আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় উপলক্ষে পিকনিক (১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-০১.০১.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
নতুন বছর নতুন প্রাণ,
নতুন সুরে নতুন গান।
নতুন উষার নতুন আলো,
নতুন বছর কাটুক ভালো।
কমিউনিটির সকলকে ইংরেজি নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ২০২২ এ যদি কোন ইচ্ছে,শখ অপূর্ণ থাকে, আশা করি ২০২৩-এ সকলের সব অপূর্ণ আশা পূরণ হোক।খুব ভালো কাটুক সারাটা জীবন। প্রত্যেকেই আমরা যেন মানবতার পথে হাঁটতে পারি।
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন।আমিও ভালো আছি। এই পোস্টটা আরো আগে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বেশ কিছু পেন্ডিং পোস্ট থেকে যাওয়ায় দেরি হয়ে গেল। তবে পোস্ট দেরি হলেও আবেগ হয়তো এখনো কমেনি।সে আবেগের উপর ভিত্তি করে আজকে পোস্টটা করছি। যদিও ফুটবল নিয়ে বিশাল কিছু পাগলামো আমার যে আছে সেটা নয়।কারণ ভারত ফুটবল খেলে না বিশ্বকাপে।সুতরাং আবেগটা একটু কমই। তবে যেহেতু ছোট থেকে বাড়িতে বাবা আর বেশিরভাগ সবাইকেই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হয়ে খেলা দেখতে দেখেছি। সেই কারণে ভেতর থেকে আর্জেন্টিনা কে একটু হলেও সাপোর্ট করি। আর বাবা কাকার পরবর্তী জেনারেশনে অর্থাৎ আমার ভাই বোনেরা সবাই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। সুতরাং আমার ভেতরেও বলতে পারেন একরকম পরিবারের প্রভাবেই আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা। একমাত্র মেজো কাকা এবং ন'কাকা ব্রাজিল সাপোর্টার। তাদের বউ ছেলে,মেয়েরাও আর্জেন্টিনার সাপোর্টার।
বিশ্বকাপের রাতে কি রকম টানটান উত্তেজনায় খেলা হয়েছিল সেটা আমরা সকলেই জানি। প্রত্যেক বার ল্যাপটপ বন্ধ করে রেখে, বারবার google চেক করছি। কটা করে গোল হল। প্রথম দুটো গোল যেহেতু এত তাড়াতাড়ি হয়েছিল, ভেবেছিলাম ফ্রান্স আর্জেন্টিনাকে ছুঁতে পারবে না। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে এমবাপ্পে এত সুন্দর ভাবে খেলে দুটো গোল ছুঁয়ে ফেলল, দেখে আমার আত্মারাম খাঁচা হয়ে গেছে। আমি খেলা দেখি না। তাতেই আমার এই অবস্থা।
তার মানে বুঝতেই পারছেন আমার ভাই ও বোনেরা যারা রেগুলার খেলা দেখে এসেছে, তাদের কি অবস্থা হতে পারে! পরে জানতে পারলাম প্রত্যেকে কেঁদেছে চিৎকার করে করে। আমার ভাই যে কিনা ব্যাঙ্গালোরে ছিল, সে তো সেখানে একা একাই কেঁদেছে। যাই হোক তারপরে তো অবশেষে রেজাল্ট আমরা সকলেই জানি। জিত সেই আর্জেন্টিনারই হল। সেই রাতেই কাকার ছেলেমেয়েদের দেখলাম থালা-বাসন বাজিয়ে চিৎকার করতে করতে সারা রাস্তা ঘুরেছে।বিশেষ করে যারা ব্রাজিলের সাপোর্টার ছিল, তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে ভালো করে থালা-বাসন বাজিয়ে এসেছে।সেই রাতে প্রচুর পরিমাণে বাজি ফাটিয়েছে। মানে এক রকম পাগলামি যাকে বলে।
তারপরের দিন সকালবেলা হঠাৎ করেই রোহন ফোন করলো। আমায় বলল, "পায়েল দি বটতলায় পিকনিক হবে আর্জেন্টিনা জেতার উপলক্ষে। তোর কোন টাকা পয়সা দিতে হবে না। কারণ রাহুল দা (আমার ভাই) ৫০০ টাকা অলরেডি দিয়ে দিয়েছে।আমি ডিজের ভাড়া দিচ্ছি।পনেরশো টাকা লেগেছে। আর কোয়েল দি আর রাতুল দা ৬০০ টাকা দিয়েছে। আর বাকিরা আমাদের বাড়ির প্রত্যেকেই মাথা পিছু দেড়শো টাকা করে দিচ্ছে।সুতরাং আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা পাড়ার সবাই মিলে আমরা একটা ছোটখাটো পিকনিক করবো। তুই সন্ধ্যেবেলা চলে আসিস।"
আমি বললাম, "বেশ ঠিক আছে।এই আনন্দেতে অংশগ্রহণ করতেই হয়। " ব্যাস চলে গেলাম সন্ধ্যে হওয়ার সাথে সাথেই সেজ কাকুর বাড়িতে। সেখান থেকেই একসাথে খেতে যাব। যদিও রান্না বা অন্যান্য কাজ ছেলেরাই করেছে। টেবিল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আর উত্তম কাকুর বাড়িতে রান্না হয়েছে। কোয়েল,উন্মেষা, আমি সবাই মিলে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। তারপরে পিকনিকের স্পটে গেলাম গিয়ে দেখলাম বেশ ভালই ডিজে চালিয়ে গান বাজিয়ে নাচানাচি হচ্ছে এবং বাচ্চারা খাওয়া-দাওয়া করছে।
রোহনের থেকে শুনেছিলাম পিকনিকের মেনু হল ভাত এবং চিকেনের ঝোল।কিন্তু পরে শুনতে পেলাম শ্রীবাস কাকু অর্থাৎ আমাদের পাড়ারই একজন ক্যাটারিং এর বিজনেস করেন, তিনি বেশ কিছু ফিশ ফ্রাই,চিকেন পকোড়া এবং চাটনি দিয়েছেন। তারপরে ঠিক করা হলো যেটুকু টাকা বেঁচেছে সেখান থেকে সকলকে একটা করে রসগোল্লা খাওয়ানো হবে। রাতুল এবং রোহিত চলে গেল রসগোল্লা আনতে। টাকা পয়সার হিসেব আমার ভাইয়েরাই রেখেছিল। সকলে এসে ওদের কাছে টাকা জমা দিয়েছিল। ভাবলাম দুটো আইটেমের পিকনিক হওয়ার ছিল, কিন্তু আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা সেটা বেশ কিছু আইটেমে এসে দাঁড়ালো।বাচ্চারা খেয়ে ওঠার পরে আমরা খেতে বসলাম। সব ছোট ছোট বাচ্চারা সার্ভ করছিল।
শুধু আনন্দে যে তাদের প্রিয় দল আর্জেন্টিনার জয় হয়েছে এত বছর পর। আমরা মেয়েরা যদিও খাওয়া দাওয়া করে তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। কিন্তু ছেলেরা বেশ অনেক রাত পর্যন্তই নাচ-গান করে খাওয়া দাওয়া করেছে, মজা করেছে। যদিও কোন নেশা করার মত বস্তু ছিল না। কারণ ফ্যামিলি পিকনিক ছিল তাই। এটা একটা ভালো জিনিস হয়েছে। না হলেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হতো। আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে, যে কোন অনুষ্ঠান, পার্বণ যা ই পালন করি না কেন, যেন সুষ্ঠুভাবে সেটা পালন করতে পারি।
কেউ যেন অসুস্থ হয়ে পরিবেশ নষ্ট না করে। রাতটা বেশ ভালই একসাথে কাটিয়ে দিলাম, সকলে আনন্দ করে। তবে ফ্রান্স দলটি বেশ ভালই খেলেছিলো । এটাও মানতে হবে। আর কোন কিছুতেই আমার মতে অতিরিক্ত উৎসাহী হয়ে ওঠা ভালো না। সব কিছুই লিমিটে করলে বেশ ভালোই হয়।
আজ এখানেই শেষ করছি।আমার পোস্টটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।আবার আসবা নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে।সকলে ভালো থাকবেন।
🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।
সেদিনের খেলাটা কত টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ছিল সেটা সবাই জানে। আপনি খেলা না দেখে যে অবস্থা এদিকে আমাদের তো খেলা দেখে আরও বেশি খারাপ অবস্থা হয়েছিল। তবে শেষে আর্জেন্টিনার বিজয়ী হয়েছে এটাই সবচেয়ে বেশি আনন্দের। আসলেই আপু ফ্রান্স সেদিন অনেক ভালো খেলেছিল। আপনাদের পিকনিকের মুহূর্ত গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ফেমিলির সবাই মিলে বিশ্বকাপ উপলক্ষে পিকনিক উপভোগ করলেন। এটা খুব ভাল লাগলো যে আপনার ফেমিলির অধিকাংশ সদস্য আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করে। তবে খেলা ফাইনাল ফাইনালের মতই হয়েছে। ধন্যবাদ আপু।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
কিছুদিন দেরিতে হলেও এই পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে সত্যিই ভালো লাগলো। আসলে নিজের আনন্দের সময় গুলো সবার সাথে ভাগ করে নিতে না পারলে সত্যিই খারাপ লাগে। তবে পাড়ার সবার সাথে এবং ছোট ভাইবোনদের সাথে পিকনিক করার মজাই আলাদা। আর যদি সেটা হয় প্রিয় দলের বিজয় উপলক্ষে তাহলে তো আনন্দ আরো বেড়ে যায়। বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে যেহেতু মিষ্টি খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ব্যাপারটি কিন্তু ভালই হয়েছে।
একদমই ঠিক বোন।
পরিবারের সবাই মিলে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ নিয়েছে তার আনন্দে পিকনিক করেছেন। আমিও আর্জেন্টিনার সাপোর্টার ছিলাম বললেই চলে যেতাম আপনাদের পিকনিকে। ধন্যবাদ দিদি এতদিন পর হলেও সুন্দর মূহুর্ত গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আমাদের বাড়ির সবাই আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার জয়লাভ উপলক্ষে আপনাদের মত আমরাও একটা সুন্দর পিকনিক করেছিলাম। এটা আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন আপু আর্জেন্টিনার খেলা দেখে আমাদের সকলের মনের মধ্যেই অনেক টেনশন কাজ করছিল। আমি মনে করি এটা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবথেকে জমজমাট ফাইনাল খেলা।
ভীষণ চাপ ছিলো দাদা।
পরিবারের সবার সাথে পিকনিক করার মজাই আলাদা। আপনি যে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার জেনে ভালো লাগলো। আমি ও আর্জেন্টিনার সাপোর্টার।যদি ও দেরিতে দিয়েছেন তবু ও আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
একদমই তাই। ধন্যবাদ।
আর্জেন্টিনা বিজয়ী হয়েছে সেই উপলক্ষে তো দেখছি বেশ ভালই পিকনিক করেছেন সবাই মিলে।পিকনিক করতে আমি ভীষণ ভালোবাসি যা আমার খুবই পছন্দের। সেদিন কিন্তু দুই দলই খুবই ভালো খেলেছিল। বেশ ভালই সময় কাটিয়েছেন আপনারা। খাওয়া দাওয়াও দেখছি খুবই ভালোভাবে করেছেন সবাই মিলে। আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে কোন অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন আয়োজন সুষ্ঠুভাবে পালন করা হয় কিনা। যাইহোক শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
হ্যাঁ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিলো।
আরে আপনারা তো দেখছি আর্জেন্টিনা জয়ী হওয়াতে পিকনিক ও করে ফেলেছেন। তাহলে আমরা এখানে বসে বসে কি করছি। পিকনিক করতে কার না ভালো লাগে। মনে হচ্ছে বেশ ভালোই খাবারের আয়োজন করেছেন। আগে আইটেম ছিল দুইটি পরে অনেক হয়ে গিয়েছে এটা জেনে ভালো লেগেছে। আর্জেন্টিনা সাপোর্টারদের জীবন অবশেষে ধন্য হয়েছে। কারণ অনেক বছর পর তাদের প্রিয় দল জয়ী হয়েছে। যাইহোক ধন্যবাদ জানাই।
হ্যাঁ দাদা। অনেক মজা হয়েছে।