সুকুমার রায়ের পাগলা দাশু ঠিক কেমন?(১০% @shy-fox এবং ৫% @abb-school এবং ৫% @abb-charity এর জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

তারিখ-২১.০৯.২০২২

নমস্কার বন্ধুরা!
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি।আপনারা তো জানেন কিছুদিন আগেই আমি একটা সিনেমার রিভিউ করেছি।আর তার ও আগে একটা রেস্তোরাঁর খাবারের রিভিউ করেছি যেগুলো কে আপনারা খুব ভালোবাসা দিয়েছেন।আর তার জন্য আমি কৃতার্থ।আজ তাই ভাবলাম একটা বই রিভিউ করি সাথে ছোটবেলার কিছু স্মৃতিও স্মরণ করা হয়ে যাবে।

84b64d0d-1f8f-4d0c-887f-6e5ebc2dfa1e.jfif

তো যেটা বলব বলছিলাম,প্রথম সন্তান হওয়ায় ছোটবেলাতে বাবা-মা অতিরিক্ত আদর করেছে। জন্মদিনটাও পালন হত ঠিক বিয়ের মত করে প্যান্ডেল করে বড় অনুষ্ঠান করে।আর তাতে অনেকেই নিমন্ত্রিত থাকতেন পাড়ার।সেরকমই একবার ৭ কি ৮ বছরের জন্মদিনে বেশ কিছু বই উপহার পেলাম।তখন গল্পের মাহাত্ম্য অত বুঝতাম না। আর গল্পের বই বিষয়টার সাথেও অত পরিচিত ছিলাম না।মা তাই সবটাই গুছিয়ে রেখে দিত। আর বলত আরেকটু বড় হয়ে পড়বি। এবার যখন মায়ের কথা মত 'আরেকটু বড়' হলাম তখন মা বই গুলো বার করে দিলো। দেখতে দেখতে এমন নেশা হল গল্পের বই পড়ার যে পড়াশোনার বই এর ভেতরে গল্পের বই ঢুকিয়েও পড়েছি আর ধরা পরে মারও খেয়েছি।ভাবলে খারাপ লাগে যে আজকালকার মোবাইলের যুগের ছেলে মেয়েরা সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারে না।

তা সে যা ই হোক সব গল্পের বইয়ের মধ্যে যে গল্পের বই দুটো অনেক বার পড়তাম সেগুলো হল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'লালুর কীর্তি' আর সুকুমার রায়ের 'পাগলা দাশু'।

আজ আপনাদের সামনে 'পাগলা দাশু'র ব্যাপারে বলব। আমার এই বইটিতে মোট ১১ টি গল্প আছে।বই টি প্রকাশিত হয়েছে নির্মল বুক এজিন্সি থেকে। বইটির প্রকাশক-নির্মলকুমার সাহা এবং সম্পাদনা করেছেন বিশ্বনাথ দে এবং প্রচ্ছদের ছবি এঁকেছেন বিমল দাস।

9198a707-f0cf-4b9d-bc56-73b8236d399f.jfif

পাগলা দাশু সুকুমার রায়ের এক মাহান সৃষ্টি। যেখানে তিনি পাগলা দাশুর সম্পর্কে একটি উক্তি করেছেন যেটা আমরা জেনে বা না জেনে বলেই থাকি অনেকের সম্পর্কে তা হল-

ক্ষীণদেহ খর্বকায় মুন্ড তাহে ভারি
যশোরের কই যেন নরমূর্তিধারি।

এই বইটি সুকুমার রায় সমগ্র থেকে সংকলিত হয়েছে এবং এখানে সূচিপত্র অনুযায়ী যে গল্পগুলো আছে সেগুলো হল-

ক্রমিক মানগল্পের নাম
পাগলা দাশু
দাশুর খ্যাপামি
চীনের পটকা
দাশুর কীর্তি
চালিয়াত
সবজান্তা
ভোলানাথের সর্দারি
আশ্চর্য কবিতা
নন্দলালের মন্দকপাল
১০যতীনের জুতো
১১নতুন পন্ডিত

গল্পগুলোর সারমর্ম

গল্প পড়লে বোঝা যায় যে দাশু একটু ক্ষেপাটে ধরণের ছেলে। কিন্তু মনের দিক থেকে অতটা জটিল নয়। এই যেমন নিজেই নিজের মজা করা বন্ধু দের কাছে, আবার নিজের কাছে থাকা একটা বাক্সের মধ্যে 'কাঁচকলা খাও', অতিরিক্ত কৌতূহল ভালো না।' লিখে তালা দিয়ে রাখা আর বন্ধুদের কৌতূহল বাড়ানোর জন্য সেই বাক্স আর তার চাবি বন্ধুদের হাতে দিয়ে যাওয়া, কখনও সে জগবন্ধু কে জব্দ করার জন্য ইংরেজি গ্রামার বইয়ের বদলে অন্য বই রেখে দিচ্ছে যাতে শিক্ষকের কাছে জগবন্ধু বকা শোনে, আবার নিজের মুখ নিয়ে নিজেই মজা করছে যে তাকে নাকি পাড়ার লোক আমসত্ত্ব শোকানোর জন্য কাকতাড়ুয়া হিসেবে ব্যাবহার করে।এই সব মিলিয়ে চরিত্রটি ভীষণই হাস্যকর এবং সফলতায় ভরা।

রামপদর জন্মদিনে যখন সে দাশুকে অপমান করল তখন দাশু মিহিদানা সে ছাগলকে খাইয়ে নিতান্তই ভালো ছেলের মত মুখ করে সেই মিহিদানার হাঁড়িটির ভতরে পটকা ভরে সংস্কৃতের পন্ডিত মশাইয়ের টেবিলের তলায় রেখে দিলো এবং কিছুক্ষণ পরই এর ফল স্বরূপ রামপদকে ত্রিভুবন দেখতে হল পন্ডিত মশাইয়ের কাছে।

7a355d8f-4e93-4259-8843-f8b189eaa055.jfif

নবীনচাঁদ কে ফাঁকা জায়গায় পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে তার মাথায় ধুচনী চাপিয়ে পিচকারি দিয়ে রং ছিটিয়ে দিয়ে ভয় দেখানো হোক অথবা নবীনচাঁদ যখন তার দাদা মোহন চাঁদকে নিয়ে এলো দাশু কে শায়েস্তা করার জন্য তখন দাশু যে ভাবে আঁচড়ে কামড়ে দিয়েছিলো পুরোটাই ভীষণ কৌতুকময়।

আমার ব্যাখ্যা

সুকুমার রায় কে ব্যাখ্যা করব সে সাহস আর ক্ষমতা আমার নেই। আমি বড়জোর আমার অনুভূতি ভাগ করে নিতে পারি। একটা কথা বলতে পারি এই বইটি তে যতগুলো গল্প আছে সবই দাশু কে নিয়ে নয় আরও বেশ কিছু অন্য গল্পও আছে। সুকুমার রায় একজন কৌতুক কাব্যের লেখক ছিলেন ঠিকই। তার লেখা পড়লে আমাদের হাসি পায়, কৌতুক রস জাগে কিন্তু প্রতিটা লেখার একটা গভীর অন্তর্নিহিত অর্থ থাকে তার লেখনীতে।তাই আমাদের সেই অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে হবে। কঠিন ভাষার ব্যবহার তিনি একদমই করেন নি তার লেখায়।ছোট থেকে বড় যাতে সকলেই তার রচনা পড়তে পারেন তিনি সেই খেয়াল রেখেছেন। তার রচনা কে আমি কোন ভাবেই রেটিং করতে পারব না।আমার মনে হয় আজকালকার জেনারেশনের ছেলে মেয়েদের মাঝেও এই অমর সৃষ্টি তুলে ধরা উচিত নয়তো একদিন এমন আসবে যে এই রচনাগুলোও লুপ্তপ্রায় হয়ে উঠবে।

আজ এখানেই শেষ করলাম। কাল আসব নতুন কিছু নিয়ে।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

Sort:  
 2 years ago 

সুকুমার রায় আসলেই বেস্ট।উনার গল্প যেকোন বয়সের লোক পড়েই আনন্দ পাবেন।পাগলা দাশুর খ্যাপামির মাঝে রয়েছে নির্মল বিনোদন।দাশুর চেহারার যা বর্ণনা দিয়েছেন সেটাই তো অনেক মজার

ক্ষীনদেহ খর্বাকায় মুন্ড তাহে ভারি
যশোরের কই যেন নর মূর্তি ধারি

ধন্যবাদ সুন্দর একটি বইয়ের রিভিউ দেওয়ার জন্য।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

ছোটবেলায় গল্পের বইয়ের নেশা আমারও ছিল অনেক। ক্লাসের বই পড়া যতটা ছিল বিরক্তিকর গল্পের বই ছিল তার দিগুণ প্রিয়। তবে বাংলা প্রথম পত্র থেকে সহপাঠ প্রতিটি ক্লাসে নতুন বই পেয়ে এগুলোই পড়ে শেষ করে ফেলতাম কয়েক সপ্তাহেই। পাগলাদাশু গল্পের এই বইটির নাম অনেক শুনেছি তবে পড়ে দেখা হয়নি এখনো। আশাকরছি ছোট বেলার মজা বড় হয়েও উপভোগ করতে পারবো বইটি পড়ে।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন। সিলেবাসে থাকুক অথবা না থাকুক, বই পেলেই পড়ে দেখব।

 2 years ago 

বুক রিভিউ এর ক্ষেত্রে বইয়ের ভেতরের সর্বোচ্চ তিনটি ছবি শেয়ার করতে পারবেন।

 2 years ago 

ঠিক আছে। ডিলিট করে দিচ্ছি। আসলে এত স্মৃতি তো। তাই দিয়ে ফেলেছি। 🙂

 2 years ago 

এবার ঠিক আছে? একবার দেখে বলবেন প্লিজ?

 2 years ago 

আপনি লিখেন বেশ ভালো।তবে অনেক লেখার মাঝে একেবারেই দাড়ি কমা নেই বললেই চলে।এতে লেখার মাহাত্ম্য বদলে যায়।এ দিকটায় বিশেষ নজর দেবেন।

 2 years ago 

আসলে প্রথমে ফোনে টাইপ করে, পরে ল্যাপটপ থেকে কপি পেস্ট করি তো। তাই অনেক সময় টাইপো হয়ে যায়।আর এডিট করার সময়েও দৃষ্টি গোচর হয়ে যায়। পরের বার থেকে খেয়াল রাখব। ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59631.75
ETH 2622.60
USDT 1.00
SBD 2.41