজ এই অবস্থা দেখে তারা প্রায় অর্ধমৃত হয়ে গেছে। শতরূপার দাদা কিংশুক এর কাছে, এর কারণ জানতে চাইলে, কিংশুক বলেছিল মেঝেতে তেল পড়েছিল তাই পায়ে স্লিপ করে নাকি শতরূপা এভাবে পড়ে গিয়েছে। কিন্তু সেটা তার দাদার কাছে মোটেও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। কিন্তু সে সেই মুহূর্তে কিছু বলল না, যেহেতু তার বোন তখনও অসুস্থ।

তবে তার বোন আর সুস্থ হলো না। কোনদিন সে আর তাকে দাদা বলে ডাকলো না। কোনদিন সে আর বলতে পারল না তার সাথে ঘটা অন্যায় অত্যাচারের কথা। কারণ প্রচন্ড পরিমাণে রক্তপাতের কারণে শতরূপা তার প্রাণটাই হারিয়ে ফেলেছে। সকলের প্রিয় আদরের শেষ শতরূপা এই পৃথিবীর বুকে আর নেই। তার মা ,বাবা আর দাদা কান্নায় ভেঙে পড়েছে। তার সাথে সাথে তার সেই ছোটবেলার প্রিয় মানুষগুলোও শতরূপার জন্য দুঃখে ভেঙে পড়েছে। আর তার স্বামী যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল শতরূপা, সে অনুতপ্ত হয়ে আজ নিজের ভিতর কুরে কুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।


সমাপ্ত


পোস্ট বিবরণগল্প লিখন

আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 11 months ago 

শতরূপা গল্পটার প্রথম পর্ব পড়া হয়েছিল, যার কারণে শেষের পর্বটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। শেষের পর্বটা পড়ে আমার কাছে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। তাদের বিয়ে হয়েছিল অনেক সুন্দর ভাবে, কিন্তু এর পর দিন থেকে মেয়েটা আর শান্তিতে থাকতে পারেনি। আর সবশেষে তার স্বামীর হাতেই তার মৃত্যু হয়। আর তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কেউই জানতে পারেনি। সত্যি বেশ দুঃখজনক ছিল।

 11 months ago 

হ্যাঁ ভাই বিয়ের পর থেকে তার জীবনটা অনেক দুঃখের হয়ে উঠেছিল। ধন্যবাদ আপনাকে ,অনেক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 11 months ago 

আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম যেহেতু তাদের ফ্যামিলি মেনে নিয়েছে, তাহলে তারা অনেক বেশি সুখী হবে তাদের জীবনে। কিন্তু বিয়ে হওয়ার পর শতরূপার জীবনে সবথেকে বড় ঝড় এসেছে দেখছি। আর এর কারণেই মেয়েটা নিজের জীবনটাও হারিয়েছে। কাউকে বলতে পারল না নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অবশ্যই শাস্তি হবে এখন না হলেও পরবর্তীতে।

 11 months ago 

সেটা হলেই ভালো হবে আপু ,যারা অন্যায় করেছে তারা যেন শাস্তি অবশ্যই পায়। ধন্যবাদ আপনাকে ,আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 11 months ago 

শতরুপার প্রথম পর্ব পড়ার পর থেকে পরবর্তী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় ছিলাম। আজ শেষ পর্ব টা পড়ে খুব খারাপ লাগলো শতরুপার জন্য। বিয়ের পর শতরুপার মতো যে কতো মেয়ের জীবনে অত্যাচার নেমে আসে। শতরুপার মৃত্যুর আসল রহস্য তার পরিবার জানতে পারলো না। খুবই দুঃখজনক আপনার লেখা শতরুপা গল্পটি।

 11 months ago 

ধন্যবাদ আপু আপনাকে,পোস্টটি করে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59377.35
ETH 2639.75
USDT 1.00
SBD 2.45