[ভ্রমণ বিষয়ক পোস্ট]:- চায়না টাউন ভ্রমণ
নমস্কার বন্ধুরা
যারা কলকাতার আশেপাশে থাকেন, চায়না টাউনের প্রতি তাদের একটা অন্যরকম আকর্ষণ রয়েছে। এটার পেছনের সবথেকে বড় কারণ হলো চাইনিজদের অথেন্টিক খাবার এবং তাদের কালচার যেটা আমাদের বাঙ্গালীদের সাথে একেবারেই মেশে না এবং তারা একটু ভিন্ন ধরনের জীবন যাপন করে সেজন্য ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এবং খাবার প্রেমী মানুষ প্রতিনিয়ত চায়না টাউনে চলে যায় ঘোরাঘুরি করতে এবং তাদের অথেন্টিক খাবার খেতে। যদিও চাইনিজ খাবার যেগুলো বাঙালিরা খায় ওইগুলো ছাড়া অন্যান্য খাবার খুব বেশি একটা ভালো লাগে না আমার। কারণ এর আগেও আমি খেয়েছি। তবে বেশ কিছুদিন আগে বলতে গেলে অ্যাক্সিডেন্টলি আমার ওখানে যাওয়া হয়েছিল বৌদির সাথে। শুধুমাত্র যে খাবার খাওয়ার জন্য তা নয়, একটু ঘুরে দেখা এবং ভালো সময় কাটানো এটাই ছিল আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। যাইহোক চায়না টাউনের দুই ভাবে যাওয়া যায় একটা শিয়ালদা স্টেশন থেকে আর একটা দমদম থেকে মেট্রো ধরে। তারপর আবার গাড়ি করে যেতে হয়। আমরা যেহেতু ডাক্তার দেখিয়ে শিয়ালদা স্টেশনে এসেছিলাম তাই ওখান থেকে সরাসরি বাস ধরে চলে গেলাম চায়না টাউন। এই চায়না টাউন এর রয়েছে একটা অন্যরকম ইতিহাস।
সাল ১৭৯৮, এক চিনা ব্যবসায়ী কলকাতায় আসেন এবং ঘাঁটি গাড়েন ট্যাংরা এলাকায়। মনে করা হয় আধুনিক ভারতের প্রথম চিনা নাগরিক তিনিই। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল হেস্টিংসের অনুমতিক্রমে ট্যাংরায় একটি চিনির কারখানা কিনে ফেলেন তিনি। এরপর থেকে এক বড়ো সংখ্যায় শুরু হয় চিনাদের কলকাতা আসা। এরপর থেকে আসলে সেখানে চাইনিজদের আগমন দিন দিন বেড়ে চলেছে এবং তারা এখানে রেস্টুরেন্ট, বাড়ি-ঘর সহ একটা বড় ভালো রকমের বসতি স্থাপন করেছে। যাই হোক আমরা বলতে গেলে ওখানে পৌছালাম দুপুরের দিকে। যেহেতু সকালের দিকে খাবার যেমন মোমো ,সচেজ সহ তাদের কিছু ট্রেডিশনাল খাবার রয়েছে, যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো আমরা মিস করে ফেললাম। অর্থাৎ আমাদের সেখানে গিয়ে দুপুরের লাঞ্চ খেতে হবে। যেহেতু জায়গাটা বৌদির কাছে নতুন ছিল এবং আমিও ঠিকঠাক চিনি না। তাই আমাদের লোকের কাছে শুনে শুনে যেতে হচ্ছিল যে এখানে ভালো রেস্টুরেন্ট কোথায় আছে এবং ঘুরার জায়গা কোথায় ভালো। সত্যি কথা বলতে এখানকার প্রত্যেকটা রেস্টুরেন্টই প্রায় একই রকম তবে কিছু বাঙালি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেগুলোর খাবার নাকি ওদের থেকে আরো অনেক বেশি ভালো। এজন্য আমরা সেদিকেই লক্ষ্য করে এগোতে লাগলাম।
সত্যি কথা বলতে এটা বলতে খারাপ লাগছে যে এখানকার মানুষজন খুবই অপরিষ্কার আর অপরিচ্ছন্ন। সাধারণত আমাদের বাঙ্গালীদের পাড়া বা গুলি যেরকম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় এদের ক্ষেত্রে ততটা নয়। এরা অনেকটাই নোংরা ভাবে জীবন যাপন করে যেটা দেখলাম। তারপর আবার ড্রেন এর ভিতর নোংরা জিনিসপত্র ফেলে পুরো পরিবেশটাকেই নোংরা করে রেখে দিয়েছে। আর এদের গলি গুলো অনেকটা ছোট ছোট এবং বাড়িঘর গুলো অন্যরকম যেটা আমাদের বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে সাধারণত হয় না। তাছাড়াও রেস্টুরেন্ট এর ভেতরের ডেকোরেশনটাও অন্যরকম। তারা সব সময় চেষ্টা করে তাদের কালচারটাকে ধরে রাখার জন্য। বাড়িঘর এবং রেস্টুরেন্ট সবই তাদের ওই জায়গার অথেন্টিসিটিকে রিপ্রেজেন্ট করে। যাইহোক যেহেতু গলি গুলো অনেক ছোট ছোট এবং ঠিকঠাক করে চিনতে পারছিলাম না। তাই পাঁচ মিনিট পরপর লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করে করে সেখানকার ঠিকানা জানতে হচ্ছিল। তবে এখানে চাইনিজরা যতটা না খেতে আসে তার থেকে বাঙ্গালীদের ভিড় অনেক বেশি এবং অনেক বড় বড় ইউটিউবাররা এখানে এসে খাবার খেয়ে তাদের রিভিউ দিয়ে গেছে।
যাই হোক আমরা অনেক ঘুরাঘুরি করে খুব ক্লান্ত হয়ে গেলাম। আর যেহেতু ভেতরের পরিবেশটা এবং বাইরের আশেপাশটা অনেক নোংরা ছিল এজন্য চিন্তা করলাম যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে খেয়ে বেরিয়ে যাবো। কারণ এখানকার পরিবেশ নোংরা হলেও খাবার খেতে অনেকে অনেক বেশি টেস্টি। বিশেষ করে বাঙ্গালী চাইনিজ স্টুডেন্ট এ। আমি আর বৌদি একটা বাঙালি রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলাম। যদিও নামটা ভুলে গেছি, তবে সেখানে গিয়ে মিক্সড চাওমিন এবং স্টিম মোমো আর কি যেন একটা খাবার অর্ডার করেছিলাম যেটার নাম মনে করতে পারছি না। সত্যি কথা বলতে খাবারগুলো অসাধারণ টেস্টি ছিল, যেটা আমাদের ওই দিকটাতে এত সুন্দর টেস্টি খাবার পাওয়া যায় না। তারপর আবার সেখান থেকে আশেপাশের কিছু জায়গা ঘুরে, বিশেষ করে একটা মন্দির ছিল চাইনিজদের যেটা আমার কাছে একটু অন্যরকম মনে হয়েছিল। তারপর আরো কিছু জায়গা ঘোরাঘুরি করে আমরা দুজন রাস্তা হারিয়ে ফেললাম। তাই কোন উপায় না দেখে ওখান থেকে একটা ট্যাক্সি বুক করে সরাসরি চলে আসলাম শিয়ালদা স্টেশন। তারপর আবার সেখান থেকে ট্রেন ধরে সরাসরি বাড়ি।
পোস্ট বিবরণ | ভ্রমণ বিষয়ক পোস্ট |
---|---|
ডিভাইস | realme 8i |
ফটোগ্রাফার | @pujaghosh |
দারুন একটি ভ্রমণ বিষয়ক পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপু। আর আপনার এই পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে কিন্তু অজানা অনেক কিছু জানার সম্ভব হলো। এমনিতেই আমি এ জাতীয় ভ্রমণ বিষয়ক পোস্টগুলো বেশি পছন্দ করে থাকি অজানা বিষয় সমস্ত জানতে পারার আশায়। অবশ্য চিকন শুরুর রাস্তা গলি হলে পারে সেখানে প্রবেশ করা বেশ কঠিন এবং গন্তব্যস্থল খুঁজে পাওয়া কঠিন। আর বাঙ্গালীদের উপস্থিতি সব জায়গায় লক্ষণীয়।
পোস্টটি পড়ে অনেক সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য, অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে ।