আমার দিদির ভালোবাসার অনুভূতি।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
সোর্স
প্রত্যেক ছোট বোন বা ভাইদের বড় দিদিরা হয়ে থাকে মায়ের সমান। অর্থাৎ এক প্রকার গার্জিয়ান। আমার দিদিও তেমনি ছোটবেলা থেকেই আমার গার্জিয়ান হিসেবেই সব জায়গায় উপস্থিত ছিল। এমনকি আমার জীবনের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত আমার দিদি গার্জিয়ান হিসেবে নিয়েছে। ছোটবেলায় যখন অনেক বেশি দুষ্টুমি করতাম তখন আমার দিদি আমাকে ভীষণ রকমের মারধর করতো, তখন আমি ভাবতাম যে জীবনে হাজার হাজার পাপ করলে এমন একটা দিদি পাওয়া যায়। ছোটবেলায় বাবা-মার থেকে আমার দিদির শাসনেই আমি বেশি অত্যাচারিত অনুভব করতাম। বড়সড়ো কোন ভুল তো দূরের কথা ছোটখাটো সামান্য কোন ভুল করলেই দিদির হাতে বেধড়প মার খেতে হতো আমার। আমাকে মারার সময় কখনো আমি আমার দিদির মুখে একটুও কষ্ট দেখতে পেতাম না কিন্তু আমি যখন রাতে ঘুমাতাম তখন আমার দিদি আমাকে আদর করত এবং মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিত। দিদি যখন আমার ঘুমানোর পর আমাকে আদর করত হঠাৎ করে কোন কোন দিন আমার ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে আমি টের পেতাম। কিন্তু এই ব্যাপারটা আমি কখনো আমার দিদিকে বলিনি আবার বুঝতেও দিইনি যে আমি ঘুমানোর পরে যে দিদি আমাকে আদর করেছে সেই সময় আমার ঘুম ভেঙে গেছিল।
তবে তখন ছোটবেলায় খুব রাগ হত দিদির পরে যে, "আমাকে মেরে এখন এসেছে আদর করতে" এই কথাটি ভেবে। ছোট ছিলাম তাই তখন অনেক কিছুই বুঝতাম না তবে এখন বুঝি যে তখনকার শাসনটা কতটা আমার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। ধীরে ধীরে বড় হবার পর দিদির সাথে আমার বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। আসলে যখন একটু বড় হয়েছি তখন ভুল কাজ করা বা ঘরের কাজে সাহায্য না করা এইসব একটু কমিয়ে দেওয়ার কারনে এবং সবকিছু বুঝতে পারার কারণে দিদির সাথে একটু বোঝাবুঝি ভালোই হতো, যার ফলে এই দিদির সাথে বন্ধুর সম্পর্কটা তৈরি হয়েছিল। তবে দিদির বিয়ের এবং আমার বিয়ের পরেও কোন ভুল করলে বকা দিতে এখনো পর্যন্ত ছাড়ে না। বিয়ের পরে এখন যখনই আমার কাছে আসে ঘুরতে তখনই কিছু না কিছু আমার জন্য খাবার বানিয়ে নিয়ে আসে আর সবথেকে বেশি চেষ্টা করে আমি যে জিনিসটা পছন্দ করি আর সাথে কিছু নতুনত্ব খাবার রান্না করে নিয়ে আসার। আসলে বড় দিদিরা কখনোই মুখ ফুটে বলে না যে তারা আমাদের ভালোবাসে, বড় দাদা বা দিদিদের ভালোবাসা তাদের আচরণ এই পরিষ্কার বোঝা যায়। যখনই দিদি আমার কাছে ঘুরতে আসে তখন যেমন অনেক পদের খাবার তৈরি করে নিয়ে আসে তেমনি আমি যখন দিদির বাড়িতে যাই তখনো বিভিন্ন পদের রান্না করে রাখে যেন আমাকে খাওয়াতে পারে।
কয়েকদিন আগে আমার দিদি এসেছিল আমাদের সাথে দেখা করতে এবং সারাদিন আমাদের সাথে সময় কাটাতে। দিদি আমাকে আগে থেকেই বলে দিয়েছিল যে আমি আসার আগেই সব রান্না করে রাখবে দরকার হলে আগের দিন কাজ সব গুছিয়ে রাখবি যেন আমি আসার পরে আমাকে সময় দিতে পারিস এবং আমরা একটু বসে গল্প করতে পারি। কিন্তু দিদি আসার পর যখন দেখল যে আমি সেই রান্না করছিলাম এবং দিদি আসার আগে আমার রান্না সব কমপ্লিট হয়নি। তখন এসেই আগে পুরনো অভ্যাস মত বকা দিয়ে নিল। তারপরই দেখলাম প্রতিবারের মতো এবারও অনেক রকমের খাবার তৈরি করে এনেছে আর সাথে রয়েছে কিছু সবজি। আমি শাকসবজি খেতে অনেক বেশি পছন্দ করি তাই দিদি যখনই আসে অথবা জামাইবাবু যখন আসে তখন জামাইবাবুর হাত দিয়েও পাঠিয়ে দেয়। সত্যি কথা বলতে নিজে যতই ভালো ভালো রান্না করে খাই না কেন দিদির হাতের রান্না খাবার খেতে ভীষণ ভালো লাগে। আসলে সব ভাই গুলো সম্পর্ক সমান হয় না, কিছু কিছু সম্পর্ক থাকে যা স্বার্থে ঢেকে যায় আবার কিছু কিছু সম্পর্ক থাকে যেখানে কোন স্বার্থ বাসা বাঁধতে পারে না। আমার যদি আমাকে বলতে গেলে নিজের হাতেই মানুষ করেছে সেই জন্য হয়তো আমাদের দুজনের মধ্যে স্বার্থ বাসা ভাবতে পারে না।
কিছু কিছু ভাই বলার সম্পর্ক আছে বিয়ের পরে দুর্বল হয়ে পড়ে তবে আমাদের মধ্যে যেন সম্পর্ক বিয়ের পরে আরো শক্ত এবং মজবুত হয়েছে। আমার দিদি যেমন আমাকে তার মনের সব কথা শেয়ার করে মন হালকা করে থাকে তেমন আমিও আমার দিদিকে কোন কথা না বলে যেন থাকতেই পারি না। জীবনে এমন বড় দাদা বা দিদি থাকা খুবই প্রয়োজন যাকে মনের কথা খুলে বলা যাবে নির্দ্বিধায়। কারণ একসময় আমাদের কাছ থেকে আমাদের মা-বাবা দূরে চলে যায়। তাদেরকে আমরা আর আমাদের অসময়ে পাবোনা বা মনের কথা বলতে পারব না। কিন্তু আমাদের যদি একটা বড় দাদা বা দিদি থাকে তাহলে আমরা সারা জীবন মা-বাবার অভাবটা কিছুটা সেই দাদা বা দিদিকে দিয়ে পূরণ করতে পারব এবং মনের কথা শেয়ার করতে পারব। যাদের এমন দাদা বা দিদি থাকে এবং সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে গন্ডগোল বা কোন স্বার্থ বা কোন লাভ লোকসানের চিন্তা থাকে না এবং নির্দ্বিধায় মন খুলে তার দাদাবাদীদের সাথে কথা বলতে পারে এবং মিশতে পারে তারা সত্যিই অনেক বেশি ভাগ্যবান।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।