|| রতন জেলে ( পর্ব -০৪ / শেষ পর্ব ) ||
নমস্কার বন্ধুরা
আজ আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি,"রতন জেলে"গল্পটির চতুর্থ অর্থাৎ শেষ পর্ব নিয়ে। গত তিনটি সপ্তাহে আমি এই গল্পটির প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্ব শেয়ার করেছিলাম। আজ তারই চতুর্থ পর্বটি লিখবো। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
রতন যে নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া শুরু করলো , আশেপাশের আরও অনেক গ্রামের জেলেরাও সেখানে মাছ ধরতে যেত। তাই যেদিন রতন নদীতে মাছ ধরতে যেত ,সেদিন সে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তো বাড়ি থেকে। যাতে সে তাড়াতাড়ি মাছ ধরে নিয়ে, বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যেতে পারে। তবে সে যে প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরতে যেত তা নয়, কিছু কিছু দিন পুকুর থেকেও মাছ ধরে নিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে যেত। মোটামুটি সব ধরনের মাছ কমবেশি করে তার কাছে পাওয়া যেত। সে যাইহোক, সেদিন ছিল শুক্রবার, অর্থাৎ হাটবার। যেহেতু , হাটবারে লোকজনের আগমন বেশি থাকে, সেই জন্য রাত পোহাতে না পোহাতেই রতন সেদিন মাছ ধরার জন্য নদীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল।
তবে সেদিন তার দিদার মনে নানা রকমের ভাবনা আসছিল ,তাই সে রতনকে অত সকালে বাড়ি থেকে বের হতে বারণ করছিল। কিন্তু রতন বলল এতদিনেও যখন তার কিছু হয়নি আজও কিছু হবে না। এখন সে এসবের অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। তারপর কিছুদূর যেতে না যেতেই, তার একটু অস্বস্তি হতে শুরু করল। মনে হচ্ছিল যেন কেউ তার পিছু নিয়েছে । কিন্তু পিছন ফিরতে না ফিরতেই সে কাউকে দেখতে পাচ্ছিল না। তাই রতনের মনে মনে একটু ভয় হচ্ছিল। তবুও সে বেশ সাহসের সাথে নদীতে পৌঁছে গেল । ওই নদীতে আবার কুমিরের আনাগোনা ছিল। রতন সেদিন একটু বেশি তাড়াতাড়ি নদীতে পৌঁছে ছিল , গিয়ে দেখল দূরে বসে একজন জেলে মাছ ধরছে আর কেউই সেখানে তখনও এসে পৌঁছায়নি।
দূরের ওই লোকটিকে দেখে রতনের মনে একটু সাহস এলো। রাস্তা থেকে আসার সময় সে যে একটু ভয় পেয়েছিল সেটা নিমেষেই উবে গেল। তাই সাথে সাথেই সে বসে পড়ল মাছ ধরতে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে বেশ কয়েকটি মাছ ধরেও ফেলল। কিন্তু তারপর হঠাৎ করে, তার চোখ গেল দূরে বসে থাকা লোকটির দিকে। লোকটি যেন রতনের দিকেই তাকিয়ে বসে আছে। রতন তাকে মনে একটু কৌতূহল নিয়ে ,জিজ্ঞেস করল "আপনি কি কিছু বলবেন আমায় ?"উত্তর এলো,"না"।রতন একটু অবাক হলো, কিন্তু আবারও মাছ ধরায় মনোযোগ দিল। তবে হঠাৎ করে সে দেখলো, দূরে বসে থাকার লোকটি উধাও হয়ে গেছে। রতন আবারও কিছুটা ভয় পেল।
তখন পিছন ঘোরার সাথে সাথে রতন দেখল, দূরে ঐ লোকটি তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। রতনের দিকে চোখে চোখ পড়ার সাথে সাথেই সে একটা মুচকি হাসি দিল সেই সাথে রতনও একটু হাসলো। তারপর লোকটি কিছুক্ষণ রতনের পাশে চুপচাপ বসে রইল। তারপর যখনই লোকটি দেখল, দূর থেকে নদীর জলের মধ্যে দিয়ে কিছু একটা সামনের দিকে এগিয়ে আসছে , তখনই সে বুঝে গেল ওটা কুমির ছাড়া আর কিছু নয়। তবে রতনের তো সেসব দিকে খেয়াল নেই সে নিজের মনের মাছ ধরছে, আর সেই সুযোগেই লোকটি পিছন থেকে রতনকে নদীর জলে জোরে একটা ধাক্কা মেরে ফেলে দিল।
জলে পড়ার সাথে সাথেই, কুমির দেখে রতন "আমাকে বাঁচাও,আমাকে বাঁচাও" বলে চিৎকার করতে শুরু করল। কিন্তু আশেপাশে তো তখন অন্য কোনো লোক ছিল না। যে ছিল সেই তো তাকে কুমিরের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বলতে না বলতেই, কুমিরটি রতনের পা টেনে ধরল, রতন আরও জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকলো , কিন্তু কেউ সেখানে এসে পৌঁছালো না। রতনও আর চেষ্টা করেও সামনের দিকে এগোতে পারল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই নদীর জল রক্তের স্রোতে লাল হয়ে উঠল আর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কুমিরের খাদ্য হিসেবেই প্রাণটা চলে গেল রতনের। ক্ষতবিক্ষত করে দিল রতনের সুন্দর দেহটিকে।
সমাপ্ত
পোস্ট বিবরণ | গল্প লিখন |
---|