দুখিনী নাজমার গল্প চতুর্থ বা শেষ পর্ব
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর সকল ভাই ও বোনেরা কেমন আছেন? নিশ্চয় মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।সকল কে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের পোস্টঃ
দুখিনী নাজমার গল্প চতুর্থ পর্ব
আসলে নাজমা তার জীবনকে শেষ করে দিতে চেয়ে ছিল কিন্তু তার বাচ্চার জন্য পারেনি।তার স্বামীকে দেওয়া কথা নাজমাকে পালন করবে।সেহেতু নাজমার বাচ্চাটা অনেক ছোট তাই নাজমা তাকে রেখে কিভাবে কাজ করবে ভেবে পাচ্ছে না। তবে নাজমার শাশুড়ি নাজমার পাশে এসে দাঁড়াল। যেহেতু নাজমার বয়স তেমন না তাই নাজমার মা বলল নাজমাকে নিয়ে যেতে কিন্তু নাজমা যাবে না।
নাজমা তার শাশুড়ির কাছে মেয়েকে রেখে সংগ্রামে নেমে পড়ল।এদিকে নাজমা টেইলর এর কাজ জানত কিন্তু গ্রামে তেমন কোন কাজ হয় না। তাই নাজমা গ্রাম থেকে কিছু দূরে গিয়ে শহরের কাছাকাছি একটা বড় টেইলারিং এর দোকানে কাজ নিল মাসিক বেতন হিসেবে। সেখান থেকে যা পায় তাই দিয়ে নাজমা তার মেয়ে ও তার শাশুড়ির সংসার চলে যায়।এভাবেই চলতে লাগল নাজমা বেগমের জীবন। তবে নাজমার মা চেয়েছিল নাজমাকে এনে আবার বিয়ে দেবে কিন্তু নাজমা বিয়ে করবে না।নাজমা বলেছে তার বাচ্চাকে মানুষ করলে তার জীবন চলে যাবে। আস্তে আস্তে তার বাচ্চাটা বড় হতে লাগল।এভাবে পেরিয়ে গেল দশটা বছর। নাজমার মেয়ে দেখতে বেশ সুন্দর ও পড়ালেখায় অনেক ভালো।
এখন নাজমা তার অতীতের সব কিছু ভুলে তার মেয়েকে নিয়েই সুখে দিন কাটাতে লাগলো। নাজমার মেয়ে এখন ক্লাস টেনে পড়ে। এস এসসি পরিক্ষা দেবে কিন্তু হঠাৎ নাজমার শাশুড়ি মারা গেল। আসলে নাজমা তার সব ভুলে শাশুড়ি ও মেয়েকে নিয়েই সুখে ছিল। কিন্তু নাজমার শাশুড়ি মারা যাওয়াতে আবারো নাজমা ভেঙে পড়ল। কিন্ত নাজমার মেয়ে এস এস সি পরিক্ষা দেবে, এদিকে নাজমা চাকরি করে নাজমার জন্য মেয়েকে দেখা কষ্ট হয়ে গেল। আসলে দুঃখ ভরা জীবন নাজমার। এই দুঃখ যেন শেষ হবার নয়। এখন সংগ্রাম করতে করতে নাজমার আর পারছে না।হঠাৎ করেই নাজমা অসুস্থ হয়ে পড়ল।নাজমার মেয়ে নাজমাকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসলো।ডাক্তার সব পরিক্ষা নিরীক্ষা করে বলল নাজমার ক্যানসার ধরা পড়েছে। এভাবে বেশ কিছু দিন চলে গেল। আসলে এত টাকা ও তো নেই কিভাবে চিকিৎসা করবে।নাজমার মেয়ে এস এসসি পাশ করলো। আস্তে আস্তে নাজমার কাজ করা বন্ধ হতে লাগল।
নাজমার এখন আল্লাহ কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা করছে। তার মেয়েটা ভালো একটা বিয়ে দিতে পারলেই মরে ও শান্তি পাবে।যেহেতু মেয়েটা সুন্দর ও এস এসসি পাশ করেছে তাই ভালো একটা বিয়ে ঠিক হলো।এদিকে নাজমা তার মেয়ের বিয়ের জন্য দিন তারিখ সব ঠিক করলো,ভালো মত নাজমার মেয়ের বিয়ে উঠিয়ে দিয়ে দিল।এদিকে মেয়েকে দিয়ে এসে নাজমা অস্হির হয়ে পড়ল, তারপর সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে গেল,হাসপাতালে নেওয়ার সাথে সাথে নাজমা মারা গেল।তবে নাজমার জীবন দুঃখের হলেও মেয়েকে মানুষ করে বিয়ে দিতে পেরে নাজমা শান্তিতে মরতে পেরেছে।
আজ এই পর্যন্তই। গল্পটি ভালো লাগলে আবার আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি পারুল। আমার ইউজার নেম@parul19। আমার মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি।আমি ফরিদ পুর জেলায় বসবাস করি।আমার দুটি মেয়ে আছে। আমি বাংলাই লিখতে ও পড়তে ভালোবাসি। আমি নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করতে ও ঘুরতে পছন্দ করি।এই অপরুপ বাংলার বুকে জন্মনিয়ে নিজেকে ধন্যমনে করি।ধন্যবাদ বাংলা ব্লগে এই বাংলা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
এমন কিছু কিছু মানুষের জীবন আছে দুঃখের শেষ থাকেনা। দুঃখ নিয়ে জন্মায় শেষ পর্যন্ত দুঃখ নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। বলতে গেলে দুঃখই হচ্ছে তাদের চির সাথী। তবে নাজমা এত সংগ্রাম করার পরে শেষ পর্যন্ত তার মেয়েকে একটা ভালো পাত্রের হাতে দিয়ে মরে গিয়ে শান্তি পেল। মেয়েকে একটা ভালো পাত্রের হাতে তুলে দিয়ে অবশেষে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলো নাজমা। গল্পটি পড়ে বেশ খারাপ লাগছে আমার কাছে।
সত্যি আপু কিছু কিছু মানুষের জীবন দুঃখ ভরে থাকে, তারপর নাজমা তার মেয়েকে বিয়ে দিতে পেরেছে। ধন্যবাদ আপু
নাজমার জীবনটা আসলেই দুঃখে ভরা ছিল।শেষে তাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মরে যেতে হলো।তবে তবে তিনি তার মেয়েকে মানুষ করতে পেরেছে এবং বিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছে এটাই তার শান্তি। নাজমা তার শাশুড়ির শোকে কাতর হয়ে হয়তো রোগে পড়ে গিয়েছিলেন।প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণার বোঝা আর নিতে পারছিলেন না।ধন্যবাদ আপু সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আমার পোস্ট পড়ে সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।