প্রথমবার বহরমপুরে ভৈরবের বিসর্জনের শোভাযাত্রা দর্শন। (১০% @shy-fox এর জন্য বরাদ্দ।)
নমস্কার সবাইকে। আশা করি সকলে ভালো আছেন। ভগবানের কৃপায় আমিও ভালো আছি।
আমি কিছুদিন আগে আমার বাড়ির কাছাকাছি ভৈরব ও বজরংবলীর কিছু ছবি দিয়ে একটা পোষ্ট করেছিলাম। তবে বহরমপুরের বিখ্যাত ভৈরবের ছবি দিতে পারিনি। গত পরশু বাড়ির জন্য কিছু ফুল গাছ ও আমার স্ত্রীর চশমা আনতে গিয়ে ভৈরবের বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখার সৌভাগ্য হল। বাড়ির কাছে হলেও আমি আগে কখনো ভৈরবের বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখিনি। আমি পরশু দিন শোভাযাত্রা দেখার উদ্দেশ্যে যাইনি। সেদিন যে ভৈরবের বিসর্জন আছে সেটা আমার মনে ছিল না। আর এবছর বাবা ভৈরবের দর্শন না পাওয়াতে আমার একটু মন খারাপ ছিলই, তাই আমার অজান্তেই বাবা আমাকে তার দর্শনের সুযোগ করে দিলেন। আমার স্ত্রীও প্রথমবার বাবার দর্শন পেল।
প্রায় ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বহরমপুরের খাগড়াতে বাবার পুজো হয়। তার নামেই গঙ্গার ঘাটের নামকরণ হয়েছে। পরে অন্য অনেক ভৈরব পুজো হলেও বাবা ভৈরব এর পার্থক্য তার আকার ও গায়ের রং এ। অন্যান্য ভৈরবের গায়ের রং সাদা হলেও এই ভৈরবের রং নীলাভ।
আমরা অন্যান্য সব কাজ সেরে শেষে চশমা আনতে যাচ্ছিলাম। তখন খাগড়া নতুন পাড়া মোড়ে আটকে যাই, দেখি ভৈরবের প্রসেশন আসছে। আমি গাড়ি একটা গলিতে রেখে মেন রাস্তার ধারে এসে দাঁড়ায়। এরপর একে একে আসতে থাকে ছোট গাড়ি ভর্তি বক্স ও তার সাথে দলে দলে মানুষ নাচ করতে করতে এগিয়ে আসতে থাকে। হাজার হাজার মানুষ নানান গানের সাথে নাচতে নাচতে এগিয়ে চলেছে।
অপেক্ষারত অগুনতি ভক্ত।
এর সাথে মাঝে মাঝে আসতে থাকে ঢাকের দল। একসাথে ১০-১২ জন ঢাকি ঢাক বাজাচ্ছিল আর তার সাথে একদম মানুষ। এইভাবে বেশ কয়েকটি ঢাকের টিম ছিল এই শোভাযাত্রায়। অনেক মেয়েরাও এতে অংশগ্রহণ করেছিল। তারাও নাচতে নাচতে এগিয়ে যাচ্ছিলো হাজার হাজার মানুষের সাথে।
এইভাবে দু ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকি শোভাযাত্রা। রাস্তার দুধারেও অসংখ্য মানুষ এমনকি রাস্তার আশেপাশের বাড়ির ভিতর থেকে ও ছাদ থেকে অসংখ্য মানুষ এই শোভাযাত্রা দেখতে থাকে। শোভাযাত্রা থেকে দর্শক তথা ভক্তকূলের জন্য বাতাসা ও লজেন্স বিতরণ করতে থাকে। তার সাথে রাস্তার দুপাশের বাড়ি থেকেও বাতাসা ও ফুল ছেটানো চলতে থাকে বাবার শোভাযাত্রায়।
অবশেষে বাবার দর্শন পেলাম। তখন মনে হচ্ছে এই দুঘন্টার অপেক্ষা যেন সফল হল। বাবাকে দেখার জন্য আর একবছর আর অপেক্ষা করতে হল না। বাবা ভৈরব যখন যাচ্ছিলেন তখন অনেককে দেখলাম উলু ধ্বনি ও শঙ্খ ধ্বনি দিতে। এত ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছিল আমার মতো অসংখ্য মানুষ তবুও তাদের মুখে একটুও বিরক্তি আমি দেখিনি। এতেই বুঝতে পারলাম কেন বলা হয় বাবা ভৈরব "বহরমপুরের বস"।
শহর পরিক্রমা শেষে বাবা ভৈরবতলা ঘাটে পৌঁছবেন। সেখানেই গঙ্গায় হবে বাবার প্রতিমা নিরঞ্জন। বাবা ভৈরব রওনা দেবেন কৈলাসের উদ্দেশ্যে। আরো এক বছরের অপেক্ষায় থাকব আমরা।