আমরা কি সত্যিই সামাজিক জীব ?

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই ? আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে আমিও খুব ভালো আছি। আসলে আজ সমাজ সম্পর্কে আমার কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আশাকরি আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


image.png

সোর্স


আমরা সবাই ছোটবেলা থেকেই বইয়ের পাতায় পড়েছি যে, মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ এক মুহূর্ত চলতে পারে না। প্রাচীনকালে মানুষ দলবদ্ধভাবে বসবাস করত এবং এই দলবদ্ধভাবে বসবাস করার ফলে তারা আলাদা আলাদা সমাজ গড়ে তুলত। এছাড়াও বিভিন্ন দুর্যোগের হাত থেকে অথবা কোন হিংস্র প্রাণীর হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা সব সময় দলবদ্ধ ভাবে বসবাস করত। এছাড়াও প্রাচীন কালে মানুষ একে অন্যের সহযোগিতায় সবসময় এগিয়ে আসতো।


তারা কখনো আলাদাভাবে বসবাস করত না। কারণ তারা তখন জানতো যে, সবাই একসাথে থাকলে কোনরকম বিপদ আপদ তাদের কাছে আসতে পারবে না। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড তারা একসাথে সম্পন্ন করতো। প্রাচীনকালে বর্তমান সময়ের মতো এত আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না। তখন ছোট ছোট কাজ মানুষের কাছে অনেক শক্ত হয়ে দাঁড়াতো। বর্তমান সময়ে একটা কাজ করতে যতটা কম সময় লাগে কিন্তু প্রাচীনকালের এই একই কাজ করতে মানুষের বছর বছর সময় লাগতো।


কারণ তখনকার মানুষের ভিতরে শিক্ষার অভাব খুব বেশি ছিল। তাই তারা কোন কাজ করতে হলে সবাই মিলে হাতে হাত লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের কঠিন কাজ তারা সম্পন্ন করত। যদিও তাদের একটু বেশি সময় লাগতো। কিন্তু তাও তারা কঠোর পরিশ্রম করে সেই কাজটি খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতো। প্রাচীনকালের বিভিন্ন নিদর্শন দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে মানুষ কতটা কষ্ট করে এই সব নিদর্শন তৈরি করেছে।


আপনারা একটা কথা ভাবুন তো। এই যে যেসব বড় বড় পিরামিড রয়েছে এসব পিরামিড কিন্তু বড় বড় পাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি হয়েছে। আর তখনকার সময়ে এইসব ভারি ভারি পাথর তোলা জন্য কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না। কিন্তু তাও মানুষ তার বুদ্ধির সাহায্যে এসব কঠিন কাজ তারা সম্পূর্ণ করেছে বহু বছর ধরে এবং কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও এসব পিরামিডের কোন ক্ষতি এখন পর্যন্ত করতে পারেনি।


এছাড়াও পূর্বের সমাজব্যবস্থা ছিল খুবই সুশৃংখল। মানুষ তখন তার সমাজের স্বীকৃত আইন মেনে চলতো। কোন ব্যক্তিই সমাজ বহির্ভূত কোন কর্মকান্ডে লিপ্ত হতো না। এছাড়া কোন ব্যক্তি যদি সমাজ বহির্ভূত কোন কর্মকান্ডে লিপ্ত হতো তাহলে সমাজের পক্ষ থেকে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো। আর এই ভয়ে মানুষ সব সময় সমাজের তালে চলত। তখন বর্তমান সময়ের মতো এতো অরাজগতা ছিল না।


কিন্তু বর্তমান সময় আমরা দেখতে পাই যে সমাজ কাঠামো দিন দিন ভেঙে পড়েছে। আগের সেই বইয়ের কথা রাত লাইনটি বর্তমান সমাজে চলে না। এখন আর মানুষ সামাজিক জীব নেই। এখন হলো মানুষ ব্যক্তিগত জীব। অর্থাৎ এই ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের যেটি পছন্দ হয় মানুষ সেইসব কর্মকাণ্ড করে। তারা কখনো সমাজের সেই নিয়ম-কানুন মেনে চলে না।


আর এসব কর্মকান্ডের জন্য সমাজ ব্যবস্থা আর আগের মত নেই। সমাজের কোন মানুষকে আর কেউ সম্মান করে না এবং তাদের সৃষ্ট আইনকে কেউ মানে না। ফলে বর্তমান সমাজে দেখা যায় বিভিন্ন অরাজকতা। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অসাধু কার্যকলাপ চলে এই সমাজে। কোন ব্যক্তিকেই বর্তমান সময়ে কেউ সম্মান করে না।


আগেকার সময়ে মানুষ মানুষকে ভালবাসতো এবং সম্মান করতো। বিশেষ করে ছোটরা বড়দের দেখলে তাদের সবসময় সম্মান করতো এবং শ্রদ্ধা করত। একই রকম বড় ব্যক্তিরা ছোটদের আদর করতো এবং কোন অসাধু কার্যকলাপে লিপ্ত হলে সেই সব ব্যক্তিরা তাদের শাসন করতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে আপনি যদি কোন একজন ব্যক্তির সন্তানকে শাসন করেন তাহলে আপনি পরে ঠিক বুঝতে পারবেন এই শাসন করার ফলাফল।


বর্তমান সময়ে আপনি অন্যের বাচ্চাকে আদর করতে পারবেন, ভালবাসতে পারবেন কিন্তু তাদের শাসন করতে পারবেন না। কোনটা নেয় আর কোনটা ঠিক এসব বিষয়েও আপনি তাদের শিক্ষা দিতে পারবেন না। আর এর ফলে সব সন্তানরা বিভিন্ন খারাপ কর্মকান্ডে প্রতিদিন লিপ্ত হচ্ছে।


এছাড়াও আগেরকার সময় ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের খুব বেশি সম্মান করতো। কোন শিক্ষক যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতেন তাহলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সম্মান করতো। এছাড়াও শিক্ষক তার ছাত্রদের খুবই ভালোবাসতেন এবং তাদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে থাকতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে ছাত্ররা শিক্ষকদের সম্মান করা একদম ভুলে গেছেন। বর্তমান সময়ে শিক্ষক এবং ছাত্রের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু আমার মনে হয় শিক্ষক একজন শ্রদ্ধার পাত্র। শিক্ষক যদি ছাত্রের বন্ধু হয় তাহলে সে বন্ধুত্বের শ্রদ্ধা মনে হয় অনেকটাই উঠে যায়।


এছাড়াও শিক্ষক যদি তার ছাত্রদের পড়াশুনা না করে আসার জন্য মারধর করতেন তাহলে ওই ছাত্রের অভিভাবকরা কখনোই জিজ্ঞাসা করতে আসতো না যে, আপনি কেন আমার সন্তানকে মেরেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে কোন ছাত্রের গায়ে যদি কোন শিক্ষক হাত তোলেন তাহলে সেই শিক্ষকের কিন্তু খবর আছে। আসলে সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে যাওয়ার ফলে বর্তমানে এসব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।


এছাড়াও বর্তমান সময়ে আরো দেখতে পারি যে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা জাত পদার্থ গ্রহণ করে এবং আপনি যদি তাদের কিছু বলেন তাহলে উল্টো আপনাকে তারা গালাগালি করবে। কিন্তু আগেরকার সময় কোন অল্প বয়স্ক ছেলের এতোটুকু সাহস হতো না যে তারা রাস্তায় বসে বিভিন্ন ধরনের নেশা জাত দ্রব্য গ্রহণ করবে। কারণ সবসময় তাদের নিজেদের অভিভাবকরা তাদের শাসন করতো না। সমাজের প্রতিটা ব্যক্তি তাদের শাসন করতো এবং তাদের সঠিক পথ দেখাতো।


এছাড়াও আগেরকার সমাজে যদি কোন অন্যায় কাজকর্ম সম্পন্ন হতো তাহলে তখনকার সময়ে সমাজের লোকেরা এক জায়গায় বসে সেই সমস্যার সমাধান করতেন। কারণ আগেরকার সময়ে সমাজে বসবাসকারী সকল লোকেরাই নিজেদের একটা পরিবার হিসেবে গ্রহণ করতেন। তাই পরিবারের লোকের মতো তারা সব সময় সবার ভালো চাইতেন।


কিন্তু এখন যদি কেউ কোনো খারাপ কর্ম করে থাকে তাহলে সমাজের লোকেরা আর তার সেই কাজটিকে ধরিয়ে দিতে আসে না। কারণ তারা সমাজকে আর মানে না। তাড়াতাড়ি ইচ্ছামত যা খুশি করতে পারে। এছাড়া সমাজের কোন ব্যক্তি যদি এসব খারাপ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাহলে সবাই তাকে ঘৃণা করে।


এছাড়া একটা কথা তো সবাই বলে যে, আমি আমার মা বাবার দেওয়া ভাত খাই, কারো বাড়িতে গিয়ে ভাত খাই না তাই অন্যের কথা আমি আর শুনতে রাজি নই। এই কথাটি বলার ফলে আপনার অন্য সকলের প্রতি ভালোবাসা অনেকটাই উঠে আসবে। আগেরকার মানুষগুলোর ভিতরে নম্রতা, ভদ্রতা এইসব গুণাবল ছিল। কিন্তু বর্তমানে নম্রতা, ভদ্রতা শুধু ছেলেমেয়ের নামই রাখা হয়। কাজের কিছুই হয় না।


এখনো কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় যে মানুষ সমাজের প্রতিটা আচার অনুষ্ঠান সঠিকভাবে পালন করে এবং সমাজের বহির্ভূত কোন কাজে তারা অংশগ্রহণ করেনা। তাদের সমাজ এখনো খুব সুন্দর ভাবে চালিত হয়। এসব সমাজ দেখে আমাদের অবশ্যই শিক্ষা নেয়া উচিত। আমার মনে হয় যেখানে সমাজ ব্যবস্থা সঠিকভাবে চালানো হয় না সেখানে কোন ধরনের উন্নতি সম্পন্ন হয় না।


একটা সমাজই একজন ব্যক্তিকে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষিত করতে পারে। অনেক কম লোক আছে যারা খারাপ সমাজ থেকে অনেক ভালো জায়গায় পৌঁছেছে। আর বেশিরভাগ ভালো লোকই ভালো সমাজ থেকে উঠে এসেছে। তাই বর্তমানে আধুনিকতার থেকে বের হয়ে আমাদের পূর্বের ন্যায় সমাজ ব্যবস্থা গঠন করতে হবে এবং সমাজের সৃষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।



আশাকরি আজকের এই পোস্টটি আপনাদের খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করতে অবশ্যই ভুলবেন না।



সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।



11-20-04-359_512.gif

ধন্যবাদ সবাইকে।

2XmsB3ZF6jJG7218A8ghgBmbB3W4Hm94fHM8vdisDLD4EuDS1mKCnUwr2WPdiRhWod2Rf2CCtBiK8N3pspzqnCWafFzVigrzmtsxCskMPdzGxv6X2qA4C6XCzVtoT7DrPdhaLQmVXDtTsoDBnDnkqY1H7mbiRmNAo6VRbcH65Ky8sUcB6iD2CGuEkfhUpCrHvemi76oe4F.gif

IMG_20210107_075142 (2).jpg

আমার নাম নিলয় মজুমদার। আমি একজন কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র। আমার মাতৃভাষা হলো বাংলা। কিন্তু আমার রাষ্ট্রীয় ভাষা হলো হিন্দী। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি। আমি একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। নতুন নতুন জিনিস তৈরী করতে আমি খুব ভালোবাসি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 67059.35
ETH 2672.35
USDT 1.00
SBD 2.72