আবেগী শুঁটকি(১০% বেনিফিশিয়ারি @shy-fox এর জন্য ও ৫% @abb-school এর জন্য)
আমার আত্মকথায় তো আগেই বলেছিলাম যে আমি রান্না করতে আর খেতে দুটোই খুব পছন্দ করি। আর এই কারণেই মাঝে মাঝেই এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকি। আজকের যে রান্না টা পোস্ট করতে চলেছি সেটার সাথে আবেগ জড়িয়ে আছে এপার বাংলা ওপারে বাংলা দুই বাংলারই বেশ কিছু মানুষের। সেটা আর কিছুই না আমাদের বাঙালদের প্রিয় শুঁটকি মাছ! কি!!! শুনেই জিভে জল চলে এলো তো? আমারও! 🤤😋
আমার শুঁটকি খাওয়ার অনেক গল্প আছে। ছোট করেই বলি-
আমার বাবার বাড়ি ভিটে মাটি ছিলো বরিশাল। আর আমার মায়ের ঢাকা। মানে বুঝতে পারছেন তো আমি কিন্তু বরিশাল+ঢাকা কম্বিনেশন। 😉
সে যাই হোক, দেশ ভাগের সময়ই দাদু ঠাম্মা সবাই এদিকে চলে আসে। শুনেছি বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন আছে এখনও বাংলাদেশে। যদিও যোগাযোগ নেই আমাদের তবে আমার বাংলা ব্লগের মিষ্টি মিষ্টি বন্ধুদের সহযোগিতায় যদি সেই আত্মীয়দের সাথে কখনও যোগাযোগ হয়, মন টা ভরে উঠবে!
দেখলেন তো? বাপের ভিটে মাটির গল্প করতে গিয়ে কেমন বে লাইনে ঢুকে পড়লাম?
যাক গে সেসব কথা, তা যেটা বলছিলাম সে কথায় আসা যাক।
আমার বাবার বাড়িতে কোন কালেই শুঁটকি ওঠে না। অন্য দিকে মা হল পিওর ঢাকার মানুষ। রান্নার হাত যেন একেবারেই অমৃত তৈরীর কারখানা! মায়ের মুখে দিদার হাতের বানানো শুঁটকির কত রকম রেসিপি শুনেছি। শুনতাম আর লাল ঝড়ত জিভ দিয়ে। শুঁটকি বাটা, শুঁটকি পোড়া, বেগুন, ডাঁটা, সব্জি দিয়ে শুঁটকি, শুঁটকির চাটনি আরো কত কি!! উফফফ জিভে জল চলে এলো।
এরপর মামাবাড়িতে একবার যখন ঘুরতে গেলাম, বাড়ি থেকেই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে গেছিলাম যে মামি, দিদা কে বলে শুঁটকি রান্না করাতেই হবে! এই অমৃত থেকে আর দূরে থাকতে পারব না। ব্যাস! যেই ভাবা সেই কাজ! শেষে বাড়িতে এলো শুঁটকি মাছ। অবশ্যই লোটে শুঁটকি কারণ এটাই শুনেছি সবথেকে সুস্বাদু। দিদার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে বানিয়ে ফেললাম এই মন, উদর তৃপ্তি করা খাবার। চলো এবার তোমাদের জানাই কি ভাবে বানালাম এই রেসিপি টা-
১) লোটে শুঁটকি ৪ টে
২) পেঁয়াজ বড় ৩ কে
৩) রসুন মাঝারি ১ টা
৪) কাঁচা লঙ্কা ৬ টা
৫) হলুদ-১ চা চামচ
৬) শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো- হাফ চা চামচ
৭) নুন-স্বাদ মত
৮) সরষের তেল ১ কাপ
প্রণালী
ধাপ-১
একটা পাত্রে ২ কাপ জল ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে আর শুঁটকি মাছগুলোর মাথা, লেজ, পাখনা কেটে ফেলে দিয়ে মাছ টাকে ছোট টুকরো টুকরো করে কাটতে হবে। এবার সেই গরম জলে মাছের টুকরো গুলো কে ভিজিয়ে রাখতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে মাছটা নরম হওয়া পর্যন্ত।
ধাপ-২
এই পর্যায়ে মাছের গা থেকে বালি এবং ময়লা সমস্তটা বেরিয়ে যাবে আর তারপর মাছ নরম হলে ভালো করে জল ছেঁকে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।
ধাপ-৩
এরপর গ্যাস ধরিয়ে কড়াই বসাতে হবে। কড়াই গরম হলে এতে ৪ টেবিল চামচ সরষের তেল দিতে হবে।এবার তেলে অল্প হলুদ অল্প নুন অল্প লঙ্কা গুঁড়ো আর অল্প পেঁয়াজ কুচি দিয়ে শুঁটকি গুলো কড়া করে ভেজে নিতে হয়। এই পর্যায়ে অনেকে শুধু নুন হলুদ মাখিয়ে শুঁটকি ভাজে কিন্তু আমি একটু পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজি কারণ তাতে আমার মনে হয় শুঁটকির গন্ধ কম ছড়ায়।হ্যাঁ শুঁটকি তে তেল ঝাল পেঁয়াজ রসুন সবই বেশী প্রয়োজন যাকে বলে একেবারেই গুরুপাক।
ধাপ-৪
এবার গরম তেলে কুচি করে রাখা পেঁয়াজ হাল্কা ভেজে নিতে হবে মিডিয়াম ফ্লেমে।
ধাপ-৫
এরপর পেঁয়াজে নুন দেব যাতে পেঁয়াজ নরম হয়।
ধাপ-৬
এরপর একটা রসুন আর ৫-৬ টা কাঁচা লঙ্কা থেঁতো করে নিয়ে এই পেঁয়াজের মধ্যে দিতে হবে।
ধাপ-৭
এতে হলুদ গুঁড়ো, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে ভালো মত কষাতে হবে।
ধাপ-৮
একটা পর্যায় পর এই কষানো মিশ্রণ থেকে তেল ছাড়তে শুরু করবে।
ধাপ-৯
এবার এতে শুঁটকি গুলো দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। কষে গেলে হাফ কাপ জল দিয়ে লো ফ্লেমে ঢেকে দিতে হবে।
ধাপ-১০
১০-১২ মিনিট পর ঢাকনা সরালেই অমৃত তোমার কড়াইয়ে।
এই পর্যায়ে বলে রাখি শুঁটকি একটা স্লো কুকিং মাছ। তাড়াহুড়ো করে শুঁটকি মোটেই সুস্বাদু করে বানানো যায় না। আমরা এই রেসিপি টা কে শুঁটকি চাটনি বলি। আপনারা কি বলেন জানাবেন! আর আপনারা শুঁটকি কে কি ভাবে রান্না করেন বা আপনাদের বাড়িতে মা, স্ত্রী বা বোন, দিদি রা কি ভাবে শুঁটকি রান্না করে সেটাও কমেন্টে জানাবেন। নতুন নতুন রান্না শিখতে বেশ ভালো লাগে।
ভালো থাকবেন সকলে। আবার ফিরব নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আপনার তৈরি করা শুটকি মাছের রেসিপিটি দেখেই জিভে জল চলে আসলো। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে তৈরি করা পাশাপাশি ধাপগুলো অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
আপনার জন্য শুভ কামনা রইল
শুঁটকি এমন একটা খাবার বিশেষ করে লোটে শুঁটকি যে দেখলেই জিভে জল আসে।
যেকোনো শুটকি মাছের রেসিপি আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। শুটকি মাছ যেভাবে রান্না করা হোক না কেন ।খেতে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।আপনার রেসিপিটি দেখে খেতে ইচ্ছে করছে। কালার দেখে বোঝা যাচ্ছে খেতে খুবই সুস্বাদু হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে ধন্যবাদ দাদা। আমি চেষ্টা করেছি নিজের মত করে করার। এটাই আমার প্রথম চেষ্টা ছিলো।
আমার বাড়িও বরিশাল ভাই। এই শুটকি ভুনা খেতে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। রেসেপির কালার অনেক লোভনীয় লাগছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই রেসিপিটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ দাদা আপনাকে। শুঁটকি বেশ ঝাল গড়গড়া লাল লাল না হলে ঠিক ভালো লাগে না।
বলা দরকার ছিলো আবেগি সুস্বাদু শুটকি। বাড়িতে আমার আম্মু কেমন যেনো একটু ঝোল রেখে ঝাল দিয়ে শুটকি রেসিপি করে। খেতে দারুন লাগে। যদিও আমি শুটকি তেমন চিনিনা।
মায়ের হাতের সবকিছু সুস্বাদু হয়।আমি চিংড়ি শুঁটকি ও বানিয়েছিলাম