বুক রিভিও || পরিনীতা || 10% for @shy-fox by @parves23 🦊
কলকাতার দুটি সংসারকে ঘিরে উপন্যাসটি লেখা। উপন্যাসের মূল চরিত্র ললিতা আর শেখর। ললিতা ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে। সে থাকে তার মামা বাড়ি। মামার ৫ মেয়েদের মধ্যে যেন সেই সবচেয়ে আদরের। বাপ মা মরা মেয়েকে মামা গুরুচরণ মনের মতো করে আদর করেন ও ভালোবাসেন। কিন্তু মেজ মেয়ের বিয়ে দেয়ার সময় বাড়ি ভিটা প্রতিবেশী নবীন রায়ের কাছে বন্ধক দেয়ার পর ভালোবাসার চেয়ে চিন্তা বেড়ে গেছে। নবীন রায় মনে মনে গুরুচরণের প্রতি সমাদর দেখালেও গুরুচরণের বাড়ির প্রতি তার ভালোই লোভ প্রকাশ পায়।
ললিতাকে নবীনের স্ত্রী ভুবনেশ্বরী তার নিজের মেয়ের মতো আদর করেন। এতো আদর করেন যে নিজের ছোট ছেলের সকল দরকার অদরকার ললিতাকেই সামলাতে দেন। ছোট থেকেই ললিতা আর নবীন রায়ের ছেলে শেখর মিলে মিশেই দিন কাটায়। শেখর বাড়ির ছোট ছেলে বয়স ২৫-২৬ আর পেশায় এটর্নি। ললিতা শেখরের ঘর গুছানো, খাওয়ার খোজ নেয়া, কাপড় গুছানো ইত্যাদি নিজে করে। মাঝে মধ্যে শেখর তাকে টাকা পয়স দেয় কিংবা ললিতা নিজেও শেখরের আলমারি থেকে টাকা বের করে খরচ করে। শেখরকে ললিতা দাদা বলেই ডাকে। এছাড়াও দুজনের খুনসুটি কারো কাছে কটু চোখে পড়েনা।
এভাবে এক সময় ললিতার পরিচয় হয় তার বান্ধবী চারুবালার মামা গিরীনের সংগে। গিরিন ললিতাকে দেখার পরই পছন্দ করা শুরু করে। ললিতার সাথে তাস খেলা গিরিনের খুবই পছন্দ। কিন্তু শেখর যখন জানতে পারে ললিতার মুখে গিরিনের কথা শেখর কেমন যেন অদ্ভুত আচরন করে ললিতার সাথে। ললিতা বুঝতে না পারলেও তখন থেকে গিরিনের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতো।
ললিতার মামা শেখরকে তার কোন বন্ধু যে টাকা নয় শুধ মেয়ে দেখে বিয়ে করতে করবে এমন ছেলে দেখতে বললেও শেখর নিজেই মনে মনে ললিতাকে পছন্দ করতো। ললিতা আর শেখর দুজনে শেখরের রুমে নানা সময় কথা বার্তা আলোচনা করতো আগে থেকেই। কিন্তু একদিন রাতে মজার ছলে শুভ লগ্নে শেখর আর ললিতা মালা বদল করে। রিতি মতে এই মালা বদল বিবাহের সমতূল্য। ঘটনাটা দুজনের মধ্যেই তখন থেকে যায়।
শেখর আর ললিতা দুজনের প্রেমে পড়ে যায়। মালা বদলকে তারা নিজেদের বিয়ে হিসেবেই গ্রহন করে নেয়। সময় গড়িয়ে গিরিনের ললিতাকে পছন্দ হওয়ায় মাঝে মধ্যে সে ললিতার পরিবারকে নানা ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে থাকে। বিপত্তি হয় তখন যখন একদিন হঠাৎ করে ললিতার মামার মৃত্যু ঘটে আর গিরিনের সাথে ললিতার বিয়ের কথা চলে। মৃত্যুর আগে ললিতার মামা ব্রাক্ষ্মজ্ঞানী ধর্ম গ্রহন করেছিলো। ললিতার মামা ব্রাক্ষ্ম হওয়ায় শেখর ললিতার পাশে থাকতে চাইলেও পারে না কারন পিতা নবীন রায়কে সে জমের মতো ভয় পায়। ঐ সময় গিরিনই দাড়ায় ললিতার মামার পরিবারের পাশে।
অসহায় ললিতার পরিবারের জন্য দ্বিতীয় কোন পথ খোলা থাকে না। গিরিনের সাথে স্বপরিবারে চলে গেলে ললিতা তাদের ভিটে মাটি ছেড়ে। কয়েকবছর পর আবার শেখর আর ললিতার দেখা হয়। অপ্রত্যাশিত ভাবে তখন গল্পের নতুন মোড় নেয়। কি হয় এরপর? শেখর কি আবার ললিতাকে নিজের করে নিতে চাইবে? নাকি শেষ পর্যস্ত গিরিনের সাথেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো ললিতার!
শরৎচন্দ্রের লেখা পরিনীতা বইটি খুবই জনপ্রিয় একটি বই। বইটিতে অনেক দিক তুলে ধরা হয়েছে। সমাজের উঁচু নিচু, জাত, সমাদর, ভালোবাসা, ত্যাগ খুব ভালো ভাবেই প্রকাশ পেয়েছে উপন্যাসটিতে। চরিত্র গুলোও খুব ভালো লাগার মতো।
মন্তব্য:
আমার কাছে বইটি এক কথায় দারুন লেগেছে। আমার পারসোনাল রেটিং ৮। আপনারও পড়তে পারেন। আমি আসল টুইস্টটুকু শেয়ার করলাম না। তাহলে হয়তো বইটি পড়ার আর কোনদিনই আপনার আগ্রহ জাগবে না। আজ এ পর্যন্তইই সবাই ভালো থাকবেন।
বেশ চমৎকার একটি প্রেমের উপন্যাস ছিল, একটা সময় উপন্যাস পড়ার খুব নেশা ছিল, আপনার রিভিউ পড়ে কিছুটা সময়ের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম সেই আগের উপন্যাসের নেশার ভেতর, আপনি ভালো উপস্থাপনা করতে পারেন, আপনার লেখা পড়ে এই বই সম্পর্কে আমার মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে গেছে, এভাবে চালিয়ে যান আপনার লেখার দক্ষতা বেশ ভালো।
ধন্যবাদ ভাই।
শরৎ চট্টোপাধ্যায় এর অনেক বই আমি পড়েছি তবে এই বইটি আজও কখনো পড়া হয়নি। আপনার রিভিউ পোস্ট টি দেখার পরে এই বইটি সম্পর্কে বেসিক অনেক কিছুই জানতে পারলাম বইটি পড়ার জন্য অনেক আগ্রহ । যদি বইটির দেখা মেলে বইটি আমি অবশ্যই বইটা একবার পড়ব।
পড়বেন অবশ্যই। ভালো লাগবে।
অসাধারণ একটি বইয়ের রিভিউ আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাই। খুব কম বইয়ের রিভিউ দেখতে পাই। আপনার করা বইয়ের রিভিউ আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন। যদিও প্রেমের উপন্যাস আমি একটু কম পড়ি। তবে আপনার রিভিউ আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে এরকম সুন্দর একটি বইয়ের রিভিউ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
খুব সুন্দর একটি প্রেমের উপন্যাস আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। যদিও এই বইটি আমি কখনো পড়িনি। কিন্তু আপনার পোষ্টের মাধ্যমে কাহিনী পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আমি একদিন অবশ্যই বইটি পড়ে নেব। খুব সুন্দর কাহিনী এই উপন্যাসের। আমার কাছে এমন উপন্যাস পড়তে অনেক ভালো লাগে। এখন আগের মতো তেমন সময় পাওয়া যায় না বলে আর পড়া হয়না। কিন্তু আপনার এই বইটি পড়ে অনেক ভালো লেগেছে চেষ্টা করব পড়ার জন্য। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা উপন্যাস আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনার জন্যও শুভ কামনা আপু।
ওয়াও! আপনাম বুজ রিভিউ পড়ে এখন মনে হচ্ছ বইটা অর্ডার করা উচিত। আপনি খুব সুন্দর রিভিউ করেছেন ভাই। শরৎচন্দ্রের লেখা পরিনীতা বইটি খুবই জনপ্রিয় একটি বই। তবে আমার পড় হয় নাই। আজকে রিভিউ পড়েই ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ
আপনার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের খুব অসাধারণ একটি উপন্যাস আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আসলে আমি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনেক উপন্যাস পড়েছি। তার উপন্যাস গুলো পড়ে খুবই ভালো লাগে। আজকে আপনার এই পোস্ট দেখে খুব ভালো লাগলো নিশ্চয় সময় হলে উপন্যাসটি পড়ে নেবো। এতো অসাধারন পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই ।
দোয়া করবেন
উপন্যাস পড়তে একসময় খুবই ভালো লাগতো। অনেক উপন্যাস পড়েছে একসময়। আজকে আপনি বেশ চমৎকার একটি প্রেমের উপন্যাস রিভিউ দিয়েছেন। খুবই ভালো লাগছে আপনার এই উপন্যাসটি রিভিউ পড়ে।
প্রেমের উপন্যাস মানেই ভালো লাগা
শরৎচন্দ্রের এ উপন্যাস টি আমার পড়া হয়নি। আপনার শেয়ার করা পোস্ট দেখে অনেক কিছু শিখলাম জানলাম পরিণীতা সম্পর্কে। ধন্যবাদ ভাই ভালো থাকবেন সবসময় আপনার পরবর্তী বুক রিভিউ পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম।
সামনে আরো সুন্দর সুন্দর বইয়ের রিভিও নিয়ে আসবো