নেশাজাত দ্রব্যের রাজত্ব।

in আমার বাংলা ব্লগ8 days ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


1762060530494782680161269564177.jpg


সোর্স

আমাদের এই বর্তমান সমাজে যুবক-যুবতীরা অনেক বেশি স্মার্ট এবং নিজেকে কূল প্রমাণ করার জন্য কিছু কিছু আচার-আচরণ নিজের মধ্যে আয়ত্ত করার চেষ্টা করে। আর তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকারক এবং খারাপ যে অভ্যাস বা জিনিসটি তারা নিজেদের মধ্যে নিয়ে আসে সেটা হল নেশা। বর্তমান সমাজে দেখা যায় যুবক-যুবতীরা বিভিন্ন কোনায় গিয়ে, রাস্তার পাশে, চায়ের দোকানে বিড়ি সিগারেটের ধোঁয়া টানতে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অজুহাত খোঁজে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য পান করা বা খাওয়ার জন্য। আসলে বর্তমান যুবক-যুবতীরা মনে করে যে এই মাদকদ্রব্য সেবন করলে মানুষ তাদেরকে অনেক বেশি স্মার্ট এবং কূল বলে মনে করে। কিন্তু বর্তমান সমাজে এই যুবক যুবতীরা বুঝতেই পারে না যে তারা প্রতিনিয়ত কতটা ক্ষতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে, প্রতিনিয়ত তারা নিজের শরীরের প্রতি কি ভীষণ অবিচার করে চলেছে তারা যৌবনকালে বুঝতে পারে না। তবে যখন বুঝতে পারে তখন আর করণীয় কিছু থাকে না শুধুমাত্র আফসোস করা ছাড়া। কারন তারা শরীরের প্রতি যেমন অবিচার করছে যৌবনকালে সেই অবিচারের ফলাফল পায় বেশ কয়েক বছর পরে বা বার্ধক্যকালে। বর্তমানে দেখা যায় ছেলে মেয়ে কারোরই ভেদাভেদ নেই এই নেশা দ্রব্য গ্রহণের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন ধরনের নেশা করতে দেখা যায় বর্তমান যুবক-যুবতীদের মধ্যে যেমন ধোয়া জাতীয় নেশা, তরল জাতীয় নেশা আবার শুকনো জাতীয় নেশা কোনোটিই বাঁধ থাকে না। এই বিভিন্ন ধরনের নেশা প্রতিনিয়ত যে তার শরীরের কতটা খানি ক্ষতি করে চলেছে তা তারা জেনেও না জানার মত এক রকম ইচ্ছা করেই শরীরের যেন ক্ষতি করে থাকে।


কারণ প্রতিটা নেশা দ্রব্যের ওপর সুন্দরভাবে ছবি দেওয়া থাকে আবার অনেক জায়গায় লিখে দেওয়া থাকে যে এটি শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর এবং এই নেশাজাত দ্রব্য সেবনের ফলে বিভিন্ন কঠিন রোগ হতে পারে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে তবুও তারা সব ইচ্ছায় এবং আনন্দের সাথে এই নেশা গুলি করে থাকে। এই নেশা যাতো দ্রব্য গ্রহণের ফলে বর্তমান সমাজের মানুষদের শরীর যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমন মূল্যবান সময় ও নষ্ট হচ্ছে। যুবক-যুবতীদের মূল্যবান ক্যারিয়ার গড়ার সময় সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করার সময় গুলি তারা প্রতিনিয়ত নেশা যত দ্রব্য গ্রহণের ফলে নষ্ট করে ফেলছে। বর্তমানে বিভিন্নভাবে দেখা যায় মানুষ এই নেশাজাত দ্রব্যে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। যুবক-যুবতীদের সাথে সাথে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষেরা যেমন প্রাপ্তবয়স্ক এবং একদম কম বয়সী ছেলে-মেয়েরাও অনেক বেশি নেশার আসক্ত হয়ে পড়ছে। প্রথমে নেশা করাটা থাকে সুন্দর কিছু মুহূর্ত তৈরি করার জন্য, তারপর হয়ে ওঠে বিশেষ কোন দিন উদযাপন করার জন্য এরপরে ধীরে ধীরে বিশেষ দিন উদযাপন করা বাড়তে বাড়তে প্রায় দিন থেকে প্রতিদিনের রূপান্তরিত হয় এই নেশা যত দ্রব্য গ্রহণ করা। বর্তমানে দেখা যায় যে কোন অনুষ্ঠান হলেই সেটা একদম সামান্য হোক বা অনেক বড়সড় অনুষ্ঠান হোক, পূজা পার্বণ হোক বা কারোর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, কারোর মৃত্যু হোক বা কারোর জন্মগ্রহণ হোক যেকোনো ধরনের বিশেষ দিন বা বিশেষ অনুষ্ঠান উদযাপনের সব থেকে বড় জিনিস হল যে কোন নেশা এবং মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা।


বিভিন্ন ধরনের নেশা ধূমপান বা মাদকদ্রব্য ছাড়া বর্তমানে যেন কোন বিশেষ দিন উদযাপন করাই যায় না। আর সেই সাথে মন খারাপের দিন বা অনেক খুশির দিন বাদ দিলে তো একদমই চলে না। এই ভাবেই চলতে চলতে বর্তমানে দেখা যায় প্রতিদিনই যেন নেশায় আসক্ত দিন থাকে। বর্তমান পৃথিবীতে যেদিকেই দেখা যায় না কেন নেশা মুক্ত একটিও পরিবার একটিও এলাকা দেখতে পাওয়া যায় না। খুব কমই এমন পরিবার আছে বর্তমান সময়ে যারা নেশা থেকে নিজেকে মুক্ত করে রেখেছে, তবে তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মানুষের সাথে সংগ্রাম করে চলেছে নেশা থেকে দূরে থাকার জন্য। আসলে নেশা আমাদের সমাজের এমন একটি ভাইরাস যা একটি মানুষ থেকে অপর মানুষের ছড়াতেই থাকে আর এই ভাইরাসের কোন অ্যান্টিভাইরাস নেই যার ফলে আমরা আমাদের সমাজটাকে নেশা মুক্ত করে তুলতে পারি। নেশা আমাদের সমাজটাকে প্রতিনিয়ত গিলে ফেলছে এবং আমরা তাকে সাহায্য করে চলেছি। বর্তমান সময়ে দেখা যায় নেশার কারণে কত সংসার নষ্ট হচ্ছে, কত সংসারে ক্ষতি হচ্ছে, এমনকি কত সংসার অনাহারে তলিয়ে পড়ছে। মানুষের সংসার চলুক না চলুক, বাচ্চারা পড়াশোনা করতে পারুক বা না পারুক, দুবেলা দুমুঠো মানুষ খেতে পারুক না পারুক বর্তমানে নেশাটা করা যেন সবার ঊর্ধ্বে জরুরী হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার এমন দেখা যায় যেখানে পরিবারের কর্তা সংসারের দায়িত্ব পালন করার পরিবর্তে সংসারের আরো ক্ষতি করে চলেছে এই নেশার জন্য।


সংসারের প্রয়োজনীয় খরচা না করে বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচা না দিয়ে সেই অর্থ দিয়ে শুধুমাত্র নেশা করে চলেছে। আর এর ফলে যেমন নিজের ক্ষতি করছে তেমনি সংসারের এবং তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনেক বেশি ক্ষতি করে চলেছে। তাই আমাদের সবসময় এই নেশা যত দ্রব্য থেকে দূরত্ব বজায় চলা উচিত এবং নিজের এবং নিজের সংসারের আর প্রিয় মানুষদের ভালো রাখার চেষ্টা করা উচিত। নেশা কখনো কোন মানুষের উপকার করতে পারে না এটা শুধুমাত্র আমাদের জীবনের ক্ষতি ডেকে আনে এটা আমাদের সব সময় মাথায় রেখে চলা উচিত। তাই নেশার রাজত্ব প্রতিনিয়ত ধ্বংস করার চেষ্টায় আমাদের সকলের এগিয়ে আসতে হবে। নেশা জাতীয় বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন করা বন্ধ করে দেওয়া উচিত, নইলে আমরা কখনোই এই নেশা জাতীয় দ্রব্য আমাদের সমাজ থেকে দূর করতে সক্ষম হতে পারব না। আমরা যদি এই নেশা যত দ্রব্য উৎপাদন করা বন্ধ করতে পারি এবং এমন ব্যবস্থা করতে পারি যাতে বা এমন নিয়ম তৈরি করতে পারি যাতে মানুষ নেশা করতে পারবে না আর বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা এই নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকবে। আমাদের প্রতিনিয়ত আমাদের শরীর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার জন্য সমাজকে সচেতন করার চেষ্টা করতে হবে এবং নেশা যে কতটা ক্ষতিকর আমাদের শরীরের জন্য সে ব্যাপারেও প্রত্যেকটা মানুষকে সচেতন করতে হবে তবেই আমরা আমাদের সমাজকে সুন্দরভাবে গঠন করতে পারবো এবং নেশা মুক্ত করতে পারব।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Coin Marketplace

STEEM 0.08
TRX 0.30
JST 0.037
BTC 105876.29
ETH 3568.01
USDT 1.00
SBD 0.55