কেমন হতো যদি ফিরে পেতাম ফেলে আসা শীতের শৈশবটা?
আমার বাংলা ব্লগের সকল ভাই এবং বোনেরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আমার আজকের পোস্টে সবাইকে স্বাগতম। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার ফেলে আসা শীতের শৈশবটা।কম বেশি সবার শৈশবে শীতকালের আলাদা একটা অনুভূতি ছিল। কুয়াশায় আচ্ছন্ন শীতের সকাল! মুখ খুললেই ধোঁয়া বের হওয়া দেখে অবাক হয়ে যাওয়া। শীতের শৈশব টা অনেক মজার ছিল। ছিল না কোন দায়িত্ব-কর্তব্য, চিন্তা-ভাবনা। সারাক্ষণ খেলা-ধুলা, মজা, আনন্দ উল্লাস নিয়েই সময় পার করে ফেলতাম।
শীত আসলেই মনে পড়ে যায় শৈশবের হাজারো স্মৃতি। শহরের শীতের থেকে কিন্তু গ্রামের শীতকাল বেশী উপভোগ করা যায়। গ্রামের শীতকাল উপভোগ করা মানে অন্যরকম একটা আনন্দ। যখন ছোট ছিলাম তখন আমার দাদার অনেকগুলো খেঁজুর গাছ এবং তাল গাছ ছিলো। প্রতিদিন শীতের সকালে খেজুর গাছ এবং তালগাছ থেকে মাটির কলসি ভরে রস বাড়িতে নিয়ে আসা হতো। আমরা ভাই-বোনরা শীতের সব পোষাক পরে কুয়াশা আচ্ছন্ন সকালে ঠান্ডা ঠান্ডা খেঁজুরের রস খেতাম। ঠান্ডা ঠান্ডা খেঁজুরের রস খাওয়ার পর শীত আরো বেশি লাগতো। তালের রসের থেকে আমার খেঁজুরের রস খেতে বেশী ভালো লাগতো।
মাঝে মাঝে আমার আম্মু ঠান্ডা লাগার ভয়ে কুয়াশামাখা সকালে ঠান্ডা রস খেতে দিত না। তাই গ্লাসে করে রেখে দিতাম যাতে রোদ উঠলে খেতে পারি। আর তখন মুড়ি দিয়ে খেজুরের রস খেতে খুবই ভালো লাগতো। মুড়ি দিয়ে খেজুরের রস কে কে খেয়েছেন অবশ্যই মন্তব্যে জানাবেন। আমার কিন্তু মুড়ি দিয়ে খেঁজুরের রস খেতে খুবই ভালো লাগে। সবার খাওয়ার পর খেঁজুরের রস আরো অনেক বেঁচে থাকতো। সেই রসগুলো জাল করে খেঁজুরের গুড় তৈরি করা হতো। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রস থেকে গুড় তৈরি করার পদ্ধতি টা দেখতাম। খেঁজুরের গুড় জাল করার পর অন্য একটি পাত্রে গুড় গুলো ঢেলে রাখত। তারপরও যে পাত্রে গুড়গুলো জাল করা হয়েছে সেখানে অনেক গুড় লেগে থাকত আর সেটা আমরা চামচ দিয়ে বসে বসে খেতাম। কতই না সুন্দর ছিল সেই সকল দিনগুলো!!
সকালের মিষ্টি রোদে যখন চারপাশ আলোকিত হতো তখন যেখানে বেশি রোদ পড়তো সেখানে মিষ্টি রোদ উপভোগ করার জন্য বসে পড়তাম। আর সবাই মিলে গল্প করতাম। শীতকালে কত রকম পিঠাপুলির আয়োজন করা হতো বাড়িতে। আগে আমাদের বাড়িতে শীতকালে আমার দাদীরা সবাই একসাথে মিলে মিশে মুড়ি ভাজতো।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবে মুড়ি ভাঁজতো সবাই মিলে৷ আর আমরা ছোটরা বসে বসে মুড়ি ভাজা দেখতাম আর গরম মুড়ি খেতাম। এখন এই সবই স্মৃতি। এখন তো মুড়ি আর বাড়িতে ভাজা হয় না, মেশিনের সাহায্যেই মুড়ি খুব সুন্দর ভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়৷ তাই আগের মতো ঐ সকল দিনগুলো উপভোগ করা যায় না।
শৈশবের শীতকাল এখন শুধুই স্মৃতি। আসলে ছোটবেলার স্মৃতি লিখে শেষ করা যাবে না। ছোটবেলার স্মৃতি লিখতে বসলেই অনেক কথা মনে পড়ে। আমার আজকের এই পোস্টটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে সেটা অবশ্যই মন্তব্যে জানাবেন। ভুলক্রটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম। আমি নীলিমা আক্তার ঐশী। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। আমি একজন স্টুডেন্ট। আমি অনার্স ৪র্থ বর্ষের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী। আর্ট করা,ঘুরতে যাওয়া এবং রান্না আমার খুবই প্রিয়। প্রিয়জনদের পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াতে এবং তাদের প্রশংসা শুনতে আমার খুবই ভালো লাগে। নতুন নতুন রেসিপি শেখার আমার খুব আগ্রহ রয়েছে। আমি ২০২৩ সালের জুন মাসে স্টিমিটে জয়েন হয়েছি।আমি বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে জয়েন হয়েছি সবার সাথে বিভিন্ন রেসিপি এবং আর্ট শেয়ার করার জন্য এবং সেই সাথে অন্য সবার থেকে দারুন দারুন সব ক্রিয়েটিভিটি শিখতে। বাংলা ব্লগ কমিউনিটি একটি পরিবারের মত আর এই পরিবারের একজন সদস্য হতে পেরে আমি অনেক খুশি।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
সত্যিই আপু শীত নিয়ে ছেলেবেলার অনুভূতি গুলো আজ শুধু স্মৃতি হয়েই মনের মাঝে আছে।আপনি ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো চমৎকার ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করলেন। খেজুরের রস শীতের খুব লোভনীয় খাবার।এই রস দেশে যাওয়া হলেই খাওয়া হতো।তবে আমি মুড়ি দিয়ে কখনও খাইনি। আমি খেজুরের রস জাল দিয়ে পায়েস খেয়েছি।দারুন মজা এই পায়েস।সবাই মিলে গল্প করা আর রোদ পোহানোর মূহুর্তগুলো সত্যি ই অসাধারণ।
খেজুরের রস জাল দিয়ে পায়েস খেতে অনেক মজা হয়। আমরা প্রায়ই প্রতি বছরই এই খাবারটি খেয়ে থাকি।
আপু বাস্তবে তো কখনো যেতে পারবো সেই শৈশবে তাই মাঝে মাঝে আমি কল্পনায় যাওয়ার চেষ্টা করি। সেই সময়টা খুবই মধুর আর রঙিন ছিল। আমার কাছে মনে হয় বর্তমানের সময়টা সাদা কালো বন্দি জীবন হয়ে গিয়েছে। সকালের রোদে বসে খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ি খাওয়া, ভোরবেলা শীতে জড়োসড়ো হয়ে সবাই মিলে আরবি পড়তে যাওয়া এখনো যেন এই দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আপু আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপু স্মৃতির পাতা এভাবে সুন্দর ভাবে তুলে ধরার জন্য।
কল্পনাতে ছাড়া বাস্তবে তো কখনোই শৈশবের দিনগুলো ফিরে পাওয়া সম্ভব না। আপনি মাঝে মাঝে কল্পনাতে শৈশবে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন জেনে খুব ভালো লাগলো আপু।
আপু আপনার লেখার টাইটেল পড়ে আমি চলে গিয়েছিলাম প্রায় দেড়শ যুগ আগের সেই সময়টা। শীতের আগে মাঠের ধানের ফসল। ধান বাড়িতে আসছে ধানের কিছু চিটি বা খড় কোটা থাকতো। আর এগুলো বাড়ির মানুষ কখনো ফেলে দিত না কারণ তারা জানত এতটাই শীত পড়ে যে সারাটা দিন আগুন জালিয়ে রাখতে হবে। পাড়ার মানুষজন সবাই এক জায়গায় জমায়েত হয়ে আগুন তাপাতো। আসলে সেই সময় স্মৃতিগুলো মনে পড়লে এখন মনে হয় কত আনন্দই না কেটেছে সেই সব শৈসব গুলো।
আপনি দেড়শ যুগ আগে কেমনে গেলেন ভাইয়া???ছোটবেলায় শীতকালটা সত্যিই অনেক মজার ছিল।
শীতকালীন পরিবেশ এর মধ্যে একটি আলাদা শান্তি কাজ করতে থাকে। সেই শীতকালের পরিবেশ যদি গ্রামে কাটানো যায় তাহলে আর কোনো কথাই নেই৷ গ্রামে থাকা খেজুরের রস, সকালের কুয়াশা ভেজা সকাল, কত যে মজা৷ শীতের রাতে অনেকে একসাথে অনেক মজা করে থাকে। আর যুবকরা অনেকে ব্যাডমিন্টন খেলাতে ব্যাস্ত থাকে। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি শৈশবে ফিরে যাওয়ার একটি মুহূর্তে শেয়ার করেছেন। আসলেই যদি শৈশবে এখন ফিরে যাওয়া যেত তাহলে কতই না মজা হত৷
সত্যিই ভাইয়া, গ্রামের শীত উপভোগ করতে বেশি ভালো লাগে।
মুড়ি দিয়ে খেজুরের রস খাওয়াটার কথা আজকেই প্রথম শুনলাম। যেহেতু আপনি বলছেন সেহেতু একবার ট্রাই করে দেখব আসলে খেতে কেমন লাগে।
অবশ্যই ট্রাই করে দেখবেন। ভালো না লাগলে কিন্তু আমার দোষ নয়।
আপু কি ভাবে বুঝলেন আপনি আমার মনের কথা? আমিও তো দুদিন ধরে ভাবছি যে ছেলেবেলার সেই পিঠা পুলির সময় গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আসলে আপনি যাই বলেন না কেন আমাদের ছেলেবেলার মত এমন সময় আমরা আর পাবো কিনা জানিনা। যখন বাড়িতে বোল ভরে পিঠা বানানো হতো। বেশ দারুন ছিল আপনার অনুভূতি গুলো। ধন্যবাদ এমন সুন্দর কিছু অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
আমাদের সকলের শৈশব টাই অনেক মধুর ছিল। তাইতো এখন এতটা মিস করি।
সত্যি কথা বলতে কি আপু ঈদের সময় মানুষ যেমন গ্রামে এসে ঈদ করার চেষ্টা করে, ঠিক তেমনি শীতের সময় গ্রামে থাকলে অনেক কিছু উপভোগ করা যায় তাই গ্রামটাই বেস্ট মনে হয়। বিশেষ করে যেমন খেজুরের রসের কথা বলেছেন, গ্রামে কিন্তু খাজুরের রস পেলে আর নতুন ধান উঠলে বিভিন্ন পিঠা তৈরির উৎসব পড়ে যায়। তাই এইসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ শীতের সময় ভালোলাগার মুহূর্ত মনে করে। কারণ অনেকে একত্রে জড়ো হয়ে এই সমস্ত কাজে অংশ নেয়া যায়। যাই হোক সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করেছেন পাশাপাশি শৈশব ফিরে পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। তারপরেও শীতের সময় গ্রামে অবস্থান করার মধ্যে আনন্দ আছে।
গুছিয়ে খুব সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন ভাইয়া। আপনার মন্তব্যটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো । অনেক ধন্যবাদ এত চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
আমি তো সবসময় মনে করি শহরে শীতকালটা উপভোগ করাই যায় না একেবারে। গ্রামের শীতের সাথে শহরের শীত একেবারেই তুলনা করা যায় না। গ্রামের শীতকালের মজাটাই আলাদা। যারা গ্রামে শীতকাল উপভোগ করে তারাই বলতে পারে গ্রামের শীত কি রকম। আমি তো ছোটবেলা থেকেই গ্রামে যার কারণে গ্রামের শীতটা বেশ ভালোই উপভোগ করি। তবে ছোটবেলার সেই শীতের মুহূর্ত গুলো ছিল সবথেকে আলাদা। সেই মুহূর্তগুলো ফেলে ফেলে সত্যি অনেক ভালো হতো। সেই অনুভূতিগুলো সব থেকে আলাদা ছিল। এখনো মনে পড়লে সেই শৈশবে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।
শহর থেকে গ্রাম সবদিক থেকেই অনেক ভালো আপু। শৈশবটা আমরা সত্যিই অনেক মিস করি। আপনার কমেন্ট পেয়ে খুব ভালো লাগলো আপু।
সবথেকে বেশি অবাক হতাম মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার যে ব্যাপারটা ছিলো। মজা করে আবার বলতাম সিগারেট না খেয়েই ধোঁয়া বের হচ্ছে। ছোটবেলার স্মৃতি সত্যি ভুলবার না। কনকনে শীতের সকালে খেজুরের রস খেতেও বেশ ভালো লাগতো। ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য
হি হি হি!! সত্যিই তাই।বেশ মজার ছিল বিষয়টা।
অনেক বেশি ভালো হতো আপু যদি সেই ফেলে আসা শীতের শৈশবটা ফিরে পেতাম। অনেক বেশি মিস করি সেই শৈশবের দিন। শীতের সময় আমরা কতই না মজা করতাম। নানান রকমের পিঠাপুলি খাওয়া হতো সবাই একসাথে। ছোটবেলায় শীতের সময় ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে অনেক পাগল ছিলাম। আর সেই অনুভূতি গুলো মনে পড়লে খুবই আনন্দ লাগে। আপনার আজকের এই পোস্ট পড়ে তো আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গিয়েছে।
আমরা সবাই বড় হয়ে এখন শৈশবটা সত্যিই অনেক মিস করি।