বুক রিভিও || চোখের বালি || 10% for @shy-fox by @parves23 || 7/2/22 🦊
আসসালামু আলাইকুম
আজকে আমি আমার খুবই প্রিয় একটি উপন্যাস চোখের বালি'র রিভিও দিবো আপনাদের সামনে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস পড়ে আমার মতো ক্ষুদে পাঠকের মন্তব্য করার সামর্থ সত্যিই আছে নাকি আমার ধারনা নেই। তবু চেষ্টা করবো আমার যতটুকু সাধ্য।
বইঃ চোখের বালি
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চোখের বালি উপন্যাসটি বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরএমন একটি উপন্যাস যেখানে প্রত্যেকটি চরিত্র আপনার ভালো লাগতে বাধ্য। পারিবারিক সম্পর্কের আদলে গড়া এই উপন্যাসটি সকল বয়সের পাঠকদের ভালো না লেগে পারে না। উপন্যাসে প্রত্যেকটি চরিত্রের উপর কবি তার কলমের সম্পূর্ন যাদু তুলে ধরেছেন বলে আমার মনে হয়। ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয় এই অতুলনীয় উপন্যাসটি। ১৯৩৮ এবং ২০০৩ সালে যথাক্রমে দুটি চলচিত্র নির্মান হয়েছিলো এই উপন্যাস অবলম্বনে।
বইয়ের সারসংক্ষেপ :
বিধবা রাজলক্ষ্মীর একমাত্র চেলে মহেন্দ্র যে বর্তমানে ডাক্তারি পড়ছে। স্বামী পয়সা কড়ি রেখে যাওয়ায় তাদের মা ছেলের জীবন ভালোই যাচ্ছিলো। ছোট বেলার বান্ধবী হরিমতির মেয়ে বিনোদিনীর সাথে মহেন্দ্রের বিয়ের কথা তুললে মহেন্দ্র তা প্রত্যাক্ষান করে। ফলে বিনোদিনীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। তবে ভাগ্য তার উপর বেশি সহায় হয়নি। অল্প দিনেই তাকে হয়ে যেতে হয় বিধবা।
মহেন্দ্রের কাকী অন্নপূর্ণা চান তার বোনের মেয়ে আশাকে তাহলে মহেন্দ্রর বউ করে আনতে। মহেন্দ্র তাও নাকোচ করে দেয় আর বলে তার বন্ধু বিহারীর সাথে যেন আশার সম্মন্ধ করে দেন। মহেন্দ্র বিহারীর বন্ধু হলেও বিহারী তার হৃদয় থেকে তাকে ভাই বলেই মানে। তবে আশাকে যখন স্বপরিবারে দেখতে যায় রাজলক্ষ্মী, মহেন্দ্র আশাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলে। অপরদিকে বিহারীরও ভালো লাগে আশাকে। শান্ত শিষ্ঠ অপরূপা মেয়ে আশাকে মহেন্দ্র বিহারীকে বলে বিয়ে করে নেয়। বন্ধু ভক্তির জন্য বিহারি কিছু না বলে সম্মতি জানায়।
আশা আর মহেন্দ্রর বিয়ের পর উপন্যাসে বৈবাহিক জীবনের ভালোবাসার একটি অতুলনীয় দিক তুলে ধরা হয়েছে। তারা সুখে তাদের সংসার জীবন পার করতে থাকে। যেন দুই দেহ এক প্রান। এসবে রাজলক্ষ্মী তার ছেলেন উপর বিশ্বাস হারানো শুরু করে। নতুন বউ যে মহেন্দ্রর থেকে মাতৃপ্রিতি ছিনিয়ে নিচ্ছে সেটা মায়ের সহ্য হয় না। এমন সময় ছেলের ভালোবাসা পরিক্ষা করার জন্য তিনি গ্রামের বাড়ি পাড়ি জমান এবং সেখান থেকে ফিরে আসেন তার ছেলে বেলার বান্ধবীর মেয়ে বিনোদিনীকে নিয়ে। এরপরই উপন্যাস নতুন দিকে মোড় নেয়।
বিনোদিনী অল্প দিনেই পরিবারের সবার মন জয় করতে থাকে। কাজ কর্ম, সেবা যত্ন, পরিচালনা করা সব কিছুতেই যেন তার কোন ত্রূটি নেই। উপন্যাসে বিহারির ব্যক্তিত্বখচিত দৃষ্টিভঙ্গি বিনোদিনীকে আকৃষ্ট করলেও বিহারির মনে আশার জন্য অধেল প্রেম লুকায়িত ছিলো। কিন্তু মহেন্দ্র বিনোদিনী আসার পর থেকেই বদলাতে শুরু করে। বিনোদিনীকে তার এতোটাই ভালো লাগে যে সে তার স্ত্রী আশাকে ভুলে যেতে চেষ্টা করে। আশার সুখ ও ভালোবাসাটা যে বিনোদিনীরও পাওনা ছিলো সেটা সে মেনে নিতে পারে না। ভাগ্য তো মহেন্দ্রের সাথে তারও বিয়ে দিতে পারতো। সুতরা ফাটল ধরতে শুরু করে আশা আর মহেন্দ্রের মাঝে। বিনোদিনীকে আশা নিজের স্বামীর বরং বান্ধবীই ভেবেছে আর নিজের বোন। এজন্য তারা এক অপরকে তাকে চোখের বালি বলে ডাকে। বিনোদিনীর খারাপ লাগলেও সে নিজেকে কিছুতই আশার মঙ্গলের কথা বুঝাতে পারে না।
বিনোদিনীর বন্ধুসুলভ আচরন ধীরে ধীরে আরো দূর্বল করে তুলে মহেন্দ্রকে। আশা যেন কিছুই ধরতে পারে না। বরং আশার সরলতা বিনোদিনীকে আর মহেন্দ্রকে আরো কাছে টেনে আনে। আশার অগোচরে তার স্বামী আর প্রানের চোখের বালির মধ্যে যে একটি অবৈধ্য সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে যেন তার নূন্যতম ধারনা নেই। মহেন্দ্রেরও মাঝে মধ্যে মনে হয় এটি ঠিক না। সে পারবে না আশাকে কষ্ট দিতে। তবু তার মনের ভালোবাসাটা যেন বিনোদিনীকে আরো কাছে টেনে আনতে চায়। মহেন্দ্রের বন্ধু বিহারী বিনোদিনী আসার প্রথম থেকেই সব বুঝে ফেলে ছিলো। তবু বন্ধুত্ব রক্ষায় সে যে বোবা দর্শক মাত্র। যে আশাকে যে মনে প্রানে চায় সেই আশার সাথে মহেন্দ্রের বিনোদিনীকে নিয়ে এমন বিশ্বাস ঘাতকতা কি মেনে নিবে বিহারী? এভাবেই চলতে থাকে তাদের চতুর্ভুজ প্রেম কাহিনী।
শেষ পর্যন্ত কার ভালোবাসা পূর্নতা পায়? মহেন্দ্র কি পারবে আশার বিশ্বাস রক্ষা করতে? বিনোদিনীও কি তার ভুল বুঝতে পারবে? ঝড় ঝাপটা পেড়িয়ে তাদের নিষিদ্ধ প্রেম কোথায় মোড় নেয়?
উপন্যাসটি সময় পেলে সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। আজকে এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন।
বই | চোখের বালি |
লেখক | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
ডিভাইস | রেডমি নোট ১০ প্রো |
লোকেশন | ধানমন্ডি, ঢাকা |
My Twitter post-Click to wiew post
চোখের বালি বুক রিভিউ টি অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। রবীন্দ্রনাথের বই মানেই এক অন্যরকম ভালো লাগা। বইটি কখনও পরা হয়নি আমার। আপনার রিভিউটি দেখে অনেকটাই পরা হয়ে গেলো। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
রিভিও টি আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুবই ভালো লাগলো।
রবীন্দ্রনাথের চোখের বালি উপন্যাসটি আমার পড়া হয়নি। আপনি যেভাবে রিভিও করেছেন তাতে আমার ইচ্ছে হচ্ছে বইটি পড়ার জন্য। খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন ভাই। এরকম পোস্ট আপনার থেকে আমরা আরও আশা করি। অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান কমেন্টের জন্য।
আপনি খুবই সুন্দর ভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি উপন্যাসটি রিভিউ করেছেন। আপনার উপস্থাপনা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
বইটি পড়বেন আশাকরি ভালো লাগবে।😊