🌦️নমস্কার🌦️

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত

☔🍀🌼🍀☔

---

---

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা, সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।

---

---

ভরা বাদর
মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর

যতদিন বর্ষা চলে ততদিনই এই গানটায় প্রাণ খুলে দিই। কী আশ্চর্য সুর, আশ্চর্য মোহ।

গত পরশু থেকেই টানা বৃষ্টি। বিরামহীন। উনি এই ধরনের বৃষ্টিতে অভ্যস্ত নয় তাই জেলাশাসক টানা ২-৩ দিনের ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। এদিকে বাজারহাটও প্রায় শেষের পথে। বিগত আট বছর মুম্বাই ও এক বছর গোয়াতে এর থেকে অনেক ভারী বর্ষণের সম্মুখীন হয়েছে। তবে জীবনযাত্রা থেমে যায়নি। কারণ এটি খুবই স্বাভাবিক ঋতু ঘটিত বিষয়। কিন্তু পুণেতে যেহেতু এই ধরনের বৃষ্টি হয়ে থাকে না তাই এখানে জল নিকাশের ব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এক দেড় দিনের বৃষ্টিতেই ভালোমতো জল জমে গেছে।

তাও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই যখন দেখছি যে বৃষ্টি একেবারে ব্যালকনি ঝাঁপিয়ে চলে এসেছে তখন বাগানে গিয়ে সদ্য ফোটা ব্লিডিং হার্ড ফুলের কিছু ছবি তুলেছি, কারণ বৃষ্টির জল পড়ে এগুলো যেন আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে। এছাড়াও টুকটাক গাছের ছবি তুলেছি। আমরা যতই নাস্তানাবুদ হই না কেন গাছের জন্য এই বৃষ্টি খুবই দরকার। টানা কিছুদিন বৃষ্টি হওয়ার পর আমি সব সময় লক্ষ্য করেছি গাছের পাতার রং গাঢ় সবুজ হয়ে ওঠে। আবার যখন গরম কাল বা শীতকাল হয় বৃষ্টি কমে যায় তখন এতখানি সবুজ থাকে না। এর কারণ হয়তো এটাও হতে পারে যে বর্ষাকালে তো সূর্যের আলোটা কম থাকে তাই ক্লোরোফিলকে অনেক বেশি ঘন হয়ে থাকতে হয় সূর্যালোক ধরে রাখার জন্য। গত সারাদিন সূর্য তো বেরইনি, বেলা যে বেড়েছে সেটাও বুঝতে পারিনি। তবে সামান্য আলো গোড়া ওপর থেকে গেছে।

এর মাঝে দৈনন্দিন কাজ আমি সেরে নিয়েছি। কারণ প্রকৃতি সায়ে দিচ্ছে না বলে যে পেটে খিদে হবেনা এই জিনিস কোথাও লেখা নেই। আবার বাঙালি হওয়ার কারণে বর্ষার দিনে খাওয়া-দাওয়ার তোড়জোর টা একটু অন্যরকমই থাকে। আগে আগে কি করতাম গোবিন্দভোগ চালের নিরামিষ খিচুড়ি বানাতাম সাথে ইলিশ মাছ ভাজা বেগুন ভাজা পাপড় ভাজা এইসব বাঙালির সাতকাহন তো থাকতই। এখন আর সেসব করি না কারণ এখানে ইলিশ মাছ খুব একটা পাওয়া যায় না। খুব একটা কেন একেবারেই পাওয়া যায় না। তাই সাধারণ দিনের মতনই ডাল ভাত পাঁপড়ের তরকারি, কাঁকরোল ভাজা, সয়াবিনের মুইঠা, চাটনি, ফুলকপির পোস্ত ইত্যাদি রান্না করেছিলাম। ও হ্যাঁ, মটর ডালের বড়া ভাজা ও ছিল সাথে। আসলে আমরা চাই বা না চাই বাঙালি বাড়িতে অনেকগুলো করে পদ রান্না হয়েই যায়। সেই ছোটবেলা থেকে বাড়িতে দেখে এসেছি কম করে সাত আট রকমের পদ ছাড়া ঠাকুমা কাউকে খাবারের থালা ধরাতই না। সেই চলনটা আমার মাও পরবর্তীকালে চালিয়ে এসেছে। মায়ের থেকে আমি। আসলে ওইটাই অভ্যেস ওর বাইরে খেতে হলে নিজেকে কেমন যেন দেহাতি দেহাতি মনে হয়। তবে এই সমস্ত জায়গায় মানুষের খাওয়ার এত বিলাসিতা নেই। এদের খাওয়া বলতে অনেকগুলো করে রুটি আর সাথে মারাত্মক রকমের ঝাল একটা আচার থাকে, আর একটুখানি মানে এক চামচ মত ঢেঁড়সের ঝাল ঝাল ভাজা নইলে গাওয়ারের সবজি। গাওয়ার একটা সবজির নাম। সবুজ সবুজ লম্বা বিন্সের মতো দেখতে হয় কিন্তু বিন্স নয়৷ এছাড়া এদের মধ্যে মেথি শাক, সেঁপু, খুবই বিখ্যাত। সেঁপুও এক ধরনের শাক। সবুজ সবুজ সরু সরু ঝাঁটারর কাঠির মতো অনেকগুলো করে শাখা প্রশাখা যুক্ত শাক। বাড়িতে অতিথি এলে এরা কাবলি চানার তরকারি বানায়,খুব বেশি হলে মানে রাজকীয় খাবার তৈরি হলে পনির। সেই জায়গায় আমাদের বাঙালিয়ানার কথা একবার ভাবলে নিজেকেই বারবার মনে হয়েছে এদের মাঝে আমি একেবারেই বেমানান। যাইহোক এভাবেই আমাদের জীবনযাত্রা চলে।

তবে এদের বেশ কিছু নিয়মকানুন আমার খুবই ভালো লাগে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেও হলদি কুমকুম বলে একটা বিবাহিত মহিলাদের অনুষ্ঠান। এরা হলদে কুমকুম এর নাম করে বাড়ির বউদের ডাকে এবং সেখানে তাদের সবাইকে আরতি করে বরণ করে নেয়। তারপর কপালে যেখানে আমরা টিপ পরি সেখানে হলুদের গুঁড়ো আর সিঁদুর দিয়ে টিপ ছাপ দেয়। হাতে আতর লাগিয়ে দেয় এবং মাথায় জুঁই ফুলের গজরা। আর উপহার হিসেবে বিবাহিত মেয়েদের সাত সিঙ্গার ও সামান্য কিছু উপহার থাকে। তবে যে যেমন ভাবে পারে সে তেমনভাবেই পালন করে। এই যে গাছটার ছবি দিলাম জড়ে প্লান্ট । এই গাছটিও আমার প্রায় বছর দুই তিন আগে হলদি কুমকুম অনুষ্ঠানে পাওয়া উপহার। আমাকে জীবনে যে যত দামি বা কম দামি উপহার দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে আমি খুশি হয়েছি বেশি যতবার গাছ পেয়েছি। গাছের মতো উপহার বোধহয় এ জগতে আর কিছুই নেই।

সারাদিন যেমন তেমন কাটলেও বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়ার একটা আলাদা মজা আছে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে আমরা একেবারেই বের হতাম না তবে শহরাঞ্চলে যেহেতু রোডে জল জমেনি তাই সন্ধ্যের দিকে একটু বেরিয়ে পড়াই যায়। আমার বারবার মনে হচ্ছিল একটু গিয়ে দেখে আসি শহরের অবস্থা কেমন। দু একটা ছবিও তুলেছি সেটাই শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। এত জোরে জোরে বৃষ্টি ফোটা চলে গাড়ির ওয়াইপার টা যেন থামানোই যায় না৷ তবে জীবনযাত্রা যে থেমে যায় তা না গাড়ির বহর দেখেছেন? মুম্বাইতে আরও বেশি ছিল। অফিস কাচারি স্কুল কোন কিছু দেখলে বোঝাই যেত না যে বাইরে সাংঘাতিক বৃষ্টি হচ্ছে।

বৃষ্টির জন্য ছবিগুলো কেমন কাচের ভেতর থেকে উঠেছে।

আজ সকালে আবার দেখলাম বাড়ির সামনে দিকে যে অংশটাতে চাষ হতো সেই জায়গাটাতেও ভয়ানক জল জমেছে। বড় বড় আম গাছ ছিল মে মাসে যখন প্রথম আসি তখন দেখতাম অনেক মজুর এসে আম গুলোকে পেড়ে এখানেই পেটি বন্দি করে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন বুঝেছিলাম এই আম বাগানটি আমাদের অধিকার মত শখের বাগান নয়, এটি ব্যবসার জন্য তৈরি করা।

সামনের দিকে একটু দূরে চোখ নিয়ে গেলে পাহাড় দেখা যায়। সেই পাহাড় আজ সারাদিনই মেঘে ঢাকা। অন্যান্য দিন সবুজ হয়ে বেশ সুন্দর লাগে দেখতে। আমার ফ্ল্যাটটি যেহেতু চার তলায়, তাই খুব যে ভালো ভিউ আসে তা বলবো না তবে যারা আট তলায় রয়েছে তাদের বাড়ির জানালা থেকে আর ওই সুন্দর দেখতে লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে আমার আবার খুব বেশি উঁচুতে থাকতে ভয় করে। কেন জানেন? কখনো যদি আগুন লেগে যায় দমকল কিন্তু চারতলার উপরে আর পৌঁছয় না। হতে মৃত্যু অনিবার্য। অথচ বারবারই বলি কবিতায় গদ্যে যে আমি মৃত্যুর জন্যই অপেক্ষা করি।

যাইহোক আজকের পর্যন্তই থাক আবার আসবো কালকে অন্য কিছু গল্প নিয়ে। আপনারা ভালো থাকুন বৃষ্টির মধ্যে ভালো থাকার চেষ্টা করছি।

পোস্টের ধরণ	লাইফস্টাইল ব্লগ
ছবিওয়ালা	নীলম সামন্ত
মাধ্যম	স্যামসাং এফ৫৪
লোকেশন	পুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপ	ক্যানভা, অনুলিপি

৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে