"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ || শেয়ার করো তোমার স্কুল জীবনের কোন তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি।
কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই ? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে আমিও খুব ভালো আছি।
তবে কেন যানি আমার আজ খুব ভালো লাগছে যে, এত বড়ো একটা প্লাটফর্মে এই প্রথম বার কোনো প্রতিযোগিতায় আমি অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। তো আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে।
আজ আমি আমার স্কুল জীবনের এমন একটি ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো যা আগে আমি কখনো কারো সাথে শেয়ার করিনি। এই ঘটনাটিতে যেমন আছে কষ্ট তেমন আছে মজা। তো কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আমার সেই শৈশব কালের স্কুল ঘটনাটিতে।
টিফিনের সময় দুই বান্ধবী হাঁটতে হাঁটতে একটু গল্প করছে।
ক্যামেরা :- Nikon D5200
লেন্স :- 50 mm
তারিখ :-27/08/2021
সময় :- 09:55 AM
লোকেশন :-বাদুড়িয়া , উত্তর ২৪ পরগনা , ভারত।
তখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি। তো সবাই বুঝতেই পারছো যে সামনে আমার মাধ্যমিক পরীক্ষা। আর আমার বাড়ি থেকে স্কুল এর দূরত্ব অনেক।
সাইকেলের সাথে জড়িয়ে আছে শৈশবের অনেক স্মৃতি।
ক্যামেরা :- Nikon D5200
লেন্স :- 50 mm
তারিখ :-19/09/2022
সময় :- 11:20 AM
লোকেশন :-বিরাটি , উত্তর ২৪ পরগনা , ভারত।
আর আমি যে স্কুল এ পড়তাম সেই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন আমার বাবার কাকা অর্থাৎ সম্পর্কে সে আমার দাদা হয়। তো বুঝতেই পারছো যে, অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে আমায় একটু বেশি সাবধানে থাকতে হতো।
ক্লাসে কোনো পড়া না পারলে স্যাররা দাদার কাছে গিয়ে নালিশ করতো আর দাদা বাড়ি গিয়ে সোজা মা-বাবার কাছে নালিশ। তো এক দিকে পড়া না পারলে স্যারদের কাছে ধোলাই আর বাড়ি গিয়ে মা-বাবার কাছে ধোলাই। মহা মুস্কিলে ছিলাম আমি তখন।
স্কুলের মধ্যে আমার দাদাও ছিলেন খুব রাগী একজন শিক্ষক। দাদা আমাদের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়টি পড়াতেন। কোনো একটা পড়ার ওপর তিনি মারের পরিমান নির্ধারণ করে দিতেন। অর্থাৎ ১০ টা বেতের মার অথবা ২০ তা বেতের মার। কেউ যদি ১০ টা বেতের মার একসাথে নিতে না পারতো তবে তিনি মার সুদে লাগাতে অর্থাৎ আজ যদি কেউ ৫ টা বেতের মার খেতে পারে তবে পরের দিন তাকে ৬ টা বেতের মার খেতে হবে। ওই অতিরিক্ত ১ টি বেতের মার হলো এক দিনের সুদ। তো বুঝতেই পারছেন সবাই কি রকম চাপে থাকতাম আমি।
স্কুল থেকে ফিরে মায়ের কোল থেকে জোর করে ভাইকে নেয়া।
ক্যামেরা :- Nikon D5200
লেন্স :- 50 mm
তারিখ :-15/08/2021
সময় :- 09:55 AM
লোকেশন :-দত্তপুকুর , উত্তর ২৪ পরগনা , ভারত।
আমি। তো আমাদের ক্লাস এর সকল ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক এবং শিক্ষকরা মাইল সিদ্ধান্ত নিলেন যে, দশম শ্রেণীর সব ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল হোস্টেলে থাকতে হবে। তো সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা প্রায় এক বছর স্কুল হোস্টেলে ছিলাম।
সবাই মিলে হোস্টেলে থাকবো আর দুস্টুমি করবো না এটা কি কখনো হয় ? যাই হোক একদিন লেবু চুরি , একদিন পেয়ারা চুরি এসব চলতেই থাকতো।
আমাদের ক্লাসের ভিতর দুটো গ্রুপ ছিল। একদল ছিল একটু শান্ত প্রকৃতির, আর একদল ছিল দুরন্ত প্রকৃতির। আমি কিন্তু দুই দলেরই হেড ছিলাম। কারণ ওই যে বললাম, আমার দাদা ছিলেন স্কুল এর সহকারী প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষক। কিন্তু যাই হোক পড়াশুনায়ও আমি খারাপ ছিলাম না। মাধ্যমিক পরীক্ষায় আমি কিন্তু স্কুল এর ভিতর প্রথম হয়েছিলাম।
ভাইয়ের প্রতি দিদির আদর।
ক্যামেরা :- Nikon D5200
লেন্স :- 50 mm
তারিখ :-15/08/2021
সময় :- 09:55 AM
লোকেশন :-দত্তপুকুর , উত্তর ২৪ পরগনা , ভারত।
তো মেইন ঘটনায় আশা যাক। একদিন আমি স্কুল হোস্টেল থেকে বাড়ি গিয়েছিলাম এক রাতের জন্য। তো ওই দিন রাতে হোস্টেলে কয়েকজন বন্ধু মিলে রাতে স্কুলের নারকেল গাছ থেকে নারকেল চুরি করেছিল।
তো পরের দিন সকালে আমি আবার হোস্টেলে ফিরলাম। তো ওই দিন কোনো এক কারণে ক্লাসের দুই গ্রূপের ভিতর একটু গ্যাঞ্জাম হলো এবং এক বন্ধু নাম হলো অনুজ অন্য এক বন্ধু সাদ্দামকে গিয়ে চড় মারলো। পরে গ্যাঞ্জাম মিটে গেলেও ওই দিন বিকালে সাদ্দাম গিয়ে স্যারকে গত রাতের চুরির ঘটনা সব বলে দিলো। কারণ গত রাতের চুরির লিডার ছিল এই অনুজ।
কিন্তু এই অনুজ ছিল খুব গরিব পরিবারের সন্তান। যাই হোক রাতে এই অনুজের মা-বাবাকে ডাকা হলো। অনুজ খুব ভয়ে ছিল কারণ তার মা-বাবা যদি এই ঘটনা জানতে পারে তবে তাকে আর পড়াশুনা না করিয়ে জমির কাজে লাগিয়ে দেবে। তাই ভয়ে সে আমার কাছে খুব কান্নাকাটি করতে লাগলো। যাইহোক রাতে শিক্ষকের রুমে সবাইকে ডাকা হলো। স্যার চুরির ঘটনা জানতে চাইলে হঠাৎ করে অনুজ বললো যে ,আমি চুরি করি নি। চুরি করেছে নিলয়।
আমি তখন হতবাক এবং চুপ করে রইলাম। কারণ চুরির রাতে আমি তো হোস্টেলেই ছিলাম না। তখন পাশ থেকে সাদ্দাম বললো যে, স্যার নিলয় চুরি করে নি। তখন আমি ভাবতে লাগলাম যে , আমি যদি বলি অনুজ চুরি করেছে তাহলে স্যার তো ওকে মারবেই অন্যথায় ওর মা-বাবা ওকে আর পড়াশুনাও করাবে না। অনেক ভেবে তখন আমি স্যার কে বললাম যে , স্যার গত রাতে আমিই চুরি করেছি।
তখন স্যার এসে আমার পিছনে বেতের লাঠি দিয়ে ধোলাই শুরু করে দিলো। মার খাবার পর সবাই আবার পড়তে বসলাম। কিছুক্ষন পর সাদ্দাম এসে আমায় বললো ,তুই কেন বিনা অপরাধে মার খেতে গেলি ? তারপর অনুজের ব্যাপারের সব ঘটনা সাদ্দামকে খুলে বললাম। সাদ্দামেরও মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমাদের কথা শেষ হতে না হতেই অনুজ এসে আমার কাছে ক্ষমা ক্ষমা চাইলো। কারন সে ভয়ে আমার নাম বলে ফেলেছে। যাই হোক আমি অনুজকে ক্ষমা করে দিলাম।
তারপর থেকে ক্লাস এর সবাই কেন যানি আমায় একটু বেশিই ভালোবাসতে শুরু করলো। পরের দিন আমার মা-বাবাকে ডাকা হলো। আমি মা-বাবাকে সব ঘটনা খুলে বললাম। পরে স্কুলের সব স্যাররাও আসল ঘটনা জানতে পারলো। কিন্তু আমার সেই রাতে স্যারের মারগুলো খুব লেগেছিলো। অনেক জোরে মেরেছিলেন স্যার। আর সেই দিন রাতের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। অনাকাংঙ্খিত ভাবে ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার জীবনে। যাই হোক সে বছর অনুজ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করেছিল। পরের বছর নাকি আবার পরীক্ষা দিয়েছিলো। পাস করেছিল কিনা তা আর জানতে পারিনি।
তো এটাই হলো আমার স্কুল জীবনে অনাকাংঙ্খিত ভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। আজও মনে পরে সেই সব বন্ধুদের কথা। কারো কারো সাথে দেখা হলেও অধিকাংশদের সাথে আর দেখা হয় না।
কেমন লাগলো ঘটনাটি ? ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। সবাই ভালো থাকবেন , সুস্থ থাকবেন।
সত্যি ভাইয়া মানুষের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে যায় যা বলার অপেক্ষা রাখে না।আসলে আপনি ঠিক করেছেন, হয়তো সেদিন রাতে স্যারের মার আপনার লেগেছিল কিন্তু অনুজের অনেক উপকার হয়েছে। কারণ সে গরীব ঘরের সন্তান, তার বাবা-মা জানতে পারলে তাকে জমির কাজে লাগিয়ে দেবে।মানুষকে সহযোগিতা করাই মানুষের কাজ।তবে সাদ্দামের স্যারের কাছে বলাটা ঠিক হয়নি। অনেক ভালো লাগল আপনার স্কুল জীবনের গল্পটি পড়ে।
ধন্যবাদ আপনাকে
সত্যি ভাইয়া আপনি তো বন্ধুত্বের অনেক মহৎ একটি কাজ করেছেন। আসলে আপনার বন্ধু অনুজ চুরি করার লিডার হওয়া সত্বেও ভয়ে আপনার নাম বলে দিয়েছিল। আসলে ওর বাবা-মা এরপর ওকে আর পড়ালেখা করাবে না এটা জেনে আপনিও সেই কথায় হ্যাঁ বলে দিলেন। এর জন্য স্যারের মাইর খেয়েছেন। আসলেই আপনি অনেক মহৎ একটি কাজ করলেন। আপনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছেন এটা জেনে আরো ভালো লাগবে। অনেক সুন্দর একটা বিষয় তুলে ধরেছেন।
ধন্যবাদ আপু
এমন বন্ধু পাওয়া সত্যি ভাগ্যের বিষয়। বন্ধুর লেখাপড়া চালিয়ে যাবার জন্য আপনি বন্ধুর দোষ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এটা জেনে আমি সত্যিই অনেক খুশি হলাম। খুব জানতে ইচ্ছে করছে আপনার সেই বন্ধুটি বর্তমানে কেমন আছে। যদি কোন সময় আপনার সেই বন্ধুদের সাথে দেখা হয় তাহলে কেমন আছে সেটা জেনে আমাকে জানাবেন ভাইয়া।
অবশ্যই জানাবো। কিন্তু ওর পরিবার যে কোথায় চলে গেছে তা আমার কোনো বন্ধুর জানা নেই।
আপনার স্কুল জীবনের তিক্ত ঘটনাটি অনেক সুন্দর লেগেছে আমার কাছে। আপনি বন্ধু অনুজের উপকার করতে ভোলেননি। পরের দোষের বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেকে বীর পুরুষ বানিয়ে ফেলেছিলেন নিজের অজান্তেই। শুভকামনা রইল দাদা।
ধন্যবাদ দাদা