কাঁচা কুমড়োতে ভাঁপা চিংড়ি(১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-২৭.১১.২০২২
নমস্কার বন্ধুরা
কবিগুরু তো আর এমনি এমনি বলেন নি-
গলদা চিংড়ি তিংড়িমিংড়ি,
লম্বা দাঁড়ার করতাল।
পাকড়াশিদের কাঁকড়া-ডােবায়
মাকড়সাদের হরতাল।
উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|
পনির | ৫-৬ টুকরো |
মাঝারি মাপের চিংড়ি | ১৫-১৬ টা |
কাঁচা কুমড়ো | ১টা |
সরষে | ১.৫চা চামচ |
পোস্ত | ১ টেবিল চামচ |
কাজু | ৮-৯টা |
সরষের তেল | ২ টেবিল চামচ |
নুন | স্বাদমতো |
হলুদ | হাফ চা চামচ |
চিনি | হাফ চা চামচ |
কাঁচা লঙ্কা | স্বাদমতো |
গোলাপজল | হাফ ছিপি |
কেওড়া জল | হাফ ছিপি |
🍤প্রথম ধাপ🍤
একটা কাঁচা কুমড়ো কে নিয়ে, তার উপর থেকে কেটে নিলাম।এবং ভেতরের মাংসল অংশটাকে ছুড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে কেটে,বার করে শুরু করলাম।
🍤দ্বিতীয় ধাপ🍤
মাংসল অংশটাকে পুরোটা বার করে নেওয়ার পরে, কুমড়োর ভেতরটা ঠিক এরকম হবে দেখতে। যতটা পাতলা সম্ভব হয় ততটাই পাতলা করতে হবে। তাতে করে এটা সেদ্ধ হতে সময় বেশি নেবে না।
🍤তৃতীয় ধাপ🍤
এবার মিক্সার গ্রাইন্ডার এর বাটিতে কুমড়োর মাংসল অংশ নিয়ে এটাকে পেস্ট করে নিতে হবে।
🍤চতুর্থ ধাপ🍤
ভাবলাম শুধু চিংড়ি কেন দেবো, অল্প পনিরও দিয়ে দিই।তাই ঘরে পনির থাকাতে পনির টাকে কিউবের মতো করে কেটে রেখে দিলাম।
🍤পঞ্চম ধাপ🍤
এবার চিংড়ি টাকে ঝাড়াই-বাছাই করার পালা।হ্যাঁ চিংড়িটাকে বেছে নিয়েছি, সাথে করে চিংড়ির মাথা এবং বাকি অংশটা যেগুলো খাওয়া যায় সেগুলোকে আলাদা করে রেখেছি। কারণ? আরে বাঙ্গালী তো।😄মাথাটা বেটে খাব না? তাই ওটাকে আলাদা রেখেছি।সেটা অন্য একদিন প্রিপারেশন করব।
🍤ষষ্ঠ ধাপ🍤
এখানে মোটামুটি সবকিছু রেডি করে রাখলাম। এখানে চিংড়ি মাছটাকে নুন হলুদ মাখিয়েছি। পনির টা কেও নুন হলুদ মাখিয়েছি।আর পোস্ত এবং কাজুটাকে একসাথে বেটে নিয়েছি। সাথে আছে সরষের তেল এবং হলুদ। আর যে গুঁড়ো সরষে টা ছিল, সেটাতে জল দিয়ে একটু ভিজিয়ে রেখেছিলাম। এতে করে তেতো ভাব থাকলে সেটা কেটে যায়। পোস্ত এবং কাজু বাটার আগে কিছুক্ষণ অল্প জলে ভিজিয়ে রাখলে ভালো হয়।আমি তাই করেছিলাম।
🍤সপ্তম ধাপ🍤
এবার আর কি? এসেম্বল করার পালা।আর কিছুই না।একটা বড় বাটির মধ্যে প্রথমে চিংড়ি মাছটা নিয়ে,তার মধ্যে কুমড়োর পাল্পটা দিয়ে দিলাম।
🍤অষ্টম ধাপ🍤
এবার এর মধ্যে পোস্ত এবং কাজু বাটা,লঙ্কা বাটা আর সরষে বাটা টা দিয়ে দিলাম।
🍤নবম ধাপ🍤
এবার হলুদ গুঁড়ো দিলাম।
🍤দশম ধাপ🍤
এবার পরিমাণ মতো চিনি এবং লবণ দিয়ে দেব। লবণ এবং চিনিটা হাতে করে দিলে, যেন একটু কনফিডেন্স পাওয়া যায়। মনে হয় পরিমাণটা ঠিক পড়বে। তাই আমি হাতে করেই দিচ্ছি।
🍤একাদশ ধাপ🍤
এখানে ওই অর্ধেক ছিপির মত করে সমঅনুপাতে গোলাপজল এবং কেওড়া জল দেওয়া হল। শুধু গন্ধটা একটু ভালো করার জন্য।অতিরিক্ত দিলে কিন্তু সর্ষের গন্ধ এবং গোলাপজল,কেওড়া জলের গন্ধ মিলেমিশে খুবই বাজে হয়ে যাবে ব্যাপারটা।
🍤দ্বাদশ ধাপ🍤
এবার সর্ষের তেল টা যেটুকু নিয়েছিলাম পুরোটাই দিয়ে দেবো।
🍤ত্রয়োদশ ধাপ🍤
এবার যা যা মেশালাম এতক্ষণ ধরে সবগুলোকে একসাথে ভালো করে মাখিয়ে নেব।
🍤চতুর্দশ ধাপ🍤
এবার মাখানো হয়ে গেলে, পুরো মিশ্রণটাকেই কুমড়োর খোলার ভেতরে ভরে নেব। আর উপর থেকে পনিরের টুকরোগুলো দিয়ে দেব।পনিরটা পরে দেওয়ার কারণ হলো, পনির নরম হয় তাই মাখাতে গেলে ভেঙে যেতে পারে।
🍤পঞ্চদশ ধাপ🍤
এইবার উপর থেকে দুটো কাঁচা লঙ্কা দিয়ে দিলাম শুধু ফ্লেভার এর জন্য।
🍤ষোড়শ ধাপ🍤
এবার কুমড়োর মুখটা ভালো করে আটকে দিলাম কুমড়োর উপরের অংশটা দিয়ে। বাইরে থেকে দেখে মনে হবে যেন গোটা একটা কুমড়ো।
🍤সপ্তদশ ধাপ🍤
এইবার একটা প্রেসার কুকারে কিছুটা জল দিয়ে, তার উপরে একটা স্ট্যান্ড বসিয়ে দিলাম।এমন ভাবে স্ট্যান্ডটা বসাতে হবে এবং জলটা দিতে হবে যাতে কুমড়ো বসালে কুমড়োর গায়ে জল না লাগে। নয়তো কুমড়ো ফেটে যাবে এবং সমস্ত মাছের মিশ্রণ বেরিয়ে আসবে।
প্রেসার কুকারের হুইসেল খুলে ঢাকনাটা দিয়ে হালকা করে ঢেকে দিতে হবে।যাতে করে হাওয়া বের হয়ে গেলেও কোন অসুবিধা না হয়। আর এভাবেই আধঘন্টা থেকে ৪০ মিনিট রেখে দিতে হবে। আরেকটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত কুমড়োর বাইরেটা নরম না হয়ে যায়, সেদ্ধ টা ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত হবে। প্রেসার কুকারের নিচে যে জল দিয়েছি সে জলটাও সম্পূর্ণ শুকিয়ে যেতে হবে। আর গ্যাসের ফ্লেম বাড়িয়ে কমিয়ে নিজেকেই সেটা ঠিক করতে হবে। কখনো বাড়িয়ে দেব, আবার কখনো কমিয়ে দেব।
🍤শেষ ধাপ🍤
এবার আর কি? আধঘন্টা পরে গ্যাস থেকে নামিয়ে একটা প্লেটে সার্ভ করে নেব।আমি উপর থেকে একটু কাঁচা সরষের তেল দিয়ে দিয়েছিলাম। যাতে টেস্টটা আরো এনহ্যান্স করে।
ব্যাস তৈরি হয়ে গেল কাঁচা কুমড়োতে ভাঁপা চিংড়ি। শুধু কুমড়োটা জোগাড় করে ফেলতে পারলেই, খুব সহজে এই রেসিপিটা বাড়িতে বানিয়ে নেওয়া যায়। গরম ভাত দিয়ে খেতে কি যে অসাধারণ লাগে তা আর বলে বোঝাতে হবে না কাউকে। আশা করি সবাই বুঝতে পারছেন। কারণ যে উপকরণগুলো এখানে ব্যবহার করে হয়েছে প্রত্যেকটার স্বাদ নিজস্বভাবে আলাদা,অতুলনীয়। কখনো বাড়িতে বানিয়ে খেলে অবশ্যই জানাবেন।আর আমার আজকের রেসিপিটা আপনাদের কেমন লাগলো,সেটাও জানাবেন। আজ এখানেই শেষ করছি।আবার আসবো নতুন কোন পোস্ট নিয়ে। সকলে ভালো থাকবেন।
এই কমিউনিটিতে আসার পর থেকে যত দিন যাইতেছে ততই নতুন নতুন কিছু দেখতে পারতেছি। যেমন আজকে কাঁচা কুমড়োতে ভাপা চিংড়ি রেসিপিটি আগে কখনো দেখি নাই। তবে আপনার কাছে থেকে দেখে মনে হইতেছে রেসিপিটি খেতে অনেক সুস্বাদু মজাদার হবে।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল
আমারও একই অভিজ্ঞতা। এখানে আসার পর থেকে কত কি যে নতুন জানলাম আর দেখলাম।
ধন্যবাদ সকলকে।
কাঁচা কুমড়ো ভাপা চিংড়ি রেসিপি আমার কাছে একদম নতুন মনে হয়েছে। দেখে খুবই সুস্বাদু মনে হচ্ছে। রেসিপির পরিবেশন দেখে শিখে নিলাম। পরবর্তীতে তৈরি করবে ইনশাল্লাহ।
একদমই অভিনব রেসিপি। অনেক ছক কষে বানালাম।।জানিনা সবার কেমন লাগবে? কিন্তু খেতে দারুণ হয়েছি।
কাঁচা কুমড়োতে ভাঁপা চিংড়ি ইউনিক রেসিপি শেয়ার করেছেন। আমি ভাবতেই পারছিনা এমন রেসিপি রয়েছে। ঠিক বলেছেন দিদি আমাদের ইলিশ চিংড়ি নিয়ে ধন্দ না করাই ভালো।আমিতো সব মাছেই খেতে পছন্দ করি। আজকে আপনার রেসিপি দেখে নতুন একটি রেসিপি শিখে নিলাম। আমিও একদিন বাসায় চেষ্টা করে দেখবো। ধন্যবাদ আপনাকে দিদি।
একদমই তাই।বাঙালি আবারো তো বাছ বিচার কিসের? সব মাছি খাব।
ওয়াও দিদি আপনি তো ফাটাফাটি রেসিপি শেয়ার করেছেন ৷ সত্যি এপার ওপার কি খাবার খাওয়াই বাঙালির ধর্ম ৷ তবে ইলিশ আর চিংড়ি দুটোই বাঙালি প্রিয় খাবার বলা যায় ৷ তবে দিদি আপনি প্রতিটি লাইন কবির কথা ৷ সবই বেশ সুন্দর করে উপস্থাপনা করেছেন ৷
আর আমি নিশ্চিত আপনি বিজয়ী হবেন ৷ আপনি ছয়টি বাজার ঘুরে তারপর কাচা কুমড়ো পেয়েছেন ৷
অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি ৷
বিজয়ী হবো কিনা জানি না। তবে আপনাদের সকলের যে মন জয় করতে পেরেছে আমার এই রেসিপিটা, সেটার জন্য আমি অলরেডি জিতে গেছি।
বাঙালিরা খাবার খেতে সব সময় পছন্দ করে। সেটা হোক চিংড়ি মাছ কিনবা ইলিশ মাছ। চিংড়ি মাছ খেতে যেমন ভালো লাগে তেমনি ইলিশ মাছ খেতেও ভালো লাগে। আসলে এর মাঝে কোন ভেদাভেদ নেই। তবে যাই হোক আপু কাঁচা মিষ্টি কুমড়া দিয়ে চিংড়ি মাছের রেসিপি দারুন হয়েছে। কাঁচা কুমড়োতে ভাঁপা চিংড়ি নামটাও বেশ দারুন দিয়েছেন আপু। অনেক অনেক ভালো লাগলো আপনার এই রেসিপি।
একদম। এটা আসলে একপ্রকার মানুষের তৈরি।ভেদাভেদ করার চেষ্টা। ধন্যবাদ তোমাকে।
কাঁচা কুমড়োতে ভাপা চিংড়ি আসলে এই রেসিপিটা আমার কাছে ইউনিক লাগছে। এমন ধরনের রেসিপি আমি আগে কখনো খাইনি। এপার ওপার বলতে খাবারের কোন ভেদাভেদ নেই আমার কাছে মনে হয় বাঙ্গালীদের ইলিশ চিংড়ি দুটোই খেতে ভালোবাসে ।আর আপনি এত সুন্দর ভাবে রেসিপিটি উপস্থাপন করছেন দেখেই জিভে জল চলে আসছে ।ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
একবার করে খাবেন।আশা করি ভালো লাগবে।
খুবই ইউনিক একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন আপু। কাঁচা কুমড়াতে ভাপা চিংড়ির রেসিপিটি এই প্রথম দেখলাম। খুব সময় নিয়ে খুব সুন্দর করে রেসিপিটি তৈরি করেছেন। দেখে মনে হচ্ছে খেতে বেশ সুস্বাদু হয়েছে ।কাঁচা লঙ্কা দিয়ে এভাবে কখনো খাওয়া হয়নি ।বেশ ভালো আইডিয়া ছিল আপনার। বেশ সময় সাধ্য কাজ মনে হচ্ছে। যাই হোক বেশ ভালো লেগেছে আমার কাছে। ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ দিদি।সবটাই আপনাদের অনুপ্রেরণায়।
ইউনিক একটি রেসিপি শিখে নিলাম পরবর্তিতে বাসায় ট্রাই করবো। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
কাঁচা কুমড়োতে ভাপা চিংড়ি নামটা যেমন সুন্দর খেতেও নিশ্চয়ই খুবই সুস্বাদু হয়েছে। এটা আমার কাছে একদমই সম্পূর্ণ একটি নতুন রেসিপি এর আগে কখনো দেখিনি তাই এর স্বাদ কেমন জানা নেই। তবে রেসিপি কালার দেখে বোঝা যাচ্ছে খেতে খুবই সুস্বাদু হয়েছে হয়েছে। খুব সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন। প্রতিটি ধাপ খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন যা দেখে আমি শিখে নিলাম। অবশ্যই বাসায় একদিন ট্রাই করে দেখব। এত সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
হ্যাঁ এমনি কালার টা তো ভালোই হয়েছিল।তবে এত গরম ছিল না চিংড়িটা আমি যে উপরে তুলে দেবো সেটা রিস্কটা পাচ্ছিলাম না। আমার হাতে এত তাপ লাগছিল।ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে এপার বাংলা এবং ওপার বাংলা দুই দেশের চিংড়ি মাছটা ভীষণ প্রিয়। আপনার রেসিপিটি দেখে তো একদম অবাক হয়ে গেলাম। এ রেসিপিটা মনে হয় প্রথমবার দেখছি। এভাবে ভাপা চিংড়ি তাও আবার কাঁচা কুমড়োর ভেতরে। ডেকোরেশনটাই দারুন লাগলো। কখনো যদি সময় সুযোগ হয় তাহলে অবশ্যই তৈরি করব।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা মন্তব্যের জন্য।