|| গল্প : নিষ্ঠুর ভালোবাসা ||

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

নমস্কার বন্ধুরা


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।

আজ আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি আবারও নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজকে একটি গল্প লিখব। অনেকদিন কোনো গল্প লিখিনি। তাই কোনো টপিক খুঁজে পাচ্ছিলাম না গল্প লেখার। আজকের গল্পটা খুব একটা ভালো হয়েছে কিনা জানিনা তবুও চেষ্টা করলাম। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।


1000072165.webp

সোর্স


হঠাৎ করেই একদিন মুক্তা মনোজকে ছেড়ে চলে গেল। বেশ সুখেই সংসার করছিল দুজন। কিন্তু হঠাৎ এই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় সবাই বেশ অবাক হল। ১৫ বছর বয়সেই মনোজের হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল মুক্তা। মনোজের বাবা-মা কেউই ছিল না , সেই মায়ায় পড়েই মুক্তা মনোজের সাথে বেরিয়ে এসেছিল। মুক্তার সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো। এদিকে মনোজকে তার সাথে একেবারেই মানায় না। মুক্তার পরিবারের কেউ তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেয় নি। মনোজ তখন ভালো কোনো কাজ করত না। তবুও মনোজের হাত ধরে বেরিয়ে এসেছিল সেই ছোট্ট মেয়েটা। কি খাবে, কি পড়বে এসব কোনো বিষয়ে চিন্তা ছিল না। কিন্তু বাস্তব বড়ই কঠিন, কিছুদিন পর থেকেই সেটা টের পেল।

মুক্তার বাপের বাড়ির অবস্থা বেশ ভালো। গলায় আর হাতে সোনার চেন আর আংটি ছিল। সেগুলো বিক্রি করেই কিছুদিনের খরচা চালাতে পেরেছিল। মনোজের নিজস্ব কোনো বাড়ি ছিল না। টিভি সারাই এর একটা দোকানে কাজ করতো, আর সেখানেই রাতে ঘুমিয়ে পড়তো। কিন্তু এখন তার নতুন সংসার হয়েছে, তাই আলাদা করে ঘর নিতে হল। ঘর ভাড়া,খাবার খরচ মোট মিলিয়ে সংসার চালানো বেশ মুশকিল হয়ে উঠছিল। তবুও হাসি মুখে সবকিছু মেনে নিয়েছিল মুক্তা। প্রায় তিন বছর পর মুক্তার কোল আলো করে সুন্দর একটা ছোট্ট ফুটফুটে ছেলে হয়েছিল। ছেলে ছিল বাবার প্রাণ। তিনজনের ছোট্ট সংসারটা দেখেও ভালো লাগতো।

ইতিমধ্যে মনোজ অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে নিজেই একটা টিভির দোকান খুলে নিয়েছে।প্রায় সাত বছর পর তারা জমি কিনে ছোটখাটো একটা বাড়ি করেছিল। মুখটা খুশি হয়ে পাড়ার সবাইকেই বলে বেড়াতো তার বাড়ির কথা। তার দুঃখের দিন যেন এবার ঘুচতে চলেছে। কিন্তু সত্যিই কি দুঃখের দিন ঘুচলো? নাকি দুঃখ এসে দেখা দিল। কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তা আর মনোজের মধ্যে প্রচন্ড পরিমাণে ঝগড়া ঝামেলা হতো শুরু করল। প্রায়ই তাদের ঘর থেকে ঝগড়ার আওয়াজ পাওয়া যেত। ইতিমধ্যেই তাদের বাড়ি কমপ্লিট হয়ে যাওয়ায় তারা নতুন বাড়িতে উঠে পড়ল। বেশ জাকজমক করে গৃহ প্রবেশ করেছিল। সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছিল ঘরবাড়ি, মনে হতো যেন কোনো প্রাসাদ। কিন্তু এত সুখ মুক্তার কপালে সইলো না।

যেদিন হঠাৎ মুক্তা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। জানা গেল মনোজ আবার নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এই জন্যই তাদের প্রায় অশান্তি হতো। অনেক আটকানোর চেষ্টা করেছে মুক্তা মনোজকে, কিন্তু কিছুতেই পারে নি। শেষ পর্যন্ত মনোজের যার সাথে সম্পর্ক, সেই মেয়ের বাড়িতে গিয়েও ঝামেলা করেছিল মুক্তা। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। উল্টে মনোজ আর সেই মেয়ে মুক্তাকে ভীষণভাবে অপমান করেছিল। সেই যে বাড়ি এসে জামা কাপড় গুছিয়ে নিয়ে মুক্তা চলে গেল আর ফিরে এল না। ছোট্ট ছেলেটিকে নিয়ে যেতে চাইলে সেও গেল না। কিছুদিন পর শোনা গেল মুক্তার মাথার সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাগল হয়ে চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে রয়েছে সে এখন।


পোস্ট বিবরণগল্প লিখন

আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।





🪔আমার পরিচয়🪔

InShot_20240217_224020693.jpg

আমি পূজা ঘোষ(রাজশ্রী)। বনগাঁতে বসবাস করি। আমি বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, বিজ্ঞান বিভাগে ।পাশাপাশি কম্পিউটার এবং স্পোকেন ইংলিশের কোর্স করেছি। বর্তমানে আমি ফার্মাসিতে অধ্যায়নরত । ভবিষ্যতে এইগুলো নিয়ে ভালো কিছু করার আশায় এগোচ্ছি। কবিতা আবৃত্তি করতে আমি খুবই ভালোবাসি। ছোটো বয়েস থেকেই কবিতা আবৃত্তি শিখছি। এছাড়া ছবি আঁকতে,ঘুরতে যেতে,নতুন নতুন খাবার খেতে,গান শুনতে,ফোটোগ্রাফি করতে আর মানুষের সাথে মিশতে ভালোবাসি।

🎯 সমাপ্ত🎯

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 4 months ago 

আপু আপনার গল্পটি পড়ে সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগলো ।প্রথমদিকের টা পড়তে বেশ ভালই লাগছিল ।শেষের করুন পরিণতি সত্যি ভীষণ কষ্টদায়ক ছিল ।কষ্টের সময় মুক্তা মনোজের সঙ্গে থাকলো ।কিন্তু সুখের সময় তাকে চলে যেতে হল ।এ ধরনের ঘটনা সত্যি মেনে নেওয়া ভীষণ কষ্টকর। যার কারণেই মুক্তার মাথায় সমস্যা হয়েছে। যাই হোক বেশ ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে ।ধন্যবাদ আপনাকে।

 4 months ago 

সত্যি ঘটনাটা ভীষণ বেদনাদায়ক আপু । ভাবলেও অনেক বেশি খারাপ লাগে। পোস্টটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 4 months ago 

জীবনে কাউকে সত্যিকারে ভালোবাসার আগে পরখ করে দেখতে হয়, চরিত্র, চিন্তা ভাবনা, ধ্যান ধারণা আর কতটুকু মায়া মমতা মানুষটার মধ্যে আছে। প্রায়শই দেখা যায় আজকাল, বাহ্যিক বেশভূষা আর মনোভাব একরকম থাকে।
কখনো বিয়ের কিছুদিন পর সেই চিন্তাধারা পাল্টে যায়, ভালোবাসায় ভাটা পড়ে। তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপর্যয় নেমে আসে। কেউ সর্বস্বান্ত হয়, আপনার গল্পটিই তার উদাহরণ।

যা হোক, গল্পটি পড়ে বাস্তবতার অনেকখানি দেখা পেলাম। বেশ দারুণভাবে গুছিয়ে সুন্দর ভাষায় বর্ণনা করেছেন। জীবন্ত চিত্রময় মনে হলো।
ধন্যবাদ জানাই । 💐

 4 months ago 

সুখ-দুঃখ নিয়ে জীবন তা জানি।তবে ভালোবেসে বিয়ে করে পরের পরিনতি গুলো এমন হয় সত্যিই মানা যায় না।এটা যদিও গল্প, তবে বাস্তবে এমন অনেক হয়। মুক্তার জন্য খারাপ লাগলো। আসলে কি আর বলবো।সব ভালোবাসার সম্পর্ক গুলো এমন হয় কেন??

 4 months ago 

আপু আপনার লেখা আজকের গল্পটা পড়ে সত্যি খুবই খারাপ লেগেছে। আসলে কিছু কিছু ভালোবাসা এরকমই নিষ্ঠুর হয়ে থাকে। যে মেয়েটা এত অল্প বয়সে মনোজের হাত ধরে চলে এসেছিল তার সুখের জীবন ছেড়ে, সে মেয়েটা শেষ পর্যন্ত মনোজের সাথে সুখে থাকতে পারলো না। শুধুমাত্র মনোজের নিষ্ঠুর ভালোবাসার জন্য। কত সুন্দর সুখের সংসার চলছিল তাদের। কিন্তু মনোজ অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিল। যেটা তাদের সংসারটা ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে একটা মেয়ে কিভাবে সংসার করবে। তাকে তো আসতেই হতো। কিন্তু সে এখন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছে বিষয়টা ভাবতেই খারাপ লাগতেছে।

 4 months ago 

এরকম কিছু মানুষের জন্য ভালোবাসাটাই অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। ভালোবাসা নিষ্ঠুর হয়না মানুষ নিষ্ঠুর হয়ে থাকে। মনোজের খারাপ সময় থেকে শুরু করে ভালো সময় পর্যন্ত মুক্তা তার পাশে ছিল তাও আবার হাসিমুখে সবকিছু মেনে নিয়ে। তার খারাপ সময়ে কখনো তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার চিন্তাও করেনি। কিন্তু মনোজ মুক্তার সাথে এরকম কিছু করবে এটা তো একেবারে ভাবতেই পারিনি। মনোজ কিভাবে পারলো মুক্তার মত এরকম একটা মেয়েকে ঠকিয়ে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে যেতে। এরকম কিছু মানুষের জন্য ভালোবাসাটা নিষ্ঠুর হয়। মুক্তার মাথার সমস্যার কথাটা শুনে খারাপ লেগেছে অনেক বেশি।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.20
JST 0.033
BTC 92584.54
ETH 3110.84
USDT 1.00
SBD 3.06