সূর্যের ছুঁড়ে দেওয়া সকাল-১ || পড়ুন ও পড়ান||

in আমার বাংলা ব্লগ15 days ago

প্রিয় বন্ধুরা,


আজকাল সকালগুলোতে ঘুম ভাঙ্গে তীব্র ময়ূরের ডাকে। ভোর রাত্রিতে অনেকবার জেগে থাকার কারণে দেখেছি চোখ গেল পাখি ডাকে। আবার ভোরের দিকে বর্ষাকালের কারণে আজকাল প্রচুর ময়ূর ডাকে। মুখের উপর সূর্যের আলো আসার আগে থেকেই এমন একটা পরিবেশে যদি আধো আধো করে ঘুম ভাঙ্গে সকালটা সত্যিই ভীষণ সুন্দর হয়ে ওঠে। এমন সকালে খুব ইচ্ছে করে ভোর ভোর উঠে একটু প্রকৃতির মাঝখানে বেড়িয়ে আসতে। কিন্তু প্রচন্ড ব্যস্ততার কারণে সেটা কখনোই হয়ে ওঠে না। তবে একটু বেলার দিকে যাই, খুবই ভালো লাগে একটা মনোরম পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে। তারপর এসে আবার সেই দৈনন্দিন জীবন।

বন্ধুরা, প্রত্যেকদিনই রাতের দিকে যে ব্লগ লিখি অনেক কায়দা করে লিখি৷ আজ হেঁটে ফেরার সময় ভাবলাম সকালবেলা করে যদি কখনো সময় পাই একটা করে ব্লগ লিখব, তারই নামকরণ করেছি, সূর্যের ছুঁড়ে দেওয়া সকাল। সকালের সূর্যকে দেখতে দেখতে আমার এই শব্দ বন্ধটাই মাথায় এলো। এই সিরিজে আমি ঠিক কি করব বা কি লিখবো তা নিয়ে কোন পরিকল্পনা নেই। আজও ঠিক জানিনা কি নিয়ে লিখব আর লেখা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। যাই হোক লেখাতে ঢোকার আগে আপনাদের সবাইকেই সুন্দর সকালের শুভেচ্ছা জানাই।

1000245040.jpg

এই ফুলগুলো তুলে আনি বাড়িতে সুগন্ধি বিস্তারের জন্য। পুজোর ফুল আলাদা। আমি যে খুব অন্ধ ঠাকুর ভক্ত সেরকম না। সবকিছুর ভেতরে একটা বিজ্ঞানসম্মত বা মনস্তাত্ত্বিক বা আধ্যাত্মিকতা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি। সেটাই আমার সাধনার পথ। সেটাই আমার মুক্তির পথ। আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে কোন কিছু বলে বিশ্বাস করাতে পেরেছে এমন কিছু মনে পড়ে না। তাও সবকিছুই করি সেটা আমার মনের খেয়ালে নিজের স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করে। যে কারণে আমার কাছের মানুষরা আমাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা বলে মনে করে।

আপনাদের একদিন আমার ঠাকুর মন্দিরের ছবি দেখাবো। আপনারা যেই ধর্মের অবলম্বী হন না কেন প্রত্যেকেই জানেন শিবলিঙ্গ আসলে কেমন দেখতে। তবে আমি কিন্তু পুজো করি শিবের তৃতীয় নয়নকে। আমাদের সমস্ত দেবদেবীদের ভালো করে ছবিগুলো দেখি দেখা যায় কেউ পদ্মের ওপর, কেউ ময়ূরের ওপর, কেউ ইঁদুরের ওপর, কেউ সিংহের উপর বা কেউ সাপের উপর বসে রয়েছে। একমাত্র শিব বা মহাদেব যিনি বসে আছেন পাথরের উপর। পাথর ধরে নিই পাহাড় ধরে নিই পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে থাকা একটি শান্ত চোখ। যা সবকিছু দেখে, ভেতর থেকে দেখে। এবং ধারণ করে। অসীম ধৈর্য নিয়ে সে দেখে। আর হজমও করে। ঠিক যেমনটা পৃথিবী করে। আমাদের এত নিষ্ঠুরতা আমাদের এত অত্যাচার সবকিছুই কিন্তু পৃথিবীর চোখের সামনে উলঙ্গ। আমি যদি পৃথিবীকে মহাদেব হিসেবে ধরে নিই, তবে মহাদেবের কন্ঠে বিষ ধারণ করে ধৈর্যের সীমা দেখতে পাই৷ তিনি পাহাড়ের চূড়ায় বসে বসে প্রকৃতির ওপর জীবনের ওপর চালিয়ে যাওয়া সভ্যতার অসভ্যতা লক্ষ্য করেন। তিনি শান্ত। তার তৃতীয় চোখে সবকিছুই খোলা ভাবে ধরা পড়ে। যে মানুষগুলো যতটুকু খোসা ছাড়িয়ে দেখতে ও বুঝতে পারে তাদের ওইটুকু জ্ঞানই তৃতীয় নয়ণ। সবকিছু বোঝা কিন্তু কোন একমুখী মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিটা দূরদর্শিতা পূর্ণ মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয় সতেজ ও সজাগ থাকে। যার ফলে তার বোধগম্য ও ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি হয়। তারা স্বভাবেও শান্ত হয়। পর্যবেক্ষণ করার জন্য তো শান্ত হতেই হবে তাই না? তবে ঠিক পৃথিবী যেমন হাজার শান্ত থাকার পরেও একদিন তান্ডব শুরু করে যার রোষের সামনে কোন সভ্যতা কোন প্রযুক্তিই টিকে থাকতে পারে না। তেমনটা আমরা শিবের তাণ্ডবের মধ্যেও দেখতে পাই।

কি বুঝছেন বন্ধুরা? ঠাকুর সেবা? না না। জীবন দর্শন৷ সব দেখা বোঝা বোধগম্য করা, আর প্রয়োজনে গর্জে ওঠা।

ধরাধরেংদ্রনংদীনিবিলাসবংধুবংধুর।
স্ফুরদ্দিগংতসংততিপ্রমোদমানমানসে।।
কৃপাকটাক্ষধোরণীনিরুদ্ধদুর্ধরাপদি।
ক্বচিদ্দিগংবরেমনোবিনোদমেতুবস্তুনি।।

গিরিরাজ কিশোরী পার্বতীর বিশাল কালোপযোগী উচ্চনিচ মস্তক ভুষণ দ্বারা দশদিক প্রকাশিত হতে দেখে যার মন আনন্দিত; যার নিত্যকৃপাদৃষ্টির কঠিন বাধা-বিপত্তি দূর হয়ে যায় সেই দিগম্বর স্বরূপ তত্ত্বে যেন আমার মন আনন্দ লাভ করে। (সংস্কৃত উচ্চারণটির বাংলা অর্থ)

খুব অল্পে খুশি হওয়া কিংবা প্রকৃতির আনন্দে আনন্দিত হওয়া জীবনের মূল দর্শন। বেঁচে থাকার শুদ্ধ মার্গ৷

সূর্যের ছুঁড়ে দেওয়া সকাল -এ আমার সামান্য বোধগম্য এবং দর্শন চিন্তাভাবনা যা মনস্তত্ত্বে ছায়া ফেলেছে সেটুকুই আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম। আবার কখনো কিছু মনে হলে এই সিরিজটি এগিয়ে নিয়ে যাব।

তবে আজ চলে যাবার আগে কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করি যেটা সকালে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে তুলে এনে ছিলাম।

1000245065.jpg

1000245066.jpg

1000245067.jpg

1000245071.jpg


1000227693.png


1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57774.35
ETH 2339.45
USDT 1.00
SBD 2.44