বাংলাদেশ ভ্রমণ। পর্ব : ৩০
কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই। আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে এবং সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার বাংলাদেশ অন্যতম একটা আনন্দের মুহূর্ত শেয়ার করব। আশাকরি আপনাদের সবার খুব ভালো লাগবে।
তো আমরা নৌকায় তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম। আসলে প্রথমেই বলেছি নৌকায় বেশি লোক হওয়ায় আমাদের একটু ভয় করছিল। তখন নৌকার মালিক অর্থাৎ যিনি নৌকা চালাচ্ছিলেন তিনি আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন যে আপনারা বেশি নড়াচড়া করবেন না। কারণ নড়াচড়া করলে যেকোনো সময় বিপদ ঘটে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই আমি ওনার কথা মত সবাইকে বললাম নড়াচড়া না করার জন্য। যদিও আমার মনে মনে ভয় ছিল তখনো। যাই হোক আমরা চারিদিকে প্রকৃতিটা উপভোগ করতে লাগলাম। এখানকার জল এতটাই স্বচ্ছ ছিল যে আমরা জলের ভিতর দিয়ে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম। এছাড়াও এখান থেকে দূরের ভারতকে দেখতে খুব ভালো লাগছিল।
এখানে অবশ্য চারিদিকে বড় বড় পাথর এবং পাথরের বালি ভর্তি রয়েছে। আমার একটু অসুবিধা হচ্ছিল কারণ এই পাথরে বালি আমার জুতোর ভিতর বারবার ঢুকে যাচ্ছিল। শুধু আমার নয় সবার জুতো ভিতর এই পাথরই বালি বারবার ঢুকে যাচ্ছিল। আর এদিকের পাথরগুলো জলের ভিতর দিয়ে মুক্তোর মত চকচক করছিল।
আসলে আমরা মানুষ কখনোই ঠিক হবো না। আমরা মানুষ কোন ভালো জিনিস কে কখনোই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখিনা। কারণ আমরা যখন নৌকোতে যাচ্ছিলাম তখন জলের ভিতর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নোংরা দেখতে পাচ্ছিলাম। যদিও আমাদের সবাইকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আর যেখানে সেখানে নোংরা আবর্জনা না ফেলে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নোংরা আবর্জনা ফেললে পরিবেশ দূষণ অনেকটা কম হবে।
এত সুন্দর একটি জায়গাকে মানুষ দিন দিন নষ্ট করে ফুল ফেলছে এই নোংরা আবর্জনা ফেলে। আসলে আমাদের ভারতবর্ষেও ঠিক একই রকম। মানুষ এসব সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলোতে নোংরা আবর্জনা ফেলে দিন সেই সব জায়গার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। তাই আমরা আমাদের বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট একটা নির্দিষ্ট ক্যারিব্যাগে ভিতরে রেখে দিলাম।
আসলে নৌকার মাঝেই আমাদের বললেন যে আপনারা এসব নোংরা আবর্জনা জলে ফেলে দেন। আমি তাকে বললাম তখন আপনি এই নোংরা গুলো আপনার নৌকাতে রাখেন। আমরা যাবার সময় এই নোংরাগুলো একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিয়ে যাব। অবশ্য আমার কথা শুনে নৌকার মাঝি একটু খুশি হয়ে আমাদের বললেন যে, মানুষ এসে আপনাদের মত এরকম করে নির্দিষ্ট জায়গা কখনোই নোংরা খেলে না। তারা যেখানে সেখানে এসব নোংরা ছেলে এই পরিবেশটাকে নষ্ট করছে।
আসলে আমরা প্রায় একদম ভারতের গায়ে চলে এলাম। নদীর ওই সাইডটা ছিল ভারতের এবং আমরা বাংলাদেশের ভিতরে অবস্থান করছিলাম। এই ছোট নদীটি বাংলাদেশ এবং ভারতের দুই সীমান্ত কে আলাদা করেছে। আসলে আমরা এখান থেকে ভারতের বাড়িগুলো একদম স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম।
কিছু কিছু লোক আবার দেখতে পেলাম যে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এই নদীর পাড়ি দিয়ে। আবার বাংলাদেশের কিছু পর্যটক ও ওই পাড়ে গিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কিছু কিছু লোকজন ওদের অবশ্য বারণ করছিল। কারণ ওপারের বর্ডার গার্ড যদি তাদের দেখতে পায় তাহলে যেকোনো সময় একটা খারাপ অঘটন ঘটে যেতে পারে।
যাইহোক মানুষ কি আর মানুষের কথা শুনে। মানুষের এসব কথা পরোয়া না করে তারা ওইপারে গিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। আবার কিছু কিছু লোক বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়ার দিকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করছিল। অবশ্য এখানকার জল খুব ঠান্ডা ছিল।
তাই আমরা কেউ আবার জলে হাত দিলাম না। আমরা যে নদীটা করে যাচ্ছিলাম সেই নদীর ওই পাড় দিয়ে কোন মাঝি নৌকা চালাচ্ছিল না। কারণ নদীর অর্ধেক অংশ বাংলাদেশের এবং বাকি অর্ধেক ভারতের। অবশ্য অনেকেই এসেই খুব মজা করছিল এখানে।
এরপর আমরা একটা নির্দিষ্ট জায়গা দেখে নেমে গেলাম। ওই জায়গায় নেমে সর্বপ্রথম সবাই ছবি তুলছিল এবং তাদের ছবি আমি তুলে দিচ্ছিলাম। কিন্তু নিজের ভাগ্য খুব খারাপ থাকায় নিজের একটাও ছবি তুলতে পারলাম না।
এদিকে তো আমার গিন্নি রেগে ফায়ার। কারণ তার সাথে এখানে ঘুরতে এসে এখন মাত্র একটা ছবিও তোলা হয়নি। তাই সে রাগে ক্ষোবে আমার সাথে আর একটিও ছবি তুলল না। যাইহোক তার রাগের পরিমাণটা অনেক বেশি ছিল। তাই আমার বারবার অনুরোধ সত্বেও সে একটি ছবিও তুলল না
তাই আমি আর কি করব ভেবে উঠে না পেরে বসে বসে পাথর কুড়াতে লাগলাম। আসলে এখানে বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় পাথর ছিল। তাই এই বিভিন্ন পাথরের ভিতর থেকে আমি দেখতে সুন্দর পাথরগুলোকে বেছে বেছে একটা ব্যাগে ভরতে লাগলাম।
সবাই দূরে বসে ছবি তুলছিল আর আমি মনের কষ্টে পাথর করেছিলাম। যদি ভুলটা আমার। কারণ আমার জিনিসটাতে একটা ছবিও আমার তোলা হয়েছিল না। এদিকে আমরা একজন ফটোগ্রাফার ভাড়া করলাম। ফটোগ্রাফারটি ছিল একটু খারাপ প্রকৃতির। সে আমাদের কাছে তার ক্যামেরাতে যে নষ্ট সেই কথাটি গোপন করেছিল।
যাইহোক নিজে নিজে শেষের দিকে একটা সেলফি তুললাম। আরো কিছুক্ষণ আমরা ঘুরতে লাগলাম। চারিদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই মনমুগ্ধকর ছিল। আমি তাই বসে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম।
ক্যামেরা পরিচিতি : HUAWEI
ক্যামেরা মডেল : BKK-AL 10
ক্যামেরা লেংথ : 3 mm
তারিখ : 10/11/2022
তো এই ছিল আজ আমার পোস্ট। আশাকরি আপনাদের সবার খুব ভালো লেগেছে। আর আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করতে অবশ্যই ভুলবেন না।
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।
ভাইয়া আপনারা যেই জায়গায় ঘুরতে গেছেন সেই জাফলং বাংলাদেশের খুবই পরিচিত একটি ভ্রমন স্পট। একশো জনে ৭০ জনই জাফলং ভ্রমন করছে। ভবিষ্যতে সংখ্যাটা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে। যায়হোক মানুষ অসচেতন বিধায় মাঝে মাঝে প্রকৃতি আমাদের উপর চড়াও হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া।