শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন (১০% @shy-fox এর জন্য এবং ৫% @abb-school এর জন্য)
চলে এসেছি আবার তোমাদের কাছে আবার একটা নতুন লেখা নিয়ে। এই দু-তিন দিনে সবার লেখা পড়ে বা সবার এতোটা নিরলস অ্যাক্টিভিটি দেখে বেশ ভালো লাগছে এখানে। সবাই বেশ সিস্টেমেটিক ওয়ে তে এগোচ্ছেন।আমিও চাই আপনাদের মত একই পদ্ধতিতে এখানে চলতে। আজ বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘলা ওয়েদার। তেমন কিছুই কাজ নেই করার মত। সকাল থেকে জানলার সামনে বসে টিপ টিপ বৃষ্টি দেখছি। আর কত আকাশ পাতাল ভাবছি। সকাল থেকেই লোডশেডিং চলছে।কিন্তু প্যাঁচ প্যাঁচে গরম নেই তেমন।
যাক গে সে কথা। আজ কেনো জানিনা ছোটবেলার সব স্মৃতি মনে পড়ছে। এখন তো কমবেশি সবারই নিউক্লিয়ার পরিবার। আমাদেরও তাই। তবে আগে যখন বাবা, কাকারা সবাই একসাথে থাকতো বর্ষার দিনে বেশ মজা হত।আমি আমার খুড়তুতো বোন আমরা সমবয়সী। সকাল বেল ঘুম থেকে উঠেই যখন দেখতাম চরম বৃষ্টি! আনন্দে মন ভরে যেতো। কারণ টা বুঝতে পারছেন তো? পারছেন না? আরে স্কুল যেতে হবে না যে! 😉
এরপর চলতো ঠাম্মার সাথে হুজ্জুকি। মা আর কাকিমা রান্না ঘরে ব্যস্ত থাকত। আর আমি, বোন মিলে উঠোনে জল জমলে বেশ তা-ধিন,তা-ধিন করে নাচতাম।যদিও এই নাচের মাশুল বেশ কয়েকবার দিতে হয়েছিলো। কতবার যে আছাড় খেয়েছি তার কোন ঠিক নেই। ওই কারণেই এখন একটু আধটু হাত পা ব্যথা করলেই মা বলে ছোটবেলা এত আছাড় খেয়ে পড়েছিস ওই কারণে! 😒 কোন মানে হয় হ্যাঁ?
কিন্তু মায়ের সাথে তর্ক করার মানেই হল নিজের দিকে আলোর বেগে চটি, ঝাঁটা এসব উড়ে আসা। তাই চুপচাপ মায়ের যুক্তি মেনে নেওয়াই ভালো।😄🤣
বর্ষার দিনে ঠাম্মা আমি আর বোন স্নানের আগে কল তলায় বসে আচ্ছা করে ভিজতাম,মগে জল নিয়ে একে অপর কে জল ছুঁড়ে মারতাম। যদিও ঠাম্মা নাস্তা নাবুত হত বেশী। তারপর আবার বলত আয় তো আমার পিঠে সাবান ঘষে দে। আমি আর বোন মার্গো সাবান খোসায় ঘষে এমন ঠাম্মার পিঠে ঘষতাম যে মহিলা রেগেই যেত। রেগে গিয়ে বলত, "এই বারে চোপাড় মারুম! "🤣অরিজিন সূত্রে আমরা বরিশালের বাঙাল। তাই ইলিশের প্রতি চরম টান। আর বর্ষা কালে যা সুস্বাদু পদ্মার ইলিশ আসে বাজারে তার সাথে কোন মাছের আর তুলনা হয় না মাইরি! এখানে একটা প্রশ্ন আছে আমার বাংলাদেশী বন্ধুদের-
আচ্ছা আপনারা আপনাদের পদ্মার ইলিশ কে কি খাওয়ান বলুন তো? এত্তো টেস্ট কি করে হয়! উফ! কি দুর্দান্ত সে স্বাদ! 😋 এখন লিখতে লিখতে মোবাইলের স্ক্রিনেও আমার লাল পড়ে গেলো যে! 😋 ছোটবেলায় আমার ঠাম্মা বর্ষায় ভালো ইলিশ পেলেই ইলিশের পোলাও করত বাসমতী চাল দিয়ে। বাবা কাকারা সে পোলাও এর জন্য হাঁ করে বসে থাকত। কিন্তু গরম গরম বানিয়েই ঠাম্মা আগে আমাদের দু বোনের পাতে দিতো। আমার ভাই তখন দুধের শিশু। সে সারাদিন কাকাদের কোলে কোলে ঘুরছে। এসব কথা আজ মনে পড়ছে। আর ইলিশের পোলাও, খিচুড়ি, ডিম ভাজা, ইলিশ ভাজা, আলু ভাজা, বেগুনী, পাঁপড় এসবের গল্প মনে পড়ছে। যাই মা কে বলি গে আজ রাতে ঠাম্মার মত খিচুড়ি বানাতে।
বর্ষাকালের আরেকটা ঘটনা তা হল চরম বৃষ্টি সাথে শিলা পড়া। একবার তোআমি,বোন,মা,কাকিমা আর ঠাম্মা আমার দাদুরঘরে বসে আছি। আর চরম জোড়ে শিলা বৃষ্টি হচ্ছে। আর সত্যি বলতে আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারে মানুষ। সেখানে ওই সময়ে ইনভার্টার বলে কিছু ছিলো না। জেনারেটরও না। আমরা অন্ধকারে বসা হেরিকেনের আলোহা রীতিমতো কাঁপছে। হঠাৎ করে দুরুম্ শব্দ! ভয়ে পেয়ে ভাবলাম বাজ পড়লো। কিন্তু তারপরই আবিষ্কার করলাম দাদুর ঘরের অ্যাসবেস্টারের চাল ফুটো হয়ে একটা ইয়াব্বড় শিলা ঘরে এসে পড়েছে। ওটাকে আর কখনওই জানি না কেনো রিপেয়ার করা হয় নি। বর্ষা হলেই ওখানে একটা গামলা পেতে রাখা হত। যদিও পরে সিমেন্টের ছাদ করে নেওয়া হয়। এরকম টুকরো টুকরো কত স্মৃতি। বর্ষায় ঝিলৈ জল বাড়লেই কাকারা সাঁতার কাটতে যেতো। আমরা পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম, হাত তালি দিতাম। তারা কম্পিটিশন করতো। বেশ আনন্দ হত। কিন্তু এখন সবাই পাল্টে গেছে। এখন কোন অনুষ্ঠান সূত্রেই সবাই এক হই। আমরাও বড় হয়ে গেছি কয়েকদিন পর বুড়ো হয়ে যাব। ঠাম্মা, দাদু কেউ নেই।অনেক পাল্টে গেছে সব কিছু। এখন পড়ে আছে কিছু ধুলো জমা স্মৃতি। অনেক কথা বলে দিলাম আজ আপনাদের। আরো অনেক স্মৃতি। সুযোগ পেলে আবার শেয়ার করব।
সত্যিই অসাধারণ ছিলো ছোট বেলা সময়টা ৷ আমার ছোট বেলার তেমন কেনো স্মৃতি(ছবি) নেই ৷ আপনার ছোট বেলার মজার গল্প এবং ছবিগুলো দেখে বেশ ভালো লাগলো ৷ সব থেকে বেশি ভালো লাগলো আপনার লেখা গুলো পড়ে ৷ আপনি দারুণ লেখতে পাড়েন তা আপনার এই পোস্টটা পড়েই বুঝলাম ৷ ছোট বেলার মজার ঘটনা গুলো এমন ভাবে লিখেছেন যে অজান্তেই হাসি পেয়ে যায় ৷ বেশ দারুণ সময় কাটিয়েছেন ছোট বেলায় আপনি ৷
ধন্যবাদ আপনাকে। আমি এখানে নতুন এসেছি। একটু একটু করে লেখার চেষ্টা করছি। আপনাদের ভালো লাগলেই লেখা স্বার্থক হবে। আশা করব আরো ভালো কিছু লিখতে পারব। ❤
আপনাদের সকলের ভালো লাগলে আমার স্বার্থকতা। আশাকরব আরও অনেক কথা এখানে শেয়ার করতে পারব। পাশে থাকবেন। 🙂