শিক্ষা ব্যবস্থা।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই ? আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে আমিও খুব ভালো আছি। আসলে আজ শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আশাকরি আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


image.png

সোর্স


আমরা জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। তাই প্রতিটা উন্নত দেশের উন্নতির পিছনে তাদের শিক্ষার ভূমিকা অনেক বেশি। আসলে আমি অন্যান্য কোন দেশের কথা বলছি না। আমি আমাদের নিজেদের দেশের কথা বলতে যাচ্ছি। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কি সত্যিই সঠিক?


আসলে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে একটা সন্তান জন্মগ্রহণের পর পরই সে দেশ সরকার সেই ছোট্ট শিশুদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। অর্থাৎ ওই শিশুটির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ফ্রি করে রাখে। নির্দিষ্ট বয়সের সময় সরকার ওই ব্যক্তির জন্য কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে থাকে।


আর আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক ধরনের ঘাটতি রয়েছে বলে আমার মনে হয়। কারণ আমাদের শৈশবকাল থেকে এই শিক্ষা ব্যবস্থা অর্থের উপর ভিত্তি করে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। যেসব বাবা-মার প্রচুর টাকা থাকে তাদের সন্তানরা ভালো স্কুলে অর্থের বিনিময়ে ভালো শিক্ষা পেয়ে থাকে।


অর্থাৎ ভালো স্কুলে পড়তে গেলে মোটা অংকের টাকা প্রয়োজন। আর যত খারাপ স্কুল রয়েছে সেইসব ইস্কুলে কম টাকার বিনিময়ে শিক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু সেই শিক্ষা তেমন একটা ভালো হয় না। আসলে সব স্কুলের ক্ষেত্রে কিন্তু একই নয়। বিভিন্ন স্কুল রয়েছে যেখানে ফ্রিতে সুষ্ঠু শিক্ষা দিয়ে থাকেন সেখানকার শিক্ষকরা।


আসলে আমি নিজের কথাই মনে করি। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর আমার বাবা মার পক্ষে বেশি টাকা দিয়ে ভালো স্কুলে পড়ানোর মতো যোগ্যতা আমার মা-বাবার ছিল না। মোটামুটি আমি একটি সাধারণ স্কুলেই পড়াশোনা করেছিলাম। আর এই পড়াশোনার পাশাপাশি আমি যখন বাইরে টিচারের কাছে টিউশনি পড়তে যেতাম তখন ওখানে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীও পড়াশোনা করতে যেত।


তখন আমি বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি যে আমাদের স্কুলের শিক্ষা অপেক্ষা তাদের স্কুলের শিক্ষা একটু এগিয়ে থাকে সব সময়। আসলে আমরা যে বয়সে সাধারণ বিষয়ে পড়াশুনা করি সেইসব বিষয়ে ওই ছাত্রছাত্রীদের অনেক আগেই পড়া শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা সব সময় আমাদের থেকে পড়াশোনায় অনেক এগিয়ে থাকে। বিভিন্ন বিষয়ের তাদের প্রচুর জ্ঞান থাকে। কিন্তু আমরা গতানুগতিক হারে সামনের দিকে এগুলোর ফলে তাদের থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে থাকি।


সাধারণত আমি আজকের বিষয়টা আপনাদের সবাইকেই বোঝাতে পারছি। সত্যিই আমার মত আপনাদেরও এই ধরনের এক্সপেরিয়েন্স আছে। এবার এসব শিক্ষার কথা বাদ দেওয়া যায়। আমরা অনেকেই আছি যাদের ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা বড় হয়ে তারা কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে, কেউ উকিল হবে, অথবা কেউ বৈজ্ঞানিক হবেন।


এবার প্রাথমিক শিক্ষা থেকে আসা যাক। আসলে ছোটবেলায় আমরা বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান অর্জন করে থাকি। আস্তে আস্তে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত আসা যাক। এই সময় সব ছাত্রছাত্রীরা একটি বিষয়ে পড়াশুনা করে থাকি। অর্থাৎ এখানে সাইন্স, আর্চ, কমার্স বলে কোন আলাদা বিভাগ থাকে না। সবাই একই শ্রেণীতে একই বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে থাকি।


কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটু আলাদা। কারণ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কোন আলাদা বিভাগ থাকে না এবং সেখানে নবম শ্রেণীর পর থেকে বিভিন্ন বিভাগ থাকে। আমি সঠিক বলছি কিনা আপনারা বাংলাদেশের লোকেরা আমাকে কমেন্টে জানাবেন। যাইহোক পরবর্তীতে যখন বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন ছাত্ররা চলে যায়। অর্থাৎ ভালো কোয়ালিটির ছাত্ররা যায় সাইন্স বিভাগে এবং মিডিয়াম কোয়ালিটির ছাত্ররা যায় কমার্সে এবং সর্বশেষে যেসব স্টুডেন্ট পড়াশোনা একটু পিছিয়ে সেসব স্টুডেন্টরা আর্চ নিয়ে পড়াশোনা করে।


কিন্তু সমাজে এটা ভুল কথা। যে ভালো স্টুডেন্ট সবসময় সাইন্স নেবে এমন কোন কথা নেই। আমার মনে হয় সাইন্স এর স্টুডেন্ট এর সর্বোচ্চ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা বৈজ্ঞানিক হতে পারবেন। কমার্সের স্টুডেন্টরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বড় বড় পদে যেতে পারবেন। কিন্তু আর্চ বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা শুধুমাত্র ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এবং বৈজ্ঞানিক বাদে যেকোনো পদে যেতে পারবেন।


তাই আমার মনে হয় সাইন্স এবং কমার্স অপেক্ষা আর্চ বিভাগে চাকরির সংখ্যা অনেক বেশি। এবার আরেকটি বিষয়ে আসা যাক। আসলে প্রথমে আমি সাইন্স বিভাগ নিয়ে আলোচনা করি। ধরেন ডাক্তার নিয়ে পড়াশোনা করবে তাদেরকে ফিজিক্স কেমিস্ট্রি এবং জীবন বিজ্ঞান বিভাগে খুব ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। আর যারা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় ভবিষ্যতে তাদের অবশ্যই ফিজিক্স কেমিস্ট্রি এবং গণিত বিভাগ নিয়ে খুব ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে।


কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখেছেন এই সাইন্স পড়ার সময় যখন কোন ছাত্র ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ এবং জীবন বিজ্ঞান বিষয়ক নিয়ে পড়াশোনা করে এবং পরবর্তীতে তারা মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর জন্য পরীক্ষায় বসেন। ধরুন তাদের কথাই ভাবা যায়। কাজের ভিতর কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পেলে তাদের জীবনে বায়োলজির কোন মূল্য থাকবে না। আবার ধরুন যারা ডাক্তারিতে চান্স পেয়েছে তাদেরও গণিতের কোন প্রয়োজন থাকবে না। তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থায় কেন এই দুটো সাবজেক্ট পড়তে হবে।


আমার মনে হয় যে সব স্টুডেন্টরা যেসব বিষয়ে পড়তে আগ্রহী এবং সেসব বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে কাজ করতে আগ্রহী তাদের জন্য তাদের পছন্দমত সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করাটাই আমার মনে হয় সবথেকে ভালো একটা দিক। আসলে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান অর্জনের ফলে তাদের মাথার ভিতর কিন্তু খিচুড়ি পাকিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও আমরা দেখতে পাই যে অনেক স্টুডেন্ট আছে যারা সাইন্স বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করে ব্যাংকের চাকরি করেন। আসলে ব্যাংকের চাকরির জন্য আলাদা ধরনের পড়াশোনার প্রয়োজন। তাইতো তার পূর্বের এই পড়াশোনা গুলো পুরোহিত বৃথা হয়ে যায়।


প্রতিটা উন্নত দেশ তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ মতামত সেই ছাত্র-ছাত্রীরাই নিয়ে থাকেন। তারা যেসব বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী তারা সেসব বিষয় নিয়েই পড়াশোনা করে। এতে ওইসব ছাত্র-ছাত্রীদের মনের বিকাশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় এবং তারা প্রায় ১৬ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।


কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনই যে এই শিক্ষা শেষ করতে করতে তাদের প্রায় ৩০-৪০ বছর পার হয়ে যায়। একটা মানুষের জীবনে যদি ৩০-৪০ বছর পড়াশোনা করতে করতে শেষ হয়ে যায় তাহলে তারা বাকি জীবনটা কি করবে। তাইতো আমাদের দেশে এই উন্নত দেশের মতো ব্যবস্থা যদি চালু করা হয় তাহলে আমাদের দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। এছাড়া প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করতে হবে।



আশাকরি আজকের এই পোস্টটি আপনাদের খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করতে অবশ্যই ভুলবেন না।



সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।



11-20-04-359_512.gif

ধন্যবাদ সবাইকে।

2XmsB3ZF6jJG7218A8ghgBmbB3W4Hm94fHM8vdisDLD4EuDS1mKCnUwr2WPdiRhWod2Rf2CCtBiK8N3pspzqnCWafFzVigrzmtsxCskMPdzGxv6X2qA4C6XCzVtoT7DrPdhaLQmVXDtTsoDBnDnkqY1H7mbiRmNAo6VRbcH65Ky8sUcB6iD2CGuEkfhUpCrHvemi76oe4F.gif

IMG_20210107_075142 (2).jpg

আমার নাম নিলয় মজুমদার। আমি একজন কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র। আমার মাতৃভাষা হলো বাংলা। কিন্তু আমার রাষ্ট্রীয় ভাষা হলো হিন্দী। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি। আমি একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। নতুন নতুন জিনিস তৈরী করতে আমি খুব ভালোবাসি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে।

Sort:  
 last year 

মাঝে মাঝে আমার কাছেও মনে হয় শিক্ষা ব্যবস্থার মাঝে বেশ ঘাটতি আছে। আসলে সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা একজন মানুষকে সঠিক শিক্ষা দান করতে পারে। শিক্ষিত হলেই যে সে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে এমনটা নয়। দাদা আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। দারুন লিখেছেন আপনি।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56688.84
ETH 2388.88
USDT 1.00
SBD 2.28