মিশনারী স্কুলের রহস্য, শেষ পর্ব(১০% @shy-fox, ৫% @abb-school এর জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
তারিখ-০১.১০.২০২২
নমস্কার বন্ধুরা!
আশাকরি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন। আজ আমার ষষ্ঠীর দিনটা ঘরেই কেটে গেলো। তাই পুজো নিয়ে তেমন আপডেট নেই। তাই ভাবলাম আজ মিশনারী স্কুলের রহস্য টা বরং শেষ করি।
শেষ দুটো এপিসোডে বলেছিলাম যে চেরী আর মিকাই মেঘালয়ের একটি মিশনারী স্কুলে পড়তো। চেরী জানতে পারে সেই স্কুলটা অতীতে একটা হাসপাতাল ছিলো যেখানে এক দূর্ঘটনায় ৫০ জন মানুষ মারা যায়।
এরপর চেরী বিনা সমস্যায় স্কুল করে প্রায় এক বছর। একবছর পর যখন ক্লাস ১০ এর পরীক্ষা সামনেই ছিলো তখন চেরীদের হোস্টেলের বেশীরভাগ মেয়েই নিজের বাড়িতে চলে গেছিলো। চেরীরা মোট ১৫ জন মেয়ে হোস্টেলে ছিলো। এমনই একটা বিকেলের ঘটনা যখন স্কুলে একটা ফাংশনের জন্য রিহার্সাল করছিলো মেয়েরা। আসলে দশম শ্রেণীর পর যে ফেয়ারওয়েল হবে সেটার জন্যই মেয়েরা প্রিপারেশন নিচ্ছিলো।চেরী ভাবলো ফাইনাল রিহার্সালের আগে একটু ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসা যাক।

37217d7a-588c-4d84-a70f-e0bc83dbd457.jfif
Image Source

এই ভেবে চেরী ওয়াশরুমের দিকে গেলো।আর ওদের স্কুলের ওয়াশরুমের ভেতরে অদ্ভুত ভাবে কোন আলো ছিলো না। শুধু বাইরের করিডরে একটা মিট মিট করে আলো জ্বলতো। ওই ভাবেই চেরী ওয়াশরুমে গেলো। হঠাৎ করে নিঃশব্দ ওয়াশরুমে সে মোবাইলের কী প্যাড টেপার আওয়াজ পেলো খট্-খট্ করে।

চেরী ভাবলো, "এখন তো স্কুলে আর কোন মেয়েই নেই। তার উপর আমাদের ১৫ জনের মধ্যে একমাত্র তেঞ্জুর কাছেই মোবাইল আছে। তাহলে কি তেঞ্জুই পাশের ওয়াশরুমে?"

অত কিছু না ভেবেই চেরী জিজ্ঞাসা করল, "Tenju, is that you?"
পাশের ওয়াশরুম থেকে টাইপিং বন্ধ না হয়েই একটা কেমন ঘরঘরে ফ্যাকাশে গলা মেশানো আওয়াজে বিরক্তির স্বরে ভেসে আসলো, "হুমমমমম্"
এমন শব্দে একটু অবাক হয়ে চেরী ভাবলো, "কী হল তেঞ্জুর সাথে যে ও এই ভাবে কথা বলছে!"
আবার চেরী বলল, "Everything is alright na Tenju?"
উত্তরে এক বিকট রাগের স্বরে আবার উত্তর এলো, " হুমমমম্! অলরাইট।"
এবার চেরীর একটু খটকা লাগলো কারন ভয়েস টা মেয়েলী হলেও তার মধ্যে কেমন একটা পুরুষালি ব্যাপার এবং কোন ভাবেই তেঞ্জুর ভয়েসের সাথে মেলে না।


school-teaching-building_1205-822.jpg

Image Source

চেরী দৌড়ে যখন রিহার্সালের জায়গায় হাজির হল তার মাথা ঘুরে গেলো। সে দেখলো তেঞ্জু দিব্যি রিহার্সাল করছে। তখন সে কনফার্ম করার জন্য তেঞ্জু কে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল যে সে ওয়াশরুমে গেছে কি না! তেঞ্জু জানালো সে এখানেই রয়েছে যায় নি। এমনকি চেরী ছাড়া বাকি সবাইই সেই তখন থেকে রিহার্সাল করছে। চেরীর আর বুঝতে বাকি রইলো না।বিষয় টা আসলে কি!

পরের দিন সে সকালে উঠেই ফাদারের কাছে গিয়ে সমস্ত ঘটনা জানালো চার্চে। ফাদারের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা দিলো। ফাদার বলল যে উনি এই বিষয়টা অবশ্যই আলোচনা করবেন। আর ফাদার চেরী কে একটা ছোট শিশিতে পবিত্র জল দিলেন আর বললেন এই জল যেন সে তার সাথে রাখে আর কোন রকম নেগেটিভ এনার্জি অনুভব করলে জেসাস ক্রাইস্ট এর নাম করে 'এইমেন' বলে ছিটিয়ে দেয়।

সেদিন ই সন্ধ্যা বেলা ঘরে ফিরে নাইট গাউন পরে চলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলো। হঠাৎ করে আয়না দিয়ে দেখলো পেছন করে লম্বা চুল কোন একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চেরী ভাবলো সুশী দাঁড়ানো কারণ এত লম্বা চুল সুশী ছাড়া পুরো স্কুলে আর কারো নেআ।চেরী বলল, "কী ব্যাপার সুশী, কিছু বলবি?" বলেই পেছন ঘুরতেই দেখলো ঘরে কেউই নেই। দরজা বরাবর তাকাতেই সে দেখতে পেলো সুশী তো ৫ নম্বর রুমে খাটে বসে তেঞ্জুর সাথে গল্প করছে আর তার চুলও বাঁধা। ভয়ে চেরী জেসাসের নাম জপতে থাকলো। বার বার ভাবতে লাগলো যে সে-ই কেনো দেখা পাচ্ছে! সে ভাবলো কোন মতে পাশ করে বার হতে পারলেই সে বাঁচে।


এমনই ভাবে পরীক্ষার আর ১ মাস বাকি ছিলো। রাতের বেলা ৮টার মধ্যে সব লাইট নিভে যেতো হস্টেলে। আর লাইট জ্বালানোর পার্টিশন ছিলো না।হস্টেলের ওয়ার্ডেন মিসেস লুইস ছিলেন খুবই করা। সব মেয়েরাই শুয়ে পড়েছে। মিশনারী হস্টেলে নিয়ম এটাই যে ঘুমোনোর সময় বালিশের নীচে হোলি বাইবেল নিয়ে ঘুমোতে হবে। কিন্তু চেরী সাথে হোলি ওয়াটারটাও নিয়ে শোয়।এবার মাত্র তন্দ্রা ভাব এসেছে চেরীর। হঠাৎ করে বুঝতে পারছেন তার বেডটা কেউ নাড়াচ্ছে একটা তালে। চেরী ভাবল হয়তো নীচে মিকাই শুয়ে আছে ও নাড়াচ্ছে।

চেরী বিরক্ত হয়ে বলল, "মিকাই এই ভাবে নাড়াস না। ঘুমোতে অসুবিধে হচ্ছে।"
হাড় হিম করা একটা ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ ভেসে এলো আর চেরী যা বলল, সেটা কেই রিপিট করলো।
এবার চেরী অনেকটা সাহস সঞ্চার করে নিতে উঁকি দিতেই দেখলো মিকাই তো ঘুমোচ্ছে। একি তাহলে তার পায়ে এই ঠান্ডা হাতটা কার!


এবার চেরী খুব জোড়ে জোড়ে বাইবেলের 'হাইমস' পাঠ করতে থাকলো বালিশের নিচে রাখা বাইবেল আঁকড়ে ধরে।কিন্তু কোন লাভ হচ্ছিলো না কারণ সেই অশরীরী আবার সেই ফ্যাসফ্যাসে গলায় সেই 'হাইমস্'গুলোকে আওড়াতে থাকলো। এটা শুনে চেরী খুব জোড়ে চিৎকার করতে চাইলো। কিন্তু কোন ভাবেই পারলো না। কেউ যেনো ওর গলা টিপে ধরে রেখেছিলো। চেরী কোন কিছু না ভেবেই এবার সেই পবিত্র জল ছেঁটাতে থাকলো চারিদিকে। তারপর কখন যে সে জ্ঞান হারালো সে নিজেও জানে না।

পরেরদিন যখন ঘুম ভাঙলো সে আস্তে আস্তে উঠে মিকাই কে সবটা বলল! মিকাই বলল, "আমার উপরের বাঙ্কে শুলি তুই, আমি তো কিছু টের পেলাম না! তুই মিথ্যে বলছিস না তো চেরী।"
চেরী এবার উত্তেজিত হয়ে বলল, "তোর কি আমায় পাগল মনে হয়! জানিস পায়ের এই জায়গাটা.... "


কথা শেষ করার আগেই পায়ে হাত দিয়ে কোঁকিয়ে উঠলো চেরী। দেখলো পায়ে একটা হাতের কালশিটে ছাপ। এবার মিকাই বিশ্বাস করল। ওর দুজনই এবার ফাদার কে গিয়ে সবটা বলল এবং দেখালোও। ফাদার বুঝলো এটার বিহিত না করলে স্কুলের বদনাম হয়ে যাবে। ফাদার মিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট করে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান রাখলো স্কুল এবং হস্টেলে। তারপর বৌদিরা একমাস ছিলো ঐ স্কুলে। কিন্তু কারো তেমন সমস্যা হয় নি। এখন পরিস্থিতি কি সেটা কেউই বলতে পারে না।

আজ এখানেই শেষ করলাম। আবার কাল আসব নতুন কিছু নিয়ে।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ🌸🌸🌸

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59264.94
ETH 2604.33
USDT 1.00
SBD 2.38