'ব্রহ্মাস্ত্র-পার্ট ওয়ান-শিবা' সিনেমার রিভিউ করলাম। (১০% @shy-fox এর জন্য এবং ৫% @abb-school এর জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

তারিখ-১৭.০৯.২০২২

নমস্কার বন্ধুরা!

আশাকরি ঈশ্বরের আশীর্বাদে আপনারা ভালো আছেন।আমিও ভালো আছি।কিছু দিন আগেই আমি জন্মদিন উপলক্ষ্যে 'ব্রহ্মাস্ত্র' সিনেমা দেখতে গেছিলাম।আজ আপনাদের সাথে সিনেমার রিভিউ শেয়ার করব। সিনেমার ডিরেক্টর অয়ন মুখার্জী এবং প্রডিউসার অয়ন মুখার্জী,করন জহর এবং রনবীর কাপুর।প্রোডাকশন হাউজ হল ধর্মা প্রোডাকশন। এটি সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করছি। এটা অবশ্যই আলোচনা সাপেক্ষ।প্রথমেই বলে রাখি সিনেমা টি 3D সিনেমা ফলে 3D গ্লাস ছাড়া দেখলে মজা পাবেন না।

চরিত্রের নামপ্রকৃত নাম
গুরু অরবিন্দঅমিতাভ বচ্চন
অজয় বশিষ্ঠনাগার্জুন
মোহন ভার্গবশাহরুখ খান
শিবারনবীর কাপুর
ইশাআলিয়া ভট্ট
জুনুনমৌনি রায়

গল্পের পটভূমি

গল্প শুরু হচ্ছে এমন ভাবেই যে শিবা(রনবীর কাপুর)একজন ডিস্ক জকি এবং একটা দূর্গাপূজা তে সে এবং তার বন্ধুরা একসাথে এই ডিস্ক জকির কাজ করছিলো। যে বাড়ির পুজো ছিলো সেই বাড়ির কর্তার নাতনী ইশা(আলিয়া ভট্ট) কে শিবা প্রথম সেই পুজোর অনুষ্ঠানে দেখে এবং প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলে।শিবা হঠাৎ-হঠাৎ করে অচেতন হয়ে যায় এবং অচেতন অবস্থায় সে ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে দেখতে পারে, তবে সব ঘটনা নয় কিছু কিছু বিশেষ ঘটনাই।

18cbb6f2-a5a1-4980-94cc-4b7d2fa18bce.jfif

এমন ভাবেই সে একরাতে ইশার সাথে গল্প করতে করতে অচেতন হয়ে যায় এবং দেখতে পায় মোহন ভার্গব(শাহরুখ খান) নামের একজন 'বানরাস্ত্র'র ধারক সাইন্টিস্টকে জুনুন(মৌনি রায়) এবং তার সঙ্গীরা মিলে হত্যা করে এবং একটা পাজল্ এর টুকরো নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তারা এটাও জানতে পারে যে পাজলের আরেকটি টুকরো অজয় বশিষ্ঠ (নাগার্জুন) যে কিনা 'নন্দী অস্ত্র'র ধারক তার কাছেই আছে এবং তিনি কানপুরে থাকেন।

9f00aec2-3d19-4c5c-98aa-4da53d968fdc.jfif

এসব অচেতন অবস্থায় দেখে শিবা সব ঘটনা ইশা কে জানায় এবং ইশা সবটা বিশ্বাস করে। তারা টের পায় যে যদিও মোহন ভার্গব কে তারা বাঁচাতে পারে নি জুনুনের হাত থেকে তবে যদি তারা চেষ্টা করে তবে অজয় বশিষ্ঠ কে বাঁচাতে পারবে।তাই তারা কানপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং অনেক টানা পোড়েনের পর অজয় বশিষ্ঠ কে সবটা জানায় কিন্তু ততক্ষণে জুনুন এবং তার আর দুই সঙ্গী শিবা এবং ইশা কে দেখে ফেলে এবং বোঝে যে এরা অজয় বশিষ্ঠ কে বাঁচাতে চাইছে।

3a97d3e4-e596-42c3-a1b5-0943fcf0c7e9.jfif

অবশেষে শিবারা ঠিক করে যে পাজল্ এর দ্বিতীয় টুকরো টা প্রধান গুরু অরবিন্দ (অমিতাভ বচ্চন) এর কাছে নিরাপদ ভাবে রেখে আসবে। কিন্তু জুনুন তা বুঝতে পেরে শিবাদের পেছন নেয় এবং জুনুন কে আটকানোর জন্য অজয় বশিষ্ঠ থেকে যায় এবং জুনুন ও তার সঙ্গীর হাতে অজয় বশিষ্ঠর প্রাণ যায়। শিবা আর ইশা গুরুর আশ্রমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।অতী কষ্টে যখন তারা আশ্রমের গেটের কাছে পৌঁছায় জুনুনের এক সাথী ইশার উপর আক্রমণ করে এবং হঠাৎ করেই শিবা কিছু বুঝতে পারার আগেই তার হাত থেকে আগুনের প্রবল হল্কা বার হতে থাকে,এবং জুনুনের সাথী মারা যায় আর শিবাও ক্লান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে।

d9da9f1d-d342-479f-910a-71df1cf54426.jfif

এরপর যখন শিবার জ্ঞান ফেরে তখন গুরু অরবিন্দ জানায় সৃষ্টির শুরু থেকেই বংশ পরম্পরায় কিছু মানুষের মধ্যে বিভিন্ন দেবতার অস্ত্রগুলো এবং শক্তি ভাগ করে দেওয়া হয়েছে এবং সেই অস্ত্রের প্রধান অস্ত্র হল ব্রহ্মাস্ত্র।এই ব্রহ্মাস্ত্র যার কাছে থাকবে সে ই জগতের সবচেয়ে শক্তিশালী।আর এই কথাটা বুঝতে পেরে 'দেব' নামে একজন অগ্নি অস্ত্রের ধারক ব্রহ্মাস্ত্র কে হরণ করতে চেয়েছিলো। দেব,যে নিজেকে ব্রহ্মদেব বলে দাবী করে কারণ সে সব শক্তির বাহকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা তার সঙ্গে অনুরাগের সম্পর্ক ছিলো 'অমৃতা'র যিনি 'জলাস্ত্র'র ধারক, এবং দেবের ইচ্ছে জানতে পেরে অমৃতা এই 'ব্রহ্মাস্ত্র' কে তিনটি খন্ডে বিভক্ত করে দেয় যার একটা মোহন ভার্গব, একটা অজয় বশিষ্ঠ এবং তৃতীয় খন্ডটা কার কাছে আছে জানা যায় নি। আর শিবা হল দেব এবং অমৃতার সন্তান যে নিজেই অগ্নি অস্ত্রের ধারক।

fa1cfdfa-c200-40b1-8eb5-7a1a780de20e.jfif

অপরদিকে ইশা শিবা কে গুরুজীর আশ্রমে অস্ত্র চর্চার জন্য রেখে চলে যায়। কিন্তু শিবা কিছুতেই আর আগের মত নিজের বিদ্যা ব্যবহার করতে পারছিলো না। তখন শিবা অনুভব করল ইশার প্রতি তার যে ভালোবাসা আছে সেটাই তার শক্তির অনুপ্রেরণা।তাই সে ইশা কে আবার আশ্রমে ডাকল এবং আশ্রমে আসার আগে ইশা শিবার ঘর থেকে তার মায়ের স্মৃতি একটা শঙ্খ সাথে করে নিয়ে এলো। এবং গুরুজীই আবিষ্কার করলেন শঙ্খটি আসলে ব্রহ্মাস্ত্রের তৃতীয় খন্ড যা মায়া বলে শঙ্খ বানিয়ে রেখে গেছিলো অমৃতা।

33f25ab1-4e1a-405f-98ea-ea33bbbea0a0.jfif

অপরদিকে জুনুন গুরুজীর আশ্রমে আক্রমণ করার জন্য ওই এলাকার আদিবাসীদের বশ করে নিলো এবং তাদের নিয়ে গুরুজীর আশ্রমে আক্রমন করল।অনেকটা যুদ্ধের পর যখন জুনুনের হাতে ব্রহ্মাস্ত্রের তিনটে খন্ড চলে গেলো তখন সে সব খন্ডগুলো কে জোড়া লাগিয়ে ব্রহ্মদেবের আহ্বান জানায়। ব্রহ্মাস্ত্রের প্রখর তেজে পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগোতে থাকে, কিন্তু তখন শিবার ভেতর থেকে প্রবল অগ্নির শক্তি প্রকট হয় যা ধীরে ধীরে ব্রহ্মাস্ত্র কে শান্ত করে এবং পৃথিবী আবার ঠান্ডা হয়।

e37d5aa1-53ea-47c6-b3ca-917911fdd156.jfif

এটা ছিলো 'ব্রহ্মাস্ত্র-পার্ট ওয়ান-শিবা'র মোটামুটি মূল কাহিনী।আমি খুব ডিটেইলসে লিখলাম না। আবার একদম উপরী উপরীও লিখলাম না।

আমার ব্যাখ্যা

এবার আসি আমার ব্যক্তিগত অভিমত নিয়ে।সিনেমা নিয়ে জনগনের মাঝে যতটা ক্রেজ ছিলো তা হল সিনেমার VFX এবং বাজেট যা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।আর অবশ্যই এটাও ঠিক বলিউডে হিন্দু দেব-দেবী বা তাদের যে অলৌকিক শক্তি নিয়ে এমন ধরণের সিনেমা এত বড় বাজেটের আগে হয় নি।আমার ব্যক্তিগত মনে হয়েছে VFX বা স্ক্রিন কাট গুলো আরো স্মুথ হতে পারত কারণ বাজেটটা এত বেশী। অমিতাভ বচ্চনের অভিনয় দুর্দান্ত লেগেছে সবসময়ের মতই। অন্য দিকে নাগার্জুন এবং শাহরুখ খান যে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ অভিনেতা তা অল্প সময়ের স্ক্রিন শেয়ার করেও তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।আলিয়া ভাটের সেরম কিছু করার ছিলো না এখানে, সে সারাটা সিনেমা তে 'শিবা-শিবা' করে গেছে।রণবীর কাপুর কে কাঠের পুতুল মনে হয়েছে যা করতে বলা হয়েছে চুপচাপ তা করে গেছে নিজের ব্রেন না খাটিয়ে। কিন্তু আশ্চর্যরকম ভালো অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মৌনি রায়।

e949eae1-049c-4859-8015-a30016b7ba42.jfif

টিপিক্যাল বলিউড রোমান্সটা জাস্ট অসহ্য রকম বাড়াবাড়ি লেগেছে। যে সিচুয়েশনে কখনও কারো রোমান্স আসতেই পারে না সেখানেও তারা দিব্যি প্রেম করছেন।গানগুলো প্রত্যেকটাই ভালো তবে সিচুয়েশনের সাথে ফীট করে গান গুলো বসানো হয় নি বলেই মনে হল।

মার্ভেল বা ডিসি দেখতে অভ্যস্ত জনগনের এই VFX দেখলে হাসি পাবে।মনে হবে জোড় করে এবং তাড়হুড়ো করে হিন্দু দেবতাদের শক্তি, অস্ত্র এসব মিলিয়ে কিছু একটা করে দেখানো হয়েছে।

পুরো সিনেমা টা দেখে আমার জাস্ট একটা খিচুড়ি মনে হল।আমি ব্যক্তিগত ভাবে রেকমেন্ড করব না। কিন্তু সময় এবং পয়সার অভাব না থাকলে দেখে আসতে পারেন এন্টারটেইনমেন্টের জন্য।

সিনেমা ব্রহ্মাস্ত্ররেটিং
গানের রেটিং৮/১০
সব মিলিয়ে অভিনয়৭/১০
VFX৫/১০
IMDb রেটিং৫.৫/১০
আমার রেটিং৪/১০

🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

Sort:  
 2 years ago 

আমারো দেখার ইচ্ছা ছিল।কিন্তু মিক্সড রিভিউ এর জন্য দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।আর রোমন্টিক মুভি ছাড়া রনবীর কাপুর কে এরকম অ্যাকশন সিনেমার মেইন ক্যারেক্টার হিসেবে মানতে কেন জানি আমার কষ্ট হয়।আর এই দক্ষতার কারনেই তো দিদি শাহরুখ খান কিং খান।ধন্যবাদ দিদি।অসাধারণ ভাবে লিখেছ।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই।

সিনেমা টা দেখার পর পরবর্তী পার্টের জন্য আগ্রহী হয়ে রয়েছি। আপনার লেখা চমৎকার।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago (edited)

বিশ্বাস করেন দেখতে বসেছিলাম সুপার হিরো মুভি কিন্তু দেখে মনে হইসে রোমান্টিক মুভি।পুরা মুভি জুড়ে শিবা শিবা করেই মুভি শেষ।তবে vfx মোটামুটি ভালো ছিল।আর শারুখ এর কেমিও ছাড়া মুভিতে আর তেমন কিছুই পাই নাই না আছে স্টোরি না আছে অন্যকিছু।এর থেকে krish অনেক বেটার অন্তত একটু সুপার হিরোর ফিল পাইছিলাম।তবে দেখা যাক পার্ট টু তে কি হয়।আর বাজেট টা সম্ববত 450 কোটি না 400 কোটি।

 2 years ago 

হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন।

 2 years ago 

ট্রেলার দেখে মনে হয়েছিলো আমাদের ইতিহাসের উপরে সিনেমা কিন্তু বানিয়ে ফেললো সেই বস্তা পচা রোম্যান্স। বলিউড অদ্ভুত বস্তু। বারবার ফ্লপ করেও সেই এক প্রেমের গল্প।

বেশ ভালো রিভিউ হয়েছে। যেটুকু ইচ্ছে ছিলো দেখার রিভিউ পড়ে সেটুকুও উবে গেলো। আমার সময় ও পয়সা দুটোই বেঁচে গেলো 🤪। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

হাহাহা! আমার তো মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো মোবাইল ঘাঁটি। না দেখাই ভালো দুদিন পর কোন না কোন সাইটকে বেচে দেবেই। তখন দেখে নেবেন।
বাই দ্যা ওয়ে ধন্যবাদ। 🥰

 2 years ago 

বেশ ভালো লিখেছেন আপনি,পুরোটা পড়লাম।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে। 😊

Hi, @payelb,

Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.

Your post was picked for curation by @rex-sumon.


Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 67118.32
ETH 3521.09
USDT 1.00
SBD 3.20