ঠাকুরমা।
কেমন আছেন " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই ? আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই খুব ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদে আমিও খুব ভালো আছি। আসলে আজ ঠাকুরমার সম্পর্কে আমার কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আশাকরি আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
সোর্স
আসলে আজ আমি এমন একজন ব্যক্তির সম্পর্কে আপনাদের মাঝে কিছু কথা বলব আসলে যার অবদান আমাদের জীবনে অনস্বীকার্য। তিনি আর কেউই নন। তিনি হল ঠাকুরমা। আসলে ছোটবেলায় আমরা একটা কার্টুন দেখতাম যার নাম ছিল ঠাকুরমার ঝুলি। ঠাকুরমার ঝুলি খুলবে, মজার গল্প বলবে। সত্যিই আমাদের ছোটবেলাটা এই ঠাকুরমার গল্পের ভিতর দিয়ে আমরা বেড়ে উঠেছি।
আসলে ঠাকুরমা বলতে আমরা সবাই আমাদের বাবার মাকে বুঝি। আসলে যাকে ছাড়া আমাদের পুরো ছোটবেলাটাই সাদাকালো টিভির মতো। যাকে ছাড়া আমাদের শৈশবকাল এক মুহূর্ত চলতে পারে না। তিনি হলেন আমাদের ঠাকুরমা। আসলে আমাদের জন্মের পর থেকে এই ঠাকুরমা আমাদের লালন-পালন করে বড় করে তোলেন।
হ্যাঁ অবশ্যই মা তো আমাদের লালন পালন করেন। কিন্তু আমাদের জীবনে ঠাকুর মার অবদান অনেক বেশি। আসলে বেশিরভাগ সময়টাই আমরা আমাদের ঠাকুরমা সাথে কাটিয়েছিলাম। আর সত্যি কথা বলতে কি আমি আমার পুরো ছোটবেলাটাই আমার ঠাকুরমার সাথে ঘুমাতাম। আসলে আমি কখনো আমার মা-বাবার সাথে ঘুমাতে চাইতাম না। তাই সবসময় আমি আমার ঠাকুমার কাছে ঘুমাতাম।
আসলে আমার ঠাকুরমার কাছে ঘুমানোর প্রধান কারণ হলো তিনি প্রতিদিন আমাদের এক একটা নতুন গল্প বলে শুনাতেন। এছাড়াও মাঝে মাঝে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি আমাকে ঘুম পাড়াতেন। আসলে পরবর্তীতে মা-বাবার কাছে জানতে পেরেছিলাম যে, ঠাকুরমা ছোটবেলায় আমার শরীরে তেল মাখিয়ে শীতকালে রোদের ভিতর বসে থাকতেন।
আমি কিন্তু আমার ঠাকুমাকে অনেক বছর পেয়েছিলাম। আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে আমার ঠাকুরমা মারা যায়। কিন্তু আজও আমি আমার ঠাকুরমাকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারিনি। কারণ আমার পুরো শৈশব কালটাই আমার ঠাকুরমার সাথে সময় কাটানো। বিশেষ করে খাওয়া দাওয়ার সময় ঠাকুর মামাকে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিতেন। এছাড়া খাওয়ানোর সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের ভয়ের কথা বলে আমাদের খাওয়াতেন। কারন আমি তখন খেতে চাইতাম না।
বিশেষ করে আমার ঠাকুমার ভয় দেখানোর প্রধান অস্ত্র হলো, বাইরে যাবি না কারণ বাইরে পুলিশ রয়েছে। এছাড়া তিনি মাঝে মাঝে আমাদের বাঘের ভয় দেখাতে। আসলে আমার পুরো বেড়ে ওঠাটাই আমার ঠাকুর মার হাতে। অবশ্যই আমার মা বাবা আমাকে লালন পালন করেছেন কিন্তু আমার ঠাকুরমা তাদের থেকে কোন অংশে কম নয়।
কোথাও কখনো যেতে হলে এই ঠাকুরমা আমার হাতে দশ টাকার একটি নোট দিয়ে বলতেন মাকে বলবি না কিন্তু। ঘুরতে গিয়ে এই টাকা দিয়ে খাবার জিনিস কিনে খাবি। আসলে আমিও কখনো মাকে এই ঠাকুরমার টাকা দেওয়ার কথা বলিনি। বাবা যদি ঠাকুরমাকে কোন টাকা দিতেন সেই টাকা তিনি কখনোই খরচ করতেন না। তিনি পুরো টাকাটাই আমার পিছনে খরচ করতেন।
এছাড়াও আমার ঠাকুরমা যদি কোথাও ঘুরতে যেত তাহলে এমন কোন দিন নেই যে তিনি আমার জন্য কিছু না কিছু একটা কিনে না এনেছেন। তাই ঠাকুরমা যখন বাড়ি ফিরতো আমি খুব আনন্দে থাকতাম সব সময়। কারণ ঠাকুরমা প্রতিবার বাড়ি ফেরার সময় কিছু না কিছু নতুন জিনিস কিনে আনত আমার জন্য। আর আমি ওই জিনিসটা নিয়ে খেলা করতাম।
সাধারণত আমার ঠাকুরমা আমার কাকার কাছে বেশি থাকতো। তাই কখনো কাকার কাছে গেলে আমি ঠাকুরমার সাথেই ঘুমাতাম। আর ঠাকুরমা আমাকে বিভিন্ন ধরনের জিনিস কিনে খাওয়াতেন। আমার কাকার কাছে থাকার প্রধান কারণ হলো আমার ঠাকুমার শরীর তেমন ভালো ছিল না। আর আমার কাকা ছিলেন একজন ডক্টর। তাই উনি বেশিরভাগ সময়টা আমার কাকার কাছেই থাকতেন।
আমি যখন ছুটির দিনে কাকার বাড়িতে যেতাম তখন ঠাকুর মা বিভিন্ন ধরনের খাবার আমার জন্য রান্না করতেন। আমার ঠাকুমার অনেক নাতি নাতনি থাকার সত্বেও আমি কিন্তু তার সবচেয়ে প্রিয় নাতি ছিলাম। তিনি কখনোই আমাকে এক মুহূর্তের জন্য কোন কষ্ট দিতেন না। সব নাতি নাতির ভিতর আমাকে তিনি সব থেকে বেশি ভালোবাসতেন। এছাড়া সব সময় আমার ঠাকুরমা আমার মা-বাবার কাছে আমার খোঁজ খবর নিতেন।
এছাড়া যখন আমি কাকার বাড়ি থেকে বাড়ির দিকে চলে আসতাম তখন তিনি বিভিন্ন ধরনের খাবার আমার ব্যাগে গোপনে রেখে দিতেন। আমি কিন্তু কখনোই টের পেতাম না। এবং বাড়ি এসে যখন ব্যাগ খুলে দেখতাম বিভিন্ন ধরনের খাবার তখন আমার ঠাকুরমার কথা মনে পড়তো যে এই কাজ তার ছাড়া আর কারোরই নয়। তখন আমার মনটা আনন্দে নেচে উঠত।
এই ঠাকুরমারই আমাকে সব সময় মা-বাবার বকার হাত থেকে বাঁচাতো। তোমার কাছে রাতের বেলায় রাক্ষস খোক্ষসের গল্প শুনতে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু সমস্যা হতো তখনই যখন রাতের বেলায় আমার প্রস্রাব করতে বাইরে যেতে হতো। কিন্তু যখনই ঠাকুরমাকে ডাকতাম তখনই তিনি আমায় বাইরে নিয়ে গিয়ে প্রস্রাব করিয়ে আনতেন।
এই ঠাকুরমা মুমূর্ষ কালের তিনি সবসময় আমাকে খুঁজতেন। সব সময় বলতেন যে আমার দাদা কোথায়। আমার ঠাকুরমা কিন্তু আমাকে সবসময় দাদা বলে ডাকতেন। কিন্তু আমার এতই হতভাগ্য কপাল যে আমার ঠাকুমার মৃত্যুর সময় আমি তখন তার পাশে থাকতে পারিনি। যদিও মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি আমাকে খুঁজেছেন। ঠাকুরমা তুমি যেখানেই থাকো না কেন খুব ভালো থেকো। তোমার এই দাদা তোমাকে সবসময় মনে করে।
আশাকরি আজকের এই পোস্টটি আপনাদের খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করতে অবশ্যই ভুলবেন না।
সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে।
ঠাকুমা বা দাদি আমাদের জিবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যাক্তি। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ টা আমাদের নিয়ে কতো কিছু করে কতো ভালবাসে তার ভালবাসা গুলো বাচ্চাদের মতো সকল ঠাকুমা/দাদু ভেচে থাকুক অন্তরে।
আমরা ঠাকুমাকে দাদি বলে থাকি।যে কোন অপরাধ করলে আব্বু আম্মুর হাতে বকা খাওয়া থেকে দাদি রক্ষা করে।সব সময় পাশে থাকে।মায়া লেগে গেল আপনার এই পোষ্ট পড়ার পর। শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
ঠাকুরমা কে আমি দাদু ডাকি।আপনার গল্প পড়তে পড়তে আমি যেনো আমার দাদুকে নিয়ে স্মৃতিগুলো ভাবছিলাম।সব দাদুরাই মনে হয় এমন নাতি,-নাতনির জন্য। তবে কষ্ট লাগলো তার মুমূর্ষু অবস্থায় আপনি তার পাশে থাকতে পারেন নি।আপনাকে দাদা বলে ডাকতেন আপনার ঠাকুরমা।অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা।যেখানেই থাক ভালো থাকুন এই কামনাই করি।
সত্যিই আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম। ঠাকুরমা'রা এমনই হয়। ছোটবেলার কথা মনে পরে গেলো।