বাংলাদেশ ভ্রমণ। পর্ব : ২৮

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই। আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে এবং সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার বাংলাদেশ অন্যতম একটা আনন্দের মুহূর্ত শেয়ার করব। আশাকরি আপনাদের সবার খুব ভালো লাগবে।


20230105_115509.jpg


আমরা গ্যাস ফিল্ড থেকে পুনরায় অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। কিছু যেতেই আমাদের সামনে একটি পাহাড় চোখে পড়ল। ওখানে গিয়ে দেখলাম যে অনেক লোক ওই পাহাড়ের উপরে উঠে কি যেন দেখছিল। তখন আমাদের গাড়ির ড্রাইভার রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে আমরা ওই পাহাড়ের দিকে হাঁটতে লাগলাম।


20230105_115504.jpg


আসলে পাহাড়টি ছোট হলেও পাহাড়টি অনেক খাড়া ছিল। এরপর আমরা পাহাড়ের উপরের দিকে উঠার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু আমি একা ছাড়া বাকি কেউ ওই পাহাড়ের উপরে উঠতে পারল না। আসলে পাহাড়ের উপরটি সমতল ছিল। প্রথম অবস্থায় উঠা একটু রিস্ক ছিল।


20230105_114936.jpg


আমার সাথে সাথে বেশ কিছু ছেলেও পাহাড়ের উপরে উঠতে শুরু করল। আসলে নিচের থেকে পাহাড়টি দেখতে বেশ ভয়ানক ছিল। এদিকে আমাকে নিয়ে সবাই খুব চিন্তিত ছিল। কারণ আমি এত রিক্স নিয়ে ওই পাহাড়ের উপরে উঠতেছিলাম। অবশ্য আমার মনেও একটু ভয় হচ্ছিল কারণ উঠার রাস্তাটা প্রচুর বালি থাকার কারণে যেকোনো সময় পা স্লিপ করতে পারে।


20230105_115855.jpg


যাই হোক মনে সাহস নিয়ে আমিও উপরের দিকে উঠতে শুরু করলাম। কিছুদূর উঠে দেখি পাহাড়ের ছোট এক কোটরের ভিতরে আগুন জ্বলছিল। আমি বিষয়টি দেখে হতবাক হয়ে গেলাম এবং পরবর্তীতে বুঝতে পারলাম যে পাহাড়ের ভিতর দিয়ে যে গ্যাস বের হচ্ছিল সেই গ্যাসে কোন একজন ব্যক্তি আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে। আসলে ব্যাপারটা দেখে আমার একটা নতুন এক্সপেরিয়েন্স হল।


IMG_20230105_115346.jpg


যাই হোক কিছু কিছু দুষ্টু ছেলে আবার ওই আগুন দিয়ে সিগারেট জ্বালাচ্ছিল। জিনিসটি আমার খুব মজাদার লেগেছিল। আসলে সিলেটি মানুষের ভাষা তেমন একটা বুঝতে পারছিলাম না আমি। কারণ তাদের বাংলা ভাষায় তাদের নিজস্ব বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাও রয়েছে। যাইহোক ছেলেগুলো খুব দুষ্টুমি করছিল ওই পাহাড়ে ওঠার সময়। যা দেখে আমার খুব ভয় লাগছিল। কারণ যে কোন সময় একটা বড় ধরনের বিপদ ঘটে যেতে পারে।


IMG_20230105_120054.jpg


যাই হোক আমি ওদের দিকে নজর না দিয়ে আমি নিজের দিকে একটু নজর রাখলাম কারণ একটু অসতর্কতার কারণে একটা বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। আমি সাবধানে পাহাড়টির উপরে উঠে গেলাম। যাইহোক উপরে উঠে দেখি পাহাড়ের মাথাটি অনেকটা জায়গা নিয়ে সমতল এবং একজন স্থানীয় ব্যক্তির কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনারা কি রান্না পাহাড়ের কাঠ দিয়ে করে থাকেন?


IMG_20230105_115325.jpg


তখন তিনি আমায় বললেন যে, ওনাদের এখানে মাটিতে সামান্য গর্ত করে সেই গর্তের উপরে হাড়ি বসিয়ে নিচের ফাঁকা গর্তে আগুন একবার জ্বালিয়ে দিলে নাকি সেই আগুন জ্বলতেই থাকে। এর কারণটা হল এখানে গ্যাসের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় মাটির যে কোন অংশ ছিদ্র থাকলে সেই ছিদ্র দিয়ে গ্যাস বের হতে থাকে। ব্যাপারটা বেশ মজাদার। কারণ এখানের মানুষ আগুন জ্বালাতে কোনরকম খরচই হয় না।


20230105_115518.jpg


এছাড়া বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ ঘটে থাকে এখানে। লোকটির মুখে শোনা কথা যে, এখানে আগুনের ব্যবহার অনেক সাবধানে করতে হয়। কারণ একটু অসাবধানতার কারণে বাড়ি ঘর পুড়ে যেতে পারে। আরেকটা জিনিস এখানে কিন্তু নিশ্বাস নিতে একটু বেশিই কষ্ট হয়। চারিদিকে গ্যাসের গন্ধ একটু মিষ্টি ধরনের হয়। যাইহোক আমি আর বেশিক্ষণ পাহাড়ের উপরে থাকলাম না। আবারও সাবধানতা অবলম্বন করে আমি নিচের দিকে নামতে লাগলাম।


আমার মনে হয় পাহাড়ে ওঠার থেকে নামাটা বেশ কঠিন। কারণ পাহাড়ে উঠতে আমার যে ভয় করেছিল কিন্তু নামতে তার থেকে বেশি ভয় করছিল। যাইহোক ওই মুহূর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি আমাকে বলল, আপনি এই দিক দিয়ে নিচে নামেন। কারণ এই দিকের রাস্তাটা বেশিরভাগ লোক জানে না। তাই আমি ওনার কথামতো খুব সহজেই উনার দেখানোর রাস্তা দিয়ে নিচে নেমে এলাম। নামার পর আমি উনাকে ধন্যবাদ জানালাম।



এরপর পাশের একটি দোকানে আমরা সবাই মিলে চা খেতে গেলাম। আসলে প্রথমে সবাই একটু কফি অর্ডার করেছিল। কিন্তু কফির টেস্ট এত জঘন্য ছিল যে আমরা সবাই একবার মুখ দিয়ে সবাই তার কফি ফেলে দিয়েছিলাম। আবার পরবর্তীতে আমরা লিকার চা খাওয়ার জন্য দোকানদারকে অর্ডার দিলাম। আসলে লিকার চা টিও বেশ ভালো ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম যে সিলেটের চা দিয়ে তারা লিকার চা তৈরি করে। কিন্তু না, তারা কেনা প্যাকেটের চা দিয়ে চা তৈরি করেন।


IMG_20230105_121051.jpg


যাইহোক মনটা খারাপ হয়ে গেল। তখন কাকা বলল যে তোকে আমি সিলেটের চা পাতি কিনে সেই পাতি দিয়ে তোকে চা করে খাওয়াবো। আসলে সিলেট হল চায়ের এলাকা। কিন্তু এখানে এসেছে এইরকম ধরনের চা এর টেস্ট নিতে হবে তা আমার আগে মোটেও ভাবা ছিল না। যাইহোক মনের কষ্ট নিয়ে আবার আমরা অন্য জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে গেলাম।


IMG_20230105_122046.jpg


ক্যামেরা পরিচিতি : HUAWEI
ক্যামেরা মডেল : BKK-AL 10
ক্যামেরা লেংথ : 3 mm
তারিখ : 10/11/2022


তো এই ছিল আজ আমার পোস্ট। আশাকরি আপনাদের সবার খুব ভালো লেগেছে। আর আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করতে অবশ্যই ভুলবেন না।


সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।

11-20-04-359_512.gif

ধন্যবাদ সবাইকে।

2XmsB3ZF6jJG7218A8ghgBmbB3W4Hm94fHM8vdisDLD4EuDS1mKCnUwr2WPdiRhWod2Rf2CCtBiK8N3pspzqnCWafFzVigrzmtsxCskMPdzGxv6X2qA4C6XCzVtoT7DrPdhaLQmVXDtTsoDBnDnkqY1H7mbiRmNAo6VRbcH65Ky8sUcB6iD2CGuEkfhUpCrHvemi76oe4F.gif

IMG_20210107_075142 (2).jpg

আমার নাম নিলয় মজুমদার। আমি একজন কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র। আমার মাতৃভাষা হলো বাংলা। কিন্তু আমার রাষ্ট্রীয় ভাষা হলো হিন্দী। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি। আমি একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। নতুন নতুন জিনিস তৈরী করতে আমি খুব ভালোবাসি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে।

Sort:  
 last year 

ঘুরতে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা আমার বহুদিনের। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়ে উঠল না। আপনি কিন্তু ভারত থেকে চলে আসেছেন ঘুরতে ,ব্যাপারটা আসলে ভালো লাগলো। আর সিলেটিদের বাসা বোঝা অনেক কঠিন। ছবিতে লক্ষ্য করলাম আগুন জ্বলছে কিভাবে ধরল সেটাই ভাবছি।

 last year 

ভাইয়া সিলেট সহ আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও অনেক জায়গা এমন আছে যে শুধু শুধু মাটির নিচ থেকে গ্যাস বের হয়। ঐ এলাকা গুলোতে প্রচুর গ্যাস রয়েছে। তবে আপনি মেহমান মানুষ তারা চা কফি একটিও ঠিক ভাবে বানিয়ে খাওয়াতে পারে নাই। দেখা যাক পরের পর্বে খাটিঁ চা পান কি না। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

প্রথমে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনি আজ অনেকদিন যাবত বাংলাদেশ ভ্রমণের বিভিন্ন পর্যায়ের পোস্ট খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করছেন এবং তুলে ধরছেন বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় রূপ। খুবই ভালো লাগে আপনার এই বাংলাদেশ ভ্রমণের পোস্টগুলো। এতে যেন আমাদের দেশের আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। আজকে উপস্থাপন করেছেন সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি এবং দারুন দারুন বর্ণনা। খুশি হলাম এত সুন্দর পোস্ট দেখে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65316.48
ETH 2593.30
USDT 1.00
SBD 2.65