|| গল্প : শ্বেতা ||

in আমার বাংলা ব্লগlast month

নমস্কার বন্ধুরা


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।

আজ আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি আবারও নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আজকে একটি গল্প লিখব। প্রতি সপ্তাহে একটি করে গল্প লেখার চেষ্টা করি। সেই ধারাবাহিকতা থেকেই আমার আজকের এই পোস্ট। চলুন তাহলে বেশি কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।


1000080250.jpg

সোর্স


মায়ের ইচ্ছে ছিল মেয়ে হলে নাম রাখবে শ্বেতা আর ছেলে হলে সুদর্শন। তার একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে হয়েছিল, কিন্তু তার গায়ের রঙ হয়েছিল খুবই কালো। এদিকে মায়ের ইচ্ছে মেয়ের নাম রাখবে শ্বেতা,যা মেয়েটির গায়ের রঙের সাথে একেবারেই মানানসই না। তবুও মা কিছুটা জেদ করেই তার নাম রাখল শ্বেতা। এদিকে আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সকলেই নানা কথা বলতে থাকলো। তার মায়ের মনে কষ্ট হতো ঠিকই, কিন্তু মুখ বুঝেই সে সব মেনে নিত। ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠেছে শ্বেতা। স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই তার গায়ের রং এর সাথে বেমানান ভাবে শ্বেতা নাম রাখার কারণ জানতে চাওয়া হতো। মনে ভারী কষ্ট হতো তার। আর মনে মনে তার মায়ের উপর ভীষণ রাগ হত, কেনই বা এমন অদ্ভুত নাম রাখতে গেল মা।

স্কুল - কলেজ থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন সবার মুখে একই কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে শ্বেতা। এখন সে সবার থেকেই দূরে দূরে থাকে। সবার থেকে আলাদা থাকলেই যেন সে ভালো থাকে। এদিকে বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়ায় , বাবা মা তার জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু পাত্র পাওয়া কি মুখের কথা!! যার কাছেই সম্বন্ধ দিতে যাই , সেই বলে " পাত্রি তো বেজায় কালো , লেখাপড়াও খুব বেশিদূর জানে বলে মনে হয় না। তারপর আবার ভীষণ রাগী , মুখের গড়নও তেমন ভালো নয় । কে আর পছন্দ করবে ওকে ? তাও যদি মোটা অংকের ক্যাশ দিতে পারো, তাহলে বলে দেখতে পারি কয়েকজনকে "। শ্বেতার বাবা খুব বেশি অবস্থাবান নয়। সংসারটা শুধু ভালোভাবে চলে। এমন মেয়েকে কেই বা পছন্দ করবে। দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে এই কথাগুলো শুনে নিজের মনেই গুমড়ে গুমড়ে কাঁদে শ্বেতা।

বেশ কয়েকটা জায়গা থেকে পাত্রপক্ষ দেখতেও এসেছে বটে, কিন্তু মুখের উপরেই অপমান করে চলে গেছে। বিয়ের ইচ্ছেটা তার মন থেকে অনেকদিন আগেই চলেই গেছে।এখন শুধু সে একটু ভালোভাবে বাঁচতে চাই। কিন্তু বাঁচতে আর পারলো কোথায়? কিছু অমানুষের দল তার বাঁচার অধিকারটুকুও কেড়ে নিল। রাতের অন্ধকারের নির্জন পথের সুযোগ নিয়ে তার বাঁচার শেষ আশাটুকুও কেড়ে নিল ওরা। তারপর আর বাড়ি ফেরেনি সে। নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে নিজেই ভেসে গিয়েছিল অনেক দূরে। সকালে যখন চারিদিকে শ্বেতার নিখোঁজের খোঁজ পেয়ে নদীর তীরে কিছু মানুষ তার মৃত শরীরটা ভেসে উঠতে দেখল। তখন তার শরীরের ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন প্রমাণ করে দিল তার মৃত্যুর কারণ। ওই কালো মেয়েটাকে দেখতেই আজ বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছে, জীবিত অবস্থায় যাকে সবাই তুচ্ছ করে গেছে।"আচ্ছা কি দোষ ছিল শ্বেতার? জন্ম তো তার নিজের হাতে ছিল না। কালো বলে কি সে মানুষ নয়? তারও যে একটা সুন্দর মন আছে, সেখানে যে প্রতিদিন বহু কষ্ট জমেছে, তা কি কেউ দেখতে পায়নি ? "


পোস্ট বিবরণগল্প

আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।





🪔আমার পরিচয়🪔

InShot_20240217_224020693.jpg

আমি পূজা ঘোষ(রাজশ্রী)। বনগাঁতে বসবাস করি। আমি বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, বিজ্ঞান বিভাগে ।পাশাপাশি কম্পিউটার এবং স্পোকেন ইংলিশের কোর্স করেছি। বর্তমানে আমি ফার্মাসিতে অধ্যায়নরত । ভবিষ্যতে এইগুলো নিয়ে ভালো কিছু করার আশায় এগোচ্ছি। কবিতা আবৃত্তি করতে আমি খুবই ভালোবাসি। ছোটো বয়েস থেকেই কবিতা আবৃত্তি শিখছি। এছাড়া ছবি আঁকতে,ঘুরতে যেতে,নতুন নতুন খাবার খেতে,গান শুনতে,ফোটোগ্রাফি করতে আর মানুষের সাথে মিশতে ভালোবাসি।

🎯 সমাপ্ত🎯

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last month 

আপু আপনার গল্পটা পড়ে শ্বেতার জন্য সত্যি অনেক খারাপ লাগলো। আসলে আমাদের সমাজ এমনি কালো বলে মনে হয়, তার কোন মন নেই। সত্যি শ্বেতার সাথে সমাজের সবার এমন না করলেও পারতো। যাইহোক এই সব নরপশুদের ধিক্কার জানাই। ধন্যবাদ দিদি সুন্দর লিখেছেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 54147.93
ETH 2274.31
USDT 1.00
SBD 2.35