ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার সারাদিন-২০২২(১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-২৮.১০.২০২২
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। দেখতে দেখতে বাঙালীর সব উৎসব প্রায় অতিক্রান্ত হল।আর বছরও প্রায় শেষের পথে। এর পর আর কী? জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়বে, আমরা পিঠে-পুলি খাব আর ক্রিসমাস পালনের মধ্য দিয়ে কেক খেতে খেতে এই বছর কে বিদায় জানাব।
আজ আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম আমার ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার সারাদিন।
অনেকেই জানেন প্রাচীন সময় থেকে ভাইয়ের মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যে বোনেরা কালীপূজার পর দ্বিতীয়া তিথিতে সকাল বেলায় উপবাস অবস্থায় ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয়। এটাই ভাই ফোঁটা বা হিন্দিতে ভাই দুজ নামে পরিচিত।
এক এক জায়গায় এক এক মন্ত্রোচ্চারণ হয়। আমরা যেমন পাঠ করি,
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা।
যমুনা দেয় যম কে ফোঁটা,
আমি দি আমার ভাই কে ফোঁটা।
যদিও এক এক বাড়ির ফোঁটার নিয়ম এক এক রকম হয়। আর এই রীতি আমরা সবার ক্ষেত্রে পালন করতে পারি যাদের আমরা ভাই মনে করি।
প্রতিবারের চেয়ে এই বারের ভাইফোঁটা আমার কাছে আলাদা ছিলো। কারণ এইবার আমার নিজের ভাই আমার কাছে ছিলো না। চাকরী সূত্রে সে ব্যাঙ্গালোর থাকছে। সেই কারণে মনটা একটু বিষণ্ণ ছিলো। অনেক ভেবে চিন্তে মা কে বললাম যে আমি ভাই কে অনলাইনে ভিডিও করেই ফোঁটা দেব।মা বিষয়টা শুনে একটু অবাক হলেও, মানা করেনি।
সকালবেলা উঠেই ভাইয়ের দেওয়া শাড়ি, কানের দুল পরে তৈরী হয়ে নিলাম। কারণ ভাই কে ভিডিও কলে ফোঁটা দেওয়ার পর আবার কাকার ছেলেদেরও ফোঁটা দেব।ওরা সবাই আমার থেকে ছোট। আমাদের জেনারেশনে আমিই সবচেয়ে বড়।
এরপর ভাইকে ভিডিও কল করে ঠাকুর ঘরে বসেই ফোঁটা দিলাম।আগেই ওর জন্য ওর অ্যাড্রেসে একটা জামা অর্ডার করে পাঠিয়েছিলাম। দেখি স্নান করে ওটা পরে বসে আছে।
প্রথমে কুয়াশার জলে গাল মুছিয়ে দিলাম,এরপর সাদা চন্দন, লাল চন্দন, কাজল এবং ঘী এর ফোঁটা অবশেষে ধান, দুর্বা দিয়ে আশির্বাদ করলাম। সবটাই যদিও ভার্চুয়াল। এরপর অনলাইনে ৫০০ টাকা পাঠিয়ে বললাম, "আজকের ট্রীট। কিছু খেয়ে নিস।"
সে যে কি খুশি, বলে বোঝাতে পারব না।ভাই বলল, "আমি তোকে একটা ট্রাইপড গিফ্ট করব। মায়ের থেকে শুনলাম তোর ট্রাইপডটা ভেঙে গেছে।"শুধু একবার ভাবলাম, কত বড় হয়ে গেলো দেখতে দেখতে।
এরপর বাকি চারজনের মধ্যে ৩ জনের জন্য ৩ টে পারফিউম আর আরেকজন ছোট বলেই তার জন্য কালার বক্স নিয়ে সেজো কাকুর বাড়ি গেলাম ফোঁটা দিতে। কারণ এই বছর নিজের বাড়িতে কোন আয়োজন রাখিই নি।
সেজো কাকুর বাড়ি গিয়ে দেখি সব কটা লাইন দিয়ে বসে আছে।
ব্যাস পর পর ফোঁটা দিয়ে দিলাম।সবকটাই ছোট আমার চেয়ে। ওদের থেকে কোন গিফ্ট আশা করি না। তাও দেখলাম রাতুল একটা লাড্ডুর বাক্স, রোহন একটা সিল্ক চকলেট, রোহিত একটা পেনের সেট আর রনিত একটা ডেয়ারি মিল্ক দিলো। মনটা আনন্দে ভরে উঠলো।
এবার সেজো কাকিমা ফুলকো লুচি, আলুর দম আর ছোলার ডাল নিয়ে হাজির। সকাল বেলা সবাই মিলে হৈ হৈ করে সেটাই খেলাম।
আমি বললাম,"দুপুরে চল রেস্তোরাঁতে গিয়ে বিরিয়ানি খাই। " কেউ রাজি না। বলছে, "আজ ইন্ডিয়া-নেদারল্যান্ড খেলা আছে।বাড়িতে খাব।তারপর আর কি? প্রতিবারের মতই দুপুরের ট্রীট স্পন্সর করল আমার বাবা। কিন্তু ভাই না থাকায় এবার বাড়িতে হয় নি কিছু।অনলাইনে জোমাটো থেকে অর্ডার করলাম মগজাস্ত্রের মটন বিরিয়ানি।সাথে আর কারো সাইড ডিশ লাগবে না বলল। শুধু একটা সেভেন আপ অর্ডার করলাম।
ব্যাস চলে এলো খাবার। সেজো কাকুর বাড়িতে বসেই খেলা দেখতে দেখতে আমরা ৭ জন মিলে বিরিয়ানি কোল্ড ড্রিংকস খেলাম আর খেলা দেখলাম।দারুন কাটল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত।শুধু কষ্ট হচ্ছিল যে আমার ভাইটা থাকলে এখানে আরো মজা হত।বাড়ি ফিরে ভাইকে বললাম, "কী খেয়েছিস?"
ছবি পাঠালো প্যারাডাইস থেকে চিকেন বিরিয়ানি আর চিকেন কাবাব অর্ডার করেছে। এবার কষ্ট টা একটু কমলো। ভাবলাম যাক অন্ততঃ আমরা একই খাবার খেয়েছি।
আমি চাই সারাজীবন যেনো আমাদের এই ভালোবাসা, এই বন্ধন যেনো অটুট থাকে। আমরা সারাজীবন যেন এক হয়ে এই ভাবেই দিনটা পালন করতে পারি।সময়ের সাথে সাথে বড় হলে জীবনে অনেক জটিলতা আসে। সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।আমাদের ভাই-বোনদের সম্পর্ক যেন কখনওই কলুষিত না হয় ঈশ্বরের কাছে এটুকুই প্রার্থনা।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীর প্রতিটি বোন এই ভাই ফোটার দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। কারন এই দিনে তারা তাদের ভাইদের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ টা খুব ভালভাবে বুঝাতে পারে। যাই হোক আপনার নিজের ভাই কাছে নেই শুনে খারাপ লাগলো তবে আইডিয়াটা আমার কাছে চমৎকার লেগেছে ভারচুয়াল ভাই ফোটা। ভারচুয়াল হলে কি হবে ভাইত অনেক খুশি হয়েছে তাতেই অনেক। ছোটরাও যখন অপ্রত্যাশিত গিফট দেয় তখন না আনন্দটা অনেকগুন বেড়ে যায়। আপনারা বাসায় রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এনে যে আয়োজন করেছেন তাতে ছোটখাটো রেস্টুরেন্টের মতই মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ দিদি।
আবেগটা এত সুন্দর বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ। 😊
অনলাইনে ভাইফোঁটার আইডিয়াটা সত্যিই ভালো। এইভাবেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আপডেট হওয়া উচিত।
ধন্যবাদ ভাই।
কি আর কমেন্ট করবো। পোস্ট পড়ে শুধু কষ্টই পেলাম। আমার কোনো বোন নেই জন্য ভাইফোঁটা কোনো দিন পেলাম না। তবে আপনার পোস্ট পড়ে মনে হয়েছে খুব সুন্দর একটা দিন কাটিয়েছেন আপনি, আপনার ভাইদের এবং পরিবারের সাথে। তবে আপনার নিজের ভাইটা কাছে থাকলে হয়তো আনন্দটা আরেকটু বেশি হতো।
এটা সত্যিই কষ্ট হয়। ☹️
ভীষণ মিষ্টি একটা পোস্ট ছিল। কাজের প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে আসতে হয়েছে, তাই আমার ভাইফোঁটাটাও মিস হয়ে গেছে। সকালবেলা যখন দিদি ফোন করলো, ওকে মজা করে বললাম দুই হাজার টাকা পাঠিয়ে দে তাহলেই ফোটা দেওয়া হয়ে যাবে 😉। আসলে দিদির কাছে চাইতে হয় না, ওর হাতে টাকা থাকলে সব সময় আমাকে দিয়ে দেয়। তবে আপনার ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে ভাইফোঁটা দেওয়াটা আমার অসাধারণ লেগেছে। এটাই হয়তো ভাই বোনের ভালোবাসার বন্ধন। আমি নিজেও আমার অন্য এক দিদি ভাইয়ের কাছ থেকে অনলাইনে ভাইফোঁটা পেয়েছি 😊। যাই হোক সবাইকে নিয়ে হইহুল্লোড় খাওয়া-দাওয়া বেশ জমিয়ে হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।
ভার্চুয়ালটা হওয়ায় সত্যিই মনে হয় অনেক কিছু হাতের মুঠোয়।