|| বারাসাতের কালী পুজো (ছাত্রদল ক্লাব) ||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

নমস্কার বন্ধুরা


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।

আজ আমি আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি, গত বছরের কালীপুজো ভ্রমণ নিয়ে। বেশি কথা না বাড়িয়ে, চলুন শুরু করা যাক।


InShot_20231003_225311041.jpg


কালী পূজা মানেই হলো বারাসাত, এই কথাটার প্রচলন হয়তো আপনারা অনেকে শুনেছেন। যেহেতু এখানে অধিকাংশ লোক কলকাতার বাইরের সুতরাং তাদের কাছে হয়তো ব্যাপারটা পুরোপুরি জানা নাও থাকতে পারে। তবে যারা কলকাতার বাসিন্দা বা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন তারা অনেকেই জানেন যে কালীপুজো মানেই হল বারাসাত। বারাসাত এর কালী পূজা আসলে এতটাই বিখ্যাত যে কলকাতার বাইরে থেকেও প্রচুর লোকের সমাগম হয় পুজোর সময়টাতে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় আনন্দের উৎসব হলো শারদীয় দুর্গাপূজা। তবে সেটা কলকাতায় যেমনটা জমজমকপূর্ণ ভাবে হয়ে থাকে তেমনি আমাদের বারাসাতেও কালীপুজো ততটাই জাঁকজমকপূর্ণভাবে সংঘটিত হয়। আমি বারাসাতে এসেছি বছর দুয়েক বা তার একটু বেশি হবে এবং এখানে আসার পরে আমার সর্বমোট দুই বছর বারাসাতের কালী পূজা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। যদিও প্রথম বছর তেমন বাইরে ঘোরাঘুরি করিনি। তবে দ্বিতীয় বছর বাবা মায়ের সাথে যতটা সম্ভব ঘুরে ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছি।


20221025_211125.jpg


বারাসতের কালীপুজো সর্বমোট দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি হলো রেললাইনের এক প্রান্ত এবং রেল লাইনের ঠিক অপরপ্রান্ত অর্থাৎ পূর্ব দিক এবং পশ্চিম দিকে এই দুটো অংশে বিভক্ত। আসলে রেললাইনে অপরপ্রান্ত বলতে আমি হেলাবটতলা থেকে শুরু করে নীলগঞ্জ পর্যন্ত যতগুলো কালীপুজো হয় ততগুলোকেই বোঝাতে চেয়েছি। বারাসাতের কালী পূজা বলতেই শুধু যে বারাসাতে সীমাবদ্ধ থাকে তা কিন্তু নয় এটা নীলগঞ্জ পর্যন্ত একই আমেজ থাকে। যাই হোক কালীপুজোর ঠিক দুইদিন আগে মা এসেছিল আমার এখানে। যদিও বাবা তখন আসতে পারিনি। তবে আমরা যেদিন ঘুরতে বেরোবো ঠিক সেইদিন সকাল নাগাদ আমাদের বাড়ি এসে পৌঁছায় বাবা এবং আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে রাতে খাবার দাবার খাওয়া শেষ করে তারপর কালীপূজা দেখতে বেরবো। কারণ সন্ধ্যা হলেই প্রচন্ড পরিমাণে ভিড় থাকে এবং রাতে কিছুটা কমে। যদিও খুব বেশি একটা কমেনা। তবে সন্ধার তুলনা অনেক বেশি কমে যায়। যেহেতু সারারাত বাজার ঘাট খোলা থাকে, তাই খাবার দাবার এর কোন সমস্যা হয় না। যাই হোক আমরা প্রথমে বারাসাতের বেশ কিছু বিখ্যাত কালীপুজো দেখে নিলাম এরপর চলে আসলাম হেলাবটতলায়। হেলাবটতলায় বিখ্যাত পুজো গুলোর ভিতরে ছাত্রদল ক্লাবের পুজো বরাবরই অনেক সুন্দর ভাবে করে এবং তারা অনেকটা জায়গা জুড়িয়ে বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর থিমের মাধ্যমে তাদের পুজো সম্পন্ন করে।


20221025_211144.jpg


যাইহোক আমি মা এবং বাবা প্রায় আধা ঘন্টা ভিড় ঠেলে তারপর পুজো মণ্ডপে ঢোকার সুযোগ পেলাম। তবে ভিতরে গিয়ে দেখি ডেকোরেশন এত সুন্দর এবং আলো চকচকে যে আসলে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। এবারে পূজোয় তাদের থিম ছিল বাঙালি সংস্কৃতি বা কালচার এবং কিছু রাজা-বাদশাদের ঐতিহাসিক থিম। সত্যি কথা বলতে বারাসাতের কালী পূজা দেখার একটাই সুবিধা হলো যে এখানে ভিড় খুব বেশি থাকলেও যারা এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে তারা খুব বেশি একটা প্রেসার ক্রিয়েট করে না। যেমনটা হয় কলকাতার দুর্গাপূজা দেখার সময়। অর্থাৎ আপনি দাঁড়িয়ে এক মিনিট ঠিকঠাক মতো ঠাকুর দেখতে পারবেন না, তার আগেই আপনাকে ঠেলে সামনের দিকে দিয়ে দেবে। যাইহোক প্রথমেই পূজা মন্ডপের এক কর্নর থেকে ফটো তোলা শুরু করলাম। তারপর বাবা-মায়ের কিছু ফটো তুললাম। এরপর আমার নিজের কিছু ফটো তুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে দেখি মন্দিরের সুন্দর ডেকোরেশন এবং তার ভিতরে রয়েছে মা কালীর মূর্তি। সত্যি কথা বলতে যত ক্লান্তি ভিড় ঠেলে হয়েছিল শুধুমাত্র মায়ের মুখ দেখার পরবর্তী সময় সেই ক্লান্তি নিমিষেই কেমন জানি দূর হয়ে গেল।


20221025_211219.jpg


আসলে আমরা এখানে অনেকটা সময় কাটিয়েছিলাম। প্রায় আধা ঘন্টার মত সময় কাটিয়েছিলাম। কারণ ভেতরকার দৃশ্য এত সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর ছিল যে মনে হচ্ছিল প্রত্যেকটা জিনিস সুন্দর করে অবজার্ভ করি। তবে বাবা আবার বলছিল যে নীলগঞ্জের ওইদিকটা নাকি সুন্দর ঠাকুর করেছে তাই ওদিকে একটু যেতে হবে। এই জন্য আসলে আর সেখানে বেশি সময় দাঁড়াতে পারিনি এরপর আমরা ভেতর থেকে টুকটা কিছু খাবার দাবার এবং আইসক্রিম খেয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যেতে যাব এমন সময় দেখি যে পূজো মন্ডলের একটা অংশ আমাদের দেখাই হয়নি এবং ওই জায়গার ফটো তোলাও হয়নি। তাই ঝটপট সেই জায়গাটা সুন্দর করে দেখে এবং পুরো জায়গাটা আর একবার ভালো করে অবজার্ভ করে পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে আমরা রওনা দিলাম। আসলে ঐদিন আমরা বলতে গেলে সারা রাতই পূজো দেখেছিলাম। খুব সম্ভবত ভোর পাঁচটা নাগাদ আমরা ঠাকুর দেখে বাড়ি আসি। যথেষ্ট ক্লান্ত ছিলাম তবে এত জায়গা ঘুরে এবং ঠাকুরের মূর্তি দেখে সত্যিই মনটা অনেক ভালো হয়ে গেছিল।


20221025_211139.jpg


ডিভাইসrealme 8i
ফটোগ্রাফার@pujaghosh
লোকেশনবারাসাত

আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68859.42
ETH 2732.07
USDT 1.00
SBD 2.73