শৈশবের স্মৃতিময় গল্প || আম চুরি

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

1_20240503_184114_0000.png

ছবিটি canva দিয়ে তৈরি ৷


হ্যালো বন্ধুরা , কেমন আছেন সবাই ? আশা করি সবাই ভালো আছেন ৷ আমিও বেশ ভালো আছি ৷ তো আজ আবারও আপনাদের মাঝে চলে আসলাম , আজকে আমি আপনাদের মাঝে আমার শৈশবের বেশ মজাদার একটি স্মৃতিময় গল্প শেয়ার করবো ৷ হঠাৎ করেই আজ গল্পটা মনে পড়ে গেলে তাই লিখতে শুরু করলাম ৷ অন্যান্য দিনের মতোই আজও বেশ গরম পড়েছে ৷ সকাল থেকেই প্রচন্ড রোদ আর গরম , এসবের মাঝে আমি এদিক সেদিক টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম ৷ দুপুর বেলা গাছের নিচে সবার সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় গল্পে গল্পে ছোট বেলার এই গল্পটা মনে পড়ে গেলো ৷ তাই ভবলাম আজ ছোট বেলার এই মজাদার গল্পটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করি ৷ আশা করি আপনাদেরও সবার ভালো লাগবে , যদিও এই গল্পে আহামরি কিছু নেই ৷ তবে আমার ছোটবেলার তো , তাই আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে ছোটবেলার এই দিন গুলোর কথা মনে হলে ৷

আজ যতটা শান্তশিষ্ট হয়ে আছি বা সময় কাটাচ্ছি ছোট বেলায় মোটেও এমন ছিলাম না ৷ এদিক সেদিক ছোটাছুটি আর ঘোরাঘুরিই ছিলো মেইন কাজ ৷ সে সময় গরমের স্কুল ছুঁটি পেলে ভীষণ ভালো লাগতো ৷ সবার সাথে রোদ্দুর গরমের মাঝেও এদিক সেদিক টই টই করে ঘুরে বেড়াতাম ৷ কত কথাই না শুনতে হয়েছে গরমের মাঝেও সারা দিন বাড়ির বাইরে ছিলাম বলে ৷ এই দিন গুলোতে আমাদের কাজ ছিলো শুধু ঘোরাঘুরি আর খাওয়া দাওয়া ৷ এরমধ্যে আম গাছের দিকে আমাদের চোখ থাকতো একটু বেশিই ৷ তবে সব আম গাছের দিকে না ৷ দুটো আম গাছের পিছনে সব সময় লেগে থাকতাম ৷ এই দুটো আম গাছে মিষ্টি আম ধরে ৷ কাচা খেতে ভীষন ভালো লাগে ৷ তাই এই আমের প্রতি আমাদের লোভ ছিলো একটু বেশিই ৷

এই কাঁচামিঠা আমের গাছ দুটো ছিলো পাশপাশি একটি বাড়ির ভিতরে ৷ বাড়িওয়ালা থাকা কালীন বিভিন্ন উপায়ে আম চুরি করে খেতাম ৷ তবে বাড়িওয়ালা এক সময় কর্মস্থলের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ৷ বাড়ি দেখভাল করার দায়িত্ব দেয় এক বৃদ্ধি লোককে ৷ সম্পর্কে দাদু হবে ৷ তিনিই সব দেখভাল করতেন ৷ আমের সময় দাদু সেই আম গাছটার নিচে বসে সময় কাটাতো ৷ আমরা দাদুকে ফাকি দিয়ে আম পাড়ার চেষ্টা করতাম ৷ কিন্তু বেশি ভাগই ধরা পড়ে যেতাম ৷ দাদু আমাদের দেখা পেয়ে কি যে দৌড়ানি দিতো ! বেশ মনে পড়ে এসব কথা ৷

একদিন দুপুর বেলা কথায় কথায় আম খাওয়া সিদ্ধান্ত নেই আমরা ৷ চার পাঁচজন ছিলাম ৷ সবাই মিলে কাঁচামিঠা আম গাছের নিচে চলে গেলাম ৷ গাছ দুটো মাঝারী ছিলো , তবে বেশ ভালো আম ধরতো ৷ আর ডালপালাও বেশ ভালো ছিলো ৷ তখন দেখি দাদু গাছের নিচে নেই ৷ মন বেশ ভালো হয়ে যায় আমাদের ৷ এরপর দুজন দুটো গাছে উঠে পড়ে আম পাড়ার জন্য ৷ আমি অবশ্য তেমন একটা গাছে উঠতে পারিনা ৷ সেজন্য তারাই উঠে পড়লো ৷ আমরা নিচে দুজন ছিলাম, তারা গাছের উপরে দুজন ৷ কয়েকটা আম পাড়াতে না পাড়াতে দাদুকে আসতে দেখি আমি ৷ দাদুকে দেখে নিচের কয়েকটা আম নিয়ে আমরা পালিয়ে আসি ৷ অন্যদিকে তারা দুজন তখনও গাছে ৷ দাদু এসে গাছে নিচে বসে পড়ে ৷ আমাদের খেয়াল করেনি ৷ তারা দুজন গাছের উপর চুপ করে বসে আছে তো আছেই ৷ দাদুর চলে যাওয়ার নাম গন্ধ নেই ৷ আমরা দুজন লুকিয়ে তাদের এসব কান্ড দেখছি ৷ তাদের গাছের উপর রোদ আর গরমে একাএকার অবস্থা ৷ তাও চুপটি করে বসে আছে দাদুর ভয়ে ৷ যদিও দাদু আমাদের কখনো মারেনি , তবে দাদুর হাতের লাঠি আমরা বেশ ভয় পেতাম ৷ এক ঘন্টা দু ঘন্টা সময় যেতে থাকে , কিন্তু দাদুর যাওয়ার নাম নেই ৷ তারা গাছের উপর বসে আছে তো আছেই ৷ আমরা দুজন নিচে লুকিয়ে আম খাচ্ছি আর তাদের দেখছি ৷ বেশ ভয়ও লাগছে আবার মজাও লাগছে ৷ প্রায় তিন ঘন্টা পর দাদু চলে যায় ৷ তারপর তারা গাছ থাকে নামে ৷ তাদের দেখে আমার বেশ হাসি পেয়েছে , আবার কষ্ট ভয় দুটোই লেগেছে ৷ তারা দুজন গরমে লাল হয়ে গেছে ৷ বিকালের কাছাকাছি সময় আমরা বাড়ি চলে আসি ৷ সেদিন আর মজা করে মিষ্টি আম খাওয়া হয়নি ৷ তবে পরবর্তীতে সেই জেদ ধরে অনেক মিষ্টি আম আমরা খেয়েছি সেই দুটো গাছের ৷ এই ঘটনা টা দারুণ ছিলো আমার জীবনে ৷ মনে পড়লেই হাসি পায় , অনেক আনন্দ লাগে ৷ কি ছিলো সে সব দিন ৷ শৈশব..


যাই হোক , আজ এ পর্যন্তই ৷ সবাই ভালো থাকবেন , সুস্থ থাকবে ৷ আশা করি আমার শৈশবের স্মৃতিময় এই গল্পটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে ৷ অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে , সময় নিয়ে পোস্টটি দেখার জন্য ৷ আবারও ধন্যবাদ সবাইকে ৷



🙏 ধন্যবাদ সবাইকে 🙏




20240114_001456_0001.png


আমার নাম নিরব ৷ জাতীয়তা বাংলাদেশী ৷ মাতৃভাষা বাংলা ৷ বাংলায় কথা বলতে এবং লিখতে আমি অসম্ভব ভালোবাসি ৷ পেশাগত দিক দিয়ে আমি একজন ছাত্র , পড়াশোনা করছি অনার্স প্রথম বর্ষে ৷ পাশাপাশি স্টিমিটে ব্লগিং করছি ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ৷ আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি ৷ এছাড়াও আর্ট , ফটোগ্রাফি এবং লেখালেখি করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে ৷ সব সময় শেখার চেষ্টা করি , নতুন কিছু শিখতে এবং জানতে আমার খুবই ভালো লাগে ৷ আমি বন্ধুদের সাথে সময় কাটতে অনেক বেশি পছন্দ করি ৷ এছাড়াও পরিবারের সাথে থাকতে এবং সময় কাটাতে আমার প্রচুর ভালো লাগে ৷ আমি একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ৷ আমি আমার ধর্মকে অনেক বেশি ভালোবাসি এবং সম্মান করি ৷ আমি স্টিমিটে জয়েন করি ২০২০ সালের আগস্টের শুরুর দিকে ৷ ধ ন্য বা দ ...


1691561447609.png

20230619_2027351.gif



Sort:  
 2 months ago 

সত্যি ভাইয়া ছোট বেলার স্মৃতি অনেক মধুর হয়। আপনাদের আম পাড়া গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনি ঠিক বলেছেন সব গাছের আম ভালো লাগে না। তবে যেগুলো গাছের আম ভালো লাগে সেগুলো খেতে অনেক ইচ্ছে করে।আপনারা পরে জেদ করে আম খেয়েছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার অনুভূতি গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

আসলেই এই আমের দিনে আম চুরি করে খাওয়ার অনেক স্মৃতি আমাদের ছোট বেলার রয়েছে। সেই কথা গুলো মনে পরলে অনেক বেশি ভালো লাগে। ছোট বেলায় এমন আমরাও বন্ধু বান্ধব মিলে অন্যের গাছের আম চুরি করে খেতাম। শৈশবের দিনগুলো বেশি রঙিন ছিলো। আপনার আম চুরি করে খাওয়ার গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago (edited)

আজ আপনার ছোট বেলার আম চুরির স্মৃতি পরে আমার ভালো লেগেছে। ছোট বেলা আমিও আপনার মত আমাদের পাশের বাড়ির আম গাছ থেকে আম আনতে গিয়ে ধরা পরে গেছি। পরে মার কাছে বিচার দিয়ে যে মারটাই না খাওয়ালো। তারপরও যেতাম আর তা হলো ঐ যে সব গাছের আম ভালো লাগে না। আর এই গাছের আমটিও ছিল সাদা গোল ধরনের। খেতেও টক মিষ্টি। ধন্যবাদ ভাইয়া। ছোট বেলার সুন্দর স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

এবিবি ফানের আম চুরির অযুহাত এর প্রশ্ন দেখেই মনে হয়েছিলো, আম চুরি নিয়ে অনেকের অনেক স্মৃতি ই রয়েছে। আর আজকেই আপনার আম চুরির ছোটবেলার একটি মজার স্মৃতি পড়তে পারলাম। আসলেই এই স্মৃতি গুলো জীবনের অন্যতম সম্পদ। তবে আপনার এই স্মৃতি পড়ে গাছের উপরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা দুই বন্ধুর জন্য মায়াও লাগছিলো। ধরা পড়ার ভয়ে গাছের উপর গরমে বসেও ছিলো কিন্তু আম খেলেন আপনারা, ওরা ভাগেও পেলো না।

 2 months ago 

ছোটবেলায় আমরাও এরকম কত যে আম চুরি করেছি ভাই, তার কোন হিসাব নেই। আমাদের বাড়ির পাশে একটা বৃদ্ধ দাদু ছিল, তার তিনটে চারটা আম গাছ ছিল, সেই আম গাছ থেকে আমরা প্রচুর আম চুরি করে নিয়ে আসতাম। তবে সব থেকে বেশি অবাক হলাম এটা জেনে যে, আপনারা আপনাদের বন্ধুদের গাছে উঠিয়ে দিয়েই পালিয়ে চলে গেলেন। তারপরে আবার তারা প্রায় তিন ঘন্টা গাছের উপর কি করে বসেছিল, আমি শুধু সেটাই চিন্তা করছি! এর থেকে তো দাদুর হাতের দুটো লাঠির বাড়ি খেলে কষ্ট কম হতো। হা হা হা..😂😂

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 64757.47
ETH 3506.97
USDT 1.00
SBD 2.47