বুক রিভিও || চন্দ্রশেখর || 10% for @shy-fox by @parves23 || 18/2/22 🦊
আসসালামু আলাইকুম
বইঃ চন্দ্রশেখর
লেখকঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
লেখকঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বর্ষাকাল - কুলে কুলে গঙ্গার জল - জল দুলিয়া দুলিয়া, নাচিয়া নাচিয়া, ছুটিয়া ছুটিয়া যাইতেছে। দুইজনে সেই জলরাশি ভিন্ন করিয়া, মথিত করিয়া, উৎক্ষিপ্ত করিয়া, সাতার দিয়া চলিল। ফেনচক্রমধ্যে, সুন্দর নবীন বপুর্দ্বয়, রজতাঙ্গুরীয়মধ্যে রক্নযুগলের ন্যায় শোভিতে লাহিল।
সাতার দিতে দিতে ইহারা অনেক দূর গেল দেখিয়া ঘাটে যাহারা ছিলো, তাহারা ডাকিয়া ফিরিতে বলিল। তাহারা শুনিল না - চলিল। আবার সকলে ডাকিল - তিরষ্কার করিল - গালি দিল - দুইজনের কেহ শুনিল না - চলিল। অনেক দূর গিয়া প্রতাপ বলিল,"শৈবালিনী, এই আমাদের বিয়ে।"
শৈবালিনী বলিল,"আর কেন - এইখানেই।"
প্রতাপ ডুবিল।
শৈবালিনী ডুবিল না। সেই সময়ে শৈবালিনীর ভয় হইল। মনে ভাবিল - কেন মরিব? প্রতাপ আমার কে? আমার ভয় করে, আমি মরিতে পারিব না। শৈবালিনী ডুবিল না - ফিরিল। সন্তরণ করিয়া কূলে ফিরিয়া আসিল।
উপন্যাসের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে এমনই একটি অসাধারণ সংলাপ দিয়ে শুরু হয় প্রতাপ আর শৈবালিনীর গল্প। সংলাপটি আমি কয়েকবার পড়েছি তবুও এর মহিমা ধরতে পারিনি। তাই পুরো সংলাপটি আপনাদের সামনে সরাসরি না তুলে ধরলে যেন এই বুক রিভিউটি অসম্পূর্নই থেকে যেত।
বইয়ের সারসংক্ষেপ :
উপন্যাসটি শুরু হয় ভাগীরথী নদীর তীরে প্রতাপ আর শৈবালিনীর বাল্য সময় নিয়ে। দুজন দুজনকে প্রান দিয়ে ভালোবাসে। কিন্তু তারা জানে তারা কেউ একে অপরকে পাবে না। ব্যাথিত দুজন নদীতে ঝাপ দিলে প্রতাপ ডুবে যায় কিন্তু শৈবালিনী তীরে ফিরে আসে। ঐসময় চন্দ্রশেখর নামে এক নৌকাচারি প্রতাপকে রক্ষা করে। এভাবে শৈবালিনীর সাথে দেখা হয় চন্দ্রশেখরের। অবিবাহিত চন্দ্রশেখর মুগ্ধ হয়ে যায়। মা মরার পর থেকে তার অগোছালো জীবনে যেন শৈবালিনীরই অভাব ছিলো, এমনই আশংকা জেগে উঠে চন্দ্রশেখরের মনে।
চন্দ্রশেখরের সাথে বিয়ে হলেও শৈবালিনী প্রতাপকেই চাইতো। চন্দ্রশেখর সংসা্ জীবনে মনোযোগী না তবে সে বই পড়া আর পাণ্ডিত্য নিয়ে ব্যাস্ত থাকে আর এদিকে শৈবালিনী এক ইংরেজের সাথে ঘর ত্যাগ করে। সুবে বাঙ্গালা বেহার ও উড়িষ্যার অধিপতি নবাব আলিজা মীরকাসেম খাঁ'র সাথে ইংরেজদের দাঙ্গা লাগে। এই যুদ্ধে তিনি তার নিজের আত্ম সম্মান ও প্রজাদের কথা ভেবে যোগ নিলেও তার বেগম দলনী মির কাসেমকে যুদ্ধে যেতে মানা করে। কিস্তু মির কাসেম জানেন এই যুদ্ধে তাকে জড়াতেই হবে। যুদ্ধে রাজার যতটা না সম্মতি দলনী বেগমের ভাই সেনাপতি গুরগন খাঁ'র কথায় তিনি আরো বেশি যদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অথচ গুরগন খাঁ তারই রাজার উপর ষড়যন্ত্র করে রাজ্য দখল চাচ্ছিলো। দলনী বেগম তার ভাইয়ের ষড়যন্ত্র যখন বুঝতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। রাজ্য থেকে বের করে দেয়া হয় দলনী বেগম আর তার দাসি কুলসুমকে।
শৈবালিনীকে হরিয়ে চন্দ্রশেখর বেড়িয়ে পড়ে তার স্ত্রীকে খুজতে। প্রতাপের কানে এই খবর পৌছালে সেও বেড়িয়ে পড়ে এবং ইংরেজ লরেন্স ফক্টরের কাছ থেকে শৈবালিনীকে উদ্ধার করে তার ঘরে নিয়ে যায়। ইংরেজরা প্রতাপের সন্ধান পেয়ে যায় আর তার বাড়িতে আক্রমন করে দুর্ভাগ্য বসত দলনী বেগম আর দাসি কুলসুমকে পায়। কারন তারাও প্রতাপের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল। এখর রাজার কানে পৌছালে তিনি ইংরেজদের উপর আক্রমন করতে মনস্থির করেন। ইংরেজ নৌবহরে হামলার ভয়ে মোহাম্মদ তকি বেগমকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু মোহাম্মদ তকি নবাবকে বলে দলনী বেগম ইংরেজদের উপপত্নি হিসেবে ঠাই নিয়েছে। নবাব ব্যাথিত হয়ে হত্যার নির্দেশ দেয় বেগমকে। বিষ পানে মৃত্যুই হয় তার শাস্তি। মোহাম্মদ তকি তখন বেগমের নামে মিথ্যা রটানোর স্বীকার বেগমকে জানায়। নবাব যে বিশ্বাস করেছে সে ইংরেজদের উপপত্নি এই কথা দলনী মেনে নিতে পারে না। সে বিষ পান করে আত্নহত্যা করে। পরে সত্য জানার পর নবারও ভেঙ্গে পড়েন।
শৈবালিনী আর প্রতাপ একসাথে হলেও তারা একে অপরকে আগের মতো ভালোবাসতে চায় না। দুজনেই বিবাহিত তাই শৈবালিনী বনে জঙ্গলে ঘুরা শুরু করে। শেষে সে দেখা পায় এক সন্যসির। তার ব্রত গ্রহন করে শৈবালিনী দিন কাটাতে থাকে কিন্তু এক সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সন্যাসিটি ছিলো মূলত চন্দ্রশেখর নিজে। শেষে চন্দ্রশেখর শৈবালিনীকে ভালো করে তুললে শৈবালিনী তার স্বামীর অনুগত্য হয়ে পড়ে।
সব শেষে ইংরেজদের সাথে নবাবের যুদ্ধ কায়েম থাকে। গুরগনের বিশ্বাস ঘাতকতায় যুদ্ধ উড়িষ্যার নবাবের জন্য অনিশ্চিত। যুদ্ধে প্রতাপ তার জীবন আত্নত্যাগ করে।
মতামতঃ উপন্যাসটিতে ভালোবাসার নানা রূপ তুলে ধরা হয়েছে। নবাব আমলের ইংরেজদের যুদ্ধের মধ্যকার কোন এক সময়ের প্রেম চক্রের বর্ননা রয়েছে উপন্যাসটিতে। অনেক রোমান্টিক মূহূর্ত আছে যা আপনার মধ্যে অসম্ভব ভালো লাগা জাগিয়ে তুলবে আবার কিছু মূহুর্ত আছে যা আপনাকে ব্যাথিত করতে বাধ্য। সব মিলিয়ে অপুর্ব একটি উপন্যাস আমার মতে। আপনাদের সবার পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে শেষ করলাম আমার বুক রিভিও।
বই | চন্দ্রশেখর |
লেখক | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
ডিভাইস | রেডমি নোট ১০ প্রো |
লোকেশন | ধানমন্ডি, ঢাকা |
খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়। আপনি অনেক ভালো কাজ করেন কিন্তু কমিউনিটিতে নিয়মিত নন। সে ক্ষেত্রে আপনি নিয়ম সম্পর্কে অবগত রয়েছেন, কেউ যদি বেশি দিন অনিয়মিত থাকে তাহলে তাকে আমরা আমাদের লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেই। পরবর্তীতে আপনি চাইলেও এই কমিউনিটিতে কাজ করতে পারবেন না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ধন্যবাদ।
ভাইয়া আমার সেমিস্টার এক্সাম চললো। আজই শেষ এক্সাম আমার আশাকরি কাল থেকে নিয়মিত একটিভ থাকবো।
আপনার বুক রিভিউ দেখে খুবই ভালো লাগলো। আমি আগে বই পড়তে খুব পছন্দ করতাম। আগে বললে ভুল হবে এখনও পছন্দ করি কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে আগের মত বই পড়তে পারি না। আপনি অনেক সুন্দর একটি রিভিউ দিয়েছেন। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার রিভিউটি দেখে উপন্যাসটি সম্পুর্ন পড়তে ইচ্ছে করছে। খুবই চমৎকার ভাবে রিভিউ দিয়েছেন অনুপ্রাণিত হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
চমৎকার ভাবে চন্দ্রশেখর বই এর রিভিউ করেছেন, আপনার রিভিউ পড়ে বইটি পড়ার ইচ্ছে হচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
পড়বেন সময় করে ভালো লাগবে।😊