বাংলাদেশ ভ্রমণ। পর্ব : ২৪
কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই। আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে এবং সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার বাংলাদেশ অন্যতম একটা আনন্দের মুহূর্ত শেয়ার করব। আশাকরি আপনাদের সবার খুব ভালো লাগবে।
তো আবার চলে এলাম সিলেট ভ্রমণের ২৪ তম পর্বে। এতটা পথ জার্নি মোটেও সময় কাটছিল না। এছাড়াও চারিদিকে এত বেশি কুয়াশা ছিল যে আমরা চারিদিকের প্রকৃতি ভালোভাবে উপভোগ করতে পারছিলাম না। মাঝে মাঝে সবাই একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু আমি কখনো কোন জার্নিতে রাস্তায় এক ফোটাও ঘুমাই না। কোথাও ঘুরতে গেলে আমি বাইরের প্রকৃতির টাকেই বেশি উপভোগ করি।
তো আমরা রাস্তায় আগেই বলেছিলাম যে কিছু শুকনো খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম। তাই আপাতত পেট ঠান্ডা রয়েছে। যাই হোক কোথাও ঘুরতে গেলে আমার বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কে জানার খুব ইচ্ছা থাকে। কাকেই বা জিজ্ঞাসা করব। গাড়িতে আমি আর ড্রাইভার দাদা বাদে সবাই ঘুম। আসলে কোথাও ঘুরতে গেলে সাথে লোকজন যদি ঘুমায় আমার খুব রাগ হয়। কারণ আমরা যাচ্ছি ঘুরতে। এই জার্নিটা কে সবাই উপভোগ করতে হবে।
কিন্তু কি আর করা যাবে সাথে সব ঘুমন্ত লোক গেছে। যাইহোক আমি ড্রাইভার দাদার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছিলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে। বিভিন্ন এলাকা আসলে সেই এলাকার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমি ড্রাইভার দাদাকে জিজ্ঞাসা করি। আসলে আমি পাশে থাকাতে ড্রাইভার দাদার কোন বোরিং ফিল হচ্ছিল না। কারণ এতটা পথ তুমি আমাদের গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
কিছুক্ষণ পর একটা জেলা আসলে আমি ওইসব জেলার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ড্রাইভার দাদার কাছে জিজ্ঞাসা করি। আসলে ড্রাইভার দাদার বাংলাদেশের প্রায় ৪৫টি জেলা যাওয়া আছে। আসলে ড্রাইভার দাদারও খুব ভালো লাগছিল আমার সাথে গল্প করে। উনি আমাকে বললেন যে, দাদা আমি বহু মানুষকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। কিন্তু আমার মত লোক উনি কখনো পাননি এর আগে। আর নাকি আমার সাথে গল্প করতে ওনার বেশ ভালই লাগে।
কিন্তু আরেকটা জিনিস আমার খুব খারাপ লেগেছে যে বাংলাদেশে পলিথিন এর ব্যবহারটা খুবই বেশি। আমাদের দেশেও পলিথিনের ব্যবহার রয়েছে অনেক। কিন্তু আমাদের দেশে পলিথিন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে সরকার। যদিও কিছু অসাধু ব্যক্তি এই পলিথিন ব্যবহার করেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখনো তার দেশে পলিথিনের ব্যবহার নিষেধ করেননি। ড্রাইভার দাদা নাকি ইন্ডিয়ায় ডাক্তার দেখাতে গিয়েছেন একবার।
যাইহোক রাস্তার দুপাশের সরিষা ক্ষেত দেখে আমার সত্যিই মন ভরে গেল। বাংলাদেশের রাস্তার দুপাশে সুন্দর গাছপালা আছে। আসলে সত্যিই বাংলাদেশ একটা সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশ। চারিদিকেই মনমুগ্ধকর প্রকৃতি আমার মন কেড়ে নিয়েছিল। এছাড়াও ড্রাইভার দাদার কাছে জানতে পারলাম যে বাংলাদেশের ট্রাফিক জ্যাম অনেক সময় নষ্ট করে। একটা আশ্চর্য দিক লক্ষ্য করলাম যে বাংলাদেশের কোথাও ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। সেখানে লোক দাঁড়িয়ে ট্রাফিক দিক নির্দেশনা করেন।
কিছুক্ষণ পর আমাদের ভিতরে এক সদস্যের বাথরুম পেয়ে গেল। যাই হোক আশেপাশে তেমন কোন পেট্রোল পাম্প ছিল না। তাই কিছুক্ষণ পর আমরা হঠাৎ করে সামনের দিকে একটা পেট্রোল পাম্প দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং আমরা একেক জন করে সবাই মিলে বাথরুমে গেলাম।
পেট্রোল পাম্পে গিয়ে দেখি অনেক বড় লাইন গাড়ির। কারণ বাংলাদেশের এই পেট্রোল পাম্পের সংখ্যা খুবই কম। অনেক দূরে দূরে একটা পেট্রোল পাম্প রয়েছে। তাই গাড়ির ভিড় অনেক বেশি থাকে এসব পেট্রোল পাম্পে।
তো আমার আর কাজ কি। সামনের কোন এলাকার বোর্ড দেখলেই আমি ছবি তুলতে লাগলাম এবং ড্রাইভার দাদা কে জিজ্ঞাসা করলাম আর কত দূরের পথ। আসলে এই পথ চলতে চলতে ড্রাইভার দাদা তার জীবনের অনেক কাহিনী আমাকে বললেন গল্পের মাধ্যমে। করনার সময় ওনার খারাপ পরিস্থিতির কথাও আমাকে বললেন।
যাইহোক আমরা বিভিন্ন জেলা একের পর এক পার করতে লাগলাম। যেতে যেতে গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ির রাস্তা দেখতে পেলাম আমরা। তো গিরিজ চন্দ্র সেন এর বাড়ি নাকি অনেক বড় ছিল। এই গল্পটা অবশ্য ড্রাইভার দাদার মুখে শোনা। অনেকে আসেন এই গিরিশচন্দ্র সেন এর বাড়ি ভ্রমণ করতে। যাইহোক আমাদের হাতে সময় কম ছিল তাই আমরা আর ঘুরতে গেলাম না ওখানে।
তো যেতে যেতে আমি একটা ভাস্কর্য দেখতে পেলাম। বুঝতেই পারলাম এটা বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটা ভাস্কর্য। আসলে যেভাবে তিনি আঙ্গুল উঁচু করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন সেই প্রতিমূর্তি টাই গড়ে তুলেছেন এখানে। সত্যিই ওনার অবদান বাংলাদেশবাসী কখনোই ভুলতে পারবেন না।
তো কিছুক্ষণ পর আমরা নরসিংদী জেলায় প্রবেশ করলাম। তার কিছুক্ষণ পর আবারো একটা বোর্ডে দেখতে পেলাম যে সিলেটের দূরত্ব এখনো প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। কি আর করা যাবে বসে বসে সময় গুনতে লাগলাম এবং গল্প করতে লাগলাম ড্রাইভার দাদার সঙ্গে।
মাঝে ড্রাইভার দাদা একটু বিরতি নিলেন। কারণ উনার নামাজ পড়ার সময় হয়েছিল। যাইহোক আল্লাহর প্রতি এরকম ভালোবাসা আমার দেখে খুবই ভালো লাগলো। উনি প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ পড়েন। আজ ওনার কয়েকটা নামাজ মিস হয়ে গেছে। তারপরও উনি সময় সুযোগ করে একবার নামাজ পড়ে নিলেন।
যেহেতু চারিদিকে অনেক কুয়াশা তাই নদীর বিশালতা আমরা ঠিকঠাক বুঝতে পারছিলাম না। নদীতে বড় বড় জাহাজগুলো নো মোর ফেলে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তখন আমি ড্রাইভার দাদাকে জিজ্ঞাসা করলাম এই জাহাজগুলো কখন রওনা হবে। তখন উনি আমাকে বললেন কুয়াশা না কমলে এরা কখনো রওনা দেবে না। কারণ কুয়াশার ভিতরে ঠিকঠাক দিকনির্দেশ না করতে পারে না জাহাজের নাবিকরা।
ক্যামেরা পরিচিতি : HUAWEI
ক্যামেরা মডেল : BKK-AL 10
ক্যামেরা লেংথ : 3 mm
তারিখ : 09/11/2022
তো এই ছিল আজ আমার পোস্ট। আশাকরি আপনাদের সবার খুব ভালো লেগেছে। আর আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করতে অবশ্যই ভুলবেন না।
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
আমার নাম নিলয় মজুমদার। আমি একজন কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র। আমার মাতৃভাষা হলো বাংলা। কিন্তু আমার রাষ্ট্রীয় ভাষা হলো হিন্দী। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি। আমি একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। নতুন নতুন জিনিস তৈরী করতে আমি খুব ভালোবাসি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে।
Sort: Trending
[-]
successgr.with (74) last year