কল্যাণী বইমেলায় ত্রয়ী(১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-২৯.১২.২০২২
নমস্কার বন্ধুরা
ব্যাপারটা হচ্ছে কিছুদিন আগেই হয়তো আপনারা দেখেছেন যে আমি একা একা বই উৎসবে গিয়েছিলাম। আসলে ছোটাছুটি করে বই উৎসবে যাওয়ার কারণ হলো, ভেবেছিলাম ওটাই হয়তো বইমেলা। আর হয়তো বইমেলা হবে না এ বছর।আর বছরে একবারই কল্যাণী বইমেলা হয়।আর সেটা যাব না তা কখনো হয়নি।ওই ভেবেই লাফালাফি করে আরো যাওয়া। পরে শুনি ওটা বই উৎসব ছিল। আর পরে বই মেলা হবে। ডিসেম্বরের দু-তিন তারিখ নাগাদ শুরু হয়েছে। বইমেলা ছিল প্রায় ১০-১৫ দিনের মতো। শেষ হওয়ার দু-তিন দিন আগে শর্মিষ্ঠা বলল, "এই বইমেলা হচ্ছে রে! যাবি?" আমি ভাবলাম বই মেলা হচ্ছে! কিন্তু আমার তো যা বই কেনার ছিল কিনে নিয়েছিলাম।
এখন আর টাকা-পয়সাও নেই হাতে যে বই কিনতে পারবো। ও বলল, "আরে আমিও বই কিনব না। খেতে যাব। "আমি শুনে একটু চমকে গেলাম।এই রকম খাদকও হয়? যে কিনা বই মেলাতেও বলে খেতে যাব! যাই হোক তারপরে সাথে জুটে ছিল কাবেরী। আমার ভাইয়ের ক্লাসমেট।একই এলাকায় থাকায় ছোট হলেও বন্ধুর মতো হয়ে গেছে। ব্যাস আমি শর্মিষ্ঠার কাবেরী রওনা দিলাম বইমেলার উদ্দেশ্যে। গিয়ে লোক দেখানো দু'চারটে বইতে দেখেছি। কিন্তু কিছু কিনিনি। কারণ আমার কাছে টাকা পয়সাও ছিল না বই কেনার মত আর আমি এতটাই বই অবসেস্ট যে বেশি টাকা নিয়ে গেলেই বই কিনে ফেলবো ফটফট করে।ওই কারণে মায়ের থেকেও টাকা নিয়ে যাইনি।
কিন্তু কি আর করা যাবে? গিয়ে ঠিক একটা বই পছন্দ হয়েই গেল ।আর এমন একটা বই পছন্দ হলো যার দাম ৯০০ টাকা!কি করব ভাবতে ভাবতে একবার ভেবে নিলাম ফোন পে তে পেমেন্ট করি। কিন্তু পেমেন্ট করতে গিয়ে দেখি ওখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ভীষণ খারাপ। যে কারণে কোন পেমেন্ট বা ট্রানজাকশনই অনলাইন হচ্ছেনা। বইটা রেখে আসতে হলো। বয়ফ্রেন্ডকে ফোন করে বললাম, "হ্যাঁ গো তোমার কি মনে হয় না, যে তুমি আমাকে একটু ভালোবেসে একটা বই কিনে দাও?"সে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, "হ্যাঁ দেবো তো? কোন বই নেবে বল?"আমি বললাম, " সেকালের গোয়েন্দা কাহিনী।আনন্দ পাবলিশার্সের।" সে আমাকে বলল, "তুমি কিনে নাও। আমি তোমাকে ফোন পে তে টাকাটা পাঠিয়ে দিচ্ছি।"আমি বললাম, "ফোন পে তে যদি পেমেন্ট হতোই, তাহলে তো আমিই কিনতে পারতাম।" সে বলল, "ঠিক আছে।আমি কিনে দেব কলকাতা বইমেলা থেকে।" যাই হোক খানিকটা ভরসা পাওয়া গেল।অন্তত ওর থেকে একটা বই বাগানো গেল।
এবার আমরা ঠিক করলাম আর বউয়ের কন্সেন্ট্রেশন করে লাভ নেই।এবার খাওয়ায় কনসেনট্রেট করতে হবে।চলে গেলাম ফুড স্টল গুলোর দিকে। প্রথমেই শর্মিষ্ঠা লাফালাফি করছিল ঘুগনি খাবে। কারণ ঘুগনি ওর প্রিয়। ঘুগনি মানে বাংলাদেশে যেটাকে আপনারা চটপটি বলেন। আমি বললাম,"খা! জীবনে তো এখানে ঘুগনি ভালো খেলি না। তাও প্রত্যেক বছর তোর খেতে হবে।"ও নাছোড়বান্দা। কিনে নিল কুড়ি টাকার একটা ছোট্ট প্লেট। দোষ দিয়ে লাভ নেই। ওখানে যারা দোকান দিয়ে বসেন তাদের প্রত্যেককেই ভাড়া দিতে হয়। তাই ভেতরে দাম একটু বেশি। দু চামচ মুখে দিয়ে বলল অতি জঘন্য।
আমি মুখে দিয়ে দেখলাম সত্যিই ভীষণ জলসা ধরণের। ফেলে দেওয়া হলো ঘুগনিটা। তারপরে গেলাম ফুচকার দোকানে। ফুচকার দোকানে গিয়ে বলল ১০ টাকায় চারটে ফুচকা। কি আর করা যাবে? সেটাই খেলাম দশ টাকা করে। তারপরে ভাবলাম আর কি খাওয়া যায়! ভেবে চলে গেলাম মোমোর দোকানে।এক প্লেট স্টিম মোমো আর এক প্লেট ফ্রাইড মোমো নেওয়া হল। এটা বেশ ভালো খেতে ছিলো। এরপরে ভাবলাম আর কিছু খাব না। হঠাৎ করে কাবেরী লাফ দিয়ে উঠে বলল, "পায়েল দি! মথুরা কেক খাব!"আমি বললাম, "মথুরা কেক শুনেছি একদম বাজে খেতে হয়?"বলে, "না গো ভালো খেতে হয়।" মথুরা কেক আর কিছুই নয়, নদীয়ার শান্তিপুরের আবিষ্কৃত ইন্ডিয়ান ডোনাট। যেটা পাউরুটি মত নরম হয়। আর উপর থেকে গুড়ো চিনি লাগানো থাকে।
কোনোটা ছবি তোলা হয়নি।কারণ সত্যি বলতে আমি প্রস্তুত ছিলাম না যে এত কিছু খাওয়া হবে বলে। সবকিছুর পরে ঠিক করা হলো এবার অন্তত চা খেয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেওয়া যাক। চায়ের দোকানে গেলাম। দারুন একটা তন্দুর চা খেলাম।সেটার ছবিটা যদিও তোলা হয়েছে। চা টা খেয়েই মনটা ভরে গেল। শর্মিষ্ঠা এবার বলল,"আমি কখনো ফায়ার পান ট্রাই করিনি। আমি একটা ফায়ার পান খেতে চাই।" আমি ওকে যথেষ্ট সাহস যোগালাম।কারন গত বছর আমি খেয়েছিলাম। আমার ভালো লাগেনি। যদিও আমি মলের দামি ফায়ার পান খেয়েছিলাম।তাও ভালো লাগেনি। চলে গেল পানের দোকানে। গিয়ে যথারীতি সেই পান খেয়ে নিল।বলল ভাল লেগেছে খেতে। অর্থাৎ এর থেকে বোঝা গেল মলের ওই আড়াইশো টাকার পান এর তুলনায় মেলার আশি টাকার ফায়ার পানের টেস্ট বেশি হয়।অনেকক্ষণ ঘোরাফেরা করে রাত্রি আটটা নাগাদ অটো ধরে বাড়ি ফিরলাম। মাকে যদিও বলিনি বই মেলা গিয়েছিলাম। বলেছি বান্ধবীর বিয়েতে কেনাকাটা করতে গেছিলাম। যদি শুনতো যে বইমেলায় গেছি তাহলে হয়তো আর ঘরে ঢুকতে দিত না।
ঘুগনি মানে যে চটপটি জানা ছিলো না নতুন নাম জেনে ভালো লাগলো। চমৎকার মুহূর্ত কাটিয়েছেন। আপনার লেখা পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে দিদি।
হ্যাঁ। আমিও তো জানতাম না আপনাদের ওখানে চটপটি বলে।ধন্যবাদ ভাই
আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আমি আজকে চটপটির নতুন একটি নাম জেনে নিলাম ঘুগনি। মনে হচ্ছে খুবই ভালো সময় কাটিয়েছেন বইমেলায় গিয়ে আপনি এবং আপনার ফ্রেন্ড।যদিও আপনার একটি বই পছন্দ হয়েছিল ৯০০ টাকার কিন্তু কিনতে পারেননি জেনে একটু খারাপ লাগলো। আমার কাছে যে কোন মেলায় যেতে ভীষণ ভালো লাগে। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
গতকালই সেই বই আমার বয়ফ্রেন্ড গিফ্ট করল। ☺