ভার্চুয়ালি দাদার জন্মদিন পালন

in আমার বাংলা ব্লগlast year

নমস্কার বন্ধুরা,


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।


প্রতিবছর দাদার জন্মদিন পালন করা আমার একটা দায়িত্ব এবং ভালোলাগাও বলতে পারেন। এজন্য দাদার জন্মদিন আসার সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ভিতরে ভিতরে বেশ ভালো রকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। যদিও এর পেছনে একটা বড় কারণ রয়েছে সেটা হল দাদার কাছ থেকে পাওয়া দামি গিফট, যেটা সে কখনোই দিতে মিস করে না। আর মিস করবেই বা কেন আমি তার একমাত্র ছোট বোন। এটা তারও দায়িত্ব আমাকে খুশি রাখা। যাই হোক আপনারা হয়তো কেউ জানেন না যে আমার দাদা বোম্বের একটা ফাইভস্টার হোটেলের শেফ। সুতরাং তার সাথে বছরে খুব কম সময়ে দেখা হয়। তাছাড়া যেহেতু আমিও বাড়ির বাইরে থাকি তাই সে মাঝেমধ্যে বাড়ি বেড়াতে আসলেও আমাকে সময় বের করে বাড়ি যেতে হয় তারপর তার সাথে দেখা হয়। তবে একটা ব্যাপার হলো যে তার জন্মদিন বা আমার জন্মদিন আসলেই সে যে করেই হোক ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসে। তখন আমরা অনেক আনন্দ করে জন্মদিন পালন করি। তবে এই বছর পুরোটাই ব্যতিক্রম হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেই আমার দাদা এসেছিল ছুটিতে বাড়ি বেড়াতে কিন্তু হঠাৎ করেই তাকে আবার চলে যেতে হয় বোম্বে ইমারজেন্সি কলে। সুতরাং জন্মদিন পালন করার ইচ্ছা অনেকটাই মাটি হয়ে গেছিল।

InShot_20230712_165201476.jpg

InShot_20230712_165231200.jpg

তবে আমি কিন্তু থেমে থাকিনি। আমি সবসময়ই চেয়েছিলাম যে আমার দাদার জন্মদিন যে করেই হোক পালন করব। তাই কোন উপায় না পেয়ে ভার্চুয়ালি জন্মদিন পালন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যদিও এই ব্যাপারটা আমার মাথায় ছিল তবে তার আগেই আমার বৌদি বলল যে দাদা কাছে নেই তাতে কি হয়েছে আমরা ভার্চুয়ালি তোমার দাদার জন্মদিন পালন করব এবং ফোন করে তাকে উদ্দেশ্য করে কেক কাটবো। আইডিয়াটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছিল এজন্য আমি কোন কিছু চিন্তা না করেই রাজি হয়ে গেলাম। যেহেতু দাদার ডিউটি রাত ১০ টা পর্যন্ত থাকে তাই সে বলল যে, যে করেই হোক ১১ টার ভিতরে সে কলে উপস্থিত হবে এবং তাদের সাথে মজা করবে। জন্মদিনের দিন সকাল বেলায় দাদাকে ঘুম থেকে উঠেই উইশ করে দিলাম। সে খুব খুশি হয়ে অফিসে চলে গেল। এরপর আমি আর বৌদি রেডি হয়ে বেরোলাম কেক কেনার জন্য। আমাদের বাড়ি থেকে মার্কেট খুব বেশি একটা দূরে না, মোটামুটি পাঁচ মিনিট হেঁটে গেলেই বেশ সুন্দর একটা মার্কেট রয়েছে সেখানে বেশ নামকরা একটা কেকের দোকান ছিল সেখান থেকে আমার এবং বৌদির পছন্দের ম্যাংগো কেক অর্ডার করলাম একটা। আসলে সেখানে কেক ছাড়াও আরো অনেক ধরনের খাবার ছিল,যেগুলো দেখে খুব খেতে ইচ্ছে করছিল। তাই নিজের জন্য টুকটাক কিছু কিনে নিয়েছিলাম পরে খাওয়া যাবে সেই চিন্তা করে।

20221208_161548.jpg

20221208_161737.jpg

আসলে এই দোকানগুলোতে একটা সুবিধা রয়েছে যে কেক পছন্দ করার ঘন্টা খানিকের ভিতরেই কেক তারা যে করেই হক এনে দেয়। তবে অধিকাংশ সময় কেক ডিসপ্লে করা থাকে সেখান থেকেই পছন্দ করা যায় নিজের মন মত। আমাদের আসলে ওখানে গিয়ে কেক পছন্দ হয়ে গেছিল এজন্য সেখান থেকে কেক কিনে জলদি জলদি বাড়ি চলে আসলাম যাতে গোলে না যায়। এরপর কেক ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে আমাদের কাজ কাম করতে লাগলাম। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো তারপর আমাদের টিনটিন বাবুকে পড়াতে গেলাম। সেখান থেকে ফিরে এসেই খেয়েদেয়ে পোস্ট লিখে দাদাকে ফোন দিলাম। যেহেতু ভিডিও কল করার কথা ছিল তাই দেখলাম যে দাদা আমাদের বলার আগে থেকেই নিজেই রেডি হয়ে বসে পড়েছে কেক কাটা দেখার জন্য। প্রথমে তো হাসি পাচ্ছিল এটা দেখে তবে পরবর্তীতে ভালো লাগছিল। যাইহোক আমি আর বৌদি দাদাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে তার কেক পছন্দ হয়েছে কিনা। সে বলল যে আমি তো এখানে নিয়মিত এসব দেখি বা খাই এজন্য কেকের প্রতি আমার তেমন কোন ইন্টারেস্ট নেই। তবে তারপরও দেখতে বেশ ভালো লাগছে। এই কথা শুনে তো খুব খুশি হয়ে গেলাম।

20221208_161731.jpg

যথারীতি বারোটা বাজার সাথে সাথে দাদার হয়ে আমি আর বৌদি একসাথে কেক কাটলাম। তারপর দাদাকে ফোনের ভিতরে একটু কেক খাইয়ে দিলাম সেও একটু অভিনয় করে খাবার ভঙ্গি করল। এরপর দাদার সাথে অনেক সময় কথা বললাম আমি আর বৌদি মিলে। আসলে দাদা অনেক বেশি খুশি হয়েছিল যে তাকে এভাবে জন্মদিনের উইশ করা হয়েছে। যাই হোক আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে দাদা বলল যে তোর জন্য একটা ভালো গিফট কিনে রেখেছি আগে থেকে। আমি কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেবো। এই কথা শুনে তো আমি আরো বেশি খুশি হয়ে গেলাম। এরপরে আসলে আর তেমন কোন কথা বলিনি, কারণ দাদাও ক্লান্ত ছিল তাই বলল যে সে ঘুমিয়ে পড়ছে। আমরা ফোন কেটে দিয়ে কেক খেয়েদেয়ে বাকিটা ফ্রিজের ভিতর ঢুকিয়ে রেখে দিলাম। আসলে আমি অনেকবার শুনেছি যে ভার্চুয়ালি নাকি অনেকেই বিয়ে করে বা জন্মদিন পালন করে। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারেই নতুন ছিল ওই দিন। তবে সত্যি কথা বলতে সরাসরি জন্মদিন পালন করার ভিতরে যে মজা সেটা না পেলেও, মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত যথেষ্ট খুশি হয়েছিলাম।

শ্রেণীলাইফস্টাইল।
ডিভাইসrealme 8i
ফটোগ্রাফার@pujaghosh
লোকেশনবারাসাত,কলকাতা।

আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 56560.74
ETH 2390.02
USDT 1.00
SBD 2.34