সরজিৎ ঘোষের গল্পকথা পাঠ(১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-৩১.১০.২০২২
নমস্কার বন্ধুরা
তোমার মনে আছে সুপর্ণা,মধুরিমার সাথে অমিতের যখন ব্রেকাপ হয়ে গেল,মধুরিমা ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছিল।বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ করে দিয়েছিল।খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল।চোখের তলায় একটা দীর্ঘ কালির দাগ মেয়েটাকে বুড়িয়ে দিয়েছিল।দেখা করার জন্য আমরা সেদিন মধুরিমার বাড়িতে গিয়েছিলাম।সেদিন তোমার হাতটা চেপে ধরে সে কী কান্না ওর।কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল,অমিতকে ছাড়া বাঁচবে না।আমিই ওকে বলেছিলাম,পাগল মেয়ে।এসব কথা তোর মুখে মানায় না।তুই কত স্ট্রং বল তো?তোমাকে ছাড়া বাঁচব না এমন কথা কারা বলে?দুর্বল মানুষরা।দেখবি ক'দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।মনকে শক্ত কর।এরকম একটু আধটু মনে হবেই।
মধুরিমা আমার কথা কতটা বুঝেছিল জানি না।তারপর মধুরিমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা মুভি দেখতে গিয়েছিলাম,পাশাপশি বসে আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে কত গল্প করেছিলাম,রেস্টুরেন্টে খেয়েছিলাম,সেলফি তুলেছিলাম।কতটা আনন্দ করেছিলাম বল তো!অথচ সেদিন কয়েক ঘণ্টা আগে মধুরিমার দুঃখে কতটা কাতর ছিলাম যেন।মধুরিমাকে কত সহজে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছিলাম।আচ্ছা সত্যিই কি মধুরিমার কষ্টটা অনুভব করতে পেরেছিলাম?এই পৃথিবীর নিয়ম বড় অদ্ভুত।এক দিকে বিচ্ছেদের বেদনায় কেউ ছটফট করে,অন্যদিকে তখন নতুন প্রেমে মশগুল হয়ে ওঠে কেউ।
জানো সুপর্ণা,ব্রেকাপ ব্যাপারটা বেশ মজার মনে হয়।ব্রেকাপ যখন অন্যের তাকে কত সহজেই সব কিছু বলে দেওয়া যায়,জ্ঞানের উপদেশ দেওয়া যায়,কঠিন পরিস্থিতিকে সহজ করে নিতে বলা যায়।কিন্তু রেকাপ যখন নিজের তখন শুধু উপলব্ধি করা যায় কষ্টটা।সব কিছু মেনে নেওয়া,মনকে বুঝিয়ে নেওয়া যে কত কঠিন,ওই পরিস্থিতি না আসলে বোঝা যায় না।সেদিন যত সহজে মধুরিমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম,তত সহজে আজ আর নিজেকে বোঝাতে পারি নি।
জানো,তুমি চলে যাওয়ার পর প্রথম দুটো মাস আমার কাছে এতটা যন্ত্রণাদায়ক ছিল বলার না।সারাক্ষন বাড়িতে থাকতাম।মধুরিমার মত আমার ও মনে হত,তোমাকে ছাড়া আমি থাকব কী করে?
দমবন্ধ হয়ে আসতো ঘরের মধ্যে থেকে।অথচ দেখো আমার এই ঘরের সমস্ত প্ল্যান দু'জনে মিলে ঠিক করেছিলাম,দেওয়ালের রঙ দুজনের পছন্দেই করা।এতই খারাপ ছিল ওই সমটা... ঘুম, জাগা কোনো কিছুর ঠিক ছিলনা। শুধু বাবা-মা কে বুঝতে দেবো না বলে সময়ে স্নান-খাওয়াটা করেছি।এমনও দিন গেছে আমি রাত একটায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়ে আর ঘুমোতে পারিনি।রাতে উঠে নেচেছি।গেয়েছি।পাগলের মত করে আমার অত বড় রুমটায় এপাশ ওপাশ করে বেড়িয়েছি।ওই সময় সত্যিই একটা মানুষ খুঁজেছিলাম। একজন ভেঙে যাওয়া মানুষ।একদম আমার মত।ব্রেকাপের যন্ত্রণা অনুভব করতে তো সে-ই পারে,যার রেকাপ হয়।বাইরে থেকে অনেক উপদেশ দেওয়া যায়,সে গুলো অনুভব করার ক্ষমতায় কারো থাকে না।সেদিন মধুরিমার যন্ত্রণা আমিও উপলব্ধি করতে পারিনি।মামুলি কয়েকটা বুলি আওড়ে সান্ত্বনার প্রলেপ দিয়েছিলাম মাত্র।
তারপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলায়।
স্বাভাবিক হলাম একটু একটু করে।ব্রেকাপের ক্ষত সারে না।তবে সময় হল বড় মলম।ক্ষতে প্রলেপ দেয় মাত্র।তোমাকে ভুলতে পারি না শুধু।মানুষ হল নেশার থেকেও ভয়ঙ্কর।তীব্র ভালোবাসার কারণে এক বার যদি কেউ মগজে ঢুকে যায়,সেখান থেকে তাকে বের করা মুশকিল।সব ঠিক হয়ে যাবে এমন কথা বড় মিথ্যে।আসলে কিছুই ঠিক হয় না।ভালো আছি এই অভিনয় করে পুরো জীবনটা চালিয়ে দিই।
কলমে:সরজিৎ ঘোষ
আমার ব্যাখ্যা
ভিডিওগ্রাফি | payelb |
---|---|
ডিভাইস | রেডমি নোট ১০ প্রো ম্যাক্স |
আপু আপনি অসাধারণ একটি গদ্য পাঠ করেছেন। খুব ভালো লাগলো কাহিনীটা। আর আপনি খুব সুন্দর করে আপনার কন্ঠ দিয়ে এটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। কন্ঠ প্লাস ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক জাস্ট অসাধারণ ছিল। ধন্যবাদ আপু অসুস্থতা নিয়েও আমাদের মাঝে গদ্যপাঠ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইল।
অনেক ধন্যবাদ বোন পাশে থাকার জন্য।
খুব ভালো পাঠ করেছিস তো। শুনতে খুবই ভালো লাগছে। এমন আরো পোস্ট করিস।
হ্যাঁ করব।তাও এডিটিং এ একটু ভুল হয়েছে। শরীর টা একদমই ঠিক নেই।
আপনি খুবই সাবলীল ভাষায় সুন্দরভাবে আমাদের মাঝে গদ্য পাঠ করেছেন। শুনে সত্যি খুব ভালো লাগলো। আপনার গদ্য পাঠ করা খুবই চমৎকার হয়েছে। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাই, ধন্যবাদ।
গদ্য পাঠ এই প্রথম করলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
সরজিৎ ঘোষ যেমন সুব্দর লিখেছেন , তেমনই সুন্দর পাঠ করেছেন। অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।
ধন্যবাদ। ❤
ধন্যবাদ দাদা। আজ বাধ্য হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে আনলাম।আর পারছিলাম না। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু আপনার গুণের কথা বলে শেষ করার মত নয়। কি সুন্দর সাবলীল ভাষায় কথাগুলো বলে ফেললেন। সত্যি আপু মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। অসাধারণ বলেছেন আপু। এভাবে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তোমরা এত উৎসাহ দাও বলেই আমি চেষ্টা করি। পাশে থেকো। অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর ছিল সাথে আপনার ফেসের এক্সপ্রেশন ও দারুন ছিল।এই ধরনের আবৃত্তি গুলো বেশ ভালই লাগে।আর সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সেট করে দেওয়ায় আরো শ্রুতিমধুর হয়েছে দিদি।
ধন্যবাদ ভাই উৎসাহিত করার জন্য।
খুব সুন্দর পাঠ করেছেন। বিশেষ করে আপনার মুখের এক্সপ্রেশন টা অসাধারন ছিল, তার সাথে ছিল অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। সব মিলিয়ে চমৎকার উপস্থাপনা।
এখনকার ওয়েদার এ সবার শরীর কম বেশি খারাপ হচ্ছে। অতি দ্রুত আপনার সুস্থতা কামনা করছি।
ধন্যবাদ। আরেকটু ভালো হতে পারত। শরীর আর দিচ্ছিলো না বলে বার বার টেরে বেঁকে যাচ্ছিলাম।বাধ্য হয়ে অ্যান্টিবায়টিক খেলাম।