বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তাহীনতা।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
আমাদের জন্মের পর থেকেই হয়ে যায় জীবনের বিভিন্ন ধাপ। শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য এই চারটি ধাপে বিভক্ত রয়েছে আমাদের জীবন। আর আমাদের এই জীবনের ধাপ গুলিতে আমাদের চিন্তাভাবনা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। শৈশবের সময় আমাদের চিন্তা ভাবনা থাকে একদম নিষ্পাপ, সব সরল মনের মানুষ হয়ে থাকে আমরা এবং মা-বাবার উপরে নির্ভরশীল থাকি কিন্তু অনেক বেশি নিরাপত্তাহীনতায় এবং ভয়ে ভয়ে আমাদের শৈশবটা পার হয়ে থাকে। কারণ যদি আমরা একটু ভুল করে বসি তাহলে কঠোর শাস্তি পাব বড়দের কাছ থেকে। কৈশোর এবং যৌবনকালে থাকে আমাদের একদম ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা এবং চলাফেরা। এই দুটি ধাপে আমরা যেমন একটু আলাদাভাবে চিন্তাভাবনা করি তেমন আমাদের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি কৌতূহল অনেক বেশি বেড়ে যায়। তবে এই যৌবনে এসে আমাদের বাবা-মায়ের সাথে অনেকটাই মনোমালিন্য দেখা দেয় এবং আমাদের মনে হয় যে তারা আমাদের কোনোভাবেই বোঝেনা, আমাদের মেন্টালিটির সাথে আমাদের বাবা-মার কোনভাবেই খাপ খায় না এবং তারা আমাদের ভালবাসে না যার ফলে আমাদের সুখ শান্তি তাদের সহ্য হয় না। জীবনের এই ধাপে নির্দিষ্টের বয়স পর্যন্ত এমন চিন্তা-ভাবনা থাকলেও পরবর্তীতে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের জীবনে আমাদের বাবা-মায়ের অবদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের বাবা মা যে একমাত্র আমাদের আপন এবং আমাদের ভালো চায় আর বাকিরা সকলেই সার্থক খোঁজে সেটা আমরা এই যৌবনের পরবর্তী সময় থেকে ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করি। তবে জীবনের সবথেকে কঠিনতম সময় আমার মনে হয় বৃদ্ধ বয়স অর্থাৎ বার্ধক্যের সময়কাল। আমরা সাধারণত ৬০ বছরের পরের সময়কেই বার্ধক্য সময় বলে থাকি। আর এইবার যোগ্য সময় চলে ষাট বছর থেকে একদম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এই সময়টা জীবনের সবথেকে কঠিন সময়। তবে এই কঠিন সময় শুধুমাত্র যে বার্ধক্যে থাকা সেই ব্যক্তিটির জন্য এমনটা কিন্তু নয়। বার্ধক্য বয়সে সেই ব্যক্তি যেমন কঠিন সময়ের মধ্যে থাকে তেমনি সে বৃদ্ধ মানুষের পরিবারের লোকজনও অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। বার্ধক্য বয়সে মানুষের চিন্তা ভাবনা থাকে তার জীবনের পূর্ব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ সারা জীবন মানুষটি যেমন ভাবে নিজের জীবন যাপন করেছে এবং যেমন তার অভিজ্ঞতা হয়েছে তেমনি তার চিন্তাভাবনা হয়ে থাকে বৃদ্ধ বয়সে। তবে বৃদ্ধ বয়সে যে কোন মানুষের নিরাপত্তা হীনতা ১০০% লক্ষ্য করা যায়। বৃদ্ধ বয়সে আসা মানেই প্রত্যেকটি ব্যক্তি মনে করে যে তাদের আর প্রয়োজন নেই তাদের এই সংসারে। বৃদ্ধ বয়সে আসা ব্যক্তিটি সবসময় নিজেকে পরিবারের বোঝা বলে মনে করে থাকে।
যার ফলে এই বয়সে মানুষ এমন এমন কিছু কর্মকাণ্ড করে বসে যা পরিবারের জন্য খুবই অসুবিধা জনক হয়ে থাকে। বৃদ্ধ বয়সে এসে মানুষেরা নিজেকে বোঝা বলে মনে করে এবং তাদের সব সময় বলতে শোনা যায় যে তারা মারা গেলেই যেন বেঁচে যায়। তবে এই বয়সে এসে বেঁচে থাকার একটা চাহিদা এবং আশা সব সময় লক্ষ্য করা যায়। এই বয়সে মানুষদের উল্টোপাল্টা আচরণ এবং কাজকর্ম করতে দেখা যায় যার ফলে পরিবারের মানুষদের একটু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। পরিবারের মানুষদের নিজের শত্রু মনে করা, পরিবেশ পরিস্থিতি বা সমস্যা না বুঝে উল্টোপাল্টা কথা বলা এইসব এই বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা যায়। আসলে এই বার্ধক্য বয়সে মানুষ হয়ে যায় পুরো নবজাত শিশুর মত অবুঝ, কিন্তু এই বয়সে মানুষেরা বুঝতেই চায় না যে তারা পরিবারের মানুষকে ভুল বুঝছে বা বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কে ভুল মনে করছে। এই বার্ধক্য বয়সে এসে মানুষেরা মনে করে যে তাদের এখনো শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষমতা রয়েছে বিভিন্ন কাজ করার। বার্ধক্য বয়সে এসে যে তাদের দ্বারা বর্তমানে ভুল হতে পারে সেটা যেন তারা বিশ্বাস করতে চায়না। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উল্টোপাল্টা কথা বলতে দেখা যায় অথচ মেনে নিতে একদমই চায়না যে তাদের দ্বারা ভুল হয়েছে বা ভুল হতে পারে।
বৃদ্ধ বয়সে এসে মানুষ মনে করে যে তারা সারা জীবন অনেক কর্ম করেছে, অনেক পরিস্থিতি সুন্দরভাবে মানিয়ে নিয়েছে আর কঠোর পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে এবং শারীরিকভাবে অনেক পরিশ্রম করেছে যার ফলে বর্তমানে তারা করতে পারবে। বৃদ্ধ বয়সে এসে মানুষ প্রচুর পরিমাণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে কারণ তারা মনে করে যে তাদেরকে কেউ আর আগের মতো ভালোবাসে না বা আগের মত গুরুত্ব দেয় না। শারীরিকভাবেও অনেক সময় বৃদ্ধা বয়সে এসে মানুষ যেহেতু অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে তাই তারা মনে করে তারা যেহেতু শারীরিকভাবেও কোন পরিশ্রম বা কোন কর্ম করতে পারে না তাই তারা অন্যদের কাছে গুরুত্বহীন। বৃদ্ধ বয়সে এসে যেহেতু তারা একটু ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে যার ফলে তাদের সব কথা মেনে নেওয়া যায় না , আর এই কারণেই তারা অনেক বেশি মনে করে যে পরিবারে তাদের গুরুত্ব একদমই দেওয়া হচ্ছে না এবং সবাই অনেক বেশি স্বেচ্ছাচারী এবং স্বনির্ভর হয়ে গেছে যার ফলে তাকে আর প্রয়োজন নেই এবং তার কোন মতামতের গুরুত্ব নেই। আসলে যে বাড়িতে এই বার্ধক্য সময়ের ব্যক্তি থাকে সেই পরিবারের মানুষই একমাত্র বুঝতে পারবে বা জানবে এই বার্ধক্যে থাকা মানুষকে বোঝানো বা মানে গুছিয়ে নিয়ে চলা কতটা কঠিন। আসলে বৃদ্ধ বয়সে মানুষ যেহেতু ছোট শিশুর মত হয়ে যায় কিন্তু ছোট শিশুদের মত তাকে মারধর করে বা বকাঝকা করে বোঝানো যায় না, যার ফলে পুরোই ভিন্নভাবে মাথা ঠান্ডা করে ধৈর্য ধরে বৃদ্ধ মানুষদের বুঝতে হয় এবং বোঝাতে হয়।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

