আমার শৈশবে ঘটে যাওয়া একটি ভয়ানক ঘটনা।
কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই। আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে এবং সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার শৈশব জীবনের একটা ভয়ানক মুহূর্ত শেয়ার করব।
ক্যামেরা পরিচিতি : HUAWEI
ক্যামেরা মডেল : BKK-AL 10
ক্যামেরা লেংথ : 3 mm
আসলে ছোটবেলা থেকে আমি খুব দুরন্ত প্রকৃতির ছিলাম। সারাদিন ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াতাম। আর আমার পিছনে পিছনে মা সারাদিন লাঠি নিয়ে দৌড়ে বেড়াতো। আসলে সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘুম চোখ নিয়ে স্কুলে যাওয়া এবং স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে কোন মতে বইয়ের ব্যাগটা ঘরে রেখে আবার স্নান করতে দৌড় দেওয়া। আসলে ছোটবেলায় আমি পুকুরে স্নান করতাম। আর এজন্য খুব ছোটবেলা থেকেই আমার সাঁতার জানা রয়েছে।
এখনকার সময়ে অনেক ব্যক্তিই আছেন যারা সাঁতার জানেন না। আমি আর বাইরের লোকের কথা কি বলব। আমার ঘরে আমার গিন্নি সাঁতার পারে না। আসলে গ্রামের ছেলে তো এই জন্য ছোটবেলা থেকে অনেক অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। আসলে পুকুরে স্নান করার সময় যতক্ষণ না পর্যন্ত মা লাঠি নিয়ে তাড়া না করত ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পুকুরে সাঁতার কাটতাম। কারণ গরম কালে আমরা যখন পুকুরে স্নান করতে যেতাম তখন আমাদের চোখ লাল হয়ে যেত স্নান করতে করতে।
আসলে আমরা পুকুরে বসে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম। এর ভিতর একটি খেলা হল, কে কতক্ষণ জলের নিচে ডুব দিয়ে থাকতে পারে। আসলে গরম কালে কখনও জল থেকে আর উপরে উঠে আসতে ইচ্ছে করত না। অনেক সময় হতো স্নান করার পর যখন গা শুকিয়ে যেত তখন গায়ে সাদা সাদা দাগ হয়ে যেত। কারণ আমরা পুকুরের জলে স্নান করতে করতে পুরো জলটাকে একদম ঘোলা করে ফেলতাম। আর এর ফলে এই সাদা সাদা মাটির দাগ আমাদের গায়ে লেগে যেত।
আর আমাদের চোখ কিন্তু একদম পুরো লাল হয়ে যেত। আসলে আমরা সমবয়সী অনেকগুলো ছেলেরা মিলে এই পুকুরে স্নান করতাম। যাইহোক প্রায় দিন এর জন্য মায়ের কাছে মার খেতে হতো। অবশ্য মারের ব্যথা যতক্ষণ থাকতো ততক্ষণ আমরা আর কোন অন্যায় কাজ করতাম না। আর যখন ব্যথা সেরে যেত তখন পূর্বের সব কথা ভুলে গিয়ে আবার পুনরায় পরের দিন একই রকম ভাবে স্নান করতাম। আসলে বাবার থেকে মায়ের হাতে বেশি মার খেতাম। যদিও বাবা কোনদিন আমাদের গায়ে কখনো হাত তোলেনি।
তো একদিন আমি একই রকম ভাবে স্নান করে মায়ের হাতে মার খেয়ে পুকুর থেকে উঠে এলাম। তো বাড়িতে এসে আমি গামছা দিয়ে গা-হাত-পা মুছে আবার বাইরে বেরিয়ে পড়লাম। আসলে আমাদের বাড়ির পাশে অনেক লোক মিলে একটা পুকুর খনন কাজ করছিল। আমি ওই লোকেদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পুকুর খননের কাজ দেখছিলাম। আসলে অনেকক্ষণ ধরে তাদের কাজ দেখতে দেখতে এদিকে আমার দুপুরে খাওয়ার কথা মনে ছিল না।
আসলে আগেরকার দিনে মানুষজন গান শুনতে শুনতে কাজ করতে বেশি পছন্দ করত। আর এর জন্য তারা বড় তার দিয়ে এই পুকুর অব্দি বিদ্যুৎ লাইন এনে একটি ক্যাসেট বাজিয়ে গান শুনছিল এবং সবাই মিলে কাজ করছিল। আসলে এখনকার দিনে আর সেই ক্যাসেট পাওয়া যায় না। অনেকে আবার একে টেপ রেকর্ডারও বলে। যাইহোক ওইসব লোকেরা যখন কাজ করছিল তখন আমি তাদের পাশেই বসে ছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর একজন লোক এসে ওই টেপ রেকর্ডারটি বন্ধ করে দিল।
আসলে তখনও কিন্তু তারে কারেন্ট ছিল। হঠাৎ কিছুক্ষণ পর আমি ওই ক্যাসেটের পাশে বসে ওই তারের সুইচ নিয়ে খেলা করছিলাম। আসলে আমি একবার লাইন বন্ধ করছিলাম আরেকবার লাইন অন করছিলাম। এই সুইচের সাউন্ড আমার খুব ভালো লাগছিল। যাইহোক ওই সুইচের পাশে তার ছেঁড়া ছিল। যদিও আমি সেই ছেঁড়া একবারও লক্ষ্য করিনি। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে আমার হাত ওই তাদের ছেঁড়া অংশটিতে টাচ করল। আর তখন আমাকে কারেন্টে ধরে বসলো। আমার গ্রামের এক দাদা জিনিসটি লক্ষ্য করল।
তখন ওই দাদা সব কাজ ছেড়ে চিৎকার করে ছুটে এসে একটি লাঠি দিয়ে জোরে ওই তারটিকে বাড়ি মেরে মেইন কানেকশন থেকে ছিড়ে ফেলল। ততক্ষণে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। আসলে তারপরে এক দুই দিনের কথা আমার কিছুই মনে ছিল না। কিন্তু কয়েকদিন পর আমার যখন ঠিকঠাক জ্ঞান ফিরলো তখন আমি দেখতে পেলাম যে আমার দুই হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল পুড়ে বেঁকে গেছে। আসলে আমার জীবনে এই অল্পের পর দিয়ে আমি বেঁচে গেলাম। কারণ আর কিছুটা সময় বেশি হলে আমি হয়তোবা মারা যেতাম।
আপনারা হয়তোবা আজকে আমার এই পোস্টটিতে যে ছবিটি আপলোড করেছি সেখানে দেখতে পাবেন যে, আমার দুই হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল উপরের দিকে বাঁকা রয়েছে। আসলে আমার জীবনে এটি একটি সবথেকে ভয়ঙ্কর ঘটনা। এছাড়াও অনেক ঘটনা রয়েছে যা পরবর্তী পোস্টগুলোতে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
তো এই ছিল আজ আমার পোস্ট। আশাকরি আপনাদের সবার খুব ভালো লেগেছে। আর আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করতে অবশ্যই ভুলবেন না।
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আসলে গ্রামের ছেলেমেয়েরা পুকুরে সাঁতার কাটতে কাটতে চোখ লাল না হওয়া পর্যন্ত পুকুর থেকে উঠত না। যাইহোক ভাইয়া ক্যাসেটে গান আমি ও অনেক শুনেছি। কিন্তু এখন গান যতই শুনি আগের মতো আনন্দ পাওয়া যায় না। যাইহোক ভাইয়া অবশেষে তার বাড়িয়ে অনেক ভালো কাজ করেছে। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এরকম পুকুরে সাঁতার কাটা ক্যাসেটের মধ্যে গান শোনা এগুলো আম্মুর মুখে শুনেছি। তবে আমরা যারা শহরে থাকি আমি নিজেরাই সাঁতার জানিনা। এবং এখনো সাঁতার শিখার সৌভাগ্য হয়নি। আপনার ছোটবেলার গল্প গুলো পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। তবে কারেন্টে ধরার ব্যাপারটি খুব খারাপ লেগেছে যাইহোক অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন বড় কোন ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। এত সুন্দর একটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ছোটবেলা কারেন্ট শক আমিও খেয়েছি। তবে আপনার অভিজ্ঞতা টা তো সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। তবে অল্পের উপর দিয়েই রক্ষা পেয়েছিলেন। আমিও আপনার মতো অনেক ছোটবেলা সাঁতার শিখেছি। আর গোসল করতে করতে চোখ লাল করে ফেলা মায়ের দৌড়ানি খাওয়া দৈনন্দিন বিষয় ছিল।।