শর্মিষ্ঠা এবং অনির্বাণের গাঁটছড়া পর্ব(১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-১১.০২.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
সবই আছে আগে থেকে ঠিক করা-
বাঁধা আছে যেনো কোন গাঁটছড়া।
তোমার আমার গাঁটছড়া!
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন।আমিও ভালোই আছি। আজকে শেষ পর্বটুকু নিয়ে এলাম।অর্থাৎ বিয়ের পর্ব।এতদিন আইবুড়ো, গায়ে হলুদ, সবটাই আপনারা দেখলেন। অবশেষে বিয়ের পর্ব এলো। বাঙালি হিন্দু মতে যে বিয়েগুলো হয়, তাতে বর্তমানে ফটোগ্রাফার এবং মেকআপ আর্টিস্টেরী বাজার বলা যায়। কে কত ভালো মেকআপ আর্টিস্ট দিয়ে সাজতে পারে, কে কত ভালো ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তুলতে পারে আর কে কত ভালো পোজ দিতে পারে তার উপরেই যেন বিয়ের টিকে আছে। বাকিটা নমো নমো।
যাইহোক শর্মিষ্ঠা বিয়েটা যথেষ্ট নিয়ম মেনেই ভালো পুরোহিত দিয়ে ভালোভাবে হয়েছে।কারণ ও ভীষণভাবে ঈশ্বর বিশ্বাসী আর নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে করতে চেয়েছিল শুরুর থেকে। ওই কারণে একজন ভালো পুরোহিত কে দিয়ে বিয়ের মন্ত্র পাঠ থেকে শুরু করে সমস্ত আচার বিধি পালন করিয়েছিল।
আমাদের যেতে যেতে যদিও একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল, কারণ কোয়েলের অফিস থেকে ফিরতে বেশ দেরী হয়েছিলো। ততক্ষণে ওর শুভদৃষ্টি করা হয়ে গেছে এবং বিয়েতেও বসে পড়েছিল। আমি একটা সাদা এবং লালের উপর চিকনকারী কাজ করা শাড়ি পড়েছিলাম।কোয়েলও তাই পড়েছিল। ওরটা ছিল হালকা কমলা রং বলা যায়। শম্পা একটা কাঁথা স্টিচের শাড়ি পড়েছিল। আমরা তিনজনই একসাথে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম বিয়ের পর্ব শুরু হয়েছে। গাঁটছড়া বাঁধা চলছে।ওর কাকিমা গাঁটছড়া বাঁধছে। তারপরে মন্ত্র উচ্চারণে পর পর বিয়ের রীতি হচ্ছিল। আমি ভাবছিলাম অনির্বাণ অর্থাৎ শর্মিষ্ঠার বরের কথা যে ও সত্যিই কতটা ডেডিকেশন দিয়ে ভালোবাসতো শর্মিষ্ঠা কে। কারণ প্রায় ৮ বছর ও শর্মিষ্ঠার জন্য অপেক্ষা করেছে। শর্মিষ্ঠা ৮ বছর ধরে ওকে না,না বলে গেছে। কিন্তু শেষে আর আসল ভালোবাসার টানকে উপেক্ষা করতে পারে নি। এটাই হয়তো নিয়তির লেখা ছিলো।
যা ই হোক, এবার আবার বিয়ের কথা বলি। একটু আবেগে হারিয়ে গেছিলাম।এরপর যজ্ঞে কলা এবং খই আহুতি দেওয়া হল। তারপরে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অর্থাৎ সিঁদুর দানের পালা। শর্মিষ্ঠা হাতে বড় মায়ের ছবি নিয়ে বসলো। এক এক বাড়ির নিয়ম এক এক রকম হয়। কারো আংটিতে, কারো বা ধানের কুনকো করে, কারো দর্পণ দিয়ে আবার কারো বা বুকে রক্ত দিয়ে সিঁদুর দান করা হয়। আসলে সিঁদুরদান পর্বটি ছেলের বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী করা হয়। শর্মিষ্ঠা শ্বশুর বাড়ির নিয়ম ছিল দর্পণ দিয়ে সিঁদুর দান করা। দর্পণ দিয়ে সিঁদুর দান করলে অনেকটা কপালজুড়ে চওড়া হয়ে সিঁদুরটা কপালে পড়ে এবং দেখতেও বেশ সুন্দর লাগে। আবার শ্রীপর্ণার ছোট পিসির শ্বশুরবাড়ি যেমন রাজপুত। তাই তারা ছুরি দিয়ে বুক চিঁড়ে বুকের রক্ত দিয়ে সিঁদুর দান করে। এই বিষয়টা আমার বেশ লোমহর্ষক এবং সাহসিকতার মনে হয়।
যাইহোক এখানে শর্মিষ্ঠার বিয়ের কথা বলছি।সিঁদুর দানটাও তাড়াতাড়ি হয়েছে।আসলে এক একটা বিয়ের লগ্ন অর্থাৎ সময় একেক রকম হয়। শর্মিষ্ঠার বিয়ের লগ্ন যেমন বিকেল পাঁচটা থেকে ছিল। সেই কারণে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের সু-সম্পন্ন হয়েছে। ওরা শান্তি মতো বিয়েটা করে সকলের সঙ্গে কথাবার্তাও বলতে পেরেছে। খাওয়া-দাওয়া টাও করতে পেরেছে। নয়তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ের আসরে বসলে সবার সাথে গল্প করা যায় না। সাথে দেরিতে খেতে গিয়ে সব খাবার ঠান্ডা হয়ে যায়। কোন কিছুর স্বাদই পাওয়া যায় না।
ওদের বিয়ে যখন চলছিল, সিঁদুর দান হয়ে গিয়েছিল, তখন আমরা খেতে বসেছিলাম। খাওয়াতে ভালো মন্দ অনেক কিছুই ছিল। এই যেমন- ফিস ফ্রাই, নান,চিকেন ভর্তা, ভাত, গন্ধরাজ কাতলা, পোলাও, খাসির মাংস,চাটনি, পাঁপড়, দু রকম মিষ্টি, আইসক্রিম, পান। তার আগে স্টলে ছিল ভেজ পাকোড়া, চিকেন পকোড়া, দই বড়া, ফুচকা, কফি। খাবার কেমন ছিল কি ছিল সেগুলো নিয়ে পরে না হয় একদিন রিভিউ পোস্ট বানাবো। শুধু এটুকু বলি,আমার খাবার বেশ ভালোই লেগেছিল।কিছু কিছু ক্ষেত্রে উনিশ-বিশ হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো দৃষ্টিগোচর করাই যায়। আমরা খাওয়া-দাওয়া করে উঠে দেখি ওরা বসে আছে সিংহাসনে। সবার সাথে গল্প করছে। আমি গিয়ে টুকটাক করে কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম, ওদের সাথে,সব বন্ধু-বান্ধবদের সাথে।এখানে একটা কথা বলে রাখি, আমার স্বপরিবারে আমন্ত্রণ ছিল। মা,বাবা, ভাই, মাসি মেশো,তনয় যদিও অনেক আগেই খেয়ে দেয়ে বাড়ি চলে গেছে। কিন্তু আমি বন্ধুদের সঙ্গেই ফিরেছি। উপহার হিসেবে ওকে একটা কম্বল দিয়েছিলাম।সেদিন ফোন করে বলল ওই কম্বলটা ও বোম্বে নিয়ে যাবে। কারণ বোম্বেতে ওর হাজবেন্ডের চাকরি।শুনে খুব খুশি হলাম। প্রিয় বান্ধবী তোমার দেওয়া গিফটটা যখন আগলে রাখে, তখন কিন্তু আনন্দ অন্যরকম।
যাই হোক সবকিছু শেষ হওয়ার পরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ১১ টা বেজে গিয়েছিল। বাঙালি হিন্দু নিয়ম অনুযায়ী মেয়েরা শ্বশুর বাড়ি যায় পরের দিন বিকেলে অথবা পরের দিন সকালে। কিন্তু পঞ্জিকা তে দেখা হল পরের দিন কোন যাত্রা ছিল না। সেই কারণে ওই দিনই রাত বারোটার পরে ও এবং ওর হাসবেন্ড বেরিয়ে পড়েছিল। পরের দিন বিকেল পর্যন্ত মামাশ্বশুরের বাড়িতে ছিল এবং সন্ধ্যেবেলায় শ্বশুর বাড়ি গৃহপ্রবেশ করে।
মন থেকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি ও যেন স্বামী,শ্বশুর, শাশুড়ি, সকলকে নিয়ে সুখে সংসার করে আজীবন।আপনারাও ওদের আশীর্বাদ করবেন যেন ওরা ভালো থাকে।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। সকলে খুব ভালো থাকবেন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।
হ্যাঁ আপু ৮ বছর ধরে না না করলেও,নিয়তের লিখা যেটা ছিল সেটাই হল।আপনারা সবাই মিলে খুব সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন বিয়েতে। বিয়েতে বেশ জমজমাট খাবার দাবার হয়েছে।তবে গন্ধরাজ কাতলা টা অপরিচিত। নতুন বর আর কনের জন্য শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে। ❤
আপু আপনার বান্ধবী শর্মিষ্ঠার বরের অনেক ধৈর্য আছে বলতে হবে। ধৈর্য না থাকলে কেউ এত বছর অপেক্ষা করে বিয়ে করতে আসে। এত বছর ছেলেটা ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতই না কষ্ট করেছে। যাক তাও অবশেষে স্বার্থক হয়েছে জেনে ভালো লাগলো। আপনার বান্ধবীর বিয়ের সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি আর সাথে আপনার কাটনো সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভীষণ ধৈর্য্য।
শর্মিষ্ঠা এবং অনির্বাণের শুভ পরিণয়ে শুভেচ্ছা। ৮ বছরের অপেক্ষার পর তাদের এই গাটছড়া অটুট থাকুক আজীবন। বিয়ের রীতির যে প্রানবন্ত বর্ননা দিয়েছেন, তা অসাধারণ ! মনে হচ্ছে বিয়েটা চোখের সামনেই হচ্ছে।আর সিদুর দানের লোমহর্ষক ও সাহসিকতার এই রীতিটা আমার জানা ছিলনা! এ রীতির প্রচলন কি এখনও আছে? ভাল থাকবেন। শুভ কামনা আপনার জন্য।
ধন্যবাদ দিদি।
অনেক ভাল লাগলো দিদি আপনার বান্ধবীর গাটছড়া পর্বটি পড়ে। দুজন দুজনকে পেলো সুখী হোক এই কামনাই করি। আপনি বেশকিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন ভাল লাগলো। অনেক ধন্যবাদ অনুভূতিগুলো সুন্দর ভাবে প্রকাশ করার জন্য।
ধন্যবাদ দিদি।