//সুধার স্বপ্ন//পর্ব - ০৩ //

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার বন্ধুরা


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভালো আছেন ।আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।

গত দুটি পর্বে আমি আপনাদের মাঝে" সুধার স্বপ্ন" গল্পটির পর্ব -০১ ও পর্ব -০২ শেয়ার করেছিলাম আর আজ সেই গল্পটির তৃতীয় পর্বটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।

IMG-20230603-WA0064.jpg

সোর্স


সুধার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ অর্থাৎ তার ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর , শুধু অনেক ভেঙে পড়লেও কিছুদিনের মধ্যেই সে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠলো ।কারণ সে ভেঙে পড়লে তো, আর তার স্বপ্ন কোনদিন পূরণ করতে পারবে না। এই ভাবেই দেখতে দেখতে আরও দুটি বছর পার হয়ে গেল, সুধা প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষার চেয়েও আরও অনেক গুণ বেশি ভালো রেজাল্ট করলো উচ্চ স্তরের পরীক্ষায়।

চারিদিকে এখন শুধু , সুধার জয় জয়কার। একদিন যেই সুধার নামেই সবাই ঠাট্টা তামাশা করতো, আজ তার সফলতায় অনেক মানুষ তাকে ঘিরে ধরেছে। কিন্তু খুশিতে সুধার দুই চোখ দিয়ে , অঝোরে টপ টপ করে জল পড়ছে, তার শুধু মনে পড়ছে তার এতদিনের সংগ্রামের কথা। কত কষ্ট করে ,সে আজ এখানে পৌঁছেছে! তবুও এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি তার সংগ্রাম। এখনো কত কিছু বাকি। এরপরই তো সে পৌঁছাবে তার স্বপ্নপূরণের মূল লক্ষ্যে। কিন্তু এত টাকা সে কোথায় পাবে? ডাক্তারি পড়ার জন্য তো ,অনেক বেশি টাকা লাগবে। সামান্য ফুল বিক্রি করে, সংসার চালিয়ে তো, সেই টাকা জোগাড় করা ,তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না। এদিকে অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচা তো রয়েছেই।

IMG-20230603-WA0073.jpg

সোর্স


কিন্তু কথায় আছে না, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। ঠিক সেই রকমই ,একটা পথ বের হয়ে গেল। সুধার দারুন রেজাল্টের কথা , লোকমুখে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান সুধাকে ডাক্তারি পড়ার জন্য ,অর্ধেক টাকা দেবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু তার বদলে , তিনি সুধাকে বলেছিলেন,ডাক্তার হওয়ার পর সুধাকে বিনামূল্যে অনেক গরীব মানুষের চিকিৎসা করতে হবে। শুধু খুব আনন্দের সহিত এই কথাই রাজি হয়ে গেল।

বাকি অর্ধেক টাকা জোগাড় করতে খুব বেশি কষ্ট হলো না, কারণ ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ,একটা ভালো মানের বৃত্তির ব্যবস্থা থাকে , সুধা অনায়াসেই ,সেই বৃত্তি লাভ করল। এরপর বাদবাকি যে অল্প কিছু টাকা, সে তার নিজের রোজগার থেকেই চালিয়ে নিতে পারবে। এই ভাবেই শুরু হল , সুধার নতুন সংগ্রাম। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যেই, আবারও এক দুঃখের ছায়া সুধার জীবনে নেমে এলো। অনেকদিন ধরেই সুধার বাবা অসুস্থ ছিল , তাই সে হটাৎ করেই সুধা আর সুধার মায়ের জীবন থেকে বিদায় নিল।

IMG-20230603-WA0067.jpg

সোর্স


এখন সুধা আর সুধার মা একে অপরের সঙ্গী। এছাড়া আপন বলতে তাদের আর তিন কুলে কেউ নেই। নেই বললেও ভুল হবে, কারণ সুধার বড় দিদি, যার অনেক কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছিল সুধার পরিবার, সে থেকেও না থাকার মত আছে। আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায়, বাপের বাড়ির সাথে, অনেক আগেই বাধ্য হয়ে , সব সম্পর্ক চুকিয়ে নিতে হয়েছে তাকে। তাই তার কথা বাদ দেওয়াই ভালো।

এই ভাবেই চলতে থাকলো, সুধার এই সংগ্রামে তার মা সব সময় তার পাশে ছায়ার মতো সাথে আছে। এটা তার চলার পথের একটা সাহস বা শক্তি বলতে পারেন। এখন সুধাকে আর ফুলের মালা বিক্রি করতে যেতে হয় না। পড়াশুনার চাপ বেড়ে যাওয়ায়, তার সেই দায়িত্বটা তার মা নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে। শুধু এখন শুধু তার স্বপ্ন পূরণের জন্য দিনরাত পড়াশুনা করছে। কারণ নিজের ইচ্ছে পূরণের পাশাপাশি,অনেক দায়িত্ব তার মাথার উপরে চেপে বসে আছে।

Sort:  
 2 years ago 

সুধার স্বপ্ন পূরণের জন্য সুধা অনেক পরিশ্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে। আসলে কথায় আছে না ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সুধার বাবা মারা যাওয়াতে সুধাদের কষ্টের শেষ নেই। তারপরও সুধা কষ্ট করে স্বপ্ন পূরণ করতে চলছে। দেখা যায় কি হয়?আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

হ্যাঁ আপু, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তাই সুধারও উপায় হয়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে অনেক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

সুধা প্রাথমিক স্তর থেকেও উচ্চ স্তরে গিয়ে অনেক গুণ বেশি রেজাল্ট করেছে, এটা জেনে বেশ ভালো লাগলো। সুধার নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে নিজের লক্ষ্যের দিকে। তার ঠাকুমা মারা যাওয়ার কয়েক দিন পরে নিজেকে সামলিয়ে আবারো নিজের লক্ষ্যের দিকে পা বাড়িয়েছে। হঠাৎ করে আবার তার বাবা তাদেরকে ছেড়ে চলে যায়। আর এখন সুধার মা তার ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান তার ডাক্তারি করার অর্ধেক খরচ দেবে বলেছে এবং একটা শর্ত দিয়েছিল, তা সুধা হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। পরবর্তী পর্বে কিভাবে তা দেখার জন্যই অপেক্ষায় থাকলাম।

 2 years ago 

পোস্টটি পড়ে, সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য ,অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

 2 years ago 

সুধা গল্পের প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব পড়া হয়েছিল, আজকে তৃতীয় পর্ব পড়েও অনেক বেশি ভালো লাগলো। সুদা নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে অনেক ভালো লেগেছে। আর তার এরকম সফলতা দেখে যারা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করত সেই মানুষগুলো প্রশংসা করে। এরপর গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান ডাক্তারি পড়ার অর্ধেক খরচ দিবে বলে আর অর্ধেক টাকা সে বৃত্তি এবং নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে জোগাড় করতে পারবে। তার বাবা তাকে এবং তার মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে এটা জেনে খারাপ লেগেছে, আর এখন তার মা তার পাশে আছে এ বিষয়টা অনেক ভালো লাগলো। আশা করছি পরবর্তী পর্ব খুব তাড়াতাড়ি শেয়ার করবেন অপেক্ষায় থাকলাম।

 2 years ago 

হ্যাঁ আপু, পরবর্তী পর্বও খুব শীঘ্রই শেয়ার করব ।পোস্টটি পড়ে ,গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য ,অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আসলে অফুরন্ত মানসিক শক্তি ও চেস্টা থাকলে জীবনে সুধরার মতো সফলতা অর্জন করা সম্ভব। অনেক সুন্দর একটি গল্প আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার লেখা এই গল্পটি পড়ে সুধার মতো অনেকেই জীবন সংগ্রামের ক্ষেত্রে মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে উৎসাহ পাবে। চমৎকার একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

একদমই ঠিক বলেছেন ভাই, সুধার মতো এরকম মানসিক শক্তি ও চেষ্টা না থাকলে জীবনে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয় । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অনেক সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.29
JST 0.036
BTC 104373.63
ETH 3575.74
USDT 1.00
SBD 0.56