প্রথমবার বাড়ির দুর্গাপুজোর সাক্ষী হলাম। (পর্ব - ১) (১০% @shy-fox এর জন্য এবং ৫%,@abb-school এর জন্য বরাদ্দ।)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

নমস্কার, আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমিও এখন ভালো আছি। কিছুদিন ঘাড়ের ব্যথায় খুব কষ্ট পেলাম, আজ ব্যথাটা অনেক কম।

আপনারা অনেকেই জানেন আমি দুর্গাপুজোতে ঠাকুর দেখা নিয়ে দুটো পোস্ট করেছি। এ বছর প্রথমবার কলকাতার পুজো দেখার সাথে সাথে প্রথমবার বাড়ির দুর্গাপূজা দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে একটা নয় একসাথে দুটো বাড়িতে। প্রথমটি ছিল আমার মাসি শাশুড়ির বাড়িতে আর দ্বিতীয়টি ছিল আমার স্ত্রীর দাদু বাড়িতে। আজ এই লেখাটি হবে মাসী শাশুড়ির বাড়ির পুজো নিয়ে।

IMG_20221002_182712.jpg

মাতৃ মন্দির

লোকেশন

পঞ্চমী ও ষষ্ঠী কলকাতাতে কাটিয়ে আমরা সপরিবারে সপ্তমীতে রওনা হয়েছিলাম মাসী বাড়ির উদ্দেশ্যে। একটি স্করপিও গাড়িতে আমার ও আমার শ্বশুর বাড়ির মোট সাত জন মিলে আমরা স্ত্রীর মেজো মাসীর বাড়ি হাওড়ার রাজাপুরের উদ্দেশ্যে সকাল 10 টা নাগাদ আমরা রওনা দিলাম। গাড়ি নিবেদিতা সেতু হয়ে দিল্লি রোড ধরে ক্রমে এগিয়ে চললো ডানকুনির দিকে। ডানকুনি থেকে আমরা ঢুকে গেলাম মশাটের রাস্তায়। রাস্তার আশেপাশে অনেক পুজো প্যান্ডেল ও প্রতিমা দর্শন করতে করতে আমরা এগিয়ে চলেছি। এরপর মশাট বাজার পার করে বাম দিকে বেঁকে আমরা এগিয়ে চললাম জগৎবল্লভপুরের দিকে। তারপর জগৎবল্লভপুর থেকে বাম দিকে বেঁকে চলতে থাকলাম উদয়নারায়ণপুরের পথে। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি ভালোই জোরে চলছে, মেঘলা দিনের ঠান্ডা হাওয়া আর গ্রাম বাংলার অপরূপ শোভা দেখতে দেখতে আমরা বকপোতা ব্রিজ পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম উদয়নারায়ণপুর। উদয়নারায়ণপুর মোড় থেকে বাম দিকে বাঁক নিয়ে আমাদের গাড়ি চলতে লাগলো রাজাপুরের দিকে। অবশেষে কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম মাসীর বাড়ি। এই যাত্রাপথে সময় লাগলো দেড় ঘণ্টারও অধিক সময়।

বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম মেজো মেসো অর্থাৎ মানস মেসোকে। প্রথমে ঢুকতেই চোখে পড়ল পরিবেশ সম্পর্কিত নানান বার্তা দেওয়া ছবি লাগানো আছে প্যান্ডেলের গায়ে। জানতে পারলাম এগুলি ছিল মেসোর বড়ো দাদার মস্তিষ্ক প্রসূত। যা মানুষকে পরিবেশ রক্ষার কাজে নিয়োজিত করে তোলার এক ঐকান্তিক চেষ্টা বলা চলে।

IMG_20221002_183136.jpg

পঞ্চমীর দিন এখানেই হয়েছিল দ্বাদশ কন্যা পূজন। বিভিন্ন জাতির ১২টি মেয়েকে কুমারী রূপে পূজা করা হয়েছিল। কুমারী পুজোতে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ কন্যাদেরই কুমারী রূপে পূজা কা হয়। তবে রাজাপুরের ভট্টাচার্য পরিবার এই প্রথা ভেঙে অন্যান্য জাতির মেয়েদের কুমারী রূপে পূজা করে চলেছে বিগত কয়েক বছর ধরে। যা গত কয়েক বছর ধরে খবরের কাগজের পাতাতেও উঠে এসেছে।

IMG-20221020-WA0003.jpg

IMG-20221020-WA0004.jpg

IMG-20221020-WA0007.jpg

বাড়িতে প্রবেশ করেই প্রথমে দেখতে পেলাম একটি বেল গাছ, যেখানে দেবী মায়ের বোধন করা হয়েছে। তারপর ডানদিকে দেখতে পেলাম বাড়ির দুর্গা মন্দির, যেখানে বিরাজ করছে পিতলের দুর্গা প্রতিমা। মাসী বাড়ির এই পুজো এ বছর ২১৭ তম বছরে পদার্ণন করেছে। পারিবারিক সূত্র অনুযায়ী জানা গেছে অষ্টাদশ শতাব্দীর অষ্টম দশকে এই পুজো আরম্ভ হয়। একান্নবর্তী পরিবার হিসেবেই একসময় এই পুজো শুরু হয়। বর্তমানে সবাই আলাদা হলেও পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে এই পুজো প্রতিবছর করে থাকেন।

IMG_20221002_182959.jpg

IMG_20221002_183024.jpg
বংশ তালিকা

বংশ পরম্পরায় ঐতিহ্য মেনে প্রতিবছর এই বাড়িতে দুর্গা পুজো হয়ে থাকে। আগে মৃন্ময়ী মূর্তিতেই মায়ের আরাধনা হতো, ২০২০ সালে পিতল দ্বারা নির্মিত এই মাতৃ প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর থেকে এই মন্দিরে নৃত্য পূজা করা হয়। যেহেতু মা দুর্গা সারা বছর এই বাড়িতে বিরাজ করে তাই দুর্গাপূজার সময় প্রতিমা বিসর্জন না হয়ে এখন শুধুমাত্র ঘট বিসর্জন হয়ে থাকে। পুজোর কদিন মাকে অন্ন ভোগ দেওয়া হয়, তবে এখানে পাঠা বলি দেওয়া হয় না, তার বদলে আখ ও চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। সন্ধ্যা আরতির সময় মাকে শীতলি ভোগের জন্য নাড়ু-মুড়কির সাথে লুচি-পায়েস দেওয়া হয়।

IMG_20221002_182726.jpg

IMG_20221002_182742.jpg

IMG_20221002_193913.jpg

পুজোর কদিন এই বাড়ির সকল সদস্য যেমন একসাথে পুজোর আয়োজন করে তেমনি তারা একসাথেই খাবার খায়। দুপুরে ও রাতে সকলকে প্রথমে পুজোর প্রসাদ, ভোগ দেওয়া হয়, তারপর দিনের বেলা ভাত ও রাত্রিবেলা লুচি খাওয়ানো হয়।

বাড়ির সদস্যরাই পৌরোহিত্যের কাজ, ভোগ রান্না ও পুজোর অন্যান্য কাজ করে থাকে। সন্ধ্যেবেলা ভোগ আরতি হয় প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে। আমরা যখন পৌঁছালাম তখন সপ্তমীর পূজা শেষ হয়ে গেছে। তাই আমরা ওখানে পৌঁছেই মায়ের ভোগের প্রসাদ খেলাম। তারপর মাসির দেওয়া শরবত, মিষ্টি ও চা খেয়ে বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলও দেখে এলাম। দুপুর দুটো নাগাদ ডাল, তরকারি, চাটনি ও পায়েস সহযোগে মধ্যাহ্নভোজ সারলাম। তারপর মাসির জেঠতুতো দেওরের বাড়িতে চলে যাই বিশ্রাম নিতে। আমাদের জন্য এ বাড়ির কাকিমা আগেই বিছানা তৈরি করে রেখেছিলেন। কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যাবেলা মাসীর ঘরে এসে আমরা সবাই মিলে গল্প করতে করতে চা খাই।

IMG_20221002_182758.jpg

এর কিছুক্ষণ পর শুরু হয় বাড়ির সদস্যদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যে যেমন পারে তেমন নাচ, গান, আবৃত্তি পরিবেশন করে। একেবারে শেষে আসে আমার স্ত্রীর পালা। আমার স্ত্রী বেশ কয়েকটি ভক্তিগীতি ও শ্যামা সংগীত পরিবেশন করে। তবলায় সঙ্গত করেন আমার শ্বশুর মশাই।

IMG_20221002_212014.jpg

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আমরা সবাই মিলে সন্ধ্যা আরতি দেখি। সন্ধ্যা আরতি প্রায় এক ঘন্টা ধরে চলে। তারপর মাসির ঘরে আমরা খাওয়া-দাওয়া করি। প্যান্ডেলে সবার জন্য ভাত এবং লুচি হয়েছিল, তবে মাসী নিজের ঘরে নিজের হাতে তৈরি খাবার খাওয়াবে বলে আমাদের জন্য রুটি তৈরি করেন এবং আমরা রাতে একসাথে রুটি খাই।

পরদিন সকালে আটটার মধ্যে সবাই স্নান করে মন্দিরে চলে যায় অষ্টমী পুজোর অঞ্জলি যাওয়ার জন্য। সকাল ন'টার মধ্যে আমরা অঞ্জলি দিয়ে মাসীর হাতের তৈরি লুচি খেয়ে আমাদের পরবর্তী গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তৈরি হই। ওখানে যাওয়ার জন্য চলে আসে দুটো টোটো, তবে যাওয়ার আগেই শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। সবাই তৈরি হয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে থাকি বৃষ্টি কমার। ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর অবশেষে সাড়ে বারোটা নাগাদ আমরা রওনা দি দাদু বাড়ির উদ্দেশ্যে। রাস্তায় পুনরায় তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। সেই বৃষ্টির মধ্যেই আমরা চলতে থাকি, মিনিট পনেরো এর মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাই নিকটবর্তী গ্রাম শিবানীপুরের ব্যানার্জি পাড়ায় অবস্থিত দাদু বাড়িতে।

শিবানীপুরের ব্যানার্জি পাড়াতে আমার দাদু-শ্বশুরদের নিজস্ব বাড়ির পূজো নিয়ে আমি আগামী পর্বে আলোচনা করব।

সকলে ভালো থাকবেন।

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif

ক্যামেরা
ফটোগ্রাফার
ভিভো জেড ১ প্রো
@pap3

Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

🌼 ধন্যবাদ 🌼

Banner(1).png

২০ শে অক্টোবর‚ ২০২২‚ বৃহস্পতিবার

Heroism_Second.png

E8fRY4dhuR5sTLZsFHQGy2Dnv1izoNa9kDDwNf6SWjwUiF4nkVKP1PC25WhWdSqY9SQf2TJzmqgxFMWjuNkHw5XsLARCErjQCJttWSghQw.HWK2gGpEFGB8xQqyomTH1nvn7CPz2SMnooXwX61WyzcpU63uoNSxy8gfgvGdwRzK9nB2bEQrLPQvvnQVp6n6xDEV7NQgpdcANjWF3XJwB2tbgXcKKDcWfvHLG6.png

Sort:  

চমৎকার সাজানো গোছানো একটা পোস্ট পেলাম। ভীষণ ভালো লাগলো পুরোটা দেখে। এভাবে কুমারী পূজার আয়োজন এই প্রথম দেখলাম আমি। সবথেকে বেশি ভালো লাগলো ১২ জাতির মেয়েকে বসিয়ে কুমারী পূজার আয়োজন টা। এটা একটা ভালো দৃষ্টান্ত বলে আমার মনে হয়। আর সবশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান টাও মন ভালো করে দেওয়ার মত একদম। ঘরোয়া পরিবেশে এমন আয়োজন সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ সজীব দা এমন সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। মাসী বাড়ির এমন সুন্দর পুজোতে থাকতে পেরে আমারও খুব ভালো লেগেছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.033
BTC 64188.14
ETH 2766.12
USDT 1.00
SBD 2.66