সুন্দরী সুন্দরবন(পর্ব-১)(১০% @Shy-fox এবং ৫% @abb-school এর জন্য)
নমস্কার বন্ধুরা!
কেমন আছেন আপনারা? আমি ভালোই আছি।আপনারা অনেকেই একটু আমার প্রোফাইল ভিজিট করলে দেখবেন আমি কয়েক দিন কোন রকম পোস্ট আপডেট করতে পারি নি।এর কারণ একটাই যে আমার ভ্রমণ পিপাসু মন আর থাকতে না পেরে রওনা দিয়েছিলো পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপে অবস্থিত অভয়ারণ্য সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে।এটি বাংলাদেশ এবং ভারত মিলিয়ে অবস্থান করছে। ভারতের ৩৮% এবং বাংলাদেশের ৬২% নিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ তথা সুন্দরবন গঠন হয়েছে।মোট আয়তন ১,৩৯,৫০০ হেক্টর।(তথ্য সূত্র উইকিপিডিয়া) সুন্দরবন নাম করণের কারন একটাই সুন্দরী নামক ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রাচুর্যের জন্যই নাম সুন্দরবন।যাত্রী যদিও আমি একা ছিলাম না।আমার সাথে সঙ্গী হিসেবে ছিলো আমার দুই খুড়তুতো(কাকার মেয়ে) বোন এবং এক মাসি।উদ্দেশ্য যে শুধু ঘোরাই ছিলো তা বললে মিথ্যে বলা হবে। কারণ আরেকটা অবশ্যই ছিলো।😛
বাঙালী মানুষ, সাথে চলছে বর্ষাকাল এবং বর্ষা মানেই তো ইলিশ আর সুন্দরবনে এই সময়ে হয় ইলিশ উৎসব।বাঙালী হয়ে ইলিশ ছেড়ে দেব! ভগবান পাপ দেবে না? এই ভেবেই তিনদিনের অ্যাডভেঞ্চারে পারি দিলাম। যদিও আমার মা বা কাকিমারা ভয় পাচ্ছিলো যে আমরা ইলিশ খেতে গিয়ে না আবার রয়াল বেঙ্গলের খাবার হয়ে উঠি। আমরাও কম না। পরিষ্কার জানিয়ে দিলাম ইলিশের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতেও পিছ পা হব না।
যেই ভাবনা সেই কাজ ফটাফট মোহনা ট্রাভেল এজেন্সির মালিক বাপ্যাদিত্য রায় কে বলে বুক করে ফেললাম আমাদের ৪জনের ট্যুর সীট। সবটাই আর কি ফেসবুক দেখে আর কি! আমাদের জানানো হল আমরা যেন সকাল ৭.৪২ এর মধ্যে ক্যানিং স্টেশনে পৌঁছে যাই।শুনেই আগের দিন টোটো কাকুকে কল করে বলে দিলাম ভোর ৫.৩০ টায় যেনো আমাদের বাড়ি চলে আসে।কারণ দুবার ট্রেন পাল্টানোর ব্যাপা্র আছে।এরপর আর কি ২রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ বেড়িয়ে পড়লাম সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে।সকাল বেলা কাঁচড়াপাড়া স্টেশন থেকে আমি, কোয়েল(মেজো বোন) , মিনি(সেজো বোন) আর মাসি সকাল ৬.০১ ডাউন কৃষ্ণনগর-শিয়ালদহ লোকাল ট্রেন ধরে মোটামুটি ১.৫ ঘন্টার মধ্যে শিয়ালদহ পৌঁছে গেলাম।শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছেই দেখছি পেটে ছুঁচো দৌড়চ্ছে।৫ নম্বর প্লাটফর্মে ভালো পরোটা, তরকারি বিক্রি হয় জানতাম।সেখানে গিয়েই খেয়ে নিলাম কারণ এরপরও প্রায় ১ ঘন্টা সাউথের ট্রেনে চাপতে হবে।খাওয়া দাওয়া করেই চলে গেলাম ডাউনের প্লাটফর্মে।আর ততক্ষণে শিয়ালদহ-ক্যানিং লোকালের অ্যানাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে।একটা কোল্ড ড্রিংক নিয়েই উঠে পড়লাম ট্রেনে।একঘন্টা জার্নি করে পৌঁছে গেলাম ক্যানিং স্টেশনে।(স্টেশনের নাম হয়েছে ব্রিটিশ লর্ড ক্যানিং এর নামে।)এবারই তো আসল মজা। ভাবলাম পুরো যাত্রা ই হবে লঞ্চে!
কিন্তু এখনও অপেক্ষা করতে হবে। আরো ৪০ মিনিট অটোতে চেপে পৌঁছলাম সোনাখালী লঞ্চ ঘাটে। তারপরই চোখে পড়লো ছোট বড় সারি সারি লঞ্চ দাঁড়িয়ে আছে।আর বেশীরভাগ ই ইলিশ উৎসবের জন্যই তৈরী।
হৈ হৈ করে উঠে পড়লাম লঞ্চে।আমাদের লঞ্চের যাত্রী মোট ১৮ জন। শুনে আমি খুশিই হলাম কারণ ভিড়ভাট্টা আমার মোটেই ভালো লাগে না।যত কম লোক ফরেস্টে ঘুরে তত মজা।লঞ্চ তো দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের ব্রেকফাস্ট চলে এলো ইতিমধ্যে।ব্রেকফাস্টে এলো নানপুরী, আলুর তরকারি এবং রসোগোল্লা। ব্রেকফাস্ট শেষ করে বসে আছি, তারপর লঞ্চ পারি দিলো 'জয় মা গঙ্গা' বলে।প্রায় বিকেল ৪টে তে আমরা গোসাবা তে পৌঁছলাম।গোসাবায় নেমে লোকাল মার্কেট ঘুরলাম হ্যামিল্টন সাহেবের বাংলো দেখলাম এবং হ্যামিল্টন সাহেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে যে গেস্ট হাউসে থাকতে দিয়েছিলেন সেটাও দেখলাম।আরো বেশ কিছু জায়গা দেখার ছিলো কিন্তু আম্ফান ঝড়ের প্রকোপে এতটাই ক্ষতি হয়েছে যে এখনও রিস্টোরেশনের কাজ চলছে।
ও বলতেই ভুলে গেলাম মাঝ পথে ব্রাঞ্চ হিসেবে আমোদী মাছ ফ্রাই এবং চা খাওয়া হয়েছিলো লঞ্চের। ইলিশ উৎসব উপলক্ষ্যে লাঞ্চে ভাত, ডাল, বেগুনী, পুঁই-কাঁটা চচ্চড়ি, সরষে ইলিশ, দৈ ইলিশ, চাটনী, পাঁপড় খাওয়ানো হয়েছিলো।বেশ ঘরোয়া এবং সুস্বাদু রান্না ছিলো। আর আমাদের যে ক্যাপ্টেন ছিলো তন্ময়, সে ভীষণই মন খোলা একটি ছেলে। এত সুন্দর গান সে গাইলো তার ভিডিও ক্লিপ শেষ পর্বে অবশ্যই আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
|
গোসাবা থেকে লঞ্চে চড়ে আমরা এলাম বন-বিবির মন্দিরে।কথিত আছে সুন্দরবনের মানুষ বন-বিবির পুজো করে নিজেদের প্রধান আরাধ্য দেবী হিসেবে।বনবিবির মন্দির থেকে লঞ্চে চেপে আমরা এলাম আমাদের ফাইনাল ডেস্টিনেশন পাখিরালয়ে।সেখানে এসে একটা গেস্ট হাউসে উঠলাম। আমাদের যে ঘর টা দেওয়া হল তা অনেকটাই বড়, ঘরের পেছনে পুকুর আছে আর সেখান থেকে এত মিষ্টি হাওয়া আসে যে কি বলব।ঘরটা ৪ জনের মতই বড়।দুটো বড় বিছানা আর একটা বড় বাথরুম এবং খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
সবে আমরা স্নান করে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিচ্ছি। হঠাৎ করে তন্ময়ের আগমন। এসে ওর নিজের স্টাইলে বলছে, "এই স্সুন্দরী ম্যাডামরা! আপনাদের জন্য পোকোড়া কফি আনলাম। খেয়ে রেডি হয়ে নীচে চলে আসুন।৭টার সময় এখানে ঝুমুর নাচ করবে আদিবাসীরা।" ঝড়ের গতীতে এসব বলে ছেলেটি অন্য ঘরে চলে গেলো পোকোড়া-কফি বিলি করতে।
আমরাও তাই কফি খেয়ে রেডি হয়ে চলে গেলাম নীচে ঝুমুর নাচ দেখতে।দেখলাম আদিবাসী মেয়েরা সুন্দর হলুদ রঙের পাট করে শাড়ি পরেছে,মাথায় ফুল লাগিয়েছে,কি যে অপূর্ব লাগছে ওদের, ঠিক গল্পকথার মতই। দুজন মহিলা খঞ্জন হাতে দাঁড়ালেন আর দুটো লোক বাদ্য হাতে। এবার শুরু হল তালে তালে নাচ।ভিডিও শেয়ার করলাম কিছু ক্লিপ।প্রায় ১.৫ ঘন্টা নাচ হল।এরপর খুশি হয়ে অনেকেই বকশিস দিল। আহা কি অপূর্ব সন্ধ্যে!
এরপর ৯ টা নাগাদ তন্ময়ের হাঁক পড়ল খেতে যাওয়ার জন্য।রাতে ছিলো মিষ্টি ফ্রায়েডরাইস,খাসির মাংস। অপূর্ব তার স্বাদ। এই খেয়ে ক্লান্ত শরীরে ঘরে গিয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়লাম।
স্থান | ডিভাইস |
---|---|
সুন্দরবন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ,ভারত | Redmi note 10 promax |
দারুণ উঠেছে কিন্তু ছবিগুলো। আর লেখাটাও তেমনই দারুন হয়েছে। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি
চেষ্টা করব তাড়াতাড়িই পোস্ট করার।ধন্যবাদ আপনাকে।
অসাধারণ এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম এই পোস্টের মাধ্যমে, দারুন জায়গা সুন্দরবন, যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে অনেকদিন ধরেই কিন্তু বাধ সাধছে বাঘের পেটে যাওয়ার ভয়। যাই হোক আপনার পোস্ট দেখে সুন্দরবন যাওয়ার ইচ্ছেটা দু গুণ হয়ে গেলো। দেখি সকলে মিলে একদিন পাড়ি জমানো যায় কি না
ঘুরে আসুন। দারুন জায়গা। ভালো লাগবে।
সুন্দরবনের ঘোরার ইচ্ছা আমার অনেকদিন থেকেই। তবে সময় এবং সুযোগের অভাবে ঠিক যাওয়া হয়ে উঠছে না। আপনার ঘোরাঘুরি দেখে আবার কিছুটা উৎসাহিত হয়ে গেলাম। ভালো করে ঘোরেন, তবে বাঘ থেকে সাবধান। হা হা হা..
আমি দারুণ ঘুরে এসেছি।রবিবার ফিরেছি। খুব ভালো লেগেছে।
আপনারাও গেছেন দেখে ভালো লাগলো। কদিন আগেই ঘুরে এলাম। এনজয় করেন। শুভকামনা রইলো।
আমরা গত রবিবারই ফিরে এসেছি। খুব ভালো লাগলো ঘুরে।
Hi, @payelb,
Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.
Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP